বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

জাওয়াদ এর দূর্যোগ বরিশাল অঞ্চলের সাড়ে ৮লাখ হেক্টরের পাকা আমনে মই দিতে উদ্যত

কৃষকের কপালে দুঃশ্চিন্তার ভাজ গভীর হচ্ছে

বরিশাল ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৬ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:৪১ পিএম

‘বাংলার শষ্য ভান্ডার’ খ্যাত ধান-নদী-খাল’র বরিশাল কৃষি অঞ্চলের মাঠে আমন ধানের ছড়া যথেষ্ঠ আশা জাগালেও নি¤œচাপ ‘জাওয়াদ’র প্রভাবে বঙ্গোপসাগর থেকে ধেয়ে আসা গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সহ বায়ু চাপের তারতম্যে বৃষ্টিপাতে কৃষকের কপালের ভাজ এখন গভীর হচ্ছে। ‘সারা বছরের আশার সম্পদ’ প্রধান দানাদার খাদ্য ফসল আমন নিয়ে যথেষ্ঠ দুঃশ্চিন্তায় কৃষককুল। এবার বরিশাল কৃষি অঞ্চলে লক্ষ্যমাত্রার প্রায় শতভাগ, ৮ লাখ ৫৬ হাজার হেক্টর জমিতে আমন আবাদ সম্পন্ন করেছিলেন এ অঞ্চলের কৃষি যোদ্ধাগন। উৎপাদন লক্ষ্য রয়েছে প্রায় ২০ লাখ টনের কাছে।

কিন্তু এপর্যন্ত আমনের খরিপ-২ মৌসুমে এ অঞ্চলে তেমন কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগে ধানের ক্ষতি না হলেও থোর অবস্থা থেকে ধান বেরিয়ে পাকা শুরু হতেই মেঘলা আকাশ সহ হালকা থেকে মাঝারী বৃষ্টি পরিস্থিতিকে যথেষ্ঠ নাজুক করে তুলছে। ভাটির এলাকা বিধায় বরিশাল অঞ্চলে আমনের রোপন যেমনি বিলম্বিত হয়, তেমনি এখনো অনেক জমিতে কিছুটা পানিও রয়েছে। কিন্তু ধানের সবুজ ছড়া যখন হলুদ বর্ণ ধারন করে পেকে উঠছে, সেসময়ে জাওয়াদ’এ ভর করে এ বৃষ্টিপাত মাজরা পোকার আক্রমন সহ ধান মাটিতে শুয়ে পড়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। এমনকি এতে করে ধানে চিটা হবার সম্ভনাও ক্রমশ বাড়ছে বলে শংকিত কৃষকগন। সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত বরিশাল ও পাটুয়াখালীতে ১৪ মিলিমিটার করে এবং সাগর উপকুলের কলাপাড়াতে ১৩ মিলি ও ভোলাতে ৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হলেও এঅঞ্চল সহ সারা দেশের সর্বাধীক বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ফরিদপুরে ৭৬ মিলিমিটার।
দেশে চলতি আমন মৌসুমে ৫৫ লাখ ৭৭ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদের মাধ্যমে ১ কোটি ৪৭ লাখ ৫৩ হাজার টন চাল উৎপাদন লক্ষ্য অর্জনে ইতোমধ্যে সারা দেশের প্রায় ৬৫ ভাগ জমির আমন কর্তন সম্পন্ন হলেও বরিশাল অঞ্চলে ধান কাটা হয়েছে মাত্র ২৫ ভাগের মত। ফলে মাঠে প্রায় ৭৫ ভাগ আমন থাকার মধ্যেই প্রকৃতির এ বিরূপ আচরন কৃষকের ভাগ্য বিপর্যয়ের আশংকা প্রবল করে তুলছে।
কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর-ডিএই থেকে ব্লক সুপারভাইজারদের সরেজমিনে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য সংগ্রহ করে সোমবার বিকেলের মধ্যে বিস্তারিত জানাতে বলা হয়েছে।
গত বছর প্রকৃতিক দূর্যোগের ক্ষতি বাদে দেশে ৫৩ লাখ ৮৩ হাজার ৭৯৮ হেক্টরে ১ কোটি ৪১ লাখ ৫৬ হাজার ৫৪৩ টন আমন চাল উৎপাদন হয়। যা আগের বছরের চেয়ে বেশী হলেও বরিশাল অঞ্চলে উৎপাদন ঘাটতি ছিল লক্ষমাত্রার প্রায় দেড় লাখ টন কম। ঘূর্ণিঝড় আম্পান এবং ভাদ্র মাসের বড় অমাবশ্যায় এ অঞ্চলের প্রায় ৭০ ভাগ আমনের জমি প্লাবিত হওয়ায় ভয়াবহ দূর্যোগ নেমে আসে প্রকৃতি নির্ভর এ ধান উৎপাদনে। ফলে উৎপাদন ঘাটতি ছিল লক্ষ্যমাত্রার প্রায়ে দেড়লাখ টন কম।
এদিকে এবার দেশে ২ লাখ ৪৫ হাজর হেক্টরে হাইব্রিড জতের আমন আবাদের লক্ষ্য প্রায় অর্জিত হয়েছে। যার গড়ফলন হেক্টরে ৩.৮০ টন চাল। কিন্তু বরিশাল অঞ্চল এখনো হাইব্রীড ও উচ্চফলনশীল-উফশী জাতের আমন আবাদ কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌছেনি। সারা দেশে ২.৪৫ লাখ হেক্টরের মধ্যে বরিশাল অঞ্চলে এ ধানের আবাদ হয়েছে ১ হাজার হেক্টরেরও কম। অথচ এ অঞ্চলে এবার যে হাইব্রীড-এর আবাদ হয়েছে, তা থেকে ৩.৬৩ থেকে ৪.৭৬ টন পর্যন্ত চাল পাওয়া যাচ্ছে। যা সারা দেশে হাইব্রীডের গড় ফলনের চেয়ে বেশী।
অপরদিকে সারাদেশে মাত্র ১.৫২ টন উৎপানক্ষম স্থানীয় সনাতন জাতের যে ধানের আবাদ হয়েছে ৮ লাখ হেক্টরে, তারমধ্যে শুধু এ অঞ্চলেই এককভাবে ৩ লাখ ৩৩ হাজার হেক্টরে কম ফলনশীল ঐ ধানের আবাদ হয়েছে বলে ডিএই জানিয়েছে। ফলে এ অঞ্চলে প্রচুর জমিতে আমনের আবাদ হলেও উৎপাদন কাঙ্খিত মাত্রায় না হওয়ায় কৃষকের ভাগ্যের পরিবর্তন আটকে আছে যুগের পর যুগ ধরে। এমনকি ‘উচ্চ ফলনশীল-উফশী’ জাতের ধানের আবাদও বাড়ছে না। এজন্য কৃষকগন ডিএই’র সম্প্রসারন কর্মীদের মাঠ পর্যায়ে যথাযথ দায়িত্ব পালন না করা সহ হাইব্রীড এবং উফশী জাতের বীজ ও আবাদ প্রযুক্তি পৌছে না দেয়াকেও দায়ী করছেন।
তবে এরপরেও বরিশাল অঞ্চলের কৃষকরা এবার আমনের ভাল ও নির্বিঘœ উৎপাদনের আশায় বুক বেধেছিলেন। কিন্তু ‘জাওয়াদ’ দুদিন চোখ রাঙিয়ে দূর্বল হলেও তার রেশ ধরে সোমবার দুপুর পর্যন্ত হালকা বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে উপক’ল যুড়ে। গভীর নি¤œচাপ থেকে নি¤œচাপে পরিনত হয়ে সোমবার বিকেল পর্যন্ত সুস্পষ্ট লঘুচাপ আকারে অবস্থান করে সন্ধা নাগাদ লঘুচাপে পরিনত হবার কথা বলেছে আবহাওয়া বিভাগ। মঙ্গলবার সকালের পরবর্তি ৪৮ ঘন্টায় পরিস্থিতির উন্নতির কথা বলা হলেও ততক্ষনে পাকা ও আধাপাকা আমনের পরিস্থিতি কি হবে, তা নিয়ে যথেষ্ঠ শংকায় এ অঞ্চলের কৃষককুল।
এ ব্যাপারে ডিএই’র বরিশাল অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক জানান, নি¤œচাপটি দূর্বল হলেও তার প্রভাবে বৃষ্টি সহ গত দুদিন বিরূপ আবহাওয়া বিরাজ করছে। যা এসময়ে আমনের জন্য অনুকল নয়। তারপরেও আমরা সার্বিক পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছি। সরেজমিনে ক্ষয়ক্ষতি নিরুপনের কাজ চলছে বলে জানিয়ে যত দ্রুত সম্ভব ধান কাটতে কৃষকদের বলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
তবে রোববার সকাল থেকেই আবহাওয়া বিভাগের বুলেটিনে নি¤œচাপ ‘জাওয়াদ’ দূর্বল হয়ে পড়ার যে বার্তা দেয়া হয়, তাতে যথেষ্ঠ আশান্বিত কৃষকগন। সোমবার দুপুর পর্যন্ত বরিশাল সহ উপক’লভাগের কোথাও ভারী কোন বৃষ্টিপাত সহ ঝড়ো হওয়া নিয়ে দূর্যোগের খবর ছিলনা। এমনকি নদ-নদীতে জোয়ারের উচ্চতাও স্বাভাবিক পর্যায়েই রয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন