স্টুডেন্ট ভিসায় যুক্তরাজ্যে পাঠানোর নামে ভয়াবহ জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে সিলেটে। জালিয়াতির ঘটনায় ১৯ শিক্ষার্থীকে ১০ বছরের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে যুক্তরাজ্যে প্রবেশে। সিলেট নগরীর জিন্দাবাজারস্থ ওয়েস্ট ওয়ার্ল্ড শপিং সিটির পঞ্চম তলাস্থ ‘স্ট্রেলার কনসালটেন্ট’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান এসব শিক্ষার্থীদের ভিসা প্রসেসিংয়ে জমা দিয়েছিল ভূয়া কাগজপত্র। শিক্ষার্থীদের কেবল নিষিদ্ধ করা হয়নি সেই সাথে প্রত্যেকের ৩ হাজার পাউন্ড করে কেটে রেখেছে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়।
সূত্র জানায়, স্টুডেন্ট ভিসায় যুক্তরাজ্যে যেতে সিলেটের ১৯ শিক্ষার্থী দ্বারস্থ হন ‘স্ট্রেলার কনসালটেন্ট’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের। এই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুনতাসির মাহবুবের সাথে চুড়ান্ত আলাপ আলোচনার পর টাকা ও কাগজপত্র জমা দেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের যুক্তরাজ্যের ব্রিস্টলের ইউনিভার্সিটি অব দ্য ওয়েস্ট অব ইংল্যান্ড (ইউডাব্লিউই) -এ ভর্তির ব্যবস্থা করেন তিনি। চলতি বছরের জানুয়ারিতে এসব শিক্ষার্থীর পাসপোর্ট ও কাগজপত্র ভিএফএস গ্লোবালে দেওয়া হয় জমা। সব শিক্ষার্থীর কাগজপত্র প্রসেসিং করেন মাহবুব। কাগজপত্রের সাথে আর.এম. গ্রুপের ‘জব সার্টিফিকেট’ও তৈরি করে দেন তিনি। মূলত স্টুডেন্ট ভিসায় জব সার্টিফিকেটের প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু কোনো শিক্ষার্থীর যদি ‘স্টাডি গ্যাপ’ (শিক্ষা বিরতি) বেশি থাকে, তখন জব সার্টিফিকেট দিতে হয়। এর মাধ্যমে বুঝানো হয় যে, ওই শিক্ষার্থীর স্টাডি গ্যাপের কারণ হচ্ছে কাজে লেগে গিয়েছিলেন তিনি। এদিকে, পাসপোর্ট ও কাগজপত্র জমা দেওয়ার মাসখানেক পরে ইউকে হোম অফিস (ভিসা প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ) থেকে শিক্ষার্থীদের কাছে ই-মেইল পাঠানো হয়। প্রেরিত ই-মেইল বার্তায় জানানো হয়, যে জব সার্টিফিকেট জমা দেওয়া হয়েছে, সেটি সম্পূর্ণ ভুয়া! এর ফলে ১০ বছরের ব্যানড্ (নিষিদ্ধ) করা হয়েছে এসব শিক্ষার্থীকে। এহেন বার্তায় বড় ধাক্কা খান শিক্ষার্থীরা। তারা ‘স্ট্রেলার কনসালটেন্ট’-এর মুনতাসির মাহবুবের কাছে ছুটে যান। শিক্ষার্থীদের চাপের মুখে ইউকে হোম অফিসে রিভিউ করেন মাহবুব। এরপর হোম অফিস আবারও আর.এম. গ্রুপে খোঁজ নেয়। তারা জানতে পারে, যে জব সার্টিফিকেট জমা দেওয়া হয়েছিল, তা ছিল সম্পূর্ণ ভুয়া। ফলে রিভিউ বাতিল হয়, বহাল থাকে ১০ বছরের নিষেধাজ্ঞা। এমন ইমেইলে শিক্ষার্থীরা বড় ধাক্কা খান। তারা ‘স্ট্রেলার কনসালটেন্ট’-এর মুনতাসির মাহবুবের কাছে ছুটে যান। শিক্ষার্থীদের চাপের মুখে ইউকে হোম অফিসে রিভিউ করেন মাহবুব। এরপর হোম অফিস আবারও আর.এম. গ্রুপে খোঁজ নেয়। তারা জানতে পারে, যে জব সার্টিফিকেট জমা দেওয়া হয়েছিল, তা ছিল সম্পূর্ণ ভুয়া। ফলে রিভিউ বাতিল হয়, বহাল থাকে ১০ বছরের নিষেধাজ্ঞা। এদিকে, স্টুডেন্ট ভিসা না হলে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় জমাকৃত সব টাকা ফেরত দেয়। কিন্তু এই ১৯ শিক্ষার্থী জাল কাগজপত্র ভিসার জন্য জমা দেওয়ায় তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ৩ হাজার পাউন্ট করে কেটে রাখছে যুক্তরাজ্যের ব্রিস্টলের ইউনিভার্সিটি অব দ্য ওয়েস্ট অব ইংল্যান্ড (ইউডাব্লিউই)। ১৯ শিক্ষার্থী ১ লাখ ৯ হাজার ৭৫০ পাউন্ড জমা দিয়েছিলেন। এর মধ্যে ৫৭ হাজার পাউন্ড কেটে রাখা হচ্ছে।
জানা গেছে, ভয়াবহ জালিয়াতির শিকার হওয়া শিক্ষার্থীরা গত ৪ ডিসেম্বর মুনতাসির মাহবুব ও তার স্ত্রী ‘স্ট্রেলার কনসালটেন্ট’র চেয়ারম্যান জান্নাতুল ফেরদৌস রাফাকে এসএমপির কোতোয়ালী মডেল থানায় সোপর্দ করা হয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে মামলা করতে চাইছিলেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আরেকটি অঙ্গীকারনামা করে থানা থেকে বেরিয়ে যান মাহবুব ও তার স্ত্রী । এবার সময় নিয়েছেন দুই মাস।
নগরীর কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ আলী মাহমুদ বলেন, অভিযুক্ত ব্যক্তি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে দুই মাসের সময় নিয়ে একটি অঙ্গীকারনামা করেছেন। দুই মাসের মধ্যে তিনি বিষয়টির সমাধান করবে বলে অঙ্গীকার করেছেন। উভয়পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হওয়ায় ছেড়ে দেওয়া হয় তাদের।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন