শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মহানগর

শান্তির বৃক্ষ হচ্ছে পবিত্র কোরআন

খুৎবা পূর্ব বয়ান

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ৮:০২ পিএম

পবিত্র কোরআনের শিক্ষা থেকে অনেক দূরে অবস্থান করায় সমাজে অশান্তি বিরাজ করছে। শান্তির জন্য চাই শান্তির বৃক্ষে আশ্রয় নেয়া আর এ শান্তির বৃক্ষ হচ্ছে পবিত্র কোরআন। পবিত্র কোরআনকে আঁকড়ে ধরতে পারলেই দুনিয়া আখেরাতে কল্যাণ নিহিত। আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে পেশ ইমাম এসব কথা বলেন।

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মুফতি মিজানুর রহমান আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, পৃথিবীর সর্বত্র যে অশান্তি বিরাজ করছে এর জন্য আমরা প্রত্যেকেই দায়ী। কেননা আজ আমরা পবিত্র কোরআনের শিক্ষা থেকে অনেক দূরে অবস্থান করায় সমাজে অশান্তি বিরাজ করছে। শান্তির জন্য চাই শান্তির বৃক্ষে আশ্রয় নেয়া আর এ শান্তির বৃক্ষ হচ্ছে পবিত্র কোরআন। পবিত্র কোরআনকে আঁকড়ে ধরতে পারলেই দুনিয়া আখেরাতে কল্যাণ নিহিত। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে এসেছে এক নূর এবং উজ্জ্বল কিতাব। এর মাধ্যমে আল্লাহ সেসব লোককে শান্তির পথে পরিচালিত করেন, যারা তার সন্তুষ্টির পথে চলে। আর তিনি নিজ আদেশে তাদেরকে অন্ধকার থেকে বের করে আলোর দিকে নিয়ে যান এবং সরল সুদৃঢ় পথে তাদের পরিচালিত করেন’ (সূরা মায়েদা, আয়াত: ১৫-১৬)।

পবিত্র কোরআন মাজিদ শান্তির বীজ হিসাবে আল্লাহ তায়ালার অস্তিত্বে পূর্ণ ঈমান আনাকে উপস্থাপন করেছে। এর স্পষ্ট প্রমাণ হলো, যারা মহান আল্লাহর অস্তিত্বে ঈমান রাখে তারা কখনও অস্থিরতা, অস্বস্তি বা মানসিক চাপের ততটুকু শিকার হয় না যাতে নিজের জীবন সম্পর্কেই নিরাশ হয়ে যেতে হয়। পৃথিবীর ইতিহাসে একজন নবীও (আ.) এমন অতিবাহিত হননি যিনি পরিস্থিতির শিকার হয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে আত্মহত্যা করেছেন বা তার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছেন। পবিত্র কোরআন মাজিদ এই মৌলিক বিষয়টিকে এভাবে বর্ণনা করেছে, ‘হৃদয়ে প্রকৃত ও সত্যিকারের শান্তি ও স্বস্তি আল্লাহ তায়ালার স্মরণেই পাওয়া সম্ভব’ (সূরা রাদ: আয়াত ২৮)। সমাজে বসবাসকারী সব মানুষের সঙ্গে উত্তম আচরণ করতে হবে। শান্তি ও নিরাপত্তার আচরণ অবলম্বন করার বিষয়ে মহানবী (সা.) ইসলামি শিক্ষামালার সারাংশ এভাবে বর্ণনা করেছেন, ‘প্রকৃত মুসলমান সে-ই, যার কথা এবং হাত থেকে কোন মানুষ কোনরূপ কষ্ট বা ক্ষতির সম্মুক্ষীন হয় না’ (সুনানে নিসাই, কিতাবুল ঈমান)। কোন জাতি যেন অন্য জাতিকে উপহাস না করে। আর নারীরাও অন্য কোন নারীদের (উপহাস করবে) না। হতে পারে তারা এদের চেয়ে উত্তম। আর তোমরা নিজেদের লোকদের অপবাদ দিও না। আর নাম বিকৃত করে তোমরা একে অন্যকে উপহাস করো না। ঈমান (আনার) পর দুর্নামের ভাগীদার হওয়া অবশ্যই মন্দ। আর যারা অনুতাপ করে না তারাই দুস্কৃতকারী’ (সূরা হুজরাত, আয়াত: ১২)। পেশ ইমাম বলেন, আরেকটি দোষ যা পুরো বিশ্বের শান্তি বিনষ্ট করে রেখেছে তা হলো মিথ্যা ও ভ্রান্ত বর্ণনা। পবিত্র কোরআন এই দোষকে কঠোরভাবে তিরস্কার করে। আল্ল¬াহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আর সর্বদা সোজা সরল কথা বল’ (সূরা হাজ, আয়াত: ৩১)। তাই আসুন! আমরা সবাই সবার স্থানে থেকে সমাজ ও দেশে শান্তির জন্য কাজ করি আর সে কাজ প্রথমে শুরু করি নিজ পরিবার থেকে। সমাজ ও দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে এমন কোন কাজ যেন কারো দ্বারা সংঘটিত না হয় সে বিষয়ে সজাগ থাকি। আমিন।

মিরপুরের ঐতিহ্যবাহী বাইতুল মামুর জামে মসজিদের খতিব মুফতি আব্দুর রহিম কাসেমী আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন : ইসলাম মানুষের উপকার ও কল্যাণ কামনার নির্দেশ দেয়। প্রকৃত মুসলমান মানুষের উপকারেই শান্তি খুজে পায়। পরোপকারের মাধ্যমেই পরস্পরের মাঝে আন্তরিকতা ও ভালোবাসার সৃষ্টি হয়। মানুষ তার প্রকৃত সম্মান লাভ করে । স্বীয় জীবনে আনন্দ সুখ অনুভব করে । সমাজে শান্তির বাতাস প্রবাহিত হয়। পক্ষান্তরে পরোপকার ও পরস্পরের কল্যাণ কামনা ব্যতিত একে অপরের জীবন হয়ে উঠে অতিষ্ঠ। যে সমাজে একে অপরের প্রতি সহযোগিতা, সহমর্মিতা ও কল্যাণকামিতার স্থান অনুপস্থিত,সে সমাজের মানুষ স্বাভাবিকভাবেই দূর্বল হয়ে যায়। সেখানে অন্যায় অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়, শান্তি বিলুপ্ত হয়। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও ভালোবাসা তিরোহিত হয়। ব্যক্তি পরিবার ও সামাজিক জীবনে নেমে আসে অশান্তি, আর অমানিষার অন্ধকার। এ কারণেই মনিষীগণ বলেছেন পরোপকার শান্তির সোপান ও শ্রেষ্ঠত্বের অলংকার। যার মধ্যে এই গুন বিদ্যমান তিনিই শ্রেষ্ঠ। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ জাতি। মানবজাতির কল্যাণের জন্যই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা ভালো কাজের নির্দেশ এবং মন্দ কাজে বাধা দিবে। (সূরা আল-ইমরান, আয়াত নং ১১০)। আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন, তোমরা পরস্পরে কল্যাণ ও তাকওয়ার কাজে সহযোগীতা কর। (সূরা মায়েদা, আয়াত নং ৩)। মানবতার নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের ( কল্যাণে ) দুনিয়াবি সমস্যা সমাধান করে দেয়, আল্লাহ তায়ালা তার আখিরাতের সঙ্কটগুলো দূর করে দেন। আর যে ব্যক্তি কোনো অভাবগ্রস্তর অভাব মোচনে সহযোগিতা করেন আল্লাহ তায়ালা তাকে দুনিয়া ও আখিরাতে স্বাচ্ছন্দ্য দান করেন। (মুসলিম শরীফ, হাদিস নং ২৬৯৯)। খতিব আরও বলেন, মানুষের উপকার ও কল্যাণ কামনাই দ্বীন (ধর্ম)। পরোপকার ইবাদাত তুল্য সদকার সওয়াব এবং নেকের কাজ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সমগ্র জীবনই পরোপকারের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তিনি অপরের সহযোগীতার নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘তোমরা জগদ্বাসীর প্রতি সদয় হও, তাহলে আসমানের মালিক আল্লাহ তায়ালা তোমাদের প্রতি সদয় হবেন। (তিরমিজি হাদিস নং ১৮৪৭)। তিনি আরও বলেন, পথ হারা মানুষকে সঠিক পথ দেখান তোমাদের জন্যে সদকা। দৃষ্টিহীন দূর্বল কাউকে সহযোগীতা করা, রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তুু সরিয়ে দেয়া, (অন্নহীনকে খাদ্য এবং বস্ত্রহীনকে পোশাকের ব্যবস্থা করাও নেক আমল) সদকার সওয়াব। ( তিরমিজি, হাদিস নং ১৯৫৬ )। আল্লাহ আমাদের সবাইকে মানুষের উপকার ও কল্যাণ কামনায় সহযোগী হওয়ার তৌফিক দান করেন। আমিন।

ঢাকা উত্তরা ৩নং সেক্টর মসজিদ আল মাগফিরাহ এর খতিব মুফতি ওয়াহিদুল আলম জুমার খুৎবায় বলেন, শীতকাল প্রকৃত মুমিনের ইবাদতের বসন্তকাল। হযরত উমর (রা.) বলেছেন, শীতকাল হলো ইবাদতকারীদের জন্য গনিমতস্বরূপ। শীত তো এমন গনিমত (যুদ্ধলব্ধ সম্পদ), যা কোনো রক্তপাত কিংবা চেষ্টা ও কষ্ট ছাড়াই অর্জিত হয়। সবাই কোনো ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই এ গনিমত স্বতঃস্ফূর্তভাবে লাভ করে এবং কোনো প্রচেষ্টা বা পরিশ্রম ব্যতিরেকে তা ভোগ করে। হযরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেন, ‘শীতকাল হচ্ছে মুমিনের জন্য বসন্তকাল। মুসনাদে আহমাদ। বায়হাকির বর্ণনায় রয়েছে, শীতের রাত দীর্ঘ হওয়ায় মুমিন রাত্রিকালীন নফল নামাজ আদায় করতে পারে এবং দিন ছোট হওয়ায় রোজা রাখতে পারে। শীতকাল এলে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলতেন, হে শীতকাল! তোমাকে স্বাগতম! শীতকালে বরকত নাজিল হয়; শীতকালে রাত দীর্ঘ হওয়ায় নামাজ আদায় করা যায় এবং দিন ছোট হওয়ায় রোজা রাখা যায়। হযরত মুআজ ইবনে জাবাল (রা.) এর মৃত্যুর সময় তাকে তাঁর কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি মৃত্যুর ভয়ে কাঁদছি না; বরং (রোজা রেখে) গ্রীষ্মের দুপুরের তৃষ্ণা, শীতের রাতের নফল নামাজ এবং ইলমের আসরগুলোতে হাজির হয়ে আলেমদের সোহব্বত হারানোর জন্য আমি কাঁদছি। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, নবী করিম (সা.) বলেছেন,যদি কোনো তীব্র ঠান্ডার দিন আল্লাহর কোনো বান্দা বলে, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু (আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই), আজকের দিনটি কতই না শীতল! হে আল্লাহ! জাহান্নামের জামহারি থেকে আমাকে মুক্তি দিন। তখন আল্লাহ জাহান্নামকে বলেন, নিশ্চয়ই আমার এক বান্দা আমার কাছে তোমার জামহারি থেকে আশ্রয় চেয়েছে। আমি তোমাকে সাক্ষী রেখে বলছি, আমি তাকে আশ্রয় দিলাম। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, জামহারি কী ? নবীজি (সা.) বললেন, জামহারি এমন একটি ঘর যাতে অবিশ্বাসী, অকৃতজ্ঞদের নিক্ষেপ করা হবে। আল্লাহ সবাইকে হেফাজত করুন। আমিন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
M A Islam ৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ৮:৪৫ পিএম says : 0
আল্লাহ সবাইকে হেফাজত করুন, আমিন।
Total Reply(0)
jack ali ৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ৯:০২ পিএম says : 0
We listen to many lecture but our country is ruled by enemy of Allah.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন