বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

যানজটে প্রবৃদ্ধি হারাচ্ছে দেশ

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) বার্ষিক প্রতিবেদন বছরে জিডিপির সরাসরি ক্ষতি হচ্ছে ২ দশমিক ৫ শতাংশ জাতীয় বাজেটের প্রায় ২০ শতাংশের সমান মাথাপিছু আয়ে মাইনাস ৫ দশমিক ৮ শ

একলাছ হক | প্রকাশের সময় : ৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০২ এএম

রাজধানী ঢাকা দুই কোটি মানুষের বসবাসের শহর। এখানে জনসংখ্যার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে যানবাহন। বাড়ছে না শুধু সড়ক। অসহ্য যানজটে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা। নাগরিকদের সবচেয়ে বড় বিরক্তির কারণ এই যানজট। ঢকার সড়কগুলোতে ধারণক্ষমতার তুলনায় গাড়ির সংখ্যা কয়েক গুণ বেশি।
অযান্ত্রিক যানের অবাধ বিচরণ, যত্রতত্র পার্কিং, ফুটপাথ দখল, পরিকল্পনাহীন ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, শহরের ভেতর দিয়ে ট্রেন চলাচল, চালক ও পথচারীদের নিয়ম না মানা, সড়কের মাঝ থেকে গাড়িতে উঠা, বাস স্টেশন ছাড়া সড়কের মাঝে যাত্রী উঠনামা করানো এসব কাজ যেন নিত্য নৈমত্ত্যিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। এছাড়া অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও পরিকল্পনাহীন ব্যবস্থাপনা তো আছেই। শহরের সড়কের একটি বড় অংশ আবার পার্কিং ও হকারদের দখলে রয়েছে।
একদিকে উন্নয়নের কাজ, অন্যদিকে সড়কে চলছে ফিটনেসবিহীন যানবাহন। এই দুইয়ে মিলে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। পরিবেশ ও স্বাস্থ্যগত ক্ষতি বাদ দিয়ে বছরে প্রায় এক লাখ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে ঢাকার যানজটে। এ ক্ষতি দেশের জাতীয় বাজেটের প্রায় ২০ শতাংশের সমান। ঢাকা শহরে যানজটের কারণে বছরে জিডিপির সরাসরি ক্ষতি হচ্ছে ২ দশমিক ৫ শতাংশ। এছাড়া প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মাথাপিছু আয়ের ক্ষতি হচ্ছে মাইনাস ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। সেই সঙ্গে ঢাকার ওভার প্রবৃদ্ধির কারণে ক্ষতি হয় জিডিপির ৬ শতাংশ। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) বার্ষিক গবেষণা সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। তবে যানজট সমস্যার স্বল্পমেয়াদি কোনো পদক্ষেপই কাজে আসছে না। দীর্ঘমেয়াদি ও সমন্বিত পরিকল্পনা এবং নীতিগত সিদ্ধান্ত ও এর বাস্তবায়নের মাধ্যমে এ সমস্যার কিছুটা সমাধান সম্ভব। তারই অংশ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা গণপরিবহন-ব্যবস্থাকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনে ‘ঢাকাস ওভার গ্রোথ অ্যান্ড ইস কস্ট’ শীর্ষক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) পরিচালক আহমেদ আহসান। রাজধানীর লেকশোর হোটেলে এ সম্মেলন হচ্ছে। বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেনের সভাপতিত্বে দ্বিতীয় দিনে প্রায় ১৫টির মতো গবেষণাপত্র উপস্থাপন করা হয়।
পিআরআই পরিচালক বলেন, বাংলাদেশের যে মানুষ শহরে বাস করে তার অধিকাংশ ঢাকায়। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি। এর মধ্যে প্রধান শহরগুলোতে বাস করে ৩১ দশমিক ৯ শতাংশ। আবার ঢাকায় বাস করে ১১ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ। ১০ লাখের মতো মানুষ বাস করে এমন শহর মাত্র ৫টি। চীনের মোট জনসংখ্যা প্রায় ১৩৮ কোটি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শহরে বাস করে ৩ দশমিক ১ শতাংশ। সবচেয়ে বড় শহরে বাস করে ১ দশমিক ৮ শতাংশ, ১০ লাখের মতো মানুষ বাস করে এমন শহর রয়েছে ১০২টি। ভারতের জনসংখ্যা প্রায় ১৩৩ কোটি। এরমধ্যে শহরে বাস করে ৬ শতাংশ। সবচেয়ে বড় শহরে বাস করে ২ শতাংশ মানুষ। ১০ লাখের বেশি মানুষের শহর রয়েছে ৫৪টি।
আহমেদ আহসান আরও বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নের অধিকাংশ ঢাকাকেন্দ্রিক। অন্যান্য শহরে উন্নয়নের ঘাটতি রয়েছে। এছাড়া বিদ্যুৎ ব্যবহারেও অন্যান্য শহর পিছিয়ে রয়েছে। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা অনেক। কিন্তু উৎপাদন হয় কম। দারিদ্র্য নিরসনের হার শহরে কম। গ্রামে বেশি। এই হার জাতীয় হারের চেয়ে গ্রামে বেশি। এছাড়া শ্রমিকদের মজুরি হারের প্রবৃদ্ধি শহরে কমছে। আগে যেখানে প্রবৃদ্ধির এই হার ১২ শতাংশ ছিল। এখন সেটি কমে ৮ শতাংশ হয়েছে।
নগর পরিকল্পনাবিদেরা বলছেন, রাজধানীতে যে পরিমাণ নিবন্ধন করা যানবাহন চলাচল করছে তার প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়েও বেশি। এর পাশাপাশি ঢাকা মহানগরে প্রায় ১০ লাখ রিকশা চলছে। যানজটের অন্যতম আরেকটি কারণ ব্যক্তিগত ছোট গাড়ি বা প্রাইভেট কার। এসব প্রাইভেটকার শহরের মূল সড়কে পাকিং করে রাখা হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। চাপ সামলাতে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি উভয় পরিকল্পনা নিতে হবে। মেট্রোরেল বাস্তবায়ন হলে যানজট নিরসনে বড় ভূমিকা রাখবে। সড়কে পার্কিং বন্ধ করা, গাড়ি চলাচলের জন্য রাস্তাকে নিরবচ্ছিন্ন রাখার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। আধুনিক সিগন্যাল-পদ্ধতি, বাস বে ও বাস স্টপেজ সংখ্যা বাড়ানো, আন্ডারপাস ও পদচারী-সেতু স্থাপন, গণপরিবহন বাড়িয়ে ছোট গাড়ি কমানো, বহুতল ভবনে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখা জরুরি। ###

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন