১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর জেনারেল আমির আব্দুল্লাহ খান নিয়াজীর নেতৃত্বে ৯৩ হাজার পাকসেনার আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের। অর্জিত হয় বাঙালির চূড়ান্ত বিজয়। বিশ্ব মানচিত্রে স্থান করে নেয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। বিজয়ের ৫০ বছরে গতকাল রাজধানী ঢাকার মতো সারাদেশে নানা আয়োজনে উদযাপিত হয়। আমাদের সংবাদদাতাদের প্রতিবেদন।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামে বর্ণাঢ্য আয়োজনে বিজয় দিবস উদযাপন করা হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও তাদের অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের পাশাপাশি পেশাজীবী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোও বিস্তারিত কর্মসূচি পালন করে। বিভাগীয় প্রশাসনের উদ্যোগে এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে কুচকাওয়াজ ও ডিসপ্লেতে বিগত ৫০ বছরের অর্জন তুলে ধরা হয়। শিক্ষার্থী ছাড়াও র্যাব-পুলিশ, আনসারসহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা এতে অংশ নেন।
সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে প্যারেড ময়দানে শিশু-কিশোরদের কুচকাওয়াজ অনুষ্টিত হয়। চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্যোগে বন্দর স্টেডিয়ামে কুচকাওয়াজের আয়োজন করা হয়। পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোকচিত্র প্রদর্শন, আলোচনা সভা, শোভাযাত্রাসহ নানা আয়োজনে উদযাপন করা হয় বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী। সকালে শহীদ মিনারে প্রথম শ্রদ্ধা জানান সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। এরপর বিভাগীয় কমিশনার কামরুল হাসান, সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান, পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হকসহ প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের নেতৃত্বে মহানগর আওয়ামী লীগ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়। এরপর নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে নগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বিজয় দিবসের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্করের নেতৃত্বে বিএনপির নেতাকর্মীরা শহীদের শ্রদ্ধা জানান। পরে নগরীর নাসিমন ভবনের দলীয় কার্যালয় থেকে বিজয় শোভাযাত্রা বের করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের বিজয়মেলা পরিষদের উদ্যোগে প্রতিবছরের মতো এবারও বের হয় বর্ণাঢ্য বিজয় র্যালি। নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের সম্মুখস্থ চত্বর থেকে বিজয় র্যালি শুরু হয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষীণ করে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চুয়েট, ভেটেরিনারি ভার্সিটি, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া, চিপাতলী মাদরাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্টানে বিজয় দিবসের নানা কর্মসূচি পালিত হয়।
বগুড়া ব্যুরো জানায়, শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধায় বগুড়ায় পালিত হয়েছে মুজিব শতবর্ষ ও বিজয় দিবসের স্বাধীনতার সুবর্ন জয়ন্তী। দিবসটিকে ঘিরে বর্ণিল সাজে সেজেছিল বগুড়া শহর। বসে নানা ধরনের খেলনার মেলা। রাতে সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে ৫০ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে মহান বিজয় দিবসের সূচনা হয়।
বরিশাল ব্যুরো জানায়, বরিশালে যথাযোগ মর্যাদায় স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তি, মুজিব বর্ষ ও মহান বিজয় দিবস পালিত হয়েছে। সূর্যোদয়ের সাথে বরিশাল পুলিশ লাইন্সে ৫০ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের সূচনা হয়। সকাল ৭টায় নগরীর ত্রিশ গোডাউন সংলগ্ন মুক্তিযদ্ধের বীর সেনানীদের বধ্যভূমি অভিমুখে পদযাত্রা ও পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন সর্বস্তরের মানুষ। বঙ্গবন্ধু উদ্যানে বিজয় দিবসে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পাতাকা উত্তোলনসহ সম্মিলিত বাহিনীর কুচকাওয়াজে সালাম গ্রহণ করেন বিভাগীয় কমিশনার সাইফুল ইসলাম বাদল।
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা আর উৎসবের আমেজে গৌরবের মহান বিজয় দিবস রাজশাহীতে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যদিয়ে পালিত হয়েছে। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সকল সরকারি আধাসরকারি বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলণ করা হয়। পুলিশ লাইনে পঞ্চাশ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির কার্যক্রম শুরু হয়। রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ আয়োজন করে ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথি ছিলেন পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক।
সিলেট ব্যুরো জানায়, গতকাল সকালে নগর ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলণ করা হয়। নগন ভবন চত্বরে স্থাপিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে কাউন্সিলর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে সিসিক মেয়রের নেতৃত্বে নগর চত্বর থেকে বিজয় র্যালী পৌছায় চৌহাট্টাস্থ সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে।
দিনাজপুর অফিস জানায়, দিনাজপুরে ভোর ছয়টা থেকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে শহীদ বেদিতে পুষ্পার্ঘ অর্পণের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বিজয় দিবসের নানা কর্মসূচি। প্রথমে শহীদ বেদিতে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করেন জেলা প্রশাসক খালেদ মাহমুদ জাকিরসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা। এরপরে পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেনসহ শহীদ বেদিতে একে একে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাতে পুষ্পার্ঘ করতে থাকেন বিভিন্ন সামাজিক রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক পেশাজীবী সংগঠনসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।
টাঙ্গাইল জেলা সংবাদদাতা জানান, শহর জুড়ে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে জেলা প্রশাসন। গতকাল সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে ৫০ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে শুরু হয় দিনের কর্মসূচি। পরে জেলা সদরে অবস্থিত শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদের প্রতি শ্রদ্ধ জানান জেলা প্রশাসক ড. মো. আতাউল গনি। এরপর পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার, সিভিল সার্জন ডা. আবুল ফজল মো. সাহাবুদ্দিন খানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠন ও সর্বস্তরের জনগণ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
বাগেরহাট জেলা সংবাদদাতা জানান, গতকাল সূর্যোয়ের সাথে সাথে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিনটির শুভ সূচনা করা হয়। সকাল ৭টায় শহরের দশানী স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, জেলা আওয়ামী লীগ, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংষ্কৃতিক সংগঠন।
ঝালকাঠি জেলা সংবাদদাতা জানান, ঝালকাঠিতে মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পণের মাধ্যমে স্বাধীনতার বীর শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। সকালে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিতস্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী, পুলিশ সুপার ফাতিহা ইয়াসমিন প্রমুখ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সংবাদদাতা জানান, জেলা প্রশাসনের আয়োজনে গতকাল ভোরে ৫০ বার তপধ্বণির মধ্য দিয়ে দিবসের শুরু হয়। পরে ফারকী পার্কস্থ স্মৃতি সৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য র,আ,ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, জেলা প্রশাসক হায়াত উদ দৌলা খান, পুলিশ সুপার মো. আনিসুর রহমান।
খাগড়াছড়ি জেলা সংবাদদাতা জানান, সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেছেন, যাদের মনে মুক্তিযুদ্ধের প্রতি, জাতির পিতার প্রতি কোন মায়া নেই; বাংলাদেশের সুখে যাদের গায়ে শিহরণ জাগে না, সেসব মানুষ পাকিস্তানের দোসর। গতকাল খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শিশু একাডেমি হলে জেলা প্রশাসন আয়োজিত্ব ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহিদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য’- দের সংবর্ধনা, আলোচনা সভা ও বিষয়ভিত্তিক প্রতিযোগিতার পুরস্কার প্রদান সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
মানিকগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, গতকাল সকাল সাতটায় মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভে জাতীয় সংগীত, জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিনটির শুভ সূচনা হয়। এরপর স্মৃতিফলকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় জেলা প্রশাসক আব্দুল লতিফ, পুলিশ সুপার গোলাম আজাদ খান, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাব, জেলা আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
নাটোর জেলা সংবাদদাতা জানান, গতকাল ভোরে ৫০ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে দিবসটি শুরু হয়। পরে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শহরের মাদরাসা মোড় এলাকায় স্থাপিত স্বাধীনতা স্মৃতিস্তম্ভে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও পুষ্পস্তবক অর্পণ, এক মিনিট নীরবতা পালন এবং দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ, পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা প্রমুখ।
নেত্রকোণা জেলা সংবাদদাতা জানান, ৫০ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে বিজয় দিবসের শুভ সূচনা হয়। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সকল সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। নেত্রকোণা আধুনিক স্টেডিয়াম মাঠে কুচকাওয়াজ ও ডিসপ্লে প্রদর্শিত হয়।
শেরপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, সূর্যোদয়ের সাথে সাথে ৫০ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের সূচনা হয়। এ সময় জেলা প্রশাসক মোমিনুর রশিদ, পুলিশ সুপার হাসান নাহিদ চৌধুরী, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, শেরপুর প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে শহীদ মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন