বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ধর্ম দর্শন

ইফতারের গুরুত্ব ও তাৎপর্য

আফতাব চৌধুরী | প্রকাশের সময় : ২ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০৪ এএম

রমজান মাসে রোজাদারের কাছে প্রতিটি মুহূর্ত আনন্দের। কারণ এ মাসে আল্লাহর অফুরন্ত রহমতের বারিধারা পৃথিবীতে বর্ষিত হয় । সারাদিনের উপবাসের ক্লিষ্ট যাতনার অবসানে যখন ইফতারের সময় ঘনিয়ে আসে, তখন আর তার সয় না। দিনের শেষে ইফতারের অপেক্ষা করা সত্যি এক অদ্ভুত আনন্দের মাত্রা জোগান দেয় রোজাদারদের। ইফতারের সময় রোজাদার অপার প্রশান্তি অনুভব করে থাকেন এবং ইফতারের পর মনোদৈহিক ও আধ্যাত্মিক তৃপ্তির এক অনাবিল সুখানুভূতিতে নিজেকে পরম সৌভাগ্যবান বলে মনে করে থাকেন। রমজানের পাঁচটি সুন্নতের দ্বিতীয়টি হলো ইফতার। হজরত আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, হাদিসে কুদসিতে মহান আল্লাহতায়ালা বলেন; আমার বান্দাদের মধ্যে তারা আমার বেশি প্রিয়, যারা দ্রুত ইফতার করে।’ (তিরমিজি শরিফ)

ইফতার শব্দটি আরবি ‘ফাতর’ থেকে উদ্ধৃত, যার অর্থ ভঙ্গ করা বা ছিঁড়ে ফেলা। এখানে ‘ ফিতর’ যে অর্থ প্রদান করে, তা হচ্ছে এমন খাদ্য যা দ্বারা রোজা ভঙ্গ করা হয়। আরবি শব্দ ইফতার এর অর্থ হলো রোজা ত্যাগ করা। একজন রোজাদারের যথাসময়ে ইফতার করা একান্ত প্রয়োজনীয়। সারাদিন রোজা পালন করে যথাযথভাবে সময়মতো ইফতার করার গুরুত্ব অত্যধিক। সূর্যাস্তের পর বেশি দেরি না করে ইফতার করা উত্তম। কোন শরিয়ত প্রদত্ত বৈধ কারণ ছাড়া বিলম্বে ইফতার করা মকরুহ। এ সম্পর্কে মহানবি (স.) বলেছেন,‘ আমি ওই ব্যক্তিকে সর্বাধিক ভালবাসি, যে ইফতারের সময় হওয়া মাত্র ইফতার করে নেয়।’ (তিরমিজি)। ইফতারের কিছুক্ষণ আগে থেকে খাদ্যসামগ্রী সামনে নিয়ে অপেক্ষা করা সুন্নাত। কারণ, এ সময়ে মানুষ খুবই ক্ষুধার্ত থাকে এবং একমাত্র আল্লাহর ভয়ে খাবার সামনে হাজির থাকা সত্ত্বেও মুখে তোলে না। এতে আল্লাহ খুব খুশি হন। কারণ, ইফতারের সময়টা হলো বিনয় ও আল্লাহর জন্য ধৈর্য্য ধারণের চরম মুহূর্ত। এ সময় জাহান্নাম থেকে মুক্তিদানের মুহূর্ত। এ সময় এক অনাবিল স্বর্গীয় বার্তাবরণ লক্ষ্য করা যায়।

নিজে ইফতার করার পাশাপাশি অন্যকে ইফতার করানোর মধ্যে প্রচুর সওয়াব ও বরকত নিহিত রয়েছে। রোজাদার নিজেও ইফতার করবে এবং সম্ভব হলে অন্যকেও এতে শরিক করবে। এ সম্পর্কে রাসূল (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানে কোনও রোজাদারকে ইফতার করাবে, সে ব্যক্তির গোনাহ মাফ হবে এবং একই সঙ্গে রোজাদার ব্যক্তির সমপরিমান সওয়াব সে-ও পাবে।’ সাহাবিরা রাসুল (স.)-কে জিজ্ঞেস করলেন হে আল্লাহর নবি, আমাদের মধ্যে এমন অনেক লোক আছে, যারা অন্যদের ইফতার করানোর সামর্থ নেই। জবাবে রাসুল(স.) বললেন, ‘কাউকে পেট ভরে ইফতার করাবে- এমন কোনও শর্ত নেই। যদি কেউ রোজাদার ব্যক্তিকে একটি মাত্র খেজুর বা পানি দ্বারা ইফতার করালেও সে সমপরিমান সওয়াব লাভ করবে। এতে রোজাদারের সওয়াবের কোনও কমতি হবে না বরং আল্লাহ নিজের রহমতের ভা-ার থেকে এ সওয়াব প্রদান করবেন।’একটি কথা উল্লেখ করা যুক্তিসঙ্গত মনে করি, ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান, এতে অসাম্যের কোনও রেশ কস্মিনকালেও নেই। আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে প্রথম রমজানের কিংবা অন্য কোনও দিনে কার্টুন ভর্তি করে ইফতার প্রদানের কোনও যৌক্তিকতা ইসলাম ধর্মে নেই। এতে খাবারের অপচয় বাড়ে। সামাজিক অসাম্যের রেশও দেখা দিতে পারে। যদি সওয়াবের মনোভাব নিয়ে কেউ আত্মীয়তা রক্ষা করতে সামান্য পরিমাণ ইফতার সামগ্রী কারও বাড়িতে নিয়ে যান, এতে অসুবিধার কিছু দেখা যায় না। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে মুসলিম সমাজ ব্যবস্থায় রমজান মাসে আত্মীয়ের বাড়িতে ইফতারি প্রদানের নামে বর্তমানে যেন প্রচলিত নিয়ম চালু রয়েছে। মেয়ের বাবার বাড়ি থেকে শ্বশুরবাড়িতে কার্টুন বোঝাই ইফতার পাঠানো, এসব ইসলামের নামে অপসংস্কৃতি ছাড়া কিছু নয়। এই প্রথায় ধনী পিতার সাময়িক আমোদ ও আদরের মেয়ের প্রতি ভালবাসা মনে হলেও ইফতারি প্রদানের তৈরি ট্রেন্ডের জন্য বা অত্যাচারিত হচ্ছেন যে-সব দরিদ্র বাবা অন্যের দেখাদেখি বাধ্য হয়ে মেয়ের সুখের জন্য ধারদেনা করে রেওয়াজগুলো মানতে বাধ্য হচ্ছেন, গরিব পিতা কার্টন বোঝাই ইফতারি পাঠাচ্ছেন মেয়ের স্বামীর বাড়িতে মেয়ের সুখের জন্য। নিভৃতে তারা অত্যাচারিত হচ্ছেন। সুতরাং, ইসলামের নামে এসব বাড়বাড়ন্তে সওয়াবের পরিবর্তে গোনাহগার হওয়ার আশঙ্কা অবজ্ঞা করা যায় না। তাই আমাদের এসব অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো একান্ত প্রয়োজন মনে করি। কারণ, কুরআন ও হাদিসবহির্ভূত কোনও কিছু ইসলাম গ্রহণ করে না আর এসব নি:সন্দেহে সামাজিক অসাম্যের দুয়ার উন্মুক্ত করে দেয়। শরিয়তের নির্দেশমত ইফতার করলে এতে যথেষ্ট কল্যাণ নিহিত আছে। এ সময় আল্লাহর কাছে বান্দাহর দোয়া কবুল হওয়ার উত্তম সময়। ইফতার যে কোনও মিষ্টিদ্রব্য দিয়ে করা উচিত। রমজান মাসে রাসুল (স.) মাগরিব এর আজান হলে কয়েকটি ভেজা খেজুরের মাধ্যমে ইফতার করতেন। ভেজা খেজুর না থাকলে সাধারণ শুকনো খেজুর। এর ব্যতিক্রম হলে সামান্য পানি-ই ছিল রসুল (স.)-র ইফতার। সুতরাং, এসব সামগ্রী দিয়ে নবি (স.)-র মতো আড়ম্বরহীন ইফতার হওয়া উচিত। যদি এসব কারও কাছে না থাকে, যে কোনও প্রকার হালাল খাদ্যই হচ্ছে ইফতার। হযরত আবু হুরায়রা (রা:) বলেন,‘ রাসূলে করিম (স.) প্রতিটি রোজার মাঝরাতে পানাহার, ইফতার বর্জনকে নিষেধ করেছেন। তখন একজন লোক আরজ করে বলল, ওহে আল্লাহর রাসূল (স.) আপনি যে এমনটি করেন। উত্তরে হুজুর (স.) বললেন, তোমরা আমার মতো কে আছ? হ্যাঁ, সত্যি আমি ওই রকম রোজা রাখি। (চলবে)
লেখক : সাংবাদিক-কলামিস্ট।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন