শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

১৩ জনের মৃত্যুদণ্ড যাবজ্জীবন ১৯

আমিনবাজারে ৬ ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যার বিচার

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০১ এএম

পবিত্র শবেবরাতের রাতে ডাকাত সন্দেহে ৬ ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যার বিচারে ১৩ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক ইসমত জাহান এ রায় দেন। মৃত্যুদণ্ড ছাড়াও রায়ে ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ২৫ জনকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়। মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্তরা হলেন, মামলার বাদী (পরবর্তীতে প্রধান আসামি) বালু ব্যবসায়ী আব্দুল মালেক, সাঈদ, আব্দুর রশিদ, ইসমাইল হোসেন রেপু, জামশের আলী, মীর হোসেন, মজিবুর রহমান, আনোয়ার হোসেন, রজ্জব আলী, আলম নুরা, মোহাম্মদ রানা, আব্দুল হামিদ এবং আসলাম মিয়া। মৃত্যুদণ্ডের সঙ্গে প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেয়া হয়। এছাড়া দণ্ডবিধির ২০১/৩৪ ধারায় তাদের ৭ বছর করে কারাদণ্ড, ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়।

যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তরা হলেন, শাহীন আহমেদ, ফরিদ খান, রাজীব হোসেন, মো. ওয়াসিম, সাত্তার, মো. সেলিম, মনির হোসেন, আলমগীর, মোবারক হোসেন, অখিল খন্দকার, বশির, রুবেল, নূর ইসলাম, শাহাদত হোসেন জুয়েল, টুটুল, মাসুদ, মখলেস, তোতুন ও সাইফুল। সরকারপক্ষের সহকারী কৌঁসুলি (এপিপি) শাকিলা জেসমিন এ তথ্য জানান। ঘটনার এক দশক পর চাঞ্চল্যকর এ মামলার রায় হলো।

খালাসপ্রাপ্ত ২৫ আসামির মধ্যে রয়েছেন, বাদশা মিয়া, সালাম, আফজাল, অখিল খন্দকার, নিজাম, রহিম, শাহজাহান, সুলতান, সোহাগ, লেমন, সায়মন, এনায়েত, দুলাল, হায়দার, খালেক, ইমান আলী, আলম, আমিন, সালেহ আহমেদ, শামসুল হক, রহিম-২, মো. সেলিম, সানোয়ার, আনোয়ার এবং সাইফুল।

২০১১ সালের ১৭ জুলাই রাতে ডাকাত সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করা হয় ৬ ছাত্রকে। তারা সাভারের আমিনবাজারের বড়দেশী গ্রামের কেবলাচরে ঘুরতে গিয়েছিল। নিহতরা হলেন, ধানমন্ডির ম্যাপললীফ স্কুলের ‘এ’ লেভেলের ছাত্র শামস রহিম শাম্মাম, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক দ্বিতীয়বর্ষের ছাত্র ইব্রাহিম খলিল, বাঙলা কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয়বর্ষের ছাত্র তৌহিদুর রহমান পলাশ, তেজগাঁও কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রথমবর্ষের ছাত্র টিপু সুলতান, মিরপুরে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউবিটি) বিবিএ দ্বিতীয়বর্ষের ছাত্র সিতাব জাবীর মুনিব এবং বাঙলা কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র কামরুজ্জামান। নিহতদের সঙ্গে থাকা বন্ধু আল-আমিন গুরুতর আহত হলেও প্রাণে বেঁচে যান। ঘটনার পর ডাকাতির অভিযোগে আহত আল-আমিনসহ নিহতদের বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানায় ডাকাতির মামলা করেন স্থানীয় বালু ব্যবসায়ী আবদুল মালেক। এছাড়া পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা গ্রামবাসীদের আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করে। মামলার তদন্তে প্রথমোক্ত মামলার বাদী বালু ব্যবসায়ী আব্দুল মালেককে প্রধান আসামি করা হয়।

গতকাল রায় ঘোষণার আগে মামলার ৫৭ আসামির মধ্যে ৪৪ জনকে সকাল ৮টার পর ঢাকার কেরানীগঞ্জস্থ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আদালতে তোলা হয়। তাদের রাখা হয় আদালতের হাজতখানায়। সেখান থেকে বেলা ১১টার পর এজলাসে তোলা হয়। মামলার মোট আসামি ছিলেন, ৬০ জন। বিচার চলাকালে ৩ আসামি মারা গেছেন। অবশিষ্ট ৫৭ জনের মধ্যে ৪৫ জন ছিলেন হাজতে। পলাতক রয়েছেন ১২ জন। গত ২২ নভেম্বর আসামিপক্ষ ও সরকারপক্ষের কৌঁসুলিদের যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন শুনানি শেষ হয়। পরে আদালত রায় ঘোষণার জন্য ২ ডিসেম্বর দিনধার্য করেন। একইসঙ্গে ৪১ আসামির জামিন বাতিলের আদেশ দেন। মামলায় ৯২ সাক্ষীর মধ্যে ৫৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে এ রায় দেয়া হয়।

এর আগে ২০১৩ সালের ৭ জানুয়ারি তদন্ত শেষে র‌্যাবের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরীফ উদ্দিন আহমেদ ৬০ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। একই বছর ৮ জুলাই আদালত ৬০ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের মাধ্যমে মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু করেন।
বিচার চলাকালে মামলায় ৫৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। ঘটনার পর এ মামলায় গ্রেফতারের পর এজাহারভুক্ত ১৪ আসামি ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন, ডাকাতি মামলার বাদী (পরবর্তীতে আসামি) আব্দুল মালেক, সাঈদ মেম্বার, আব্দুর রশিদ, ইসমাইল হোসেন রেফু, নিহর ওরফে জমশের আলী, মীর হোসেন, মজিবর রহমান, কবির হোসেন, আনোয়ার হোসেন, রজুর আলী সোহাগ, আলম, রানা, আ: হালিম, আসলাম মিয়া, শাহীন আহমেদ, ফরিদ খান, রাজীব হোসেন, হাতকাটা রহিম, মো. ওয়াসিম, সেলিম মোল্লা, সানোয়ার হোসেন, শামসুল হক ওরফে শামচু মেম্বার, রাশেদ, সাইফুল, সাত্তার, সেলিম, মনির, ছাব্বির আহম্মেদ, আলমগীর, আনোয়ার হোসেন আনু, মোবারক হোসেন, অখিল খন্দকার, বশির, রুবেল, নূর ইসলাম, আনিস, সালেহ আহমেদ, শাহাদাত হোসেন রুবেল, টুটুল, অখিল, মাসুদ, নিজামউদ্দিন, মোখলেছ, কালাম, আফজাল, বাদশা মিয়া, তোতন, সাইফুল, রহিম, শাহজাহান, সুলতান, সোহাগ, লেমন, সায়মন, এনায়েত, হয়দার, খালেদ, ইমান আলী, দুলাল ও আলম।
এছাড়া বিচার চলাকালে কবির হোসেন, রাশেদ এবং পর্বত মারা যান। রায়ে ঘটনার দায় থেকে তাদের অব্যাহতি দেয়া হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
Sarkar Ashik ৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ৭:২৫ এএম says : 0
কর্মের ফল দুনিয়াতেই ভোগ করে যাইতে হবে আল্লাহ সর্ব শক্তিমান
Total Reply(0)
MD Azim ৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ৭:২৫ এএম says : 0
·,এবিচার,, কর তে ১১ বোছর লাগলো,,হায় রে ডিজিটাল দেশ,
Total Reply(0)
Mohammad Abdul Ahad ৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ৭:২৬ এএম says : 0
আলহামদুলিল্লাহ্! রায়টা যেন দ্রুত কার্যকর হয় এই কামনা রইলো।
Total Reply(0)
Shakil Hossain ৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ৭:২৬ এএম says : 0
এলাকার কিছু অশিক্ষিত অতি ভাব নিয়ে চলা মুরব্বিরা এরকম কাজ করে! এদের সঠিক পরিনতি হয়েছে!
Total Reply(0)
Asif Zaman ৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ৭:২৬ এএম says : 0
এইটাই নিয়তি আজকে যাকে মেরে নিজেকে ভাবছো তুমি একজন হিরু কাল কে তোমাকেই হতে হবে 00যিরু আজ যাকে কাদাচ্ছ্য কাল্কে তুমি নিজে কাদার জন্য প্রুস্তুতিটাও নিও এটাই জিবন আল্লাহ ছার দেন ছেরে দেন না। এটাই জিবনের সমিকরন
Total Reply(0)
Mahbubul Alam Nizam ৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ৭:২৬ এএম says : 0
দেশে ঘটে যাওয়া প্রতিটি অন্যায়ের ঘটনার জন্য যদি এরকম দৃষ্টান্তমূলক সাজা হত তাহলে দেশের অধিকাংশ অন্যায় কমে যেত।।।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন