শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

রাঙা সকাল, দুরন্ত দুপুর, বিবর্ণ বিকেল

গিরগিটির মতো রঙ বদলালো বাংলাদেশের ভাগ্য

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৯ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ : ৩৩০ ও দ্বিতীয় ইনিংস : ১৯ ওভারে ৩৯/৪ (সাদমান ১, সাইফ ১৮, শান্ত ০, মুমিনুল ০, মুশফিক ১২*, ইয়াসির ৮*; শাহীন ৩/৬, হাসান ১/১৯, ফাহিম ০/৬, নোমান ০/৭, সাজিদ ০/১)। পাকিস্তান প্রথম ইনিংস : ১১৫.৪ ওভারে ২৮৬ (আবিদ ১৩৩, শফিক ৫২, আজহার ০, বাবর ১০, ফাওয়াদ ৮, রিজওয়ান ৫, ফাহিম ৩৮, হাসান ১২, সাজিদ ৫, নুমান ৮, শাহিন ১৩*; রাহি ০/৪১, ইবাদত ২/৪৭, তাইজুল ১১৬/৭, মিরাজ ১/৬৮, মুমিনুল ০/১২)। তৃতীয় দিন শেষ।

আগের দিন মোহনীয় সাগরিকায় শেষ দুটি সেশন কী দুর্বিষহই না কেটেছে বাংলাদেশ দলের! প্রথম ইনিংসে ৩৩০ রানে অলআউট হয়ে যাওয়ার পর হাপিত্যেশ করতে হয়েছে বাংলাদেশের বোলারদের। দুই সেশন বোলিং করেও পাকিস্তানের একটিও উইকেট ফেলতে পারেননি তাইজুল-এবাদতরা। তবে সময় গড়ানোর সাথে সাথে ভোজভাজির মতো পাল্টে গেল ম্যাচের চেহারা। গতকাল পাকিস্তানের উদ্বোধনী জুটিকে বিচ্ছিন্ন করতে বাংলাদেশ সময় নিয়েছে মাত্র ৫ বল। দিনের প্রথম ওভারে বল করতে এসে তাইজুল পঞ্চম বলে তুলে নেন আবদুল্লাহ শফিককে। বিনা উইকেটে ১৪৫ রান নিয়ে দিনের খেলা শুরু করা পাকিস্তান এর আগে যোগ করতে পেরেছে মাত্র ১ রান। পরের বলেই আবার আঘাত হানেন তাইজুল। ‘সোনালি হাঁস’ পেয়েছেন তিন নম্বরে ব্যাট করতে নামা পাকিস্তানের আজহার আলী। তাইজুলের বাঁহাতি ঘূর্ণিতে পাকিস্তান প্রথম ইনিংসে অলআউট হয়েছে ২৮৬ রানে।
চট্টগ্রামের জহুর আহমদে চৌধুরী স্টেডিয়ামে বাংলাদেশকে মিষ্টি একটা সকাল উপহার দেওয়ার পর দুপুরটাও দুর্দান্ত করে দিয়েছেন তাইজুল। বাংলাদেশের বাঁহাতি স্পিনার প্রথম সেশনে নিয়েছেন ৩ উইকেট, দ্বিতীয় সেশনে নিয়েছেন ৪টি। সব মিলিয়ে ১১৬ রান দিয়ে এই ইনিংসে তার উইকেট ৭টি। গতকাল বল হাতে লড়াই করা বাংলাদেশও দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে প্রথম ইনিংসে লিড নেয় ৪৪ রানের। তবে দিনের শেষভাগে ম্যাচের রঙ আবারও বদলে গেল। প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও ব্যর্থ হয়ে চার টপ অর্ডার নিয়ে এলেন অস্বস্তির কাঁটা। আর তাতে তৃতীয় দিনটা বাংলাদেশের হয়েও যেন ঠিক হলো না। প্রথম ইনিংসে ৪৪ রানের লিড পাওয়ার পর ৪ উইকেটে ৩৯ রান তুলে দিন পার করেছে বাংলাদেশ। হাতে ৬ উইকেট নিয়ে স্বাগতিকদের লিড ৮৩ রানের। ১২ রান নিয়ে ক্রিজে আছেন মুশফিকুর রহিম, ৮ রান নিয়ে তার সঙ্গী অভিষিক্ত ইয়াসির আলি চৌধুরী। এই লিড বাংলাদেশ কত বড় করতে পারে তার উপরই নির্ভর করছে ম্যাচের গতিপথ।
গতকাল সকাল থেকেই যখন বাংলাদেশের বোলাররা যখন ছড়ি ঘোরাচ্ছিলেন পাকিস্তানের ইনিংসে, বিরুদ্ধ ¯্রােতে শতকের দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন আগের দিন ৯৩ রানে অপরাজিত থাকা আবিদ আলী। তাইজুলের জোড়া আঘাতের পর অধিনায়ক বাবর আজমকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়া আবিদ আলী তার চতুর্থ টেস্ট শতক পূর্ণ করেন ৬৮তম ওভারে। তাইজুলেরই ওভার ছিল সেটি, প্রথম বলে ডিপ মিডউইকেটে খেলে ২ রান নিয়ে শতক পূর্ণ করেন আবিদ আলী। তবে বাবরের সঙ্গে তার জুটিটি খুব বেশি বড় হয়নি। ৮৮ বলে ২৩ রানের জুটিটি ভাঙেন অফ স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ। পাকিস্তান অধিনায়ককে ফিরিয়েছেন তিনি। আউট হওয়ার আগে ৪৬ বলে ১০ রান করেছেন বাবর। আবিদ আলী ফাওয়াদ আলমের সঙ্গে। ফাওয়াদও খুব বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। তাঁকে ফিরিয়েছেন তাইজুল। আবিদ জুটি বাঁধেন মোহাম্মদ রিজওয়ানের সঙ্গে। মধ্যাহ্নভোজের বিরতির আগে আর কোনো উইকেট পড়তে দেননি তারা। পাকিস্তান লাঞ্চে যায় ৪ উইকেটে ২০৩ রান তুলে।
সেখান থেকে ফিরে এবার জ্বলে ওঠেন ইবাদত। রিজওয়ানকে এলবিডবøুর ফাঁদে ফেলে ফেরানোর পর তিনি বোল্ড করেন সাজিদ খানকে। তবে এই সেশনেও বাংলাদেশের সেরা বোলার তাইজুলই। শতক করা আবিদ আলীর সঙ্গে তিনি তুলে নেন আরও দুই আলী হাসান ও নোমান এবং ফাহিম আশরাফকে। আউট হওয়ার আগে ২৮২ বলে ১৩৩ রান করেছেন আবিদ আলী। ৪৭.১৬ স্ট্রাইক রেটের ইনিংসটিতে তিনি ১২টি চারের পাশাপাশি মেরেছেন ২টি ছয়। ইবাদত নিয়েছেন ২ উইকেট, রান দিয়েছেন ৪৭টি। এ ছাড়া মেহেদী হাসান মিরাজ ৬৮ রান দিয়ে নিয়েছেন ১ উইকেট।
৪৪ রানের লিড নিয়ে ব্যাট করতে নেমে ইতিবাচক অ্যাপ্রোচ দেখিয়েছিলেন সাইফ হাসান। তিন বাউন্ডারি পাওয়ার পর তাকে দেখাল বেশ নড়বড়ে। তবে সাইফের আগেই কাঁপন ধরল বাংলাদেশের ইনিংসে। সাদমান ইসলামকে দিয়ে শুরু। প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও ব্যর্থ এই বাঁহাতি। শাহীন আফ্রিদির বলে এলবিডবিøউর আউট রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি। এক বল পরই পীড়াদায়কভাবে খোঁচা মেরে সিøপে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন নাজমুল হোসেন শান্ত। অধিনায়ক মুমিনুল হক তার পয়মন্ত মাঠে থাকলেন নিষ্প্রভ। হাসান আলির লেগ স্টাম্পের বাইরের বল ব্যাট পাতিয়ে তুলে দিলেন সহজ ক্যাচ। ১৫ রানেই পড়ে যায় ৪ উইকেট।
সাইফ টিকেছিলেন দশম ওভার পর্যন্ত। তবে যেকোনো সময় তিনি আউট হতে যাচ্ছেন এই আভাস মিলছিল। শট বলে ভীষণ দুর্বল এই ওপেনার বারবার খেলছিলেন দৃষ্টিকটু অ্যাপ্রোচে। শট বলই কাবু করল তাকে। শাহীনের শট বলে উঠিয়ে দেন সহজ ক্যাচ। দিনের বাকিটা অনায়াসে পার করে দেন মুশফিক ও ইয়াসির।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন