শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

ভিসুভিয়াসের শেষ শিকার

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৫ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০৭ এএম

৭৯ খ্রিস্টাব্দে ইতালির ভিসুভিয়াস আগ্নেয়গিরির মারণ অগ্ন্যুৎপাতের বলি আরও এক ব্যক্তির কঙ্কাল উদ্ধার হলো হারকিউলেনিয়াম শহরের খননে। ভিসুভিয়াসের লাভাস্রোতে চাপা পড়ে প্রায় জনশূন্য হয়ে গিয়েছিল ইতালির দুই উপক‚ল শহর পম্পেই আর হারকিউলেনিয়াম, প্রাণ গিয়েছিল কমপক্ষে ৩০ হাজার মানুষের! ১৯৮০-৯০ সাল থেকে হারকিউলেনিয়ামে শুরু হয় খনন। উদ্ধার হয়েছে অসংখ্য কঙ্কাল।

সম্প্রতি উদ্ধার হওয়া কঙ্কালটিই সর্বশেষ বলে ধারণা প্রত্মতত্ত্ববিদদের। প্রত্মতত্ত্ববিদদের ধারণা, লাভা থেকে বাঁচতেই সমুদ্রের দিকে দৌড়চ্ছিলেন ৪০-৪৫ বছরের ওই ব্যক্তি। এই শহরে উদ্ধার হওয়া অধিকাংশ কঙ্কালকেই পাওয়া গিয়েছে মুখ থুবড়োনো অবস্থায়, অর্থাৎ লাভা-কাদার স্তূপে মুখ গুঁজে। কিন্তু এই ব্যক্তির কঙ্কালের মুখ ছিল উপর দিকে, তাতেও গবেষকদের অনুমান, দৌড়তে দৌড়তে পিছন ফিরেছিলেন তিনি। ইতালীয় প্রত্মতত্ত্ববিদ ফ্রান্সেস্কো সিরানোর কথায়, ‹এ ধরনের আগুনে মেঘ ঘণ্টায় প্রায় ১০০ কিলোমিটার বেগে ধেয়ে আসতে পারে। উত্তাপ থাকে প্রায় ৫৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস! এই উত্তাপে মস্তিষ্ক আর রক্ত ফুটতে থাকে, আর চামড়া-মাংস স্রেফ উবে যায়! পড়ে থাকে শুধু কঙ্কাল, যা পুড়তে প্রায় ১ হাজার ডিগ্রি সেলিয়াস তাপমাত্রা প্রয়োজন। তবে, ওই প্রবল তাপে কঙ্কালের হাড়গুলোও লালচে হয়ে গিয়েছে।

কঙ্কালটি অক্টোবরে উদ্ধার হলেও বুধবার এক সাংবাদিক বৈঠকে এর কথা প্রকাশ্যে আনেন গবেষকরা। এই দেহের খুব কাছেই উদ্ধার হয়েছিল ৩০০ জনের দেহাবশেষ। সম্ভবত উদ্ধারের আশায় সমুদ্রের কাছের একটি ত্রাণশিবিরে আশ্রয় নিয়েছিলেন তারা। কিন্তু উদ্ধারের আগেই লাভা গ্রাস কেড়ে নেয় প্রাণ। সিরানো এবং তার টিম ধাতব ব্লেড দিয়ে আগ্নেয় শিলার মোটা স্তর কেটে কেটে কঙ্কালগুলি উদ্ধার করেন, যা চাপা পড়েছিল প্রায় ১ হাজার ৯৪২ বছর আগে! প্রত্মতত্ত্ববিদদের মতে, হারকিউলেনিয়ামে অগ্ন্যুৎপাতের বীভৎসতা ছিল অনেকটা হিরোশিমায় পরমাণু বোমা নিক্ষেপের মতো। দু’ক্ষেত্রেই মানুষের উদ্ধার হওয়ার দেহাবশেষের মধ্যে মিল প্রচুর।

প্রত্মতত্ত্ববিদ ইভান ভারিয়ালির কথায়, ‹ব্যক্তির কাছে থেকে উদ্ধার হওয়া আংটিটি সম্ভবত লোহার, আর ব্রোঞ্জের একটা কিছু বাক্সে ছিল। যে ভাবে তিনি ব্যাগটা ধরেছিলেন, তাতে মনে হয় শেষ সম্বলটুকু আঁকড়ে প্রাণ বাঁচাতে দৌড়চ্ছিলেন।› তবে গবেষকদের সন্দেহ, এমনটাও হতে পারে যে তিনি সেনাকর্মী হিসেবে উদ্ধারকারী দলের অংশ ছিলেন।

প্রত্মতত্ত্ববিদ কামারডো জানালেন, ভিসুভিয়াসের উদ্গীরণ পম্পেইকে লাভা-ছাইয়ের তিন-চার ফুট আস্তরণে ঢেকে দিয়েছিল। কিন্তু হারকিউলেনিয়ামের ক্ষেত্রে তা ছিল আরও বিধ্বংসী। সেখানে প্রথম আঘাতটা হানে আগ্নেয় শিলা আর বিষাক্ত গ্যাসের মেঘ। যা পর্বতের মাথা থেকে ধেয়ে আসার পথে জঙ্গল, জনবসতি, সবকিছু পুড়িয়ে খাক করে দিয়েছিল। আর তার পর লাভার প্রায় ছ’টা তরঙ্গ ২০ মিটারের পুরু স্তরে মুড়ে ফেলে শহরটাকে। কামারডো-র মতে, এত পুরু লাভাস্তরে অক্সিজেন ঢোকাও সম্ভব ছিল না, আর তাই যা কিছু চাপা পড়েছে, সবই প্রায় অক্ষত রয়ে গিয়েছে। সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন