১৪শ’ কোটি বছর আগে বিগ ব্যাং বা মহাবিস্ফোরণের পর মহাকর্ষীয় তরঙ্গের সৃষ্টি। সেই থেকে এই তরঙ্গ ছড়িয়ে পড়ছে সৌরজগতের চতুর্দিকে, একইসঙ্গে অসম্ভব দ্রুতগতিতে মহাবিশ্ব প্রসারিত হয়ে চলেছে
ইনকিলাব ডেস্ক : বিজ্ঞানীরা মহাকর্ষীয় তরঙ্গ সরাসরি শনাক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন। আপেক্ষিকতা তত্ত্বে এই মহাকর্ষীয় তরঙ্গেরই পূর্বাভাস দিয়েছিলেন আলবার্ট আইনস্টাইন। ১০০ বছর পর তা সঠিক বলে প্রমাণিত হলো। যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেয়া হয়। আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব ১৯১৫ সালে প্রথম প্রকাশিত হওয়ার পর একে একে এর পূর্বাভাস মিলতে শুরু করে। কিন্তু তার ওই তত্ত্বের একটি পূর্বাভাসের সরাসরি প্রমাণ মিলছিল না কিছুতেই। তা হলো গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ বা মহাকর্ষীয় তরঙ্গ। ১৪০০ কোটি বছর আগে মহাবিস্ফোরণ বা বিগ ব্যাং-এর পর যে উত্তাল ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়েছিল, সেটাই মহাকর্ষীয় তরঙ্গ। পুকুরে ঢিল ফেললে যেমন ঢেউ ছড়াতে ছড়াতে সেটি পাড়ে পৌঁছে যায়, তেমনই এই বিশ্বব্রহ্মা-ে এখনো ওই মহাকর্ষীয় তরঙ্গ ছড়িয়ে পড়ছে। আর চারপাশে অসম্ভব দ্রুতগতিতে মহাবিশ্ব এখনো প্রসারিত হয়ে চলেছে। তাই সেই তরঙ্গের পরিধিও উত্তরোত্তর বাড়ছে, কিন্তু তার হদিস পাচ্ছিলেন না মহাকাশবিজ্ঞানীরা। সে কারণে ভাবনা শুরু হয়েছিল আইনস্টাইনের তত্ত্বের পরিবর্ধন-পরিমার্জনেরও। অবশেষে ১০০ বছর পর তার তত্ত্বই সঠিক প্রমাণিত হলো। সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদে মহাকর্ষীয় তরঙ্গের যে গাণিতিক পূর্বাভাস তিনি দিয়েছিলেন, তা পুরোপুরি সঠিক হলো। সরাসরি শনাক্ত হলো মহাকর্ষীয় তরঙ্গ।
মহাকর্ষীয় তরঙ্গ শনাক্তের জন্য বিজ্ঞানীরা লেজার রশ্মি ভ্রমণ করতে পারে এমন চার কিলোমিটার দীর্ঘ টানেল তৈরি করেন। গবেষকেরা বলছেন, পৃথিবী থেকে ১০০ কোটিরও বেশি আলোকবর্ষ দূরে দুটি কৃষ্ণ গহ্বরের সংঘর্ষের ফলে স্থান-কাল কীভাবে বেঁকে যায়, তা তারা পর্যবেক্ষণ করেছেন। আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীদের একটি দল লিগো কোলাবোরেশন বলছে, প্রথমবারের মতো মহাকর্ষীয় তরঙ্গ শনাক্ত করার মাধ্যমে জ্যোতির্বিজ্ঞানে নতুন যুগের সূচনা হবে। কয়েক দশক ধরে অনুসন্ধানের পর গবেষণাটি চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছাল। এর মাধ্যমে বিগ ব্যাং সম্পর্কে আরও জানার সুযোগ হতে পারে। তত্ত্ব অনুযায়ী বিগ ব্যাং বা মহাবিস্ফোরণের মাধ্যমেই মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয়েছিল।
লিগো কোলাবোরেশনের গবেষণা প্রতিবেদনটি বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী ফিজিক্যাল রিভিউ লেটার্স-এ প্রকাশের জন্য গৃহীত হয়েছে। লিগো কোলাবোরেশন এ নিয়ে বিশ্বের কয়েকটি গবেষণাগারে পরীক্ষা চালায়। লিগো প্রজেক্টের নির্বাহী পরিচালক ডেভিড রিজ বলেন, আমরা মহাকর্ষীয় তরঙ্গ শনাক্ত করেছি। এই প্রথম মহাকর্ষীয় তরঙ্গের মাধ্যমে মহাবিশ্ব আমাদের সঙ্গে কথা বলল। এর আগ পর্যন্ত আমরা ছিলাম বধির। ম্যাক্স টø্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর গ্র্যাভিটেশনাল ফিজিকস ও হ্যানোভারের লাইবনিজ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক কার্সটেন ডানসমান ইউরোপীয় বিজ্ঞানীদের মধ্যে ওই যৌথ গবেষণায় নেতৃত দেন। তিনি বলেন, হিগস কণা আবিষ্কারের পর এই মহাকর্ষীয় তরঙ্গ শনাক্ত করার বিষয়টিই বিজ্ঞানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। কোনো সন্দেহ নেই, এটি নোবেল পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য। ...এটি আপেক্ষিকতা তত্ত্বের বক্তব্য নিশ্চিত করল। মহাকর্ষীয় তরঙ্গ শনাক্ত করার এ ঘটনা বিজ্ঞানের ইতিহাসে একটি বিশেষ মুহূর্ত মনে করেন স্টিফেন হকিং। বিবিসি, রয়টার্স, ওয়েবসাইট।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন