শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

করোনা সংকটের মধ্যেও বরিশাল কর অঞ্চলে আয়কর আদায়ে আশাব্যঞ্জক প্রবৃদ্ধি

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ২ ডিসেম্বর, ২০২১, ৯:৫৯ এএম

করোনা মহামারীতে নজিরবিহীন আর্থÑসামাজিক সংকটের মধ্যেও বরিশাল কর অঞ্চলে আয়কর সংগ্রহে ১৩% প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হয়েছে। গত অর্থবছরে বরিশাল কর অঞ্চলে সাড়ে ৬শ কোটি টাকা কর আহরন লক্ষ্যমাত্রার বিপরিতে জুন পর্যন্ত প্রায় ৫৯৩ কোটি টাকা আয় সম্ভব হয়েছে বলে জানা গেছে যা আগের বছরে একই সময়ে ছিল সোয়া ৫শ কোটি টাকার মত। ২০১৮Ñ১৯ অর্থ বছরের একই সময়ে ছিল প্রায় ৪৮০ কোটি টাকা।
২০০১Ñ০২ অর্থ বছরে মাত্র ২৩ কোটি টাকা আয়কর আদায়ের মধ্যে দিয়ে যাত্রা করা বরিশাল কর অঞ্চলে চলতি অর্থ বছরে ৭শ কোটি টাকা সংগ্রহের অভিষ্ট লক্ষে কাজ করছে কর প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীগন। গত ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত নতুন অর্থ বছরে ২শ কোটি টাকার মত রাজস্ব আহরন সম্ভব হয়েছে বলেও জানা গেছে।
তবে করদাতাদের সাথে আরো নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলা সহ সৌজন্যমূলক আচরন বৃদ্ধির তাগিদ রয়েছে কর দাতাদের তরফ থেকে। পাশাপাশি যেকোন অসত উদ্যেশ্যে নুন্যতম বাড়তি চাপ সহ হয়রানী পরিহারের বিষয়টির প্রতিও বিশেষ নজরদারীর আহবান জানান হয়েছে। করদাতাদের সামাজিক ন্যায়বিচার ও নিরাপত্তার বিষয়টির প্রতিও গুরুত্ব প্রদানের তাগিদ দিয়েছেন একাধীক করদাতা।
তবে কর বিভাগের দায়িত্বশীল মহল যেকোন হয়রানী সহ অনৈতিক কর্মকান্ড কঠোরভাবে দমনের প্রত্যয়ের কথা জানিয়ে আয়করের প্রতি সব শ্রেণী ও পেশার মানুষের ভীতি দুর হয়েছে বলে দাবী করেছেন। এমনকি কর প্রদানে নৈতিক দায়িত্বের বিষয়টি ক্রমে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে বলে জানিয়ে এরফলে আয়কর আহরনে প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হচ্ছে বলেও দাবী কর বিভাগের দায়িত্বশীল মহলের।
কৃষি এ অঞ্চলের মানুষের প্রধান জীবিকার পাাশাপশি কৃষিÑঅর্থনীতিই মূল চালিকা শক্তি হলেও অন্যান্য ব্যবসা ক্রমে সম্প্রসারিত হলেও গত দুটি অর্থ বছরে করেনা মহামারী সারা দেশের মত এ অঞ্চলেও বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। তবে এর পরেও বরিশাল কর অঞ্চলে প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন বরিশাল কর অঞ্চলের কমিশনার মোঃ মুস্তাফা।
করোনা মহামারীতে গত দুটি অর্থ বছরের শেষ ৩টি মাসে সব ধরনের ব্যবসা-বানিজ্যে স্থবিরতা বরিশাল কর অঞ্চলের আর্থÑসামাজিক ব্যবস্থায়ও বিরূপ প্রভাব ফেলে। যা আবাসন খাত সহ অনেক ক্ষেত্রেই এখনো অব্যাহত রয়েছে। বিগত দুটি বাংলা নববর্ষ কেন্দ্রীক বকেয়া আদায় ছাড়াও দু বছরে ৪টি ঈদে এ অঞ্চলের বানিজ্যিক কর্মকান্ডে ছিল ভাটির টান। এমনকি শারদীয়া দূর্র্গা পুজাতেও বানিজ্যক কর্র্মকান্ড প্রায় স্থবির ছিল। এখনো দক্ষিণাঞ্চলের বিপুল সংখ্যক ক্ষুদ্র ও মাঝারী শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এমনকি গত দুটি অর্থ বছরে দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক ও নৌ পরিবহন ব্যবসাও যথেষ্ঠ বিপর্যস্ত।
এরপরেও গত অথর্ বছরে দক্ষিণাঞ্চলে আয়কর রিটার্ন দাখিল, নতুন করদাতা তালিকাভ’ক্ত সহ কর আদায়ে প্রবৃদ্ধিকে যথেষ্ঠ আশাব্যঞ্জক বলছেন কর প্রশাসনের দায়িত্বশীল মহল। গত ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলে ৬৭ হাজারেরও বেশী মানুষ রিটার্ন দাখিল করেছেন। এমনকি নভেম্বর মাস যড়ে ুরিটার্ন ব্যাবস্থাপনা ও কর তথ্য সেবা প্রদান কার্যক্রমে ৫০ হাজারের বেমী মানুষ রিটার্নূ দাখিল করেচেবন। এসময়ে প্রায় ৯ কোটি টাকা কর জমা হয়েছে। তবে এখনো দক্ষিণাঞ্চলের বেশীরভাগ মাঝারী ও বৃহত শিল্প প্রতিষ্ঠান সহ বড় মাপের ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর আয়কর রিটার্ন ঢাকাতে জমা হওয়ায় এ অঞ্চলের কর আদায়ে আরো প্রবৃদ্ধি অর্জন ব্যাহত হচ্চে বলেও জানা গেছে।
২০০১-২০০২ অর্থবছরে বরিশাল কর অঞ্চল প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে মাত্র কুড়ি হাজার করদাতার থেকে গত অর্থ বছরে বরিশাল অঞ্চলে করদাতার সংখ্যা দেড় লাখেরও ওপরে উন্নীত হয়েছে। এমনকি এ অঞ্চলে টিআইএন গ্রহনকারীর সংখ্যা প্রায় আড়াই লাখের কাছে বলে জানিয়েছেন বরিশাল কর অঞ্চলের কমিশনার মোঃ মুস্তফা। নতুন অর্থ বছরে রিটার্ন দাখিল ও কর প্রদানকারীর সংখ্যায় আরো প্রবৃদ্ধি অর্জন সহ লক্ষমাত্রায় পৌছার ব্যপারেও আশাবাদ ব্যাক্ত করেন তিনি।
তবে এ অঞ্চলে কর প্রশাসন এখনো চলছে জনবল সংকট সহ নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যে। বরিশাল কর অঞ্চলের ২২টি সার্কেলে মঞ্জুরীকৃত প্রায় ২৬৫ জনবলের মধ্যে অর্ধ শতাধীক গুরুত্বপূর্ণ পদই শূণ্য। ২২টি সার্কেলে ৮টি উপ-কমিশনারের পদ শূণ্য। ফলে একজন কর্মকর্তাকে একাধীক সার্কেলের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হীমশীম খেতে হচ্ছে। উপ-কর কমিশনার থেকে যুগ্ম কর কমিশনার সব পদেই জনবল সংকট। পরিদর্শকের বিপুল সংখ্যক পদও শূণ্য। দ্বীপজেলা ভোলার ৭টি উপজেলার জন্য মাত্র ১জন ইনেসপেক্টর কর্মরত আছে।
এদিকে বরিশালে কর কমিশনারেট-এর জন্য একটি বহুতল ভবন নির্মানের বিষয়টি গত প্রায় এক যুগের বেশী সময় ধরে নানা টেবিলে ঘুরপাক খাচ্ছে। প্রায় ৮০ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যায়ের ঐ ভবন নির্মান প্রকল্পটি কবে আলোর মুখ দেখবে তা বলতে পারছেন না কেউ। বরিশাল মহানগরীর নিজস্ব ও ভাড়া বাড়ীতে ছড়িয়ে ছিটেয়ে আছে কর কমিশনার সহ উপ-কমিশনারদের দপ্তরগুলো।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন