শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করেছে আ.লীগ

সিলেটে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল

সিলেট ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৯ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

বাংলাদেশ জাতীয়বাদী দল (বিএনপি)-এর মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস বিকৃত করেছে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। স্বাধীনতাযুদ্ধ কোনো একজন ব্যক্তি বা দল করেনি। এ দেশের সর্বস্তরের মানুষ দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছে।

কিন্তু শহীদ জিয়াউর রহমান ও আতাউল গনি ওসমানীসহ অনেক বীরদের অবদান স্বীকার করে না আওয়ামী লীগ। ১৬ ডিসেম্বর জাতীয়ভাবে সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন করা হয়েছে সেখানে শেখ মুজিব ছাড়া নাম নেয়া হয়নি আর কারোও। ১৯৭১ সালের ১৫ ডিসেম্বর সিলেট শত্রুমুক্ত করতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। কিন্তু জোর করে ক্ষমতায় থাকা এ সরকার প্রকৃত ইতিহাস মুছে দিয়ে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে চায় একটি ভ্রান্ত গল্প।

গতকাল শনিবার সিলেটে বিএনপির এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। ১৯৭১ সালের ১৫ ডিসেম্বর সিলেট শহরসহ দেশের বৃহত্তর এই উত্তর-পূর্বাঞ্চল পাকিস্তানি শত্রুমুক্ত হয়। দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে গতকাল সিলেটে নানা কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। সিলেট রেজিস্ট্রারি মাঠে বেলা ২টা থেকে শুরু হয় অনুষ্ঠানের কার্যক্রম।

জাতীয়, দলীয়, দেশাত্মবোধক ও গণসংগীত পরিবেশনের পর বিকাল ৩টা থেকে শুরু হয় অতিথিদের আলোচনা। বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন সিলেট বিভাগীয় সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক ও সিলেট সিটি করপোরেরশনের (সিসিক) মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক ও জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, বিএনপির নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য এবং সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম।

এদিকে সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরো বলেন, আমাদের স্বপ্ন ছিলো একটি গণতান্ত্রিক দেশ গড়ার। কিন্তু বর্তমান সরকার সেই স্বপ্ন ধুলিস্যাৎ করে দিয়েছে। এ দেশে দারিদ্র্য মানুষের সংখ্যা বেড়ে গেছে। গুটিকয়েক মানুষ সরকারের ছত্রছায়ায় কোটি কোটি টাকার মালিক হচ্ছে। কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করছে। দেশে আজ গণতন্ত্রের কবর রচনা করা হয়েছে। প্রমাণস্বরূপ- জনগণের ভোটে বার বার নির্বাচিত একজন প্রধানমন্ত্রীকে ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় ফাঁসিয়ে কারাবাস করিয়ে ঠেলে দেওয়া হয়েছে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে। এখন মুমূর্ষু অবস্থায় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে তিনি। উন্নত চিকিৎসার জন্য দেওয়া হচ্ছে না বিদেশেও যেতে।

সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম দৃড় কন্ঠে বলেন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীন ছাড়া নির্বাচনে যাবে না বিএনপি। প্রয়োজনে একাত্তর সালে যেভাবে দল-মত-ধর্ম নির্বিশেষে ঐক্যবব্ধ হয়ে পাক হানাদারবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন দেশবাসী, ঠিক সেইভাই যুদ্ধ করে বর্তমান অবৈধ সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরাতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি- সেই দিন আর বেশি দূরে নয়। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন সিলেট বিভাগীয় সমন্বয় কমিটির সদস্যসচিব ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন। এর আগে সমাবেশে যোগ দিতে দুপুরে বিমানে করে সিলেটে আসেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সহ দলের শীর্ষ নেতারা।

সমাবেশে হট্টগোল, চেয়ার ভাঙচুর
সিলেট মুক্ত দিবসের সমাবেশে হট্টগোল, চেয়ার মারামারি ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। বিকেল পৌনে ৩টায় সমাবেশ শুরুতেই চেয়ারে বসা নিয়ে এ হট্টগোল হয়।

সিলেট মুক্ত দিবস ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে সিলেট বিভাগীয় সমন্বয় কমিটি এ সমাবেশের আয়োজন করে। দুপুর ২টা ৪০ মিনিটের দিকে কেন্দ্রীয় নেতারা আসার আগে দুপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। একপর্যায়ে স্থানীয় নেতাদের নাম ধরে স্লোগান দেয়াকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। উত্তেজিত কর্মীরা দর্শক সারির চেয়ার তুলে একপক্ষ অপরপক্ষের দিকে ছুড়তে থাকেন। এ সময় বেশকিছু চেয়ার ভাঙচুর করেন তারা।

দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, সমাবেশের মঞ্চে বিএনপির স্থানীয় নেতারা বক্তব্য দিচ্ছিলেন। কিছু সময় পরপর ছাত্রদল, যুবদলের নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে যোগ দিচ্ছিলেন। সমাবেশের দর্শক সারি থেকে কিছু সময় পরপর বিএনপির বিভিন্ন নেতার নামে স্লোগান দিচ্ছিলেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।

এ সময় মঞ্চ থেকে ব্যক্তির নামে স্লোগান না দিতে অনুরোধ করছিলেন সমাবেশের সভাপতি সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির। একপর্যায়ে দর্শকসারির পেছন এবং সামনের অংশের নেতা-কর্মীদের মধ্যে চেয়ারে বসা নিয়ে চেয়ার ছোড়াছুড়ির ঘটনা ঘটে। এ সময় মঞ্চ থেকে আরিফুল হক চৌধুরী ও খন্দকার আবদুল মুক্তাদির নেতাকর্মীদের শান্ত থাকতে বলেন। তারা সংঘর্ষের মূলে সরকারি এজেন্টরা জড়িত বলে অভিযোগ করেন।

বিএনপির এ দুই কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, সমাবেশস্থল ও আশপাশে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা রয়েছে। সংগঠনের কেউ এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলে বহিষ্কার করা হবে। ৩টা ৫০ মিনিটে হট্টগোল থামার ১০ মিনিটের মধ্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সমাবেশে যোগ দেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন