বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

আমন পাকতে শুরুর মধ্যেই কৃষকের কপালে দুঃশ্চিন্তার ভাজ গভীর হচ্ছে

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ৫ ডিসেম্বর, ২০২১, ৭:১৬ পিএম

এক সময়ের ‘বাংলার শষ্য ভান্ডার’ খ্যাত ধান-নদী-খাল’র বরিশাল কৃষি অঞ্চলের মাঠে মাঠে আমন ধানের ছড়া যথেষ্ঠ আশা জাগালেও বঙ্গোপসাগরে দুর্যোগের ঘনঘটা কৃষকের কপালের ভাজ গভীর করছে। ‘সারা বছরের আশার সম্পদ’ প্রধান দানাদার খাদ্য ফসল আমন নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় কৃষককুল। এবার বরিশাল কৃষি অঞ্চলে লক্ষ্যমাত্রার প্রায় শতভাগ, ৮ লাখ ৫৬ হাজার হেক্টর জমিতে আমন আবাদ সম্পন্ন করেছেন এ অঞ্চলের কৃষি যোদ্ধাগন। উৎপাদন লক্ষ্য রয়েছে প্রায় ১৯ লাখ ৮৫ হাজার টন চাল।

এপর্যন্ত আমনের খরিপ-২ মৌসুমে এ অঞ্চলে তেমন কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ধানের ক্ষতি না হলেও থোর অবস্থা থেকে ধান বেরিয়ে পাকা শুরু হতেই মেঘলা আকাশ সহ হালকা বৃষ্টি পরিস্থিতিকে নাজুক করে তুলছে। ভাটির এলাকা বিধায় বরিশাল অঞ্চলের অনেক জমিতে এখনো কিছুটা পানিও রয়েছে। কিন্তু ধানের সবুজ ছড়া যখন হলুদ বর্ণ ধারণ করে পেকে উঠছে, সেসময়ে এধরনের আবহাওয়া মাজরা পোকার আক্রমণ সহ ধান মাটিতে শুয়ে পড়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে বলে শঙ্কিত কৃষকগন। ফলে ধানে চিটা হবার ঝুঁকিও বেড়ে যেতে পারে।

দেশে চলতি আমন মৌসুমে ৫৫ লাখ ৭৭ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদের মাধ্যমে ১ কোটি ৪৭ লাখ ৫৩ হাজার টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্য রয়েছে। সে লক্ষ্য অর্জনে ইতোমধ্যে সারা দেশের প্রায় ৬৫ ভাগ জমির আমন কর্তন সম্পন্ন হলেও বরিশাল অঞ্চলে ধান কাটা হয়েছে মাত্র ২২ ভাগের মত। ফলে মাঠে প্রায় ৭৮ ভাগ আমন কর্তন বাকি থাকার মধ্যেই প্রাকৃতিক দুর্যোগ এখন কৃষকের দরজায় কড়া নাড়ছে। দুঃশ্চিন্তায় এই অঞ্চলের কৃষককুল।

গত বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতি বাদে দেশে ৫৩ লাখ ৮৩ হাজার ৭৯৮ হেক্টরে ১ কোটি ৪১ লাখ ৫৬ হাজার ৫৪৩ টন আমন চাল উৎপাদন হয়। যা আগের বছরের চেয়ে বেশী হলেও বরিশাল অঞ্চলে উৎপাদন ঘাটতি ছিল লক্ষ্যমাত্রার প্রায় দেড় লাখ টন কম। ঘূর্ণিঝড় আম্পান এবং ভাদ্র মাসের বড় অমাবস্যায় এ অঞ্চলের প্রায় ৭০ ভাগ আমনের জমি প্লাবিত হওয়ায় ভয়াবহ দুর্যোগ নেমে আসে প্রকৃতি নির্ভর এ ধান উৎপাদনে।

এদিকে এবার দেশে ২ লাখ ৪৫ হাজার হেক্টরে হাইব্রিড জাতের আমন আবাদের লক্ষ্য প্রায় অর্জিত হয়েছে। যার গড়ফলন হেক্টরে ৩.৮০ টন চাল। কিন্তু বরিশাল অঞ্চলে এখনো হাইব্রীড ও উচ্চফলনশীল-উফশী জাতের আমন আবাদে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পৌঁছেনি। সারা দেশে ২.৪৫ লাখ হেক্টরের মধ্যে বরিশাল অঞ্চলে এ ধানের আবাদ হচ্ছে মাত্র ৫শ হেক্টরের মত। অথচ এ অঞ্চলে এবার যে হাইব্রীড-এর আবাদ হয়েছে, তা থেকে ৩.৬৩ থেকে ৪.৭৬ টন পর্যন্ত চাল পাওয়া গেছে। যা সারা দেশে হাইব্রীডের গড় ফলনের চেয়ে বেশী।

অপরদিকে সারাদেশে মাত্র ১.৫২ টন উৎপাদনক্ষম স্থানীয় সনাতন জাতের যে ধানের আবাদ হচ্ছে ৮ লাখ হেক্টরে, তারমধ্যে শুধু এ অঞ্চলেই এককভাবে ৩ লাখ ৩৩ হাজার হেক্টরে কম ফলনশীল ঐ ধানের আবাদ হয়েছে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর-ডিএই জানিয়েছে। ফলে এ অঞ্চলে প্রচুর জমিতে আমনের আবাদ হলেও উৎপাদন কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় না হওয়ায় কৃষকের ভাগ্যের পরিবর্তন আটকে আছে যুগের পর যুগ ধরে। এমনকি উচ্চ ফলনশীল-উফশী জাতের ধানের আবাদও বাড়ছে না। এজন্য কৃষকগন ডিএইর সম্প্রসারণ কর্মীদের মাঠ পর্যায়ে যথাযথ দায়িত্ব পালন না করা সহ উফশী জাতের বীজ ও আবাদ প্রযুক্তি পৌঁছে না দেয়াকেও দায়ী করছেন।

তবে এরপরেও বরিশাল অঞ্চলের কৃষকরা এবার আমনের ভাল ও নির্বিঘ্ন উৎপাদনের প্রতীক্ষায়। এ ব্যাপারে ডিএই’র বরিশাল অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি আঘাত হানার সম্ভাবনা কম হলেও তার প্রভাবে বৃষ্টি সহ গত দুদিন বিরূপ আবহাওয়া বিরাজ করছে। যা এমুহূর্তে আমনের জন্য অনুকূল নয়। তারপরেও আমরা সার্বিক পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছি। যত দ্রুত সম্ভব ধান কাটতে কৃষকদের বলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে রোববার আবহাওয়া বিভাগের সর্বশেষ বুলেটিনে নিম্নচাপ ‘জাওয়াদ’ দুর্বল হয়ে পড়ার যে বার্তা দেয়া হয়েছে তাতে যথেষ্ঠ আশান্বিত কৃষকগন। বিকেল পর্যন্ত বরিশাল সহ উপকূলভাগের কোথাও তেমন কোন দুর্যোগের খবর ছিলনা। তেমন কোন বৃষ্টিও হয়নি কোথাও। এমনকি নদ-নদীতে জোয়ারের উচ্চতাও স্বাভাবিক পর্যায়েই রয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন