এবার ব্রিটিশ রাজবধূ মেগান মার্কেলের বিরুদ্ধে মুখ খুললেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি মেগানের বিরুদ্ধে রানীকে অসম্মান করার এবং প্রিন্স হ্যারির সাথে কারসাজি করার অভিযোগ করে বলেন, হ্যারিকে ব্যবহার করা হয়েছে এবং তার পরিবারকে আঘাত করা হয়েছে। এদিকে, ব্রিটিশ ট্যাবলওয়েড পত্রিকা দ্য মেইলের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত গোপনীয়তার লঙ্ঘনের মামলায় যে জয় পেয়েছিলেন যুক্তরাজ্যের মেগান, তা বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট।
গত সোমবার জিবি নিউজের জন্য নাইজেল ফারাজের সাথে দেয়া এক সাক্ষাতকারে ট্রাম্প রানির প্রতি অসম্মানজনক আচরণ করার জন্য ডাচেস অফ সাসেক্সের সমালোচনা করেন। এটি বুধবার স্থানীয় সময় সন্ধা ৭ টায় প্রচারিত হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসাবে বিদায় নেয়ার পরে এটিই হচ্ছে তার দেয়া প্রথম সাক্ষাতকার। সেখানে তিনি মেগান সম্পর্কে বলতে গিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি তার ভক্ত নই। আমি প্রথম দিন থেকে ছিলাম না। আমি মনে করি হ্যারিকে ভয়ঙ্করভাবে ব্যবহার করা হয়েছে এবং আমি মনে করি একদিন সে এর জন্য অনুশোচনা করবে।’ তিনি যোগ করেন, ‘আমি মনে করি হ্যারিকে ব্যবহার করা হয়েছে এবং ভয়ঙ্করভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। আমি মনে করি এটি তার পরিবারের সাথে তার সম্পর্ক নষ্ট করেছে এবং এটি রানীকে কষ্ট দিয়েছে। আমি মনে করি তিনি রাজপরিবারের প্রতি এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে রানীর প্রতি অত্যন্ত অসম্মানজনক।’ সাক্ষাতকারে, ট্রাম্প রানীকে ‘একজন মহান মহিলা, এত মহান ব্যক্তি, একজন ঐতিহাসিক ব্যক্তি’ হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন।
ট্রাম্প ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের বায়ু শক্তি পরিকল্পনাকে ‘হাস্যকর’ বলেও অভিহিত করেন। তিনি বলেন, জনসন যুক্তরাজ্যকে নেট-জিরো-কার্বন অর্থনীতির দিকে ঠেলে দেয়ার জন্য ‘হাস্যকর’ উইন্ডফার্মগুলোকে সমর্থন করে একটি ‘বড় ভুল’ করছেন। সাবেক এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন যে, তিনি এখনও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে পছন্দ করেন তবে দাবি করেন যে, তিনি পুনর্নবীকরণযোগ্য বায়ু শক্তিকে সমর্থন দিয়ে ভুল করেছেন।
ট্রাম্প ২০২০ নির্বাচনে ‘কারচুপি’ বিষয়ে করা বিতর্কিত দাবির পক্ষে তার যুক্তিগুলো আবারও উপস্থাপন করেন। প্রেসিডেন্ট বাইডেনের অধীনে বিশ্ব মঞ্চে আমেরিকার অবস্থান নিয়ে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি হোয়াইট হাউস অফিস থেকে উইনস্টন চার্চিলের আবক্ষ মূর্তি অপসারণের জন্য বাইডেনের সমালোচনাও করেছিলেন।
এদিকে, চলতি বছরের গোড়ার দিকে যুক্তরাজ্যের হাইকোর্টের বিচারক মার্ক ওয়ার্বি মামলার বাদি মেগান মার্কেলের পক্ষে রায় দিয়েছিলেন। তারপর ঘোষিত রায় পুনর্বিবেচনা করার জন্য আবেদন করেছিল আসামিপক্ষ দ্য মেইল। গতকাল সেই শুনানিতে সেই আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। পাশপাশি বলেছেন, পূর্বের রায়ই বহাল থাকবে। মামলার বিবরণীতে জানা যায়, যুক্তরাজ্যের রাজপরিবারের কনিষ্ঠ উত্তরাধীকার ও রানী এলিজাবেথের নাতি রাজপুত্র হ্যারির সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার আগে, ২০১৮ সালের আগস্টে নিজের বাবা থমাস মার্কেলকে একটি চিঠি লিখেছিলেন মেগান।
৫ পৃষ্ঠার সেই চিঠিতে হ্যারির সঙ্গে নিজের সম্পর্কের বিষয়টি বাবাকে জানিয়েছিলেন তিনি, পাশাপাশি বিভিন্ন কারণে তার সমালোচনাও করেছিলেন। তবে অসুস্থ থাকার কারণে সেই চিঠিটি পাননি থমাস মের্কেল। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে সেই চিঠি নিয়ে প্রতিবেদন করে দ্য মেইল। প্রতিবেদনে সেই চিঠির অনুলিপিও সংযুক্ত করে দেয়। তার পরপরই ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘনের অভিযোগে দ্য মেইলের বিরুদ্ধে মামলা করেন মেগান। মামলার অভিযোগে তিনি বলেন, ‘পত্রিকাটি যা করেছে তা অবৈধ ও অমানবিক এবং যে বিপর্যয় তারা সৃষ্টি করেছে, তা অনেক ব্যাপক ও গভীর।’
হাইকোর্টে যখন এই মামলার বিচার চলছিল সে সময় দ্য মেইলের আইনজীবীরা প্রথমে দাবি করেন, মেগান আগে থেকেই জানতেন যে তিনি চিঠি লিখলে তা প্রকাশ্যে আসার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে এবং তাতে তিনি ব্যাপকভাবে প্রচার পাবেন। চিঠি লেখার সময় তার মাথায় এই চিন্তা কাজ করছিল। কিন্তু মেগান দৃঢ়ভাবে এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেন। তারপর আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, মেগানের বাবা থমাস মার্কেল এই চিঠির প্রকাশ্যে আনার সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে যুক্ত; কিন্তু সেই দাবির পক্ষেও প্রয়োজনীয় সাক্ষ্য-প্রমাণ হাজির করতে ব্যর্থ হন তারা।
চলতি বছরের শুরুতে সেই মামলার রায় ঘোষণা করেন আদালত। রায়ে দ্য মেইলকে দোষীসাব্যস্ত করা হয় এবং পত্রিকার সামনের পৃষ্ঠায় নিজেদের ভুল স্বীকার ও মেগানের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করে প্রতিবেদন ছাপার নির্দেশ দেয়া হয়। পাশাপাশি ব্রিটেনের এই রাজবধুর ব্যক্তিগত সম্মানহানির জন্য উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদানের আদেশও দেন আদালত। সূত্র : রয়টার্স, দ্য গার্ডিয়ান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন