শীত শুরু হতেই সৈয়দপুরে রেললাইনের ওপর বসছে পুরোনো কাপড়ের মার্কেট। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই মার্কেটে ভিড় করছে শত শত নারী-পুরুষ। এতে ট্রেন চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় বহুবার এ মার্কেট উচ্ছেদ করেছে স্থানীয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু অজানা কারণে কিছুদিন যেতে না যেতেই আবার তা পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসে। বিগত একযুগ ধরে এ অবস্থা চলে আসছে সৈয়দপুরে।
এছাড়াও সারা বছর জুড়ে রেললাইনের দুই পাশে গড়ে তোলা খাবার হোটেল, লোহালক্কড় ও স্বর্ণালংকারের দোকান, কামারশালা, দর্জির দোকান, ট্রাঙ্ক-বালতি তৈরির কারখানায় বহু মানুষের সমাগম ঘটে। এতে ট্রেন চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারিরা।
শহরের বাঁশবাড়ী মহল্লার বাসিন্দা ফয়জুলু হক জানান, মৌসুমি ব্যবসা হিসেবে রেললাইনের ওপর পুরোনো কাপড়ের দোকানের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে বহু মানুষ, এখানে ক্রেতাসমাগমও ব্যাপক। শীতের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে এই ব্যবসার পরিধিও বাড়তে থাকে। বছরের পর বছর ধরে এ অবস্থা চলে আসছে সৈয়দপুরে। রেল চলাচল স্বাভাবিক রাখতে অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নেওয়া উচিত বলে মনে করেন শহরের একাধিক সূত্র।
সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন এলাকার অবসরপ্রাপ্ত রেল কর্মচারী শফিকুল ইসলাম জানান, রেলওয়ে লাইন প্রতিষ্ঠার সময় ট্রেন চলাচল নির্বিঘ্ন রাখতে এর উভয় পাশে অন্তত ২০ ফুটজায়গা ফাঁকা রাখা হয়।
সে অনুযায়ী সৈয়দপুর রেল কর্তৃপক্ষ রেললাইনের উভয় পাশে পর্যাপ্ত জায়গা ফাঁকা রেখে সীমানা নির্ধারণ করে রেখেছে। রেলওয়ে আইনে ওই এলাকায় সাধারণে প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রিত। কিন্তু এর কোন তোয়াক্কা নেই সৈয়দপুরে।
সরেজমিন দেখা যায়, পোস্ট অফিস সংলগ্ন রেলওয়ের ১নং ঘুমটি থেকে সাউথ সিগনাল পর্যন্ত দুই পাশে আধা কিলোমিটার জায়গা জুড়ে বিস্তৃত পুরোনো শীতবস্ত্রের মার্কেট। এ এলাকায় মানুষের ভিড়ের কারণে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে বিভিন্ন ট্রেন। এছাড়া ওই স্থানে ট্রেনে কাটা পড়ে কয়েকবার প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেললাইনের ওপর পুরাতন কাপড়ের এক বিক্রেতা বলেন, রেললাইনের ওপর দোকান বসানো ঝুঁকিপূর্ণ। এরপরও অনেকে দোকান করছেন। তাই আমিও করেছি। তিনি জানান, বাজারে একটি দোকানের মাসের ভাড়া ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। আর এখানে দৈনিক ৫০ টাকা করে চাঁদা দিলে নিরাপদে ব্যবসা করা যায়। তবে কাদের চাঁদা দিতে হয় তা প্রকাশ করতে অক্ষমতা প্রকাশ করেন এই দোকানদার।
রেললাইনের ওই স্থানে ট্রেন চলাচলে ঝুঁকির কথা জানালেন একজন লোকোমাস্টার (ট্রেন চালক)। তিনি বলেন, সৈয়দপুর স্টেশনের ৫শ’ গজ দূরে হোম সিগন্যালের কাছে রেললাইনের ওপর অবৈধ বাজার গড়ে উঠেছে। ট্রেন এখানে এলেই আমাদের সতর্ক হতে হয়। প্রচ- ভিড়ের কারণে বাধ্য হয়ে ট্রেনের গতি কমাতে হয়। এতে সময় নষ্ট হয়।
সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনমাস্টার শওকত আলী বলেন, চালকেরা ট্রেন চলাচল নির্বিঘ্ন করতে ওই স্থান থেকে দোকানপাট উচ্ছেদের কথা বলেছেন। ট্রেন চলাচলের সুবিধা নিশ্চিত ও দুর্ঘটনার আশঙ্কার কথা ভেবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
তিনি বলেন, ওই মার্কেট থেকে আমাদের কেউ চাঁদা তোলে না। যদি কেউ এর সাথে জড়িত থাকে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সৈয়দপুর রেলওয়ে থানার (জিআরপি) অফিসার্স ইনচার্জ ( ওসি) আব্দুর রহমান বিশ্বাস বলেন, রেললাইনের ওপর পুরোনো কাপড়ের বাজারের কারণে ঝুঁকি নিয়ে চলছে ট্রেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানান হয়েছে, নির্দেশ পেলে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে। চাঁদা নিয়ে অবৈধ দোকান বসানোর সঙ্গে রেলওয়ে পুলিশের কোন সংশ্লিষ্টতা আছে কীনা তা খতিয়ে দেখা হবে বলে তিনি জানান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন