বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

রাজধানী ছাড়ছে মানুষ

নাদিম নেওয়াজ | প্রকাশের সময় : ২৮ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

কর্মহীন, ভাগ্যান্বেষী, বিদ্যান্বেষীসহ নানা শ্রেণির মানুষের স্বপ্ন গড়ার শহর ঢাকা। সেজন্য দিন দিন এই নগরে মানুষ বাড়ছিল জ্যামিতিক হারে। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারি সেই মানুষদের স্বপ্ন যেন ভাঙতে শুরু করে। আয় রোজগার কমে এমনকি কর্ম হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষ। এর মধ্যে মরার উপর খাড়ার গাঁ হয়ে দাঁড়িয়েছে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি। ফলে হতদরিদ্ররা হয়ে পড়েছে আরও অসহায়। জীবিকার এমন সঙ্কট দেখা দেয়ায় ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছে মানুষ। তাতে রাজধানীর অনেক বাড়িতে ভাড়াটিয়া সঙ্কট দেখা দিয়েছে। সে জন্য এখন বাড়িতে বাড়িতে ঝুলছে বাসাভাড়া দেয়ার বিজ্ঞাপন ‘টু লেট’।

জানা গেছে, দেশের কর্মসংস্থানের সিংহভাগ রাজধানী ঢাকাকেন্দ্রিক হওয়ায় বিভিন্ন অঞ্চলের লোকজন কাজের সন্ধানে রাজধানীমুখী হতেন। প্রতিদিনই কর্মসংস্থান বা ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় ঢাকায় আসত মানুষ। এভাবে দেড় হাজার বর্গকিলোমিটারের এ নগরীর বাসিন্দার সংখ্যা দাঁড়িয়ে যায় প্রায় দুই কোটি, যাদের প্রায় ৮০ শতাংশই ভাড়া বাসার বাসিন্দা।

এ ভাড়াটিয়ারা বছরের পর বছর বাসার উচ্চ ভাড়া দিয়ে আসছেন। কিন্তু করোনাভাইরাস পরবর্তী পরিস্থিতি বদলে দিয়েছে বাসা ভাড়ার চিত্রও। করোনার কারণে অনেক মানুষ কাজ হারিয়েছেন, অনেক মানুষের শ্রেণি কাঠামোর পরিবর্তন হয়েছে। নতুন করে অনেক মানুষ হতদরিদ্র হয়েছেন, ফলে আগের ভাড়ার ভার বইতে পারছেন না তারা, ফলে ছেড়ে দিচ্ছেন বাসা, ছেড়ে দিচ্ছেন ঢাকাও। গতকাল মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে দেখা যায় জিনিসপত্রসহ কয়েকটি পিকআপে রাজধানী ঢাকা ছাড়ছেন কয়েকটি পরিবার। সম্প্রতি জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পরে যানবাহনের ভাড়া ২৭ শতাংশ বেড়ে যায়। জ্বালানি তেল ও যানবাহনের ভাড়া বৃদ্ধির প্রভাব পড়ে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের ওপর। বেড়ে যায় সব নিত্যপণ্যের দাম। এতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়ে নিম্ন আয়ের মানুষ। অনেকেই টিকতে না পেড়ে ঢাকা ছাড়ছেন।

ঢাকা ছেড়ে যাওয়াদের দুর্ভোগ বৃদ্ধি করে শিমুলিয়া ঘাটের সীমিত ফেরি চলাচল। এ রুটে সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত কে-টাইপ ৪টি ফেরি দিয়ে সীমিত যানবাহন পারাপার করায় প্রতিদিনই ঘাট এলাকায় দীর্ঘসময় আটকা পড়ে থাকছে শত শত যাত্রী ও পণ্যবাহী গাড়ি।

নিশি বেগম নামের এক যাত্রী জানান, তিনি সাভারে একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। করোনা পরবর্তী সময়ে তার চাকরি চলে যায়। স্বামীর একার আয় দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা। তাদের আর ঢাকায় বসবাস করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই ঢাকার বাসা ছেড়ে দিয়ে গ্রামে যাচ্ছেন। তিনি আরও জানান, সাভার থেকে গতকাল ঘাটে আসছি, শিবচর যাবো। বাসাবাড়ির মালামাল ও পরিবার নিয়ে এখনো ঘাটে সিরিয়ালে আছি।

মিজানুর রহমান নামে অপর যাত্রী জানান, ফ্যামিলি নিয়ে পিরোজপুর চলে যাচ্ছি। বাসাবাড়ির মালামাল নিয়ে কেনো যাচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঢাকায় ব্যাটারির ব্যবসা করতাম। ব্যবসা মন্দা, আয় কমে গেছে, জিনিসপত্রর দাম বেশি তাই ফ্যামিলি নিয়ে গ্রামে চলে যাচ্ছি। মেয়ে ও নাতী নিয়ে শীতের মধ্য সারা রাত আমাদের খুব কষ্ট হয়েছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্পোরেশন (বিআইডবিøটিসি) শিমুলিয়া ঘাট শাখার ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) সাফায়েত হোসেন জানান, সীমিত ফেরি চলাচলের কারণে প্রায়ই দিনশেষে কোনো দিন অর্ধশতাধিক, কোনো দিন শতাধিক যানবাহন ঘাটে আটকা পড়ছে। ফলে আটকে পড়া গাড়িগুলোকে পরের দিনে ফেরি পারাপারের জন্য হয় ঘাটেই রাত কাটাতে হচ্ছে, নয়তো ফিরে যেতে হচ্ছে ঢাকায়। এর সমাধানে হয় ফেরির সংখ্যা বাড়াতে হবে, নয়তো ফেরি চলাচলের সময় বাড়ানো প্রয়োজন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (10)
Saburtalukder Sabur ২৮ নভেম্বর, ২০২১, ৬:১৬ এএম says : 0
করোনার ভয়ে ঢাকা থেকে গেলেন নিজ বাড়ী মাদারীপুর।সেখানে গিয়া করোনায় লোকটি মারা গেলেন।মরন যেখানে লেখা থাকিবে সেখানে যাইতে হবে।ভয় করিয়া কোন লাভ নাই।
Total Reply(0)
Md Ifas Md Ifas ২৮ নভেম্বর, ২০২১, ৬:১৭ এএম says : 0
গরীব অসহায় মানুষদের জন্য লকডাউন বড়ই অসহনীয়।
Total Reply(0)
Arshad Mahamud ২৮ নভেম্বর, ২০২১, ৬:২৫ এএম says : 0
"গরিবের কেউ নাই আল্লাহ আছে" আল্লাহ আমাদের মত সকল গরিবের সহায় হন । আপনি ছাড়া কে আছে আমাদের।
Total Reply(0)
Mohammed Iqbal Hossain ২৮ নভেম্বর, ২০২১, ৬:২৬ এএম says : 0
কথা হইলো এই সব প্রতিবেদন করে কিছু হবে না,আমার মত অনেকে দেখবে আর একটু আবেগের কারন হয়তো কান্না করবে। কিন্তু বাস্তবে সরকার তথা সকল উচ্চ পদস্থ মানুষের কানে এই সব পৌছাবে না। কারন তারা তো আর ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছে না।
Total Reply(0)
Anik Khan ২৮ নভেম্বর, ২০২১, ৬:২৬ এএম says : 0
সরকারের সীমাহীন দূর্নীতি আর মানুষের উচ্চ বিলাসীতার ফল এটি। পরিকল্পনাহীন কোনরকম বেঁচে থাকার যেই সিস্টেম গত কয়েকযুগ ধরে চলছে, সেটির কুপল এখন মানুষ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। আমরা নিজেদের অধিকার এবং মুল্যবোধ অর্জন করতে না পারলে আরো কয়েকদশক এভাবেই থেকে যেতে হবে।
Total Reply(0)
Alomgir Hossain ২৮ নভেম্বর, ২০২১, ৬:২৭ এএম says : 0
আল্লাহ তুমি আমাদের প্রতি সহায় থেকো। তুমি ছাড়া কোন মাবুদ নাই। তোমার বান্দা কর্মকরে খাবে সৎ উপার্জন করবে কিন্তু করোনায় কর্ম নাই পরিবার পরিজন নিয়ে আজ মহাবিপদে তুমি রহমত কর।দয়া কর।পৃথিবী আগের মত স্বাভাবিক করে দাও।তুমি তো দয়ার সাগর।
Total Reply(0)
Mahabub Rahman ২৮ নভেম্বর, ২০২১, ৬:২৭ এএম says : 0
হ্যাঁ গরিবের জন্য শুধু আল্লাহ উপর ভরসা রাখবেন ইনশাআল্লাহ আল্লাহ পাকের তরফ থেকে রিজিক আসবে
Total Reply(0)
Manzurul Alam ২৮ নভেম্বর, ২০২১, ৬:২৭ এএম says : 0
এ দৃশ্য খুবই কষ্টকর খুবই অমানবিক। মানুষ হলে বাড়িওয়ালারা এদের প্রতি সদর হতেন মানবিক হতেন। দুঃখজনক হলেও সত‍্য ঢাকা শহরের বেশির ভাগ বাড়িওয়ালাই অমানবিক অমানুষ।
Total Reply(0)
M H Khan Shazib ২৮ নভেম্বর, ২০২১, ৭:২৩ এএম says : 0
আমরা উন্নয়নশীল দেশে পদার্পন করছি, অজান্তেই ধনী হয়ে যাচ্ছি, মাথাপিছু আয় আড়াই হাজার ডলার ছাড়িয়ে গেছে। বড় বড় কথার শেষ নাই।আর মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষেরা ধুঁকে ধুঁকে মরছে।
Total Reply(0)
Ashikur Rahman Aony ২৮ নভেম্বর, ২০২১, ৭:২৩ এএম says : 0
আর একদিকে সরকার বলছে মানুষের নাকি আয় বেড়েছে দুইগুন,,মন্ত্রীরা বলছে ঘুম থেকে উঠেই নাকি রাতারাতি বড়লোক হয়ে যাচ্ছে জনগন,আর বাস্তবে তার উল্টো।হ্যায়ে সরকার..দুঃখজনক
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন