শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

দুদক আতঙ্কে কাটছে ব্যাংকারদের সময়

প্রকাশের সময় : ২২ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সোহাগ খান : দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে দিনরাত শ্রম বিলিয়ে যাচ্ছে যারা তাদেরকে ব্যাংকার বলে অভিহিত করা হয়। তরুণদের মাঝে এক সময় সাড়াজাগানো পেশার নাম ছিল ব্যাংকার। বিসিএস এর পরেই মেয়ের বাবারা ব্যাংকার প্রাত্র খুঁজতো মেয়ের নিরাপদ ভবিষ্যৎ-এর আশায়। কিন্তু গত এক দশকে এই পেশায় যারা এসেছে সবাই একটি না একটি অপকর্মে জড়িয়েছে। স্বইচ্ছায় অথবা উপরের চাপে ফলে এখন ব্যাংকিং পেশাটি দাঁড়িয়েছে চরম অনিরাপদ হয়ে। বর্তমানে আটক আতঙ্কে সময় কাটছে বেশীরভাগ ব্যাংকারদের সময়।
বিশেষ করে চলতি মাসে জনতা ব্যাংক লোকাল অফিস থেকে দুর্নীতির অভিযোগে দু’জন উপ-মহাব্যবস্থাপক কর্মরত অবস্থায় গ্রেফতারের ফলে আতঙ্ক ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ঘুম নেই বেশীরভাগ ব্যাংকের শাখা পর্যায়ে কর্মরত ব্যাংকারদের। বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ব্যাংকাররা যাদের মধ্যে দুর্বলতা আছে এবং অনিয়মে জড়িত রয়েছেন বলে মনে করছেন তারা সকালে বাসা থেকে বেরিয়ে আসার সময় পরিবার থেকে বিদায় নিয়ে আসেন। কারণ, রাতে তিনি ফিরতে পারবেন কি না সন্দেহ আছে। রাতে বাসায় না ফিরে কর্মস্থল থেকে তাকে যেতে হতে পারে জেলখানায়। ব্যাংকারদের মধ্যে ‘চোরের মন পুলিশ পুলিশ’ প্রবাদের মতো অবস্থা। এমনি অবস্থায় কাজের স্পৃহা কমে যাচ্ছে তাদের।
এখন সবচেয়ে বেশি গ্রেফতার আতঙ্ক সোনালী ব্যাংকে। সোনালী ব্যাংকে গ্রেফতার আতঙ্কের কারণ হলমার্ক কেলেঙ্কারী এবং পরবর্তীতে বিদেশীকে ভুয়া নামে ৫০০ কোটি টাকা কেলেঙ্কারী। এছাড়াও আতঙ্ক বেড়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকে। ব্যাংকটির কর্মকর্তাদের অনেকের দিন কাটছে এখন আটকের ভয় নিয়ে। বেসিক ব্যাংকে অনিয়ম ও দুর্নীতির ঘটনায় অন্তত আরও ৩০টি মামলা হচ্ছে চলতি মাসে। এমন খবরে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন অনেক মধ্যম পর্যায়ের কর্মকর্তা। যে কোনো সময় তাদের আটক করা হতে পারে।
বেসিক ব্যাংক সূত্র বলছে, ব্যাংকের অনেক কর্মকর্তাই এখন কিছুটা চুপচাপ থাকছেন। তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। ঊর্ধ্বতন কেউ কেউ বিদেশে পাড়ি জমানো যায় কি না তেমনটিও ভাবছেন।
জানা গেছে, ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম সাজেদুর রহমান, কাজী ফখরূল ইসলামসহ সন্দেহের তালিকায় আছেন প্রায় ১০০ ব্যাংকার।
এদিকে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার জালিয়াতির ঘটনা অনুসন্ধানের কাজ অনেকটা শেষ করেছে দুদক। এর মধ্যে অনেকেই সাময়িকভাবে চাকরিচ্যুত আছেন। আর কয়েকজনকে আটক করার পর জামিনে ছাড়া পেয়েছেন।
জনতা ব্যাংকের বিসমিল্লাহ কেলেঙ্কারীর ঘটানায় একজন উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ৪৫ জনকে বিবাদী করে আরও একটি নতুন মামলা প্রস্তুত করেছেন দুদক। এছাড়া বহুল আলোচিত ঢাকা ট্রেডিং কেলেঙ্কারীতে ব্যাংকটি মধ্যম পর্যায়ের প্রায় আরও ৪০ জন মোট শতাধিক কর্মকর্তা গ্রেফতার হতে পারে নিশ্চিত করেছেন জনতা ব্যাংক এবং দুদক সূত্র।
রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী প্রায় ২ শ’ কর্মকর্তার নামে ইতিমধ্যে মামলা থাকলেও তাদেরকে গ্রেফতার করেনি দুদক। তবে ইতিমধ্যে আরও ৭ টি অভিযোগ আমলে নিয়ে প্রায় ৫ শতাধিক কর্মকর্তার নামে মামলা প্রস্তুত বলে জানিয়েছে দুদকের একটি সূত্র। তবে অগ্রণী ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ বিচার-ব্যবস্থা বিভাগের একজন সহকারী মহা-ব্যবস্থাপক বলেন কিছুদিন পূর্বে দুদক প্রায় ২ শতাধিক কর্মকর্তার তথ্য চেয়েছিলেন যা আমরা দিয়েছি। তবে মামলা হলে এই কর্মকর্তারা ফেঁসে যেতে পারে।
রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংকের বিরুদ্ধে একটি অভিয়োগের ভিত্তিতে গত এপ্রিল মাসে তদন্ত শুরু করে দুদক। ইতিমধ্যে প্রায় ৭০ জন কর্মকর্তাকে তলব করে চিঠি দিয়েছেন দুদক-এর পরিচালক জয়নুল আবেদীন শিবলী। তাদের মাঝে ৩০ জনের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় যে কোন তারা গ্রেফতার হতে পারেন বলে জানিয়েছেন ব্যাংকটির মানব সম্পদ বিভাগের একজন কর্মকর্তা।
রাষ্ট্রায়ত্ত বিডিবিএল এ মহা-ব্যবস্থাপক নুরুর রহমান কাদেরীসহ ৫ কর্মকর্তাও আছেন গ্রেফতার আতঙ্কে।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ব্যাংকারদের গ্রেফতার আতঙ্কে কাটুক আর যাই কাটুক। দুদক যে অভিযান শুরু করেছে তা শেষ করতেই হবে। এটা শেষ করলেই ব্যাংকিং খাত জঞ্জাল মুক্ত হবে বলে আমি মনে করি।
আরেক অর্থনীতিবিদ ড. খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ মনে করেন, বাচ্চুর মত দুর্নীতির বরপুত্রদের ছাড় দিয়ে শুধুমাত্র নিরীহ ব্যাংকারদের ষ্টীম রোলার চালানো ঠিক হচ্ছে না। দুদকের উচিত একটু সময় নিয়ে হলেও প্রভাবশালীদেরসহ গ্রেফতারে যাওয়া। তাছাড়া এই অভিযান হবে প্রশ্নবিদ্ধ। এভাবে অভিযানে দুর্নীতি তো নির্মূল হবেই না উল্টে এধরনের অভিযান দেশের অর্থনীতির গতি শ্লথ করে দিতে পারে বলে মনে করেন এই ব্যাংকার।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন