শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

জীবনের পরতে পরতে মিশে আছে ধর্ম ও ধার্মিকতা

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ২ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০১ এএম

বাস্তবতার জ্ঞান না থাকায় বর্তমানে আমাদের সমাজে ধার্মিকতাকে কিছু মুসলমান নিছক আচার-অনুষ্ঠানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ করে ফেলেছেন। দুনিয়া উল্টে গেলেও তিনি তার ঐচ্ছিক ইবাদত ছেড়ে নড়বেন না। তার মা ওষুধ আনতে বলেছেন। বাবাকে ডাক্তারখানায় নিতে হবে। স্ত্রীকে বাজার সওদা দিতে হবে। পুত্রকন্যাদের লেখাপড়ায় সহায়তা করতে হবে। তার বোন-ভাগ্নিরা তাকে দেখতে এসেছে, ভাই-ভাতিজারা সাক্ষাৎ করতে এসেছে, কিন্তু তার সময় হচ্ছে না। তিনি তার ধারণা অনুযায়ী দ্বীনের কাজে, জিকির ওজিফা তিলাওয়াতে বা মোরাকাবায় বসে আছেন। অথচ মাতা-পিতার চাহিদা পূরণ ও আত্মীয়দের হক আদায় করা ছিল তার ওপর ওয়াজিব।

তাদের দেখা দেয়া, হাল অবস্থা জানতে চাওয়া, সুখ-দুঃখের খবর নেয়া জরুরি ছিল। তারা ভাই, চাচা বা মামার দেখা ও সান্নিধ্য পেয়ে যে মানসিক শান্তিটুকু লাভ করত, সেটি তাদের পাওনা। অনেক ক্ষেত্রে তো দেখা যায় এই ধার্মিক ভাই, চাচা বা মামাটি এসব আত্মীয়ের পাওনা উত্তরাধিকার না দিয়ে আটকে রেখেছেন। এমন হলে তো তার ষোলআনাই মিছে।

ওয়ারিশানদের পাওনা আদায় না করে তিনি যে অপরাধ করেছেন এর ফলে তার কোনো ইবাদত-বন্দেগিই কবুল হচ্ছে না। আর যদি পাওনা দিয়েও থাকেন তারপরও তাদের মন খুশি করা তার দ্বীনি দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত। হাশরের দিন বহু লোক ক্ষমা লাভ করে জান্নাতে যাওয়ার জন্য রওনা হবে, কিন্তু আত্মীয়তার হক আদায় না করার ফলে তাদের আটকে দেয়া হবে। আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা কবিরা গোনাহের অন্তর্ভুক্ত। হাশরের দিন এই বন্ধন আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করে এই বন্ধন ছিন্নকারীর বিচার চাইবে এবং তাকে জাহান্নামে নিয়ে ছাড়বে।

পিতা-মাতা, ভাই-বোন, চাচা-ফুফু, মা-খালা ও তাদের দ্বারা অর্জিত ভাই-বোন ও তৎনিম্নবর্তী আত্মীয়তা রক্ষা করা, পরিচর্যা করা ইসলামের অপরিহার্য বিধান। অন্যপক্ষের আচরণে অনেক সময় এ বন্ধন ছিন্ন ও নষ্ট হয়ে যায়। তাই নিজ দায়িত্বে ক্ষমা উদারতা দয়া ও বহু ছাড়ের মাধ্যমে এসব আত্মীয়কে জড়িয়ে রাখা সীমাহীন সওয়াবের কাজ। এসব বন্ধন নষ্ট করা হারাম ও কবিরা গোনাহ। জাহান্নামে যাওয়ার অন্যতম কারণ।

অনেক মানুষ না জানার কারণে এসব বন্ধন ছিন্ন করে। কিছু মুসলমান অজ্ঞতা ও অসচেতনতার জন্য এ মহা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিকে অবহেলা করা সত্তে¡ও নিজেকে ধার্মিক ও আল্লাহর প্রিয় ব্যক্তি বলে মনে করছে। সে তার মনগড়া দ্বীনি কাজ ও ঐচ্ছিক ইবাদতের তুলনায় এসব জরুরি কাজকে কিছুই মনে করছে না।

বৃদ্ধ পিতা-মাতা, ছোট শিশু, অন্তঃসত্ত্বা রুগ্ন স্ত্রীকে ফেলে রেখে ধর্মকর্মে ডুবে থাকে। শরিয়তের বাইরে গিয়ে এরা ধার্মিক হওয়ার দোহাই দিয়ে অসামাজিক হয়ে যাচ্ছে। রোগী দেখতে যায় না। কেউ অসুবিধায় পড়লে তার খোঁজখবর নেয় না। মানুষের কষ্ট দূর করার কোনো স্পৃহা তাদের থাকে না। কঠিন কাজকর্ম অন্যদের ওপর চাপিয়ে দিয়ে সে ওজিফায় মগ্ন থাকে। ফাঁকিবাজ বা ধূর্ত প্রকৃতির এসব লোক অন্যদের দ্বারা প্রাপ্ত ও অর্জিত সুবিধাগুলো আবার ঠিকই ভোগ করে। মৃতের জানাজায় যায় না। দাফন-কাফনে অংশ নেয় না। প্রতিবেশীর বিপদে এগিয়ে যায় না। তাদের হক আদায় করে না। পরিবার ও সমাজের কোনো কাজেকর্মেও তারা আগ্রহী নয়। সামাজিক অনুষ্ঠানাদি এড়িয়ে চলে।

অঘোষিত এক বৈরাগ্যবাদ তাদের ঘিরে ধরে থাকে, যা ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ মহানবী সা. বলেছেন, উত্তম মানুষ সে-ই, যে অন্য মানুষের উপকারে আসে। অন্য হাদিসে আছে, আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তি সে-ই, যে তার সৃষ্টিকুলের জন্য বেশি উপকারী। অপর এক হাদিসে মহানবী সা. বলেছেন, যে মুমিন ব্যক্তি মানুষের সাথে মিশে এবং তাদের দেয়া দুঃখ-কষ্ট সহ্য করে সে আল্লাহর নিকট ভালো এবং অধিক প্রিয়, সেই ব্যক্তির চেয়ে যে মানুষের সাথে মিশে না এবং তাদের দেয়া দুঃখ-কষ্টও সহ্য করে না (আল হাদিস)।

জীবনকে বাদ দিয়ে ধার্মিক হওয়া যায় না। দায়িত্ব এড়িয়ে আল্লাহকে খুশি করার কোনো শর্টকার্ট রাস্তা নেই। অজ্ঞতা থেকে বেরিয়ে এসে সচেতন হয়ে সব মুসলমানকে প্রকৃত ধার্মিক হতে হবে। নিজের ইচ্ছামতো ধার্মিকতার নতুন সংজ্ঞা তৈরি করে আল্লাহকে রাজি করা যাবে না। মহানবী সা.-এর সুন্নতের বাইরে কোনো ধার্মিকতা নেই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
মোঃ কামরুজ্জামান ২ ডিসেম্বর, ২০২১, ৬:৫৯ এএম says : 0
আল্লাহ তাআলার আদেশ মেনে চলা ও তাঁর নিষিদ্ধ বিষয়গুলো থেকে বেঁচে থাকতে চাইলে একজন মুসলিমকে যে বিষয়ে বিশেষভাবে মনোযোগী হওয়া উচিৎ, তা হল তার প্রাত্যহিক রুটিন৷ একজন মুসলিম কখন ঘুম থেকে উঠবে, রাতে কখন বিছানায় যাবে - এ সকল বিষয়ে ইসলামের সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে৷
Total Reply(0)
মোহাম্মদ রমিজ ২ ডিসেম্বর, ২০২১, ৭:০০ এএম says : 0
আজ বহু মুসলিম পরিবারেই বিপরীত অভ্যাস দেখতে পাওয়া যায়৷ অনেকেই গভীর রাত পর্যন্ত রাত্রিজাগরণে অভ্যস্ত। তাদের অনেকেই ফজরের সালাত ঘুমিয়ে পার করে দেন৷ অনেকে রাত জেগে টেলিভিশন দেখে, ইন্টারনেটে ব্রাউজ করে কিংবা গল্পগুজব করে সময় কাটান, আর এগুলোর মাধ্যমে তারা বিভিন্ন ধরনের গুনাহে লিপ্ত হন৷ অনেক ছাত্রদের ধারণা যে রাত জেগে লেখাপড়া করলে ভাল ফল পাওয়া যায়৷ কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ বিপরীত৷ কেউ রাত্রিতে যথেষ্ট ঘুমিয়ে ভোরে উঠে সতেজ দেহ-মন নিয়ে দু-ঘন্টায় যতটুকু পড়া করতে পারবে, তা হয়ত রাত জেগে চার ঘন্টা লেখাপড়ার সমান৷
Total Reply(0)
মুহাম্মদ মুহিদুজজামান ২ ডিসেম্বর, ২০২১, ৭:০০ এএম says : 0
দৈনন্দিন রুটিনের মধ্যে থাকা উচিৎ নিকটাত্মীয়, বিশেষভাবে মা-বাবার খোঁজখবর নেয়া, তাঁদের প্রয়োজন পূরণ করা৷ এছাড়া স্ত্রী এবং সন্তানদের জন্য যথেষ্ট পরিমাণে সময় বরাদ্দ থাকা দরকার৷এই সমস্ত দিকনির্দেশনা মেনে প্রাত্যহিক রুটিন ঠিক করে নিয়ে তা অনুসরণ করলে একজন মুসলিম সহজেই যাবতীয় পাপাচার থেকে বেঁচে থাকতে পারবে এবং আল্লাহ তাআলার আনুগত্য করা তার জন্য সহজতর হবে ইনশা আল্লাহ৷
Total Reply(0)
কায়কোবাদ মিলন ২ ডিসেম্বর, ২০২১, ৭:০১ এএম says : 0
ইসলামের বিধান শুধু ওই ব্যক্তির জন্য, যে আল্লাহকে রব হিসেবে মেনে নিয়েছে। মুহাম্মদ (সা.)-কে নবী ও রাসুল হিসেবে মেনে নিয়েছে। আমৃত্যু আল্লাহর ইবাদত করার অঙ্গীকার করেছে। শয়নে-স্বপনে, গোপনে-প্রকাশ্যে, আলোকে-আঁধারে, ছোট থেকে বৃহত্—সব কাজে যে আল্লাহকে স্মরণ করে, ইসলাম তার জন্য। যে নিজেকে আল্লাহর কাছে সঁপে দিয়েছে, ইসলাম তার জন্য। যে দুনিয়ার জীবন থেকে পরকালের জীবনকে প্রাধান্য দেয়, ইসলাম তার জন্য।
Total Reply(0)
মিফতাহুল জান্নাত ২ ডিসেম্বর, ২০২১, ৭:০১ এএম says : 0
প্রত্যেক মুসলমানের করণীয় হলো, যে কাজই সে করুক না কেন, তা কোরআন-সুন্নাহর সঙ্গে মিলিয়ে দেখা
Total Reply(0)
সত্য উন্মোচন ২ ডিসেম্বর, ২০২১, ৭:০২ এএম says : 0
কোনো মুসলমানের জন্য ইসলামকে কাটছাঁট করা কিংবা সহজায়ন করা সম্ভব নয়। কোরআন বলছে, ‘...তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশে ঈমান রাখো আর কিছু অংশ অস্বীকার করো? সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা তা করে দুনিয়ার জীবনে লাঞ্ছনা ছাড়া তাদের কী প্রতিফল হতে পারে? আর কিয়ামতের দিন তাদের কঠিন আজাবে নিক্ষেপ করা হবে। আর তোমরা যা করো, সে সম্পর্কে আল্লাহ উদাসীন নন। ’ (সুরা: বাকারা, আয়াত: ৮৫)
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন