শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

গৃহকর্তার সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক সন্দেহে খুন

ঘটনাস্থল রাজধানীর গুলশান নিকেতন : গ্রেফতার স্বামী-স্ত্রী

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৬ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০১ এএম

অভাবের তাড়নায় গ্রাম থেকে রাজধানীতে এসে গুলশানের নিকেতনে এক বাসায় গৃহকর্মীর কাজ নেন পারভীন ওরফে ফেন্সি আরা। মাসিক সাত হাজার টাকার চুক্তিতে কাজে যোগ দিলেও দেওয়া হতো মাত্র এক হাজার টাকা। এছাড়া ফেন্সির সঙ্গে কোনো স্বজন এমনকি স্বামী মোমিনুলকে দেখা করতে দেয়া হতো না।
প্রায়ই কারণে-অকারণে মারধর করতেন গৃহকর্ত্রী। এভাবেই একদিন মারধরে নিহত হন দিনাজপুরের চিরিরবন্দরের বাসিন্দা ফেন্সি আরা। এরপর তার লাশ গুম করতে গাড়িতে করে উত্তরার দিয়াবাড়িতে ফেলে আসেন গৃহকর্তা ও গৃহকর্ত্রী।

গত শনিবার গৃহকর্তা সৈয়দ জসীমুল হক (৬৩) ও গৃহকর্ত্রী সৈয়দা সামিনা হাসানকে (৬০) গ্রেফতার করেছে পিবিআইয়ের ঢাকা মেট্রো উত্তর। জিজ্ঞাসাবাদে তারা পারভীনকে হত্যা ও লাশ দিয়াবাড়ি এলাকায় ফেলার কথা স্বীকার করেছেন। গতকাল রোববার রাজধানীর আগারগাঁও পিবিআই ঢাকা মেট্রো-উত্তর কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পিবিআইয়ের বিশেষ পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর আলম।

পিবিআইয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, গত শুক্রবার পিবিআই সদস্যদের মাধ্যমে মোমিনুল জানতে পারেন, তার স্ত্রী ফেন্সি আরার লাশ মিলেছে উত্তরা দিয়াবাড়ির একটি ঝাউবনে। এরপর তিনি গ্রামের বাড়ি থেকে ঢাকায় এসে লাশ শনাক্ত করেন। পিবিআই ঢাকা মেট্রো-উত্তরের একটি দল রাজধানীর গুলশান নিকেতনের ৬ নম্বর সড়কের ১৫ নম্বর বাড়ি থেকে গৃহকর্তা সৈয়দ জসীমুল হক ও মূল হত্যাকারী গৃহকর্ত্রী সৈয়দা সামিনা হাসানকে গ্রেফতার করে। ফেন্সিকে হত্যা পর লাশ গুম করতে দিয়াবাড়িতে ফেলে আসার কথা তারা প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেন।

পিবিআইয়ের বিশেষ পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, গত ২ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় তুরাগ থানার দিয়াবাড়ির ঝাউবন এলাকা থেকে অজ্ঞাতনামা এক তরুণীর (৩০) লাশ উদ্ধার করে তুরাগ থানা পুলিশ। ওই খবরের ভিত্তিতে পিবিআই পরিদর্শক মোহাম্মাদ তরিকুল ইসলামের নেতৃত্বে লাশ শনাক্তের একটি জরুরি দল ঘটনাস্থলে যায়। এরপর তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অজ্ঞাতনামা তরুণীর পরিচয় শনাক্ত করা হয়। জানা যায়, নিহতের নাম পারভীন ওরফে ফেন্সি আরা। তার বাদী দিনাজপুর চিরিরবন্দর এলাকার আলোকডিহি সরকার পাড়ার। পিবিআই নিহতের স্বামী মোমিনুলসহ অন্য আত্মীয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরিচয় নিশ্চিত করে।
তিনি বলেন, ভিকটিম ফেন্সি দেড় বছর আগে অভাবের তাড়নায় স্বামী-সন্তানসহ ঢাকা শহরে চলে আসেন। ঢাকায় এসে তিনি নিকেতনের ৬ নম্বর সড়কের ১৫ নম্বর বাড়ির এ-১/ ফ্ল্যাটে গৃহকর্মীর কাজ শুরু করেন। ওই বাড়ির গৃহকর্তা সৈয়দ জসীমুল হাসান।

গ্র্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জসীমুল হাসান বলেন, ১ ডিসেম্বর সকাল ৯টার দিকে অবৈধ সম্পর্কের সন্দেহ ও ঝগড়াঝাটির একপর্যায়ে গৃহকর্ত্রী সৈয়দা সামিনা হাসান ফেন্সিকে লাঠি দিয়ে বেদম প্রহার করে। এতে তাৎক্ষণিকভাবে জ্ঞান হারান তিনি। পরে তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে গিয়ে বুকে চাপ দিলে বুকের হাড় ভেঙে যায় ও তার মৃত্যু হয়। ঘটনার পর গৃহকর্তা ও গৃহকর্ত্রী শলাপরামর্শ করে লাশ গোপন করতে ড্রাইভার রমজান আলীর (৪১) সহায়তায় প্রাইভেটকারে (গাড়ি নং-২২-৪৫৪৪) করে তুরাগের দিয়াবাড়ি এলাকায় ঝাউবনে ফেলে আসেন।
পিবিআইয়ের এ কর্মকর্তা বলেন, ভিকটিম ফেন্সির স্বামী মোমিনুল ঢাকা শহরে রিকশা চালাতেন। ফেন্সি ওই বাসায় কাজ নেয়ার পর থেকে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারতেন না মোমিনুল। একদিন তার স্ত্রী ফোনে জানায়, তাকে গৃহকর্ত্রী মারধর করে আটকে রেখেছে। এ সংবাদে তিনি গুলশান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

তিনি একদিন ওই বাসায় স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে যান। এরপর আর কোনো দিন দেখা করতে পারেননি। পরে গত অক্টোবরে তিনি গ্রামের বাড়ি চলে যান। ওই বাসায় তার স্ত্রী কাজ নেয়ার পর থেকে গৃহকর্তা জসীমুল হাসান প্রতি মাসে তার মোবাইলে বিকাশের মাধ্যমে মাত্র এক হাজার টাকা করে পাঠাতেন। যদিও কথা ছিল মাসে সাত হাজার করে টাকা দেবেন। স্ত্রী ফেন্সি নিহতের ঘটনায় স্বামী মোমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে শনিবার তুরাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। আসামিরা জিজ্ঞাসাবাদে সত্যতা স্বীকার করেছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
মোহাম্মদ দলিলুর রহমান ৬ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:১২ এএম says : 0
এখন কি হবে,বিচার হবে স্বীকার করেছে যেহেতু দেরি না করে,ফাঁসি দিয়ে দিন,কি দরকার আছে জনগণের টাকার ভাত মাছ খাবে জেলে বসে,এমনেতেই দেশে অভাব।
Total Reply(0)
Harunur Rashid ৬ ডিসেম্বর, ২০২১, ৪:২৪ এএম says : 0
These Monsters deserve a very very slow death, every tiny parts of their body must cry out for they did.
Total Reply(0)
Saifulla Saif ৬ ডিসেম্বর, ২০২১, ৬:৪৪ এএম says : 0
ধনীরা বহুগামিতায় না জড়িয়ে যদি বহুবিবাহে উৎসাহী হত তাহলে আজ সমাজের এ অবস্থা হতনা।
Total Reply(0)
Rinku Chowdhury ৬ ডিসেম্বর, ২০২১, ৬:৪৪ এএম says : 0
অমানবিকতা বেড়ে গেছে।নারী পুরুষ উভয়ই সমান দোষে দোষী। উপযুক্ত শাস্তি চাই।
Total Reply(0)
Kamal Hossain ৬ ডিসেম্বর, ২০২১, ৬:৪৫ এএম says : 0
গৃহকর্মীরা এমনিতেই নির্যাতনের শিকার। গৃহকর্তা বা বাসার লোকদের দ্বারা এরা সেক্সুয়াল এবিউজের শিকার হয়। এ ক্ষেত্রে নিজের স্বামীকে না মেরে গৃহকর্মীকে মারা নিতান্তই অন্যায় হয়েছে। আইনের আশ্রয় না নিয়ে খুন করে মহিলাটি নিজেই আরো বড় অন্যায় করে ফেলেছে। এখন স্বামী স্ত্রী দুজনকেই ফাঁসি দেয়া হোক। জীবনে এক সাথে থাকতে না পারলেও মরনে এক সাথে থাকুক।
Total Reply(0)
Shahanaz Akter Rekha ৬ ডিসেম্বর, ২০২১, ৬:৪৫ এএম says : 0
সন্দেহ যখন হচ্ছিল তখন গৃহকর্মী কে না করে দিলেই পারতো, কিন্তু কি করলো সে মেয়েটিকে প্রানেই মেরে ফেল্লো,জালিম মহিলা।
Total Reply(0)
Sajal Hossain ৬ ডিসেম্বর, ২০২১, ৬:৪৬ এএম says : 0
পুলিশ ধরছে ঠিকই, তা প্রশংসাযোগ্য,কিন্তু সঠিক বিচার পাবে কি না বা যথাযোগ্য শাস্তি পাবে কিনা তা প্রশ্ন থেকেই যায়,
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন