বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

ক্ষমা চাইলেন ধর্ষিত লেখিকা!

১৬ বছর কারাবাস নিরাপরাধ ব্যক্তির

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০৯ এএম

সম্প্রতি ধর্ষণের অভিযোগে ১৬ বছর সাজা খাটা এক কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তিকে সম্পূর্ণ নির্দোষ ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের আদালত। এবার সেই ঘটনা নিয়ে মুখ খুললেন ধর্ষিতা মার্কিন লেখিকা অ্যালিস সেবোল্ড। ‘দ্য লাভলি বোনস’-এর মতো বেস্ট সেলার উপন্যাসের রচয়িতা অ্যালিস ক্ষমা চেয়েছেন অভিযুক্ত কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি অ্যান্থনি ব্রডওয়াটারের কাছে।

১৯৮১ সালে ষোড়শী অ্যালিস ধর্ষিত হন। সেই ঘটনার কয়েক মাস পরে অ্যান্থনিকে দেখে নির্যাতনকারী হিসেবে ভেবে নেন লেখিকা। পুলিশ গ্রেফতার করে তাকে। প্রথম থেকেই ব্রডওয়াটার নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করলেও ১৯৮২ সালে কারাদন্ডে দন্ডিত হন তিনি। দীর্ঘ ১৬ বছর জেল খাটেন নির্দোষ ওই ব্যক্তি। ১৯৯৮ সালে তিনি ছাড়া পান। কিছুদিন আগে মামলাটির পুনর্বিচার হলে সম্পূর্ণ নির্দোষ প্রমাণিত হন ব্রডওয়াটার। এ ঘটনায় মঙ্গলবার তার কাছে ক্ষমা চাইলেন অ্যালিস। তিনি বলেন, ‘আমি বলতে চাই, আমি সত্যিই দুঃখিত। এবং আপনাকে যে পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে, সে জন্য আমি গভীর অনুতপ্ত।’ সেই সঙ্গে তিনিও এও জানিয়েছেন, ‘আমি জানি কোনও ক্ষমা প্রার্থনাই আপনার জীবনকে আর বদলে দিতে পারবে না।’ অন্যায় ভাবে যে ব্রডওয়াটারের জীবন থেকে এতগুলো বছর কেড়ে নেয়া হয়েছে, সেকথাও মেনে নেন অ্যালিস।

১৯৯৯ সালে প্রকাশিত ‘লাকি’ নামের এক বইয়ে তার উপরে হওয়া নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছিলেন লেখিকা। পরে ‘দ্য লাভলি বোনস’ বইয়েও নিজের মর্মান্তিক অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছিলেন তিনি। ১৯৮১ সালে নিউইয়র্কের সিরাকিউজ ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় তিনি নিগ্রহের শিকার হয়েছিলেন। পরে ব্রডওয়াটারকে দেখে নিগ্রহকারী হিসেবেই মনে হয়েছিল তার। যদিও পরে অন্য আরেকজনকেও সন্দেহভাজন হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন অ্যালিস। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চুলের মাইক্রোস্কপিক বিশ্লেষণের ভিত্তিতেই নির্দোষ ঘোষণা করা হয় ব্রডওয়াটারকে। অ্যালিস সেই প্রসঙ্গ তুলে জানিয়েছেন, গত ৮ দিন যাবৎ তিনি ভেবে চলেছেন, কী করে এমনটা ঘটল। সেই সঙ্গে তিনি আক্ষেপ করেছেন, আসল ধর্ষকের পরিচয় হয়তো কোনও দিনই জানা যাবে না। হয়তো সেই দুষ্কৃতী আরও অনেক নারীকেই ধর্ষণ করেছে। কিন্তু তাকে হয়তো দন্ডিত করা যাবেই না।

আর ব্রডওয়াটার। জীবনের দীর্ঘ সময় পেরিয়ে এসে আজ তিনি ৬১ বছরের বৃদ্ধ। জীবন গিয়েছে চলে জীবনের পার। জীবন থেকে চল্লিশটা বছর চলে গিয়েছে ধর্ষকের তকমা মুছতে মুছতে। এর মধ্যে দীর্ঘ ১৬টি বছর কেটেছে কারাগারের অন্ধকারে। ব্রডওয়াটারের কথায়, ‘এই ক’বছরে ক’জন আমাকে তাদের বাড়িতে যেতে ও ডিনারে যোগ দিতে ডেকেছেন সেই সংখ্যা গুনতে গিয়ে দেখলাম দশও পেরচ্ছে না! এটা একটা সাংঘাতিক মানসিক আঘাত।’ তবে অ্যান্থনির আইনজীবীরা জানিয়েছেন, অ্যালিস ক্ষমা চাওয়ায় স্বস্তি পেয়েছেন তিনি। এক গভীর ক্ষতের মুখে দাঁড়িয়ে হয়তো এইটুকু তার কাছে একমাত্র সান্ত¡নার আলো। যে আলোয় জীবনের আগামী বছরগুলোকে স্বস্তিতে বাঁচার স্বপ্নই এখন একমাত্র পাথেয় ব্রডওয়াটারের। সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (4)
Manik Pasha ২ ডিসেম্বর, ২০২১, ৬:৫৪ এএম says : 0
খুব দুঃখজনক ঘটনা সেই সাথে তীব্র নিন্দাও জানাই।
Total Reply(0)
Aman Ullah ২ ডিসেম্বর, ২০২১, ৬:৫৫ এএম says : 0
কিছু কিছু জানোয়ারের কারনে ভালো মানুষের জীবন সংসার শেষ হয়ে যায়
Total Reply(0)
Md Bachu ২ ডিসেম্বর, ২০২১, ৬:৫৬ এএম says : 0
যাহারা দুনিয়ার জাহান্নামে প্রবেশ করেছেন, শুধু তারাই জানেন কত নিরপরাধ মানুষ বছরের পর বছর জেলে পড়ে আছে।
Total Reply(0)
ইতি কথা ২ ডিসেম্বর, ২০২১, ৬:৫৬ এএম says : 0
কেউ ভুল করলে ভুল স্বীকার করতে. হয় নয়তো তাকে জুতাপেটা করতে হয়
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন