শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

এক জান্নাতী সাহাবী ও তার অনন্য আমল

আবু উসামা হাসান | প্রকাশের সময় : ৬ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০১ এএম | আপডেট : ১২:১০ এএম, ৬ ডিসেম্বর, ২০২১

হযরত আবু বকর ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে আবি জাহাম আদাবী হতে বর্ণিত, নবী কারীম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘স্বপ্নে আমি জান্নাতে প্রবেশ করলাম, সেখানে নুয়াইমের কাশির শব্দ শুনতে পেলাম। (জামেউল মাসানীদ : ৯৫৭৫)।

সাহাবীর অনন্য আমল ও বৈশিষ্ট্য : তার পুরো নাম নুয়াইম ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে উসাইদ। তবে তিনি নুয়াইম আন-নাহ্হাম নামেই অধিক পরিচিত। যখন আল্লাহর রাসূল তার সম্পর্কে বলেছেন ‘আমি জান্নাতে নুয়াইমের কাশির (নাহমা) শব্দ শুনতে পেয়েছি’; তখন থেকেই তিনি এ নামে প্রসিদ্ধ হয়ে যান। তিনি মক্কার কুরাইশ বংশের বিখ্যাত ‘বনু আদী’ গোত্রের একজন বিশিষ্ট সাহাবী এবং গোত্রের সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি।

মুসআব যুবায়রী রহ. বলেন, তিনি ইসলাম গ্রহণে অগ্রগামী ব্যক্তিদের একজন। হযরত ওমর রা.-এর আগে এবং প্রথম দশজনের পরই তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছেন। কিন্তু ইসলাম গ্রহণের কথা কারো নিকট প্রকাশ করেননি। তিনি তাঁর সম্প্রদায়ের নিকট একজন মহৎ দানশীল ও মহানুভব ব্যক্তি ছিলেন। তিনি যখন হিজরত করতে প্রস্তুত হলেন, তাঁর গোত্র বনু আদী’র লোকেরা তাঁকে হিজরত না করার অনুরোধ করল এবং বলল, যে ধর্ম ইচ্ছে আপনি অনুসরণ করুন, তবে আমাদেরকে ছেড়ে যাবেন না। আল্লাহর শপথ! কেউ আপনার পিছু নিবে না।

তার প্রতি গোত্রের ভক্তি ও শ্রদ্ধার কারণ, বনু আদী গোত্রের বিধবা নারী ও ইয়াতীমদেরকে তিনি আর্থিক সাহায্য করতেন। পরে ষষ্ঠ হিজরিতে হুদায়বিয়ার সময় তার গোত্রের চল্লিশ ব্যক্তিকে নিয়ে মদীনায় হিজরত করলেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেলেন এবং বললেন, নুয়াইম! তোমার ব্যাপারে তোমার সম্প্রদায় আমার সম্প্রদায় হতে উত্তম। কারণ তারা তোমাকে সমর্থন করে রেখে দিয়েছে। আর আমার স¤প্রদায় আমাকে বের করে দিয়েছে। হযরত নুয়াইম রা. বলেন, বরং আপনার সম্প্রদায় আমার সম্প্রদায় হতে উত্তম। কারণ তারা আপনাকে হিজরত করার জন্য বের করে দিয়েছে। আর আমার সম্প্রদায় আমাকে বাধা দিয়েছে। (জামিউল মাসানীদ : ৯৫৭৬)।

হযরত নুয়াইম আন-নাহহাম রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, কোনো এক শীতের রাতে আমি আমার লেপের মধ্যে ছিলাম, তখন রাসূলের মুয়ায্যিনকে (ফজর নামাজের) আযান দিতে শুনলাম। (প্রচন্ড শীতের কারণে) আমি মনে মনে কামনা করলাম, আহ! যদি বলা হত তোমরা তোমাদের ঘরে নামাজ পড়। মুয়াযযিন আযানের শেষ দিকে বললেন, তোমরা তোমাদের ঘরে নামাজ পড়। পরে তাকে আমি তার এই উক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, নবী কারীম (সা.) তাকে এ কথা বলার আদেশ করেছেন। (মুসনাদে আহমদ : ১৭৯৩৩)।

হাদীসের শিক্ষা : হযরত নুয়াইম ইবনে আবদুল্লাহ রা. ইচ্ছা ও প্রস্ত্ততি সত্তে¡ও হিজরতের মত অতি গুরুত্বপূর্ণ আমল পরিত্যাগ করেছেন ইয়াতীম ও বিধবা নারীদের সাহায্য-সহযোগিতার জন্য। ইসলামের দৃষ্টিতে এটি অত্যন্ত মাহাত্ম্যপূর্ণ ও ফযীলতপূর্ণ কাজ। কুরআন-হাদীসে ইয়াতীম, মিসকীন ও বিধবা নারীদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা, দান-সদকা ও তাদের প্রতি সদয় আচরণের খুব তাগিদ দেয়া হয়েছে এবং অসীম পূণ্য ও উত্তম প্রতিদানের প্রতিশ্রæতি দেয়া হয়েছে। উক্ত সাহাবীর আমল এবং তাঁর জান্নাত লাভের সুসংবাদ তার একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারীমের বহু আয়াতে ইয়াতীম-মিসকীনদের সাথে কোমল ব্যবহার, তাদেরকে সাহায্য-সহযোগিতার আদেশ করেছেন এবং এর বিপরীত আচরণ তথা তাদেরকে ধমক দেওয়া, কঠোরতা করা ও সাহায্য করা থেকে বিরত থাকতে নিষেধ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে- লোকে আপনাকে জিজ্ঞেস করবে, (আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য) তারা কী ব্যয় করবে? আপনি বলে দিন, তোমরা যে সম্পদই ব্যয় কর, তা পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম, মিসকীন ও মুসাফিরদের জন্য হওয়া চাই। (সূরা বাকারা : ২১৫)।

আল্লাহ তাআলা জান্নাতীদের প্রশংসা ও গুণ বর্ণনা করে ইরশাদ করেছেন, তারা আল্লাহর ভালবাসায় মিসকীন, ইয়াতীম ও বন্দীদেরকে খাবার দান করে। (এবং তাদেরকে বলে,) আমরা তো তোমাদেরকে খাওয়াই কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য। আমরা তোমাদের কাছে কোনো প্রতিদান চাই না এবং কৃতজ্ঞতাও না। (সূরা দাহর : ৮-৯)।

ইয়াতীম, মিসকীন ও বিধবাদের প্রয়োজন পূরণে সহযোগিতা করা হাদীসের ভাষায় জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহ এবং দিনের বেলায় রোযা রাখা ও রাত্রিবেলায় নফল নামায আদায়ের সমতুল্য। হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি স্বামীহীন নারী ও মিসকীনদের সহযোগিতার জন্য পরিশ্রম করে সে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীর মতো এবং সেই ব্যক্তির সমতুল্য যে দিনের বেলায় রোজা রাখে এবং রাত্রিবেলায় নফল নামাজ আদায় করে। (সহীহ বুখারী : ৫৩৫৩, ৬০০৬-৭)।

হযরত সাহল ইবনে সা’দ হতে বর্ণিত অন্য এক হাদীসে নবী কারীম (সা.) ইরশাদ করেছেন, আমি এবং ইয়াতীমের ভরণপোষণকারী জান্নাতে এভাবেই থাকব। এ কথা বলে তিনি তর্জনী ও মধ্যমা আঙ্গুলী একত্র করে ইঙ্গিত করলেন। (সহীহ বুখারী: ৬০০৫; মুসলিম : ২৯৮৩)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
salman ৬ ডিসেম্বর, ২০২১, ৭:০৮ এএম says : 0
Ameen
Total Reply(0)
মোহাম্মদ রমিজ ৬ ডিসেম্বর, ২০২১, ৭:০৯ এএম says : 0
সবথেকে বড় পাওয়া এই দুনিয়াতেই পাওয়ার পরেও কোনও প্রকার অহংকার অহমিকা তাদেরকে স্পর্শও করে নাই। পবিত্রতার পরশ পাথররুপে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখে গেলেন এই নশ্বর পৃথিবীতে।
Total Reply(0)
মামুন রশিদ চৌধুরী ৬ ডিসেম্বর, ২০২১, ৭:০৯ এএম says : 0
এই দুনিয়াতে থাকালীন সময়ে জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত দশজন সাহাবীকে আশারায়ে মুবাশশারা (সুসংবাদপ্রাপ্ত দশজন) বলা হয়।
Total Reply(0)
কায়কোবাদ মিলন ৬ ডিসেম্বর, ২০২১, ৭:০৯ এএম says : 0
জান্নাতি সাহাবীগণের দুনিয়ার জীবনযাপন ইবাদত, আল্লাহ্ এবং রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আনুগত্য ও আত্মসমর্পণ দৃষ্টান্ত স্বরূপ।
Total Reply(0)
Helal Al Khalifa ৬ ডিসেম্বর, ২০২১, ৭:০৯ এএম says : 0
Allah mohan
Total Reply(0)
মিফতাহুল জান্নাত ৬ ডিসেম্বর, ২০২১, ৭:১০ এএম says : 0
মহান আল্লাহ আমাদের তাদের অনুকরণ করার তৌফিক দিন।
Total Reply(0)
ফয়েজ উদ্দিন ৬ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:৫৩ পিএম says : 0
আল্লাহ বিধবা ও ইয়াতিমদের সাহায্য করার তৌফিক দিন।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন