বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

প্রবাল হারাচ্ছে সেন্টমার্টিন

সমুদ্রগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা

জাকের উল্লাহ চকোরী, কক্সবাজার থেকে : | প্রকাশের সময় : ৭ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০২ এএম

বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন পরিবেশগত এক ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাবের শিকার হয়েছে। অবিলম্বে এ দ্বীপে পরিবেশ পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ নেওয়া না হলে অদূর ভবিষ্যতে দ্বীপটি সাগরগর্ভে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি কক্সবাজারের পেঁচারদ্বীপস্থ বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বুরি) বিজ্ঞানীদের ২০২০-২১ অর্থবছরে সম্পাদিত গবেষণা ফলাফল উপস্থাপনের ওপর আয়োজিত এক সেমিনারে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়।
বিজ্ঞানীরা বলেন, সমৃদ্ধ ‘জীববৈচিত্র্যের আঁধার’ হিসেবে বিবেচিত দেশের একমাত্র প্রবালসমৃদ্ধ দ্বীপ সেন্টমার্টিনের প্রবালগুলো রোগাক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। গত চার দশকে এ দ্বীপ উপকূল থেকে হারিয়ে গেছে হাজার হাজার টন প্রবাল ও পাথর। এর ফলে ক্ষয়ের শিকার হয়ে উপকূলের বিস্তীর্ণ ভূমি সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে, বিশেষ করে দ্বীপের উত্তর উপকূলে সৃষ্টি হয়েছে ভাঙনের।
বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সেমিনারে প্রধান ও বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন যথাক্রমে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব জিয়াউল হাসান এবং পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সচিব) অধ্যাপক ড. মো. কাউসার আহাম্মদ।
প্রধান অতিথি বলেন, বর্তমান সরকার দেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতির ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। পরিবেশ ও পর্যটনের উন্নয়নের মাধ্যমেই সুনীল অর্থনীতির বিকাশ ঘটাতে হবে। যদি আমাদের প্রাকৃতিক রিসোর্স বা সম্পদ শেষ হয়ে যায়, তাহলে উন্নয়ন কখনও টেকসই হবে না। তাই প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমেই অর্থনীতির বিকাশ ঘটাতে সরকার বদ্ধ পরিকর।
সেমিনারে ‘প্রবাল ও সেন্টসার্টিন দ্বীপ’ শীর্ষক মূল গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ও সমুদ্র বিজ্ঞানী সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর (অতিরিক্ত সচিব)। তিনি নব্বই দশকে সেন্টমার্টিন দ্বীপ নিয়ে তার গবেষণা ও বর্তমান গবেষণার একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ তুলে ধরে বলেন, মনুষ্যঘটিত বেশ কয়েকটি প্রভাবে দ্বীপটি যেভাবে পরিবেশগত বিপর্যয়ের শিকার হয়েছে, তা অব্যাহত থাকলে এবং অবিলম্বে পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ নেওয়া না হলে অদূর ভবিষ্যতে দ্বীপটি সাগরগর্ভে তলিয়ে যেতে পারে।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের পরিবেশ পুনরুদ্ধারের জন্য বুরির বিজ্ঞানীরা কয়েকটি প্রজাতি চিহ্নিত করেছেন এবং যার মাধ্যমে সেন্টমার্টিন দ্বীপে কৃত্রিম উপায়ে কোরাল রিফ গড়ে তোলার কৌশলও অর্জন করেছেন বলে জানান মহাপরিচালক সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর। তিনি দ্বীপে পরিবেশগত বিপর্যয়ের জন্য প্রবাল মরে যাওয়া, আহরণের কারণে উপকূল থেকে প্রবাল ও পাথর হারিয়ে যাওয়াকে দায়ী করেছেন। তিনি অপরিকল্পিতভাবে পর্যটন শিল্প গড়ে তোলা, প্লাস্টিক ও অন্যান্য দূষণ, ক্ষতিকর পদ্ধতিতে মাছ ধরা, অতিরিক্ত মাছ ধরা ও বড় বড় জাহাজ চলাচলসহ মনুষ্যঘটিত অন্যান্য কারণেই এ দ্বীপের প্রবালগুলোর রোগাক্রান্ত হওয়া ও মরে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে বলে মনে করেন। সেমিনারে বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০২০-২১ অর্থবছরের গবেষণা ফলাফলসহ মোট সাতটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়।
সেমিনারে বঙ্গোপসাগরের তলদেশে থাকা বিরল খনিজ সম্পদের ভূতাত্ত্বিক জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের ভূতাত্ত্বিক ওশানোগ্রাফি বিভাগের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকারিয়া, সেমিনারে সেন্টমার্টিনের কোরালের উপর দূষণের কারণে সৃষ্ট রাসায়নিক প্রভাব তুলে ধরেন কেমিক্যাল ওশানোগ্রাফি বিভাগের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবু সাইদ মোহাম্মদ শরিফ ও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম, সেমিনারে বঙ্গোপসাগরের পরিবর্তন তুলে ধরেন ফিজিক্যাল ও স্পেস ওশানোগ্রাফি বিভাগের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা রূপক লোধ ও শাহীনুর রহমান, সাগরের পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ে গবেষণাপত্র তুলে ধরেন এনভায়রনমেন্টাল ওশানোগ্রাফি ও ক্লাইমেট বিভাগের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মীর কাশেম ও সুলতান আল নাহিয়ান।
সেমিনারে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধশতাধিক গবেষক উপস্থিত ছিলেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন