শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

ভাবনার নাম ‘উদ্বোধনী ব্যাটিং’

সাকিবকে ঘিরেই স্বপ্ন বুনছেন মুমিনুল

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ১১:৫৯ পিএম

দীর্ঘ দিন ধরেই বাংলাদেশ ক্রিকেটে দুশ্চিন্তার আরেক নাম ‘ওপেনিং জুটি’। আরেকটু খোলাসা করে বললে টপঅর্ডার ব্যাটিং। আরো মোটা দাগে বললে গোটা দলেরই ব্যাটিং। তবে সবচেয়ে বেশি ভুগতে হচ্ছে উদ্বোধনী ব্যাটিং নিয়েই। রুগড়ব ব্যাটিংয়ে দৈন্যতার সবচেয়ে নিদারুণ উদাহরণ সবশেষ চট্টগ্রাম টেস্ট। তাতে দুই ইনিংসেই বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটি ছিল চমরভাবে ব্যর্থ। সাদমান ইসলাম আর সাইফ হাসান নতুন বলে পাকিস্তানি বোলারদের সঙ্গে লড়াইয়ের ধারেকাছেও ছিলেন না। নড়বড়ে ব্যাটিংয়ে দলের বিপদ বাড়িয়েছেন তারা। দুই ইনিংসেই তাদের আউট হওয়ার ধরন শঙ্কিত করেছে ক্রিকেটপ্রেমীদের। আজ থেকে ঢাকার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে শুরু হতে যাওয়া দ্বিতীয় টেস্টের আগে এই উদ্বোধনী জুটিই সবচেয়ে বড় চিন্তার কারণ বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্টের।
টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে এই টেস্টে অবশ্য সাইফ খেলতে পারবেন না। মিরপুরে তাই সাদমানের সঙ্গী হিসেবে কে খেলবেন, সেটি নিয়ে চলছে চিন্তাভাবনা, গতকালও মেলেনি উত্তর। দলে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের তরুণ ব্যাটসম্যান মাহমুদুল হাসান জয় আছেন। কিন্তু সবাইকে চমকে দিয়ে দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটের বাইরে থাকা টি-টোয়েন্টি দলের ওপেনার মোহাম্মদ নাঈমকে দলে ডাকা হয়েছে। বেশ কয়েকটি টেস্টে তিন নম্বরে ব্যাটিং করা নাজমুল হোসেনকেও সাদমানের সঙ্গী হিসেবে ভেবে রাখা হয়েছে। সাদমানের সঙ্গে নাজমুলকেই ইনিংসের গোড়াপত্তন করতে দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
মাত্র ৬টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলা নাঈমকে কেন টেস্ট দলে ডাকা হয়েছে, সেটি নিয়ে বিস্তর প্রশেড়বর জবাব দিতে হয়েছে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীনকে। যে ব্যাটসম্যানের ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ব্যাটিং গড় ১৫, তাঁকে কেন, কোন হিসেবে টেস্ট স্কোয়াডে ডাকা হলো, সেটিই ভেবে পাচ্ছেন না কেউ। মিনহাজুল অবশ্য সাইফের না থাকার কথা বলেছেন। আর বলেছেন নাঈমের ‘অনুশীলন প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকা’র কথা। তবে হঠাৎই নাঈমকে দলে ডাকা বাংলাদেশের ক্রিকেটের সার্বিক ক্রিকেটীয় প্রক্রিয়ার দুর্বলতাকেই আবার সামনে নিয়ে এসেছে।
গতকাল মিরপুরের অনুশীলন নেটে নাঈমকে দেখেই মনে হয়েছে, কতটা অপ্রস্তুত অবস্থায় তিনি টেস্ট দলের অংশ হয়েছেন। কোভিড পরীক্ষায় ‘নেগেটিভ’ হয়ে দ্রুত নেটে যোগ দিয়েই বিপদে পড়েন নাঈম। স্কোয়াডে থাকা পেসার খালেদ আহমেদ, রেজাউর রহমান রাজদের বলেও ঠিকমতো ব্যাটে-বলে করতে পারছিলেন না তিনি। দূর থেকেও লাল বলে তার দুর্বলতা ধরা পড়ছিল। নাঈমের অসহায়ত্ব দেখে ব্যাটিং পরামর্শক অ্যাশওয়েল প্রিন্স আলাদা করেই নাঈমকে সময় দিয়েছেন অনেকক্ষণ। নেটে নাঈমের ব্যাটিংয়ের সময় প্রিন্সের অভিব্যক্তিতেও হতাশা ফুটে উঠছিল।
জাতীয় দলের হয়ে টি-টোয়েন্টি খেললেও এখনো টেস্ট খেলা হয়নি নাঈমের। সে প্রশড়বও ওঠেনি। কারণ, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে মাত্র ৬ ম্যাচ খেলা নাঈম কখনোই টেস্ট দলে সুযোগ পাওয়ার মতো কিছু করতে পারেননি। তার ব্যাটিং গড়ও বেশ হতাশাজনক- মাত্র ১৬.৬৩। ১৮ মাস আগে প্রথম শ্রেণির ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগে (বিসিএল) একটি ম্যাচে তিনি দুই ইনিংসেই শূন্য রানে ফিরেছিলেন।
ঢাকা টেস্টে সাদমানের বিকল্প খুঁজতে গিয়ে যদি নাজমুলকে উদ্বোধনী ব্যাটিংয়ে পাঠানো হয়, তাহলে সেটি হবে নাজমুলের জন্যও বড় পরীক্ষা। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে হঠাৎই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ক্রিইস্টচার্চে অভিষেক হওয়ার পর কখনোই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলেননি নাজমুল। এখন পর্যন্ত ১০ টেস্ট খেলে ৩১.২৭ গড়ে ৫৬৩ রান করা নাজমুলের যা কিছু অর্জন, সেটি তিন নম্বরে ব্যাটিং করেই। পাল্লেকেলেতে এ বছরের এপ্রিলে তার ব্যাট থেকে ১৬৩ রানের একটা ইনিংস এসেছিল। জুলাইতে হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করেছেন আরও একটি শতরান। সবই তিন নম্বরে ব্যাটিং করে। এখন দলের প্রয়োজনে যদি তাঁকে শুরুতে নামতে হয়, তাতে মানিয়ে নেওয়ার ব্যাপারটিই কঠিন হয়ে যেতে পারে নাজমুলের জন্য। কিন্তু যেখানে বিকল্প নেই, সেখানে ঝুঁকি তো তাঁকে নিতেই হবে, সেটি দলের প্রয়োজনেই।
যার ‘সঙ্গী’ খুঁজতে নির্বাচকদের গলদঘর্ম, সেই সাদমানের অবস্থাটা কেমন! ৭৬ রানের ইনিংস দিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ার শুরু করা সাদমান এতদিন তামিম ইকবালের ছায়ায় বেড়ে উঠেছেন। কিন্তু কয়েক মাস ধরেই তামিমের অনুপস্থিতি সাদমানকে সেই ছায়া থেকে বের হতে বাধ্য করেছে। পাকিস্তানের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে এক ইনিংসে ১৪ করেছেন, পরের ইনিংসে ১। যদিও জুলাইয়ে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হারারে টেস্টে পেয়ে গিয়েছিলেন প্রথম টেস্টে শতক। ছোট্ট ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে যাওয়া সাদমানের জন্য ঢাকা টেস্টে ঘুরে দাঁড়ানোর চ্যালেঞ্জ। তিনি ঘুরে দাঁড়ালেই উদ্বোধনী জুটি নিয়ে ভঙ্গুর অবস্থায় থাকা বাংলাদেশ দল কিছুটা হলেও নির্ভরতা পায়। তবে ঢাকা টেস্টে সাকিব ফিরছেন। ফর্মে আছেন লিটন দাস, মুশফিকুর রহিমও। মোটামুটি ভালো একটা অভিষেক হওয়া ইয়াসিরের ব্যাটিংও আশা জাগাচ্ছে। সাকিবের উপস্থিতি বোলিংকেও বাড়তি শক্তি জোগাবে। কিন্তু উদ্বোধনী ব্যাটিংয়ের করুণচিত্র এরপরও ঢাকা টেস্ট বাংলাদেশকে শুরু করতে হবে শঙ্কা নিয়েই। সেদিকে না তাকিয়ে মুমিনুলের আশার সবচেয়ে বড় জায়গা সাকিব ফিরেছেন। তাকে ঘিরেই জয়ের স্বপড়ব বুনছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
ইনজুরির কারণে চট্টগ্রাম টেস্টে ছিলেন না সাকিব। তার অনুপস্থিতিটা ভালোভাবেই টের পেয়েছে বাংলাদেশ। নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ দলের সেরা ক্রিকেটার সাকিব। অভিজ্ঞও বটে। সবচেয়ে বড় ১৪টি টেস্টে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিজ্ঞতাও রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই তার উপস্থিতি বাড়তি প্রেরণা দেয় বাংলাদেশ দলকে। তেমনি মাঠে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে সঠিক পরামর্শ পেতে পারেন মুমিনুল। প্রতিষ্ঠিত অলরাউন্ডার হওয়ায় দলের ভারসাম্যও ঠিক থাকে। তাই পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে মাঠে নামার আগে বেশ নির্ভার অধিনায়ক, ‘উনি (সাকিব) দলে থাকলে, ক্যাপ্টেন হিসেবে আমি নির্ভার থাকি। তার ব্যাটিং-বোলিং খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে দলের জন্য। টিম কম্বিনেশনে ভারসাম্য আসে। সবমিলিয়ে সাকিব ভাইয়ের দলে থাকা আমাদের জন্য দারুণ ইতিবাচক।’
সাকিব ফেরায় একাদশ গঠন অনেকটাই সহজ হয়ে গেছে বাংলাদেশের জন্য। মিরপুরে একজন বাড়তি ব্যাটার খেলাতে পারবে টাইগাররা। চট্টগ্রামে যদিও খেলেছে সাত ব্যাটারই। সঙ্গে ছিল দুই পেসার ও দুই স্পিনার। দুই পেসার ও দুই স্পিনারের সঙ্গে মিরপুরে থাকছেন সাকিব। স্বাভাবিকভাবে দলের শক্তিও বেড়েছে টাইগারদের। মুমিনুলের ভাষায়, ‘সাকিব দলে আসলে একটু সহজ হয়। ও আসায় আমরা ৪ বোলার ৭ ব্যাটসম্যান নিয়ে চিন্তা ভাবনা করছি।’ আর দলের শক্তি বাড়ায় মিরপুরে ভালো কিছুর প্রত্যাশা করছেন মুমিনুল, ‘আমার কাছে টেস্ট ম্যাচে সব সময় প্রথম এক ঘণ্টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যদি ব্যাট করি, ওরা যদি করে যেই করুক। আমরা যদি একটা ভাল শুরু করি তাহলে ভালো। আর সবাই জানে আমাদের শক্তির জায়গা হলো ব্যাটিং। ব্যাটিং শক্তিতে আমরা যদি ছয় সেশন ব্যাট করতে পারি তাহলে গেমে ফিরতে পারব। অবশ্যই (জয়ের ব্যাপারে) আশা করি।’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন