শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

বিনিয়োগ পরিবেশের আরো উন্নয়ন দরকার

সরদার সিরাজ | প্রকাশের সময় : ১১ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০৫ এএম

দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশে অনেক সভা, সেমিনার ও রোড শো হয়েছে। কিন্তু বিনিয়োগ তেমন বাড়েনি। করোনা মহামারির সময়ে বিনিয়োগ বরং কমেছে। অবশ্য এই সময়ে বিশ্বেরও গড় বিনিয়োগ কমেছে। তবে চীনে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে বিশ্বের মধ্যে সর্বাধিক। আরও অনেক দেশে বিনিয়োগ বেড়েছে। এমনকি, এই সময়ে দেশেরও বিপুল অর্থ বিনিয়োগ হয়েছে বিভিন্ন দেশে। মোটা অংকের অর্থ পাচারও হয়েছে। সম্প্রতি আমিরাত ও যুক্তরাজ্য, সিরিয়া ও তুরস্কে বিপুল অংকের বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সোস্যাল মিডিয়া কোম্পানি-টিএমটিজিতে বিভিন্ন কোম্পানি ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ নিশ্চিত হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বৈদ্যুতিক গাড়ি ও ব্যাটারি উৎপাদনে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। এই খাতে বিপুল বিনিয়োগ হচ্ছে। নিশান আগামী পাঁচ বছরে বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারিতে ১,৭৬০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির অন্য খাতেও বিনিয়োগ হচ্ছে ব্যাপক। অথচ আমাদের দেশে বিনিয়োগ কমেছে! কারণ, বিনিয়োগের পরিবেশ অনুকূল নয়। বিশ্বব্যাংকের ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’ সূচক-২০২০ মতে, ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১৬৮তম। এছাড়া, দেশীয় সংস্থা-এমসিসিআই ও পলিসি চেঞ্জ বাংলাদেশ-এর ‘বিজনেস ক্লাইমেট ইনডেক্স-২০২১’ শীর্ষক প্রতিবেদন মতে, বাংলাদেশে ব্যবসার পরিবেশ সূচকে ১০টির মধ্যে ৬টি সূচকেই অবস্থা নড়বড়ে। তবে ৪টি সূচক উন্নতির দিকে। স্কোর ৬১। সরকারের কর্তাব্যক্তিরা ব্যবসা সহজীকরণের বৈশ্বিক সূচকে দেশের অবস্থান শততমের মধ্যে আনার ঘোষণা দিয়েছে। অনেক স্থানে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করা হয়েছে। তবুও বিনিয়োগের পরিবেশের তেমন উন্নতি হয়নি! মানুষ এসব দেখে শুনেই বিনিয়োগ করে।

এই অবস্থায় গত ১১-১৪ নভেম্বর ঢাকায় ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস অন ইনফরমেশন টেকনোলজির ‘মিনিস্ট্রিয়াল কনফারেন্স’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, ‘চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে বাংলাদেশ নেতৃত্ব দিতে চায়।তাই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ব্লক চেইন, আইওটি, ন্যানো টেকনোলজি, বায়োটেকনোলজি, রোবটিক্স, মাইক্রোপ্রসেসর ডিজাইনের মতো ক্ষেত্রগুলোতে জোর দিচ্ছে বাংলাদেশ। বিশ্বমানের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে দেশে ৩৯টি হাই টেক পার্ক করা হয়েছে। এসব পার্কে বিনিয়োগে কর অব্যাহতি, বিদেশিদের জন্য শতভাগ মালিকানার নিশ্চয়তা, আয়কর অব্যাহতিসহ নানা সুযোগ রাখা হয়েছে’। গত ২৮-২৯ নভেম্বর আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলন করা হয়েছে ঢাকায়। এ সন্মেলনের লক্ষ্য, ২০২৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ৫০০ বিলিয়ন ডলার অর্থনীতির দেশ হিসাবে গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় বিদেশি বিনিয়োগ আনা। সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য বিশ্বের বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘বিনিয়োগের জন্য আমরা সম্ভাবনাময় ১১টি খাত চিহ্নিত করেছি। এসব হচ্ছে অবকাঠামো, পুঁজিবাজার ও ফিন্যানশিয়াল সেবা, তথ্য-প্রযুক্তি, ইলেকট্রনিকস উৎপাদন, চামড়া, স্বয়ংক্রিয় ও হালকা প্রকৌশল, কৃষিপণ্য ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধ, পাট-বস্ত্র এবং ব্লু-ইকোনমি’। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লু-ইকোনমির বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘দেশের মাছ ধরার অঞ্চলের ৮৮% এখনও ব্যবহার করা হয়নি। এখন পর্যন্ত আমরা মোট ফিশিং জোনের প্রায় ১২% এলাকায় প্রবেশ করেছি। এটি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি সীমাহীন সুযোগ’। কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে এগ্রি বিজনেসে বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তাদের সকল ধরনের প্রণোদনা এবং সহযোগিতা প্রদান করা হবে’। নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বিনিয়োগ বাড়াতে ও রফতানি বহুমুখী করতে হলে শক্তিশালী অবকাঠামো, পণ্য পরিবহনে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিসহ গতিশীল লজিস্টিক প্রয়োজন। ২০৪০ সাল নাগাদ উন্নত দেশের তালিকায় যেতে হলে পরিবহন খাতে অন্তত: ২৮৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রয়োজন’। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘খেলাপি ঋণকে অবশ্যই সহনীয় ও প্রত্যাশিত মাত্রায় নিয়ে আসতে হবে। খেলাপি ঋণ বাড়ুক তা মোটেও কাম্য নয়’। সম্মেলন শেষে এক ব্রিফিংয়ে বিডা চেয়ারম্যান বলেন, ‘দু’দিনের বিনিয়োগ সম্মেলনে ২৭০ কোটি ডলার বিনিয়োগের আশ্বাস পাওয়া গেছে’।

যা’হোক, বিনিয়োগের জন্য প্রেক্ষিত একটি বড় বিষয়। যাকে বলে যুগের চাহিদা। এটা একেক দেশে একেক রকমের হয়। সর্বোপরি বৈশ্বিক চাহিদার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে বৈশ্বিক চাহিদার সর্বাধিক হচ্ছে প্রযুক্তি। বিশ্বের বেশিরভাগ মানুষ প্রযুক্তি ব্যবহারের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। মানুষের নবতর এই চাহিদা পূরণ করতে বহু দেশ প্রযুক্তির উদ্ভাবন, উন্নয়ন, তৈরি ও বাজারজাতকরণে প্রচ- প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে। অর্থাৎ নতুন বিপ্লব শুরু করেছে, যা চতুর্থ শিল্প বিপ্লব বলে খ্যাত। এতে আমাদেরও শামিল হতে হবে। নতুবা অনেক পিছিয়ে পড়তে হবে। এই বিপ্লবে ব্যাপক বিনিয়োগ দরকার। উপরন্তু প্রযুক্তিভিত্তিক পর্যাপ্ত দক্ষ লোক প্রয়োজন। তাই শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজিয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক এবং উন্নত মানের করা জরুরি। উপরন্তু কর্মীদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দরকার। বর্তমানে বৈশ্বিক চাহিদার দ্বিতীয়টি হচ্ছে, গ্রিন এনার্জি। জলবায়ু সংকট মোকাবেলার জন্য জীবাশ্ম জ্বালানির স্থলে নবায়নযোগ্য জ্বালানির চাহিদা ও ব্যবহার ব্যাপক বাড়ছে বিশ্বব্যাপীই। কপ-২৬ সম্মেলনের লক্ষ্যও ছিল এটি, যা কার্যকর করা থেকে কোন দেশই দূরে থাকতে পারবে না। আমাদের পক্ষেও তা সম্ভব নয়। তাই আমাদেরও শতভাগ গ্রিন এনার্জিতে যেতে হবে দ্রুত, যা এক বিশাল কর্মযজ্ঞ ও খুবই ব্যয় বহুল। তাই এই খাতেও বিপুল বিনিয়োগ দরকার। অন্যদিকে, বাংলাদেশ কৃষি ভিত্তিক দেশ। কিন্তু সে কৃষি এখনো মূলত সেকেলে, যা আধুনিক করা দরকার। সে জন্য সমগ্র কৃষিকে যান্ত্রিক করতে হবে। এছাড়া, সব কৃষি পণ্যের প্রয়োজনীয় সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সুষ্ঠু বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা করতে হবে। সে জন্য প্রয়োজনীয় কৃষিভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠা করা দরকার। এটাও খুবই ব্যয় বহুল। তাই এই খাতেও ব্যাপক বিনিয়োগ প্রয়োজন। এছাড়া, দেশের বিভিন্ন খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ প্রয়োজন। বিশেষ করে অবকাঠামো খাতে।

এই অবস্থায় বিনিয়োগের জন্য দ্রুত অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে হবে। প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাসের ব্যবস্থা, নিরাপত্তা নিশ্চিত ও চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। বিনিয়োগ প্রস্তাবের ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সম্ভব হলে হ্যাঁ, আর সম্ভব না হলে না বলতে হবে দ্রুত। ঝুলিয়ে রাখা চলবে না। স্মরণীয় যে, কিছুদিন আগে যুক্তরাজ্য ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইস্পিড ট্রেন চালু করার এবং চীন ঢাকা-চট্টগ্রাম ইলেকট্রিক ট্রেন চালু করার প্রস্তাব দিয়েছে। চীন তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার প্রস্তাবও দিয়েছে। এসবের কোনটিরই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি। এভাবে আরও অনেক দেশি-বিদেশি প্রস্তাব ঝুলে আছে। এর আগে সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ করার জন্য চীনের সাথে সমঝোতা স্মারক সাক্ষর হয়েছিল। কিন্তু ভারতের বাধায় তা বাতিল করে পায়রায় গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ইতোমধ্যে তা বাস্তবায়নের জন্য কয়েক হাজার কোটি টাকা ব্যয়ও করা হয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি সেটা বাতিল করে মহেশখালীতে করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এরও ভাগ্যে শেষ পর্যন্ত কী আছে তা বলা কঠিন। অথচ, দেশে কোনো গভীর সমুদ্র বন্দর নেই। তাই বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্যয় ও সময় বাড়ছে অনেক। এরূপ বিপুল অংকের অনেক বিদেশি বিনিয়োগের প্রস্তাব রয়েছে, যা নাকচ হয়েছে অথবা ঝুলে আছে। এতে দেশের আর্থিক ও বিনিয়োগ ইমেজ ক্ষুণœ হচ্ছে।

সম্প্রতি দেশে বিনিয়োগের নতুন একটি সুযোগ তৈরি হয়েছে। সেটি হচ্ছে, চীন জিএসপি সুবিধা নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে চীনের রফতানি মূল্য অনেক বেড়ে যাবে। তাই দেশটির বহু প্রতিষ্ঠান অন্য দেশে স্থানান্তরিত হবে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ একটি উত্তম স্থান হতে পারে। অবশ্য ইতোপূর্বে আমরা সেরূপ একটি সুযোগ গ্রহণ করতে পারিনি অনুকূল পরিবেশের অভাবে। তাই সে সুযোগ গ্রহণ করেছে ভিয়েতনাম, ভারত, পাকিস্তান ইত্যাদি দেশ। সে সুযোগটি হচ্ছে, চীনে শ্রমিকের মজুরী অনেক বৃদ্ধি পাওয়ায় সে দেশের অনেক প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন দেশে স্থানান্তর করেছে। অপরদিকে, সৌদি আরবের পরিবহন ও লজিস্টিক সেবা মন্ত্রী সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরকালে বলেছেন, সৌদি সরকারি-বেসরকারি ৩০টিরও বেশি কোম্পানি বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন, বিদ্যুৎ, বন্দর, জ্বালানি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। এর পর ডিপি ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশে ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। উন্নত সাপ্লাই চেইন প্রতিষ্ঠায় পিপিপি প্রকল্পের আওতায় বন্দর, রেল নেটওয়ার্ক এবং ইনল্যান্ড কনটেইনার টার্মিনালসহ বাংলাদেশের সাপ্লাই চেইন নেটওয়ার্ক উন্নয়নে তারা বিনিয়োগ করবে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ পেতে বিভিন্ন দেশের মধ্যে জোর প্রচেষ্ট চলছে। ঢাকার আমিনবাজারে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ ৪২.৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে চীনের সাথে চুক্তি হয়েছে গত ১ ডিসেম্বর। এ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে কার্যক্রম শুরুর ১৮ মাসের মধ্যেই। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, দেশের সব জেলায় বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। এতেও বিপুল বিনিয়োগ দরকার।

উল্লেখ্য যে, দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম চলছে। ইতোমধ্যে অনেকগুলোর কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া, ৩৯টি হাই টেক পার্ক নির্মাণ করা হয়েছে। উপরন্তু বিসিকেরও অনেক শিল্প প্লট অব্যবহৃত রয়েছে। সর্বোপরি কর্নফুলী ট্যানেল ও পদ্মা সেতু চালু হলে বিপুল বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হবে নদীর ওপারে। অর্থাৎ বিনিয়োগ করার মতো যথেষ্ট স্থান রয়েছে দেশে। তাই দু’চারটা বিদেশি বড় কোম্পানি বিনিয়োগ করলেই তার দেখাদেখি বড় অনেক বিদেশি কোম্পানি বিনিয়োগে এগিয়ে আসবে। সে সাথে দেশি কোম্পানিও।

বিনিয়োগ হতে হবে পরিবেশ বান্ধব। নতুবা মারাত্মক ক্ষতি হবে। বন্ধ করার প্রশ্ন দেখা দেবে। যেমন: পরিবেশ রক্ষা করার লক্ষ্যে ১০টি কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্লান্ট বন্ধ করা হয়েছে সম্প্রতি। বাকীগুলোও বন্ধ করতে হতে পারে। সাভারের চামড়াশিল্প নগরী আপাতত বন্ধ করার জন্য পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সুপারিশ করেছে। এছাড়া, পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা-২০২১ খসড়ায় বলা হয়েছে, অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত হচ্ছে টেক্সটাইল ও অবকাঠামো নির্মাণ খাত। তাই এসব নিয়েও ভবিষ্যতে প্রশ্ন উঠবে। ফলে বন্ধ করে দিতে হবে। তাই পুরাতন ও নতুন সব খাতকেই পরিবেশবান্ধব করতে হবে দেশের স্বার্থেই। কারণ, পরিবেশের উন্নতি না হলে কোনো উন্নতিই টেকসই হবে না। দেশে বিনিয়োগের আর একটি বড় অন্তরায় হচ্ছে, প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় ব্যাপক বৃদ্ধি। পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে চরম অদক্ষতা এবং দুর্নীতির কারণেই এটা হচ্ছে। এছাড়া, অনেক প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা ও কর্মের মান নিয়েও প্রশ্ন আছে। এসব দূর করা দরকার। প্রয়োজনে কঠোরতা অবলম্বন করতে হবে। নতুবা সহসাই এসব থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে না। কাক্সিক্ষত সুফলও হবে না। প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব নিয়ে বিশ্বব্যাংকও প্রশ্ন তুলেছে সম্প্রতি। অপরদিকে,দেশের উন্নয়নের বেশিরভাগ ঢাকাকেন্দ্রিক। তাই মানুষ সব ঢাকামুখী হয়েছে। ফলে ঢাকা বাসের অনোপযোগী হয়ে পড়েছে। এর যানজটে বছরে জিডিপির প্রায় ৭% ক্ষতি হচ্ছে। সর্বোপরি দেশে আঞ্চলিক বৈষম্য অনেক। বিআইডিএস’র বার্ষিক রিপোর্ট-২০২১ মতে, দেশে ২০১৬ সালে দারিদ্র্যের হার ছিল পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোতে ২৩.০৭% আর পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে ৩০.৪৫%। যার পরিবর্তন হয়নি এখনো। আঞ্চলিক বৈষম্যের কথা বিশ্ব ব্যাংকের রিপোর্টেও বলা হয়েছে। এই বৈষম্য নিরসন করতে হবে। এ জন্য অনুন্নত অঞ্চলে অধিক বিনিয়োগ এবং প্রশাসনকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। সর্বোপরি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে রফতানিমুখী খাতকে প্রাধান্য দিতে হবে।

লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন