শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

দাম্ভিকতার পতন

প্রতিমন্ত্রী ও আ’লীগের পদ হারালেন ডা. মুরাদ পদ হারিয়ে ইসলাম বিদ্বেষী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর পথে হাঁটছেন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০৪ এএম

‘ক্ষমতার গরম’ বলে একটা কথা সমাজে চালু আছে। ক্ষমতা আর চেয়ারের গরমে অনেকেই সীমা লংঘন করেন। এই সীমা লংঘন কাউকে ভালো কিছু এনে দিয়েছে কখনো শোনা যায়নি। বরং উৎসৃংখলতা ও সীমা লংঘনকারীদের পড়তে হয়েছে ধ্বংসের মুখে। পবিত্র কোরআনে এ ব্যাপারে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চই আল্লাহ সীমা লংঘনকারীকে পছন্দ করেন না’ (সুরা আল মায়েদা-৮৭)। দেশের মানুষ দেখলো সীমা লংঘনকরা ইসলাম বিদ্বেষী একজন বিকারগ্রস্থ প্রতিমন্ত্রীর পতন। যে চেয়ারের গরমে তিনি নারী জাতিকে অপমান করেছেন, অশ্লীল, ঐদ্ধত্যপূর্ণ কথা বলে দাম্ভিকতা দেখিয়ে স্যোসাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে ‘হিরো’ হতে চেয়েছিলেন; সেই প্রতিমন্ত্রীর চেয়ার তাকে ছেড়ে দিতে হলো। ক্ষমাও চাইতে হলো। তিনি তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। তাকে আওয়ামী লীগের দলীয় পদ থেকেও বহিস্কার করা হয়েছে। মন্ত্রিসভার প্রতিমন্ত্রীর পদ ও জামালপুর জেলার দলীয় পদ হারিয়ে তিনি এখন সংসদ সদস্য পদ হারানোর লক্ষ্যে আরেক ইসলাম বিদ্বেষী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর পথে হাঁটছেন।

দলের পদ হারানোয় সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ ও ৬৭ অনুচ্ছেদের ধারা অনুযায়ী ডা. মুরাদ হাসান জামালপুর-৪ আসনের সংসদ পদও হারাবেন। গতকালই তার বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় অভিযোগ দাখিল করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। নবাব সিরাজ উদ দৌল্লা সিনেমার ‘সকাল বেলায় আমীর রে ভাই ফকির সন্ধ্যে বেলা’ গানের মতো লাম্পট্যের কারণে প্রতিমন্ত্রী পদ হারিয়ে ক্ষমতাহীন হয়ে পড়লেন। কোথায় গেরঅ আস্ফালন এবং ঐদ্ধত্যপূর্ণ বাচনভঙ্গিতে ইসলাম বিদ্বেষী কথাবার্তা! শুধু তাই নয় গোটা নায়িকাকে আইন শৃংখলা বাহিনী দিয়ে ধরে এনে ‘রেফ’ করার ঘোষণা দিয়ে দেশের মানুষের ঘৃর্ণার পাত্রে পরিণত হলেন। জনরোষে পড়ে তথ্য ও স¤প্রচার প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে ডা. মুরাদ হাসান পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে গতকাল মঙ্গলবার নিজ দফতরে তিনি তার পদত্যাগপত্র পাঠান। এর আগে অসৌজন্যমূলক আচরণ ও নানান অশ্লীল বক্তব্যের কারণে তাকে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার পদত্যাগপত্র মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পৌঁছেছে এবং তা গৃহিত হয়েছে বলে জানা গেছে।

বিকারগ্রস্থ ব্যাক্তি হিসেবে পরিচিত ডা. মুরাদ হাসান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বরাবরে লেখা পদত্যাগ পত্রে তিনি লিখেছেন, চলতি বছরের ১৯ মে তাকে তথ্য ও স¤প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি ব্যক্তিগত কারণে স্বেচ্ছায় প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করতে ইচ্ছুক। যা ৭ ডিসেম্বর গ্রহণ করতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। কিন্তু তিনি পদত্যাগপত্রে ভুল তারিখ উল্লেখ করেন। মুরাদের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের তারিখ ছিল ১৯ মে ২০১৯ইং। কিন্তু আবেদনে তিনি ভুলক্রমে ১৯ মে ২০২১ইং উল্লেখ করেন। পরে মন্ত্রিপরিষদ ইমেইলের বদলে পদত্যাগের হার্ড কপি চাইলে কয়েক ঘন্টা পর তা জমা দেয়া হয়। ডা. মুরাদ হাসানের পদত্যাগপত্র মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবের দফতরে জমা দেওয়া হয়েছে। সাবেক এই তথ্য প্রতিমন্ত্রীর জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন প্রতিমন্ত্রীর পক্ষে পদত্যাগপত্রটি জমা দেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবের পক্ষে তার একান্ত সচিব মাহমুদ ইবনে কাসেম তা গ্রহণ করেন। এর আগে পদত্যাগপত্রটি কেবিনেটে জমা দেওয়া হয়। চট্টগ্রাম থেকে তথ্য ও স¤প্রচার মন্ত্রণালয়ে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করে পাঠান ডা. মুরাদ। তিনি বর্তমানে চট্টগ্রামে অবস্থান করছেন। এর আগে গত সোমবার রাতে নিজের সরকারি বাসভবনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও স¤প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানকে মঙ্গলবারের মধ্যেই মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করতে বলেছেন। তাকে প্রধানমন্ত্রীর বার্তা পৌঁছে দেয়া হয়েছে।

নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হওয়া মুরাদ হাসান একজন বিকারগ্রস্থ মানুষ। তার লাম্পট্যের অডিও স্যোসাল মিডিয়ায় ভাসছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে তিনি মাহিয়া মাহি নামের এক নায়িকাকে ডিজিএফআই, এনএসআইন, ডিবি ও পুলিশ দিয়ে ধরে হোটেলে আনার কথা বলেন। তার নোংরা, অশ্লীল কথাবার্তা ভাইরাল হলে সর্বোত্রই ছিঁছিঁ পড়ে যায়। শুধু তাই নয়, তিনি গত শুক্রবার ৩ ডিসেম্বর এক লাইভ অনুষ্ঠানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমানের মেয়ে ব্যারিষ্টার জাইমা রহমানকে নিয়ে নোংরা মন্তব্য করেন। এমনকি তিন বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে যে ঐদ্ধত্যপূর্ণ মন্তব্য করেন তা ক্ষমার অযোগ্য হিসেবে অবিহিত করেছেন দেশের সব শ্রেণি পেশার মানুষ। মুহ‚র্তেই তার অশালীন বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে। প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যকে অসব্য, শিষ্টাচার বহির্ভ‚ত, নারীবিদ্বেষী, কুরুচিপূর্ণ এবং নারী সমাজের জন্য অপমানজনক বলে অভিহিত করেন বিভিন্ন সংগঠনের নেতানেত্রীরা। প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে মুরাদ হাসানকে মন্ত্রিসভা থেকে বহিস্কারের দাবিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন দাবি তোলেন। আওয়ামী লীগের কিছু নেতা বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে তাকে জাতির কাছে ক্ষা চাওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু তিনি ঔদ্ধত্য দেখিয়ে বলেন, ‘মুরাদ হাসানের জন্ম কারো কাছে মাফ চাওয়ার জন্য হয়নি। এই বক্তব্য আমি প্রাউড ফিল করি।’ সরকারের দায়িত্বশীল একটি পদে থেকে এমন বক্তব্য কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় গণমাধ্যমকে এমনটি জানান আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী। আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা বলেন, এটা মুরাদ হাসানের নিজস্ব কথা, দলের নয়। কিন্তু পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে তাকে পদত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়।

এদিকে ঐদ্ধত্যপূর্ণ এবং অশালীন বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান-দাবি সবকিছুকেই নাকচ করে দিয়েছিলেন মুরাদ হাসান। তিনি বলেন, সমালোচকদের গালিগালাজ তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। নিজ দলের সমালোচকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘উনারা নিজেদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চেয়েও বড় নেতা মনে করেন।’ তবে প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের পর লেজ গুটিয়ে তিনি দেশবাসী ও নারী সমাজের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। তিনি লিখেছেন ‘আমি যদি কোন ভুল করে থাকি অথবা আমার কথায় মা-বোনদের মনে কষ্ট দিয়ে থাকি তাহলে আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মমতাময়ী মা দেশরত্ম বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সকল সিদ্ধান্ত মেনে নিবো আজীবন। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’।

লতিফ সিদ্দিকীর পথে মুরাদ
আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতিমন্ডলীর সদস্য এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর পরিণতির দিকে যাচ্ছেন সদ্য পদত্যাগ করা তথ্য ও স¤প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের ভবিষ্যত জীবন। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় সংসদের সরকার দলীয় প্রধান হুইপ ন‚র-ই-এলাহী চৌধুরী লিটন এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন। দলীয় পদ হারালে সংবিধান অনুযায়ী সংসদ সদস্য পদ থাকে না।

হজ্ব নিয়ে কটুক্তি ও ইসলাম ধর্ম অবমানতার অভিযোগে তীব্র আন্দোলনের মুখে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী ২০১৪ সালের ১২ অক্টোবর মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়েন। ওই সময় তাকে জনরোষ থেকে রক্ষা করতে কারাগারে নেয়া হয়। অতপর ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। ওই সময় প্রধানমন্ত্রী সংবিধানের ৫৮ অনুচ্ছেদের (২) দফা অনুযায়ী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর মন্ত্রী পদে নিয়োগের অবসান ঘটানোর জন্য প্রেসিডেন্টকে পরামর্শ দেন। পরামর্শ অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট সংবিধানের ৫৮ অনুচ্ছেদের (১) দফার (গ) উপ-দফা অনুযায়ী ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর মন্ত্রী পদে নিয়োগের অবসান হয়। ওই দিন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি ও প্রাথমিক সদস্য পদ অস্থায়ীভাবে স্থগিত করা হয়। পরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বহিষ্কার করা হয়। ফলে এমপি পদ হারান। গতকালই মুরাদ হাসানকে জামালপুর জেলা কমিটির পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, মুরাদ হাসানকে দল থেকে বহিষ্কারের বিষয়ে দলের আগামী কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে। জাতীয় সংসদের প্রধান হুইপ ন‚র-ই-এলাহী চৌধুরী লিটন বলেন, অতীতের দৃষ্টান্তগুলো ফলো করুন। লতিফ সিদ্দিকীর সময় কী হয়েছিল সেটা দেখুন।

উল্লেখ, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ এ বলা হয়েছে, ‘কোনো নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরুপে মনোনীত হইয়া কোন ব্যক্তি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হইলে তিনি যদি-(ক) ওই দল হইতে পদত্যাগ করেন, অথবা (খ) সংসদে উক্ত দলের বিপক্ষে ভোটদান করেন, তাহা হইলে সংসদে তার আসন শ‚ন্য হইবে, তবে তিনি সেই কারণে পরবর্তী কোন নির্বাচনে সংসদ সদস্য হইবার অযোগ্য হইবেন না’। সদস্যদের আসন শ‚ন্য হওয়ার ব্যপারে সংবিধানের ৬৭ অনুচ্ছেদ এ বলা হয়েছে।

দল থেকে বহিস্কার, জামালপুরে আনন্দ মিছিল
অডিও কেলেঙ্কারি এবং অশ্লীল কথাবার্তার প্রতিবাদের ঝড়ে তথ্য ও স¤প্রচার প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান পদত্যাগের পর পর তার নির্বাচনী এলাকা জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে আনন্দ মিছিল করেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা। আরামনগর বাজার ট্রাক মালিক সমিতির মোড় থেকে একটি আনন্দ মিছিল বের হয়, যার নেতৃত্বে দেখা যায় উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আল-আমিন হোসাইন শিবলুকে। উপজেলা সদরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে মিছিলকারীরা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন। পরে সেখানে মুরাদ হাসানের কুশপুতুল পোড়ানো হয়। তারা জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী, মেস্টা ও তিতপল্যা) সংসদ সদস্য মুরাদ হাসান এমপি পদ শূণ্য ঘোষণা দাবি করেছেন।

সরিষাবাড়ী পৌর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম বিদ্যুতের নেতৃত্বে আরেকটি আনন্দ মিছিল হয় শিমলা বাজার থেকে। মিছিলটি আরডিএম স্কুল রোড ও বাস টার্মিনাল সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে বঙ্গবন্ধু চত্বরে শেষ হয়। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান নেতাকর্মীরা।

অশালীন ও শিষ্টাচারবহির্ভ‚ত বক্তব্যের ঘটনায় ডা. মুরাদ হাসানকে জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি তাকে দল থেকে বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রে সুপারিশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বিকেলে জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে জরুরি বৈঠকে জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সর্বসম্মতিক্রমে ডা. মুরাদ হাসানকে জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক পদ থেকে অব্যহতি দেয়া হয়। বৈঠক শেষে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট বাকী বিল্লাহ। সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমেদ চৌধুরীসহ স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। অ্যাডভোকেট বাকী বিল্লাহ বলেন, গঠনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় জেলা আওয়ামী লীগের কমিটির সদস্যদের উপস্থিতিতে সভায় সবার মতামত নিয়ে স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. মুরাদ হাসানকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। সেই তাকে দল থেকে বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রে সুপারিশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

অশ্লীল অডিও-ভিডিও সরানোর নির্দেশ
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া মুরাদ হাসানের অশ্লীল অডিও-ভিডিও সরিয়ে ফেলতে বিটিআরসিকে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোট। আদালত নির্দেশনার পাশাপাশি সব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে অডিও-ভিডিও সরাতে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা ৮ ডিসেম্বর বুধবারের মধ্যে জানাতে বলা হয়েছে।
হিরো হওয়ার বাসনায় নেট দুনিয়ায় নিজের পরিচিতি বাড়াতে গিয়ে ভিলেন হয়ে গেছেন মুরাদ হাসান। তিনি অশ্লীলতার সব সীমা ছাড়িয়ে গেছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তার নাতনির বিরুদ্ধে অশ্লীল শব্দের ব্যবহারই শুধু নয়; একজন নায়িকাকে নিয়ে তার ফোনালাপের কথোপকথন প্রচার হয়েছে। চিত্রনায়ক ইমন ও চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির সঙ্গে সেই কথোপকথনে ডা. মুরাদকে অশালীন কথা বলতে শোনা যায়। মাহিকে হোটেল সোনারগাঁওয়ে তার ভাড়া করা রুমে আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, তিনি না এলে আইনশৃংখলা বাহিনীকে দিয়ে তাকে তুলে নেওয়া হবে। ওই সময় তাকে যৌন সহিংস কথাবার্তা বলতেও শোনা যায়। বর্তমানে মক্কায় অবস্থানরত মাহিয়া পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন দাবি করেছেন।

বিভিন্ন ইস্যুতে আগামহীন বক্তব্য দিয়ে আলোচনায় আসা ডা. মুরাদের জন্য নতুন নয়। কিছুদিন আগে বাহাত্তরের সংবিধানে ফেরার দাবি জানিয়ে নিজ দলের মধ্যেই সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। সংবিধানে ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম ও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকতে পারে না’ এমন মন্তব্য করে তোপের মুখে পড়েন। নায়িকা মৌসুমির শরীর নিয়ে অপ্রীতিকর মন্তব্য করেছেন। নায়ক শাকিবকে ‘তুই তো অভিনয় জানোস না। তুই তো শুধু লাফাস’ বলে অপদস্ত করেন।

জামালপুরের আওয়ামী লীগ নেতা মতিউর রহমান তালুকদারের ছেলে মুরাদ ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকেটে জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী, মেস্টা ও তিতপল্যা) সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নানান অপকান্ডের কারণে ২০১৪ সালে তাকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়নি। তবে ২০১৮ সালে তিনি দ্বিতীয়বার সংসদ সদস্য হন। ২০১৯ সালে শেখ হাসিনা টানা তৃতীয়বার সরকার গঠন করলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান মুরাদ। ওই বছর মে মাসে তাকে স্বাস্থ্য থেকে সরিয়ে তথ্য ও স¤প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। পেশায় চিকিৎসক এই বিতর্কিত রাজনীতিবিদ স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সদস্য।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (12)
মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:৫৩ এএম says : 0
যেমন কর্ম তেমন ফল।
Total Reply(0)
Md Parves Hossain ৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ৪:৪৭ এএম says : 0
অতীতে যারা ইসলামের বিরোধিতা করছে তারা কেউ টিকে থাকতে পারে নাই, মুরাদও পারবে না, মহান আল্লাহ ছাড় দেন কিন্তু ছেড়ে দেয় না।
Total Reply(0)
M R Munna ৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ৫:০৪ এএম says : 0
এখন তাকে গ্রেফতার করা হোক
Total Reply(0)
Sahadat Hossain Sagor ৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ৫:০৭ এএম says : 0
পদত্যাগপত্রে প্রতিমন্ত্রী মুরাদ লিখেছেন-'আমি ব্যক্তিগত কারণে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করছি'
Total Reply(0)
Amirul Kahan ৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ৫:০৭ এএম says : 0
শুধু পদত্যাগ করলে হবে না, তাকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
Total Reply(0)
Shadhin Babu ৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ৫:১৬ এএম says : 0
মুরাদ কে শাস্তির আওতায় আনা হোক, দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি হওয়া দরকার
Total Reply(0)
Nakber Hossain ৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ৫:১৯ এএম says : 0
আলহামদুলিল্লাহ, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কে অনেক অনেক ধন্যবাদ
Total Reply(0)
MD Nur Alam ৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ৫:২১ এএম says : 0
অপবিত্র লোকটাকে আওয়ামীলীগ থেকে বহিস্কার করে দলটাকে পবিত্র করা হোক।
Total Reply(0)
Md Nazmul Hussain Nannu ৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ৫:২২ এএম says : 0
সবকিছু ঠিকঠাক চলছে, শুধু মুরাদ হতভম্ব বিধ্বস্ত... সময় থাকতেই... সাধু সাবধান।
Total Reply(0)
GM Maksudur Rhaman Mamun ৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ৫:২৪ এএম says : 0
দলীয় শাস্তি নয় আইনের শাস্তি চাই
Total Reply(1)
ABU ABDULLAH ৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ৯:৫৫ এএম says : 1
ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলায় তার কোনো অসুবিধা হয়নি, যে মাত্র নায়িকা নামক একজন মহিলা কে অশ্লীল কথা বার্তা বলিল তখন তার অসুবিধে হইল,তার মানের ইসলামের বিরুদ্ধে যাহা মনে চায় তাহা বলতে পার
True Mia ৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ৯:৩০ এএম says : 0
Those who are against Islam they are enemy of Allah SWT and his Rasool (peace be upon him). When they exceed the limit, they fall on the ground like flying ants. Allah SWT never tolerates the enemy of his Rasool (Peace be upon him). Murad fell just l.......
Total Reply(0)
Md. Yousuf ৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ৯:৫৮ এএম says : 0
আল্লাহর আযাব কে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহর আযাব থেকে রক্ষা করার কেউ থাকবে না।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন