মহান বিজয় দিবসের ছুটিসহ সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে টানা তিন দিনের ছুটি পেয়ে পর্যটকদের পদচারণায় মুখর দেশের পর্যটন কেন্দ্রগুলো। লাখো পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারসহ অন্যান্য স্পট। আমাদের সংবাদদাতাদের তথ্যে প্রতিবেদন-
কক্সবাজার ব্যুরো জানায়, বিজয় দিবসের ছুটিসহ সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে টানা তিন দিনের ছুটি পেয়ে কক্সবাজারে ছুটে এসেছেন কয়েক লাখ পর্যটক। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সৈকতের বালিয়াড়িতে যতদূর চোখ যায় মানুষ আর মানুষ। দীর্ঘ বালিয়াড়ি জুড়ে মানুষের স্রোতে যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই।
সৈকত ছাড়াও জেলার প্রায় সবগুলো পর্যটন স্পটে হাজারো পর্যটকের উপস্থিতিতে এখন প্রাণচঞ্চল। সেন্টমার্টিন দ্বীপ, মহেশখালী আদিনাথ মন্দির, হিমছড়ি, ইনানী, দরিয়ানগর, সোনাদিয়া, বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কসহ বিভিন্ন পর্যটন এলাকাগুলোতে বিপুল পর্যটকের সমাগম রয়েছে। এ ছাড়াও কক্সবাজার শহরের বার্মিজ মার্কেট, রাখাইন পল্লী, বৌদ্ধ মন্দির ও রামুর বৌদ্ধ মন্দিরেও পর্যটকদের প্রচুর ভিড় দেখা গেছে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত বেশির ভাগ হোটেল ও গেস্ট হাউসগুলো বুক হয়ে গেছে। ৫ লাখের অধিক পর্যটক উপস্থিতির আশা করছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা। এ তিনদিনে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার বাণিজ্য হতে পারে বলেও আশা করছেন তারা।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, সৈকতের লাবনী, সুগন্ধা, কলাতলীসহ ১১টি পয়েন্টে স্থাপন করা হয়েছে তথ্য কেন্দ্র। পর্যটকদের করোনা সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি মানতে সর্বদা সচেতনতামূলক মাইকিং ও প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। পর্যটক হয়রানি বন্ধে মাঠে থাকছে জেলা প্রশাসনের নির্বাহি ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত। কোথাও পর্যটক হয়রানির অভিযোগ পেলে দ্রæত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অন্যদিকে নিরাপত্তা বলয় তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশ। নিরাপত্তার পাশাপাশি প্রাথমিক চিকিৎসা, তথ্য সেবা, পানীয় জলের ব্যবস্থাসহ নানা সেবামূলক কার্যক্রমের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ট্যুরিস্ট পুলিশের এসপি মো. জিল্লুর রহমান।
তিনি জানান, পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সর্তক অবস্থায় দায়িত্বপালনে রয়েছে ট্যুরিস্ট ও জেলা পুলিশ। মোতায়েন রাখা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশও। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে সিসিটিভির আওতায় আনা হয়েছে পর্যটন স্পটগুলো। ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে দ্রæত সাধারণ চিকিৎসা ও খাবার পানির ব্যবস্থাও রয়েছে।
কলাপাড়া (পটুয়াখালী) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, কুয়াকাটার হোটেল-মোটেল ৯৫ শতাংশ অগ্রীম বুকিং হয়ে গেছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজারো পর্যটকদের আনাগোনা বেড়েছে। পায়রা সেতুসহ যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় খুব সহজেই এসব পর্যটকরা কুয়াকাটায় আসছে। ইতোমধ্যে গঙ্গামতির, রাখাইনপল্লী, ইকোপার্ক, ইলিশপার্ক, লেম্বুরবন ও সৈকতের ঝাউবাগানসহ বেশিরভাগ স্পট পর্যটকদের পদচারণায় এখন মুখরিত হয়ে উঠেছে। এরফলে হোটেল-মোটেল ব্যবসায়িরা করোনাকালীন সময়ের ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবে বলে পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কুয়াকাটাকে বলা হয় ‘সাগরকন্যা’। এখানে একই স্থানে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা যায়। রয়েছে বালুকাবেলায় লাল কাকড়ার নৃত্য। এসব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে এখানে ছুটে আসে হাজারো পযটক। মূলত বছরের নভেম্বর মাস থেকেই পর্যটকদের চাপ বেড়েছে।
সমুদ্র বাড়ি রিসোটের্র ব্যবস্থপনা পরিচালক জহিরুল ইসলাম মিরন বলেন, আগেই আমাদের সবগুলো রুম বুকিং রয়েছে। ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত সবকক্ষ অগ্রিম বুকিং দেয়া আছে। নতুন কাউকে রুম দেওয়া সম্ভব নয়। কুয়াকাটা পর্যটন মোটেল এন্ড ইয়ুথ ইনের পরিচালক শাহজাহান কবির জানান, তাদের ৮০টির উপরে কক্ষ রয়েছে। তা গত ৫ ডিসেম্বরের আগেই অগ্রীম বুকিং হয়েছে।
ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন অব কুয়াকাটা টোয়াক সভাপতি রুমান ইমতিয়াজ তুষার বলেন, এবছর সবচেয়ে বেশী পর্যটকদের আগমন ঘটবে এই বিজয় দিবসের ছুটিতে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল হাওয়ায় এখন পর্যটকদের আগমন বেড়েছে। ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা জোন সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুল খালেক জানান, বিভিন্ন দর্শনীয় পয়েন্টে আমাদের অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন