বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

গুমোট দিনের আলো সেই তাইজুল

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৫ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

গত বেশ ক’দিন ধরেই আবাহাওয়ার পূর্বাভাসে ঘুর্ণিঝড়ের আগমনী বার্তা। উপকূলজুড়ে চলছিল সতর্কতা। কোনো ঝামেলা ছাড়াই শেষ হয় চট্টগ্রাম টেস্ট। তবে ঢাকায় আর আটকে রাখা যায়নি ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’কে। ছাপ রেখে গেল মিরপুর টেস্টের প্রথম দিনই।
গতকাল পাকিস্তান টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামার একটু আগে থেকেই হোম অব ক্রিকেটের আকাশে কালো মেঘের আনাগোনা। শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথম সেশনেই জ্বলাতে হয়েছিল ফ্লাড লাইট। রোদ-মেঘের সেই লুকোচুরি চলল দিনজুড়েই। যেন বাংলাদেশের পারফরম্যান্সেরই প্রতিবিম্ব। দুই সেশনের চিত্র দুইরকম। শেষ সেশনে খেলাই হলো না আলোকস্বল্পতায়। বিকাল ৪টা ৬ মিনিটে মাঠ পর্যবেক্ষণ করে দিনের খেলার সমাপ্তি ঘোষণা করেন দুই আম্পায়ার শরফুদৌল্লাহ সৈকত ও মাইকেল গফ। আর তাতে চা-বিরতির আগ পর্যন্ত খেলা হওয়া ৫৭ ওভার থেকে পাকিস্তানের সংগ্রহ ২ উইকেটে ১৬১ রান।
সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টের প্রথম দিনের প্রথম সেশনের দুই ঘণ্টা ছিল দুইরকম। পাকিস্তানের ভালো শুরুর পর দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। তবে বাবর আজম ও আজহার আলির দৃঢ়তায় দ্বিতীয় সেশনে পড়েনি একটি উইকেটও। দিনশেষেও তাই এগিয়ে পাকিস্তানই। সফরের তিন টি-টোয়েন্টি ও প্রথম টেস্টে ব্যর্থতার পর অবশেষে রানের দেখা পেলেন বাবর আজম। পাকিস্তান অধিনায়ক অপরাজিত ৬০ রানে। আজহারের সঙ্গে তৃতীয় উইকেটে তার অবিচ্ছিন্ন জুটির রান ৯১।
এই জুটির আগ পর্যন্ত ম্যাচে দারুণ লড়াই করে বাংলাদেশ। সেটি মূলত তাইজুল ইসলামের সৌজন্যে। প্রথম সেশনে দুর্দান্ত বোলিং করেন আগের টেস্টে ইনিংসে ৭ উইকেট পাওয়া বাঁহাতি স্পিনার। ম্যাচের প্রথম সকালেই উইকেট থেকে আদায় করে নেন টার্ন ও বাউন্স। খুব বড় হুমকি হয়ে উঠতে না পারলেও নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ধরে রাখেন চাপ। ১৯তম ওভারে দলীয় ৫৯ রানের মাথায় উদ্বোধনী জুটি ভেঙে প্রথম পুরস্কারটি পান তাইজুল। লেংথ থেকে বলটি টার্ন না করে উইথ দ্য আর্ম ভেতরে ঢোকে খানিকটা। আব্দুল্লাহ শফিকের ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে বল ছোবল দেয় স্টাম্পে। অভিষেকে চট্টগ্রামে জোড়া ফিফটি করা ব্যাটসম্যান এবার ফেরেন ২৫ রানে।
দ্বিতীয় সাফল্য পেতে অবশ্য খুব একটা সময় নেননি তাইজুল। সঙ্গীর বিদায় শোকেই কি-না, দলীয় ৭০ রানের মাথায় তাইজুলের চতুরতায় বোল্ড হয়ে যান চট্টগ্রামের সেঞ্চুরিয়ান আবিদ আলীও। ইনিংসজুড়ে কাট শট খুব ভালো খেললেও একটিতে টাইমিং করতে পারেননি আবিদ। লেংথ থেকে একটু স্কিড করা ডেলিভারি কাট করে স্টাম্পে টেনে আনেন তিনি। আগের দুই ইনিংসেই দুর্দান্ত খেলা আবিদ এবার থামে ৩৯ রানে। ১০৩ মিনিট ক্রিজে কাটানো তার ৮১ বলের ইনিংসটি ৬টি চারে সাজানো। আর তাতে একটি অনন্য নজির গড়লেন বাংলাদেশি ঘূর্ণি জাদুকর। সিরিজে টানা তিনবারই তাইজুলের বলে আউট হয়ে সাজঘরে ফিরে যেতে হয়েছে পাক ওপেনারকে! এর আগে চট্টগ্রামে প্রথম ইনিংসে ১৩৩ রানে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৯১ রানেও এলবিডব্লিউতেই আউট করেন তাইজুল।
প্রথম সেশনে উইকেট নেওয়ার সম্ভাবনা আরও কয়েক দফায় জাগায় বাংলাদেশ। সেই পালায় দুটি রিভিউও হারাতে হয়। তবে উইকেট আর পড়েনি। সেই ধারা চলতে থাকে পরের সেশনেও। খালেদ আর বোলিং পাননি। ইবাদত লাঞ্চের পরও ভালো করতে পারেননি। তাইজুল-সাকিব চেষ্টা করে যান, কিন্তু বাবর-আজহারের জুটিতে ফাটল ধরাতে পারেননি। পরে মেহেদী হাসান মিরাজ আক্রমণে এসেও খুব একটা ভোগাতে পারেননি দুই ব্যাটসম্যানকে। বলার মতো একটা সুযোগই বাংলাদেশ পেয়েছিল। সাকিবের বলে উড়িয়ে মারেন বাবর, লং অফে অনেকট দৌড়েও কঠিন ক্যাচটি নিতে পারেননি সৈয়দ খালেদ আহমেদ।
চা-বিরতি থেকে ফিরে দ্বিতীয় সেশন শেষে ঠিকই মাঠে নেমেছিলেন দুই দলের খেলোয়াড়েরা। কিন্তু আলোকস্বল্পতার কারণে তৃতীয় সেশনে একটি বলও গড়ায়নি। বিকাল ৪টা ৬ মিনিটে আম্পায়াররা মাঠ পর্যবেক্ষণের পর প্রথম দিনের খেলার সমাপ্তি ঘোষণা করেন। এই ঘাটতি পুষিয়ে দিতে আজ থেকে ম্যাচে বাকি চার দিনের সময় এগিয়ে আনা হয়েছে আধ ঘন্টা। ১০টার পরিবর্তে দিন শুরু হবে সকাল সাড়ে ৯টায়। বাবর ১৯তম টেস্ট ফিফটি পেরিয়ে খেলবেন ৬০ রান নিয়ে। অপর প্রান্ত আগলে রাখা আজহার খেলবেন ৩৬ রান থেকে।
ম্যাচে আরেকটি কাকতালীয় ঘটনার সাক্ষী হয়েছেন মাহমুদুল হাসান জয়। টেস্টে বাংলাদেশের ৯৯তম খেলোয়াড় হিসেবে অভিষেক হয়েছে জয়ের। তবে মজার ব্যপার হচ্ছে, ২১ শতকের ২১তম বছরে, ২১ বছর ২১ দিন বয়সে টেস্ট অভিষেক হলো অনূধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ী এই ব্যটারের। কাকতালের বাকি আছে আরো, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তার সর্বোচ্চ স্কোরেও মিশে আছে একুশের জয়গান -১২১!
পাকিস্তান ১ম ইনিংস : ৫৭ ওভারে ১৬১/২ (আবিদ ৩৯, শফিক ২৫, আজহার ৩৮*, বাবর ৬০*; ইবাদত ০/২৮, খালেদ ০/১৯, সাকিব ০/৩৩, তাইজুল ২/৪৯, মিরাজ ০/৩১)। প্রথম দিন শেষে

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন