শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

চুক্তির পথে বিশ্ব

ভবিষ্যৎ মহামারি মোকাবেলা ডেল্টাকেও ছাপিয়ে যেতে পারে ওমিক্রন : এবার সউদী আরবেও শনাক্ত

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

করোনাভাইরাসের নবতম রূপ ওমিক্রন-এর আবির্ভাব, নতুন করে প্রাসঙ্গিক করে তুলেছে বিশ্বব্যাপী মহামারি-চুক্তির সম্ভাবনাকে। বিশেষত যে সব দেশে টিকাকরণের হার কম, সেখানে নতুন রূপ ওমিক্রন-এর দাপট রুখতে আগ্রাসী টিকাকরণ অভিযানের প্রয়োজনীয়তার কথা নতুন করে উঠে আসছে। এদিকে, গতকাল সউদী আরবে ওমিক্রনে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে।

দক্ষিণ আফ্রিকা কোভিডের নতুন রূপ ওমিক্রনের প্রাদুর্ভাব সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে জানানোর পরই, সোমবার নিজেদের মধ্যে বৈঠকে বসেন বিশ্ব নেতারা। সেখানে ভবিষ্যৎ মহামারির প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় নতুন আন্তর্জাতিক চুক্তির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা চলছে। যাকে কেউ কেউ মহামারি-চুক্তি হিসেবেও অভিহিত করছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধানের বক্তৃতা দিয়ে শুরু হয় বৈঠক। টেড্রস আধানম বলেন, ‘ওমিক্রন রূপের আবির্ভাব বুঝিয়ে দিচ্ছে কতটা বিপজ্জনক ও অনিশ্চিত পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে চলেছি আমরা।’ অস্বাভাবিক দ্রæততায় ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের নবতম রূপের আবির্ভাব যদি কোনও কম টিকাকরণ হয়েছে এমন দেশে হয়, তা হলে স্বভাবতই সেই দেশ আন্তর্জাতিক চুক্তির আওতায় আসতে চাইবে। কারণ, গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বিশেষজ্ঞদের মত, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত সকলকে টিকা দেয়া না যাচ্ছে, ততক্ষণ কেউ সুরক্ষিত নয়।’ মাত্র ৬ শতাংশ টিকাকরণের হার সম্পন্ন মহাদেশে (আফ্রিকা) ওমিক্রন-হানায় সেই উদ্বেগ বেড়েছে পাল্লা দিয়ে।

আন্তর্জাতিক চুক্তির সমর্থকদের মতে, মহামারি-চুক্তি বা এমন কোনও আন্তর্জাতিক আইনি বোঝাপড়া, মহামারির সময়ে করা একাধিক ভুলকে চিহ্নিত করতে সাহায্য করবে। তাতে বোঝা সম্ভব হবে ঠিক কী কী ভুলের কারণে এই পরিস্থিতিতে পৌঁছলাম। যাতে ভবিষ্যতে কোনও মহামারি পরিস্থিতিতে ভুলের পুনরাবৃত্তি এড়ানো সম্ভব হয়। তাদের আরও দাবি, এর ফলে বিশ্বব্যাপী একটি কাঠামো তৈরি করা সম্ভব হবে, যা আগেভাগেই আসন্ন বিপদ সম্পর্কে সচেতন করতে সক্ষম এবং অতি অবশ্যই টিকার উৎপাদন-সহ তার চাহিদা ও বণ্টনের মধ্যে সামঞ্জস্য রক্ষায় সাহায্য করবে। এর একটি মানবিক দিকও আছে। মহামারির প্রাদুর্ভাবের পরেই দেখা গিয়েছিল, চিনকে ব্রাত্য তালিকায় ঠেলে দেওয়ার প্রবণতা। ওমিক্রন রূপের প্রাদুর্ভাবে একই প্রবণতার পুনরাবৃত্তি হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশের ক্ষেত্রে। আন্তর্জাতিক মহামারি-চুক্তি থাকলে তার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একটি অংশ।

কিন্তু বিশেষজ্ঞরা সংশয়ে রয়েছেন, বিশ্বব্যাপী চুক্তি প্রস্তাবে চীন ও রাশিয়া কী অবস্থান নেবে, তা নিয়ে। বস্তুত, করোনা মহামারিতে স্পষ্ট হয়েছে বিশ্বব্যাপী টিকা বণ্টনে ভয়াবহ বৈষম্যের চিত্র। এ দিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রত্যেককে টিকাকরণের আওতায় না আনা পর্যন্ত, কেউ নিরাপদ নয়। এর মধ্যেই দুনিয়া জুড়ে নতুন করে ত্রাস ছড়িয়েছে ওমিক্রন নিয়ে। আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিণ আফ্রিকা, বৎসোয়ানা থেকে ওমিক্রন প্রাদুর্ভাবের খবর পাওয়া গেলেও, সেই মহাদেশে টিকাকরণের হার মাত্র ৬ শতাংশ। এ দিকে প্রাথমিক গবেষণা বলছে, ডেল্টা রূপের তুলনায় নয়া রূপ ওমিক্রন-এ মিউটেশনের হার ঢের বেশি। ফলে ভাইরাসের প্রকোপ থেকে বাঁচার এই মুহ‚র্তে স্রেফ একটিই রাস্তা- আরও বেশি সংখ্যক মানুষকে টিকাকরণের আওতায় আনা। সে জন্য প্রয়োজন একটি বিশ্বব্যাপী বোঝাপড়ার। ওমিক্রন-হানার প্রেক্ষিতে সেই বোঝাপড়া কি এ বার দিনের আলো দেখবে? প্রশ্ন এখন সেটাই।

এদিকে, সংক্রমণের নিরিখে ডেল্টাকেও ছাপিয়ে যেতে পারে কোভিডের নয়া রূপ ওমিক্রন। সম্প্রতি এমনই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। মঙ্গলবার সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে দক্ষিণ আফ্রিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর কমিউনিকেবল ডিজিজেস (এনআইসিডি)-এর অধিকর্তা আদ্রিয়ান পুরেন বলেন,‘সংক্রমণের নিরিখে ডেল্টাকে অতিক্রম করবে কোন রূপ, এই প্রশ্নটা অনেক দিন ধরেই ঘুরপাক খাচ্ছিল। হতে পারে ওমিক্রনই হয়তো ডেল্টার জায়গাটা নেবে।’ পুরেনের সতর্কবার্তা, যদি ওমিক্রন আরও বেশি সংক্রামক হয় ডেল্টার থেকে তা হলে পরিস্থিতি যে আরও ভয়াবহ হয়ে উঠবে সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। তবে ওমিক্রনের ক্ষমতা কতটা, টিকা নেয়া ব্যক্তির প্রতিরোধ ক্ষমতা ভেঙে ফেলছে কি না এবং এর উপসর্গ কতটা মারাত্মক হতে পারে চার সপ্তাহের মধ্যে বিজ্ঞানীদের জানতে হবে।

অন্যদিকে, সউদী আরবে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা এসপিএ গতকাল এই তথ্য জানিয়েছে। সউদী আরবে প্রবেশের মাধ্যমে করোনার ওমিক্রন ধরন মধ্যপ্রাচ্যে প্রবেশ করল। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, সউদী আরবের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ওই ব্যক্তিকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ওই ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছে এমন ব্যক্তিদেরও আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। ওমিক্রনে আক্রান্ত ওই ব্যক্তি সউদী নাগরিক। তবে ওই ব্যক্তি আফ্রিকার কোন দেশ থেকে সেখানে গিয়েছেন, তা জানায়নি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সূত্র : দ্য ইকোনমিক টাইমস, রয়টার্স।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
Muhammad Abdul Waresh ২ ডিসেম্বর, ২০২১, ৬:৩৮ এএম says : 0
সবগুলোই প্রতারনা ও ধান্ধাবাজি!
Total Reply(0)
Md Abdur Rahman ২ ডিসেম্বর, ২০২১, ৬:৪০ এএম says : 0
কোনো ভুল করে থাকলে ক্ষমা করে দিবেন, এই মৃত্যুর মিছিলে আপনার আমার বেঁচে থাকার ভরসাই বা কতটুকু!
Total Reply(0)
Nowshad Ahamad ২ ডিসেম্বর, ২০২১, ৬:৪০ এএম says : 0
পৃথিবী অসুস্থ তাই আজ আমাদের এই অবস্থা আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন।
Total Reply(0)
Faruk Miah ২ ডিসেম্বর, ২০২১, ৬:৪০ এএম says : 0
অমিকনকে যদি মারাত্মক বা বিপজ্জনক না ধরা হয়, তাইলে কি পাবলিক টিকা নিবো? আর সরকারও এত টাকা খরচ করে কিনবোও না।
Total Reply(0)
Shahjahan Bikram ২ ডিসেম্বর, ২০২১, ৬:৪১ এএম says : 0
· অমিক্রন আসলে টীকা ব্যবসায়ের একটা কৌশল, যে কৌশলে বিশ্বের সকল দেশের অর্থ হাতিয়ে নিয়ে দেশগুলোকে অর্থনীনৈতিকভাবে দুর্বল করে নিজেদের আদিপত্ত মজবুত করবে ধনী কয়েকটি দেশ। বিপদজনক না বললে এমন সুকৌশলে ব্যর্থ হবে তারা। তাই এটি এখন বিপদজনক বিশ্বের কাছে।
Total Reply(0)
Mohd Shahjahan ২ ডিসেম্বর, ২০২১, ৬:৪১ এএম says : 0
ওমিক্রন ভাইরাসের বিরুদ্ধে সতর্ক হওয়া ছাড়া আমাদের আপাতত কিছুই করার নেই। আজকে ওমিক্রন এসেছে, কালকে হয়তো ওর বাপ এসে হাজির হবে। দিন যত যাবে,ভয়াবহ রোগের বিস্তার তত বাড়তেই থাকবে। এর জন্য দায়ী আমরা মানুষেরা। আমরা, আমাদের কর্মকান্ড দ্বারা প্রকৃতির উপর জুলুম করছি, প্রকৃতি নির্মম প্রতিশোধ নিচ্ছে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন