মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

যানজট উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হওয়ার প্রতিবন্ধক

কামরুল হাসান দর্পণ | প্রকাশের সময় : ১৭ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০৫ এএম

দেশের যানজট নিয়ে বহু কথা হয়েছে। বহু লেখালেখি এবং বিশেষজ্ঞদের মতামত প্রকাশিত হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে যানজট কমানোর উদ্যোগ এবং পরিকল্পনার কথাও শোনা গেছে। তবে যানজট নামক বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধা যায়নি। যানজটমুক্ত করা দূরে থাক, বিচ্ছিন্নভাবে যেসব উদ্যোগ নেয়া হয়েছে সেগুলোও পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা যায়নি। ফলে যানজট জটিল থেকে জটিলতর আকার ধারণ করেছে। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কয়েক বছর আগে রাজধানীর যানজটকে জাতীয় দুর্ভোগ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। অবশ্য মন্ত্রী এ কথা না বললেও রাস্তায় চলাচলকারী একজন সাধারণ যাত্রীও বুঝতে পারেন, যানজট তার কত ক্ষতি করছে। তারপরও এই পরিস্থিতির মধ্য দিয়েই তাকে বছরের পর বছর চলতে হচ্ছে। এতে তার আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি মানসিক যে অপূরনীয় ক্ষতি হচ্ছে, তা পরিমাপ করা হচ্ছে না। পরিস্থিতি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, যানজট গাসহা হতে হতে আর সহা যাচ্ছে না। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, কেন ও কী কারণে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে তা চিহ্নিত হলেও, সমাধানের উদ্যোগ ও তৎপরতা খুব একটা নেই। অথচ যুগের পর যুগ ধরে সৃষ্ট এই যানজট নিরসনে যদি একটু একটু করে পদক্ষেপ নেয়া হতো, তাহলেও আজকের এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না। যানজট বিষফোঁড়ায় পরিণত হতে পারত না।

দুই.
যানজট জাতীয় অর্থনীতিকে কতটা ক্ষতি করে চলেছে, তার হিসাব ও পরিসংখ্যান বিশেষজ্ঞদের গবেষণার বরাত দিয়ে প্রায়ই পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এতদিন একটি সাধারণ হিসাব ছিল, যানজটে বছরে ২০ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়। বিনিয়োগ বোর্ডের এক গবেষণায় এ হিসাব বদলে গেছে। তারা একটি হিসাব দিয়েছে, যানজটের কারণে বছরে ক্ষতি হয় প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা। উৎপাদন খাত, স্বাস্থ্যগত ও দুর্ঘটনার ক্ষতি হিসাব করলে এর পরিমাণ হবে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা। বিনিয়োগ বোর্ডের গবেষণা প্রতিবেদনে যানজটের কারণে ক্ষতির একটি খাত ওয়ারি হিসাব দেখানো হয়েছে। হিসাবে দেখানো হয়, যানজটের কারণে বছরে কর্মজীবী মানুষের যে পরিমাণ কর্মঘন্টা নষ্ট হয় তার আর্থিক মূল্য ৪৩ হাজার ৮৩৬ কোটি টাকা। উৎপাদন খাতে এ ক্ষতির পরিমাণ ৩০ হাজার ৬৮২ কোটি, স্বাস্থ্যগত ক্ষতি ২১ হাজার ৯১৮ কোটি, জ্বালানি ও মেরামত বাবদ ১ হাজার ৩৯৩ কোটি এবং দুর্ঘটনায় ক্ষতি হয় ১৫৪ কোটি টাকা। সম্প্রতি এক গবেষণায় বলা হয়েছে, যানজটের কারণে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি বা জিডিপি’র ক্ষতির পরিমাণ ২.৫ শতাংশ। যানজটের ক্ষতি প্রতি বছর কী পরিমাণে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তার একটি তুলনামূলক হিসাব তুলে ধরলে বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যাবে। যানজটের কারণে আর্থিক ক্ষতির বিষয়টি প্রথমে নজরে আনে দি ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইইবি)। সংস্থাটি ২০১১ সালে তার এক গবেষণায় যানজটে আর্থিক ক্ষতির বিষয়টি তুলে ধরে। তারা দেখায়, ২০১১ সালে ক্ষতির পরিমাণ ছিল ২০ হাজার কোটি টাকা। ২০১২ সালে এ ক্ষতি বেড়ে দাঁড়ায় ৩১ হাজার কোটি টাকা। আর ২০১৫ সালে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের ইকোনোমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, রাজধানীর যানজটে নগরবাসীর প্রায় ৩২ লাখ কর্মঘন্টা নষ্ট হয়। দিনে ক্ষতি হয় প্রায় ১০০ কোটি টাকা। যানজটে এই ক্ষতির পরিমাণ জ্যামিতিক হারে বাড়ছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হওয়ার যে কথা বলা হচ্ছে, যানজট এক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। কারণ, যেসব বিদেশী প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করতে আসবে, যানজটে পড়ে যদি তাদের ঘন্টার পর ঘন্টা সময় নষ্ট করতে হয়, তাহলে তারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। যে যানজট জিডিপি’র ২.৫ শতাংশ খেয়ে ফেলছে, তা চলতে থাকলে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হওয়ার ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াবে। আগামী পাঁচ বছরে এ ক্ষতি পোষানো যাবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। যানজটের সাধারণ কারণগুলো মোটামুটি সবারই জানা। রাস্তার তুলনায় অতিরিক্ত যানবাহন, রাস্তা-ফুটপাত অবৈধ দখল, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, যেখানে-সেখানে বাস থামিয়ে যাত্রী উঠা-নামা করানোর কারণগুলো চোখের সামনেই ঘটছে। তবে একটি শহরে যান চলাচলের জন্য সবচেয়ে জরুরি যে বিষয়, তা হচ্ছে রোড ম্যানেজমেন্ট বা সড়ক ব্যবস্থাপনা। রাজধানীসহ দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে এ ব্যবস্থাপনা নেই বললেই চলে। অপরিকল্পিতভাবেই সবকিছু চলছে। এমন বিশৃঙ্খল সড়ক ব্যবস্থাপনা বিশ্বের আর কোথাও নেই। শুধু সড়ক ব্যবস্থাপনার বিশৃঙ্খলাই নয়, রাজধানীর উন্নয়ন ও সম্প্রসারণও হচ্ছে অপরিকল্পিতভাবে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনেও যানজটের অন্যতম কারণ হিসেবে রাজধানীর অপরিকল্পিত উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে। ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা এবং গণপরিবহন পরিকল্পনাকে পাত্তা না দিয়েই উন্নয়ন কার্যক্রম চলছে। সাধারণত একটি আদর্শ শহরে শতকরা ২৫ ভাগ সড়ক থাকতে হয়। ঢাকা শহরে আছে মাত্র ৭ ভাগ। বিভিন্নভাবে দখলের কারণে এই ৭ ভাগও সংকুচিত হয়ে পড়েছে। রাজধানীর বিস্তৃতি যেভাবে ঘটানো হচ্ছে, তাতেও এ বিষয়টি মাথায় রাখা হচ্ছে না। কোনো ধরনের নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই যেভাবে খুশি সেভাবে এর সম্প্রসারণ চলছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানীতে যে ৭ ভাগ সড়ক রয়েছে, এই পরিমাণ সড়কও যদি যথাযথ পরিকল্পনার মাধ্যমে ব্যবহার করা যায়, তবে যানজট অনেকটাই সহনীয় পর্যায়ে রাখা সম্ভব। এ বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আমলেই নিচ্ছে না। রাজধানী এখন এমন অবস্থায় দাঁড়িয়েছে যে, যানবাহন ও পথচারি একই রাস্তা দিয়ে চলছে। পথচারিদের জন্য যে ফুটপাত রয়েছে, সেগুলো হকারদের দখলে চলে গেছে। ফলে বাধ্য হয়ে যানবাহন চলাচলের রাস্তা দিয়ে পথচারিদের চলতে হচ্ছে। একই রাস্তা দিয়ে যদি হাঁটাচলা, ধীরগতি ও দ্রুতগতির যানবাহন চলাচল করতে হয়, সেখানে যানজট কমবে কিভাবে? ফুটপাত দখলমুক্ত করার কথা আমরা বহুবার শুনেছি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ঘোষণা দিয়েও, গুলিস্তানকে হকারমুক্ত করতে পারেনি। নামকাওয়াস্তে উচ্ছেদ অভিযান চালালেও দেখা যায়, একদিন মুক্ত থাকার পরদিনই সব ফুটপাত হকারদের দখলে চলে গেছে। এমনকি কয়েক বছর আগে উচ্চ আদালত জিরো পয়েন্ট থেকে সদরঘাট পর্যন্ত হকার মুক্তের নির্দেশ দিলেও, কিছুদিন মুক্ত থাকার পর পুনরায় পুরনো চিত্রে ফিরে যায়। যেখানে উচ্চ আদালতের নির্দেশে কোনো কাজ হয় না, সেখানে কি করে যানজট নিরসন হবে? ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র মরহুম আনিসুল হক রাজধানীর তেজগাঁওস্থ সাতরাস্তা মোড় থেকে জয়দেবপুরের চৌরাস্তা পর্যন্ত যানজট কমানোর জন্য ২২টি ইউলুপ তৈরির মাস্টার প্ল্যান করেছিলেন। ধরে নেয়া হয়েছিল, পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন হলে যানজট শতকরা ৩০ ভাগ কমে যাবে। তার মৃত্যুতে এ প্রকল্পটি এখন বন্ধ হয়ে রয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, সরকারের দৃঢ় সিদ্ধান্ত না থাকলে এবং তা বাস্তবায়ন না হলে যানজট কোনো দিনই কমবে না। অর্থনীতির যে অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে, তা দিন দিন বাড়তেই থাকবে।

তিন.
কিছুদিন আগে এক ব্যবসায়ী ভিয়েতনাম গিয়েছিলেন। দেশটির ট্র্যাফিক সিস্টেম ও যোগাযোগ ব্যবস্থা দেখে তিনি মুগ্ধ হন। তিনি বলেন, ভিয়েতনাম বিশ্বের মহাশক্তিধর দেশের সাথে যুদ্ধ করে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। যুদ্ধবিধ্বস্ত এ দেশটির উন্নয়ন দেখে বিস্মিত না হয়ে পারা যায় না। ওখানে যানজট বলতে কিছু নেই। আমাদের দেশে যানজট শহর থেকে শুরু হয়ে শহরের বাইরে মহাসড়ক পর্যন্ত ঠেকে। মহাসড়কে ঘন্টার পর ঘন্টা যানজটে পড়ে থাকতে হয়। অথচ ভিয়েতনামে দেখেছি, তারা এক শহর থেকে আরেক শহরে যাওয়ার জন্য শত শত কিলোমিটার দীর্ঘ ফ্লাইওভার নির্মাণ করেছে। এক শহর থেকে আরেক শহরে মূহুর্তে চলে যাচ্ছে। আর আমাদের দেশে রাজধানী থেকে বের হতেই ঘন্টার পর ঘন্টা সময় পার হয়ে যায়। এ অবস্থা হলে আমরা উন্নতি করব কিভাবে? যদি ঢাকা-চট্টগ্রামের মধ্যে একটি ফ্লাইওভার করা যায়, তবে অর্থনীতির উন্নতির চেহারাটাই বদলে যাবে। ব্যবসায়ীর এ অভিজ্ঞতাই নয়, কলকাতা ভারতের একটি রাজ্যের রাজধানী। এ রাজধানীর সাথেও যদি আমাদের রাজধানীর তুলনা করা হয় তাহলে দেখা যাবে, কলকাতায় শুধু ট্র্যাফিক সিগনালের স্বাভাবিক জট ছাড়া তেমন কোনো যানজট নেই। প্রধান সড়কগুলোতে ট্র্যাফিক পুলিশও খুব কম দেখা যায়। আমাদের দেশের ট্র্যাফিক পুলিশের মতো হাতের লাঠি দিয়ে সিগনাল দিয়ে গাড়ি থামাতে হয় না। সেখানে সিগনালের লালবাতি জ্বলার সাথে সাথেই সব গাড়ি থেমে যায়। ভারতের একটি অঙ্গরাজ্যের রাজধানীর যানজটের চিত্রের সাথে আমাদের দেশের রাজধানীর তুলনা করলে হতাশ হওয়া ছাড়া কিছু করার থাকে না। প্রশ্ন উঠতে পারে, তারা পারছে কিভাবে? জবাবে বলা যায়, তাদের সরকার যানজট নিরসন এবং যানজট যাতে সৃষ্টি না হয়, এ সিদ্ধান্তের ব্যাপারে কোনো ছাড় দেয়নি। আমাদের দেশের মতো ফুটপাত দখল, যত্রতত্র পার্কিং, যেখানে সেখানে গাড়ি থামানোর মতো বিষয়গুলো শক্ত হাতে দমন করেছে। যানজটমুক্ত করতে যা করার প্রয়োজন তাই করছে। এর ফলে কলকাতা থেকে দূরে অন্যান্য জেলার চাকরিজীবী ও কর্মজীবীরা সহজে কলকাতায় এসে অফিস এবং কাজকর্ম সেরে চলে যেতে পারছেন। আমাদের দেশে রাজধানীর আশপাশের জেলাগুলো থেকে রাজধানীতে কাজকর্ম করে ফিরে যাওয়া কল্পনাও করা যায় না। এর মূল কারণ যে যানজট, তা বলাবাহুল্য। বিশেষজ্ঞরা বহুদিন ধরে বলে আসছেন, রাজধানীকে ভারমুক্ত করতে হবে। প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। তাহলে দেশের সকল প্রান্তের মানুষের ঢাকামুখী হওয়া ঠেকানো যাবে। তারা এ কথাও বলেছেন, বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় শহরগুলোকে ঢাকার মতো সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তির উদ্যোগ নিতে। যদি এ শহরগুলোর উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি করা হয়, তবে ঢাকামুখী মানুষের ঢল অনেকাংশে কমে যাবে। প্রতিদিন গড়ে আড়াই থেকে তিন হাজার মানুষ রাজধানীতে প্রবেশ করত না এবং স্থায়ীভাবেও থেকে যেত না। এসব মানুষের আগমনের মূল কারণই হচ্ছে, প্রশাসন থেকে শুরু করে কর্মসংস্থান, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ঢাকায় কেন্দ্রীভূত হওয়া। রাজধানীর এসব সুবিধাদি যদি দেশের অন্যান্য বিভাগ ও জেলাগুলোতে ছড়িয়ে দেয়া হতো, তাহলে ঢাকা যেমন ভারমুক্ত হতো, তেমনি যানজট ও অর্থনীতির ক্ষতি অনেকাংশে কমে যেত। এসব সমস্যা ও সমাধানের কথা আগেও বহুবার বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে সরকারের চিন্তা-ভাবনা ও উদ্যোগের কথা শোনা যায় না। সরকার মনে করছে, রাজধানীতে ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল ইত্যাদি চালু করলে সমস্যার সমাধান অনেকাংশে হয়ে যাবে। বাস্তবতা হচ্ছে, যানজটের মূল কারণ সমাধানে উদ্যোগী না হলে যানজট কমানো যাবে না। মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে দিয়ে হয়তো কিছুটা যানজটমুক্ত হবে, তবে পুরোপুরি মুক্ত হবে তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। যানজট কমাতে যে ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছিল, দেখা যাচ্ছে সেগুলো এখন প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে। যানজট নিচ থেকে উপরে উঠে গেছে। অন্যদিকে, যেভাবে অপরিকল্পিতভাবে ঢাকার সম্প্রসারণ ঘটছে, তাতে এর সাথে তাল মিলিয়ে যাতায়াত ব্যবস্থা ও যানজটও সমানতালে এগিয়ে যাবে।

চার.
রাজধানীতে যেহেতু সড়কের পরিমাণ কম এবং যান চলাচলে পর্যাপ্ত জায়গা নেই, তাই সরকারকে ভিন্ন চিন্তা করতে হবে। রাজধানীর বিদ্যমান সড়ককে পরিকল্পিতভাবে ব্যবহারের উদ্যোগ নিতে হবে। ট্র্যাফিক ব্যবস্থাপনায় আমূল পরিবর্তন আনতে হবে। গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনতে হবে। যেখানে সেখানে বাস থামানো এবং যাত্রী উঠা-নামা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ধীরগতির যানবাহনের চলাচলের ক্ষেত্রে আলাদা ব্যবস্থা নিতে হবে। বৃহৎ পরিকল্পনার মধ্যে মাটির নিচ দিয়ে যানবাহন ও ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে। বিশেষ করে বহুমুখী সড়কের মিলনস্থল এলাকায় আন্ডারপাস নির্মাণ করলে যানজট অনেকাংশে কমে যাবে। সোনারগাঁও হোটেল মোড়, মতিঝিল শাপলা চত্বর, গুলিস্তান, কাকরাইল, মগবাজার, বিজয় সরণী, বাংলামোটরের মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় যদি মাটির নিচ দিয়ে যানবাহন চলাচলে আন্ডারপাস নির্মাণ করা হয়, তবে যানজট সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসবে। বিশ্বের বহুদেশেই এ ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে। এ ধরনের ব্যবস্থা করা কঠিন বিষয়ও নয়। সরকার যদি প্রায়োরিটি বেসিসে বিভিন্ন মেগা প্রজেক্ট করতে পারে, তবে আন্ডারপাসের মতো ছোট ছোট প্রকল্প বাস্তবায়ন করা কঠিন কিছু নয়। এসব প্রকল্প অনায়াসেই বাস্তবায়ন করা যায়। প্রয়োজন শুধু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা ও তার বাস্তবায়ন। যানজটে ক্ষতির পরিমান দিন দিন যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, অর্থনীতির স্বার্থে এসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা জরুরি। পাশাপাশি দখল হওয়া ফুটপাত ও সড়ক উদ্ধারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। যাত্রীদের জন্য নির্ধারিত স্টেশন নির্মাণ করে সেখানে যাত্রীবাহী যানবাহন থামাতে বাধ্য করতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ সড়কে গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা উঠিয়ে দিতে হবে। এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সরকারের সদিচ্ছা ও দৃঢ় পদক্ষেপ প্রয়োজন। যানজটের কারণে বছরে লাখ কোটি টাকা ক্ষতির বিষয়টি উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হওয়ার স্বার্থেই আমলে নিতে হবে।

darpan.journalist@gmail.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন