শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহানগর

স্বপ্ন ছিল বিসিএস ক্যাডার হওয়ার

শ্বশুর বাড়িতে ঢাবি শিক্ষার্থী এলমা খুন

রাহাদ উদ্দিন : | প্রকাশের সময় : ২০ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০২ এএম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) নৃত্যকলা বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী এলমা চৌধুরী মেঘলা। স্বপ্ন ছিল জীবনে অনেক বড় হবে। বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে ক্যাডার হবে। বাবা মায়ের মুখ উজ্জ্বল করবে। কিন্তু নিয়তির কাছে হার মানলো স্বপ্ন।

বিয়ের আগ পর্যন্ত থাকতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সুফিয়া কামাল হলে। বিয়ের পর শ্বশুড়বাড়ির লোকজন আর থাকতে দেয়নি হলে। এক সপ্তাহের পরিচয়ে বিয়ে ,বিয়ের আট মাস পর হলেন খুন।

গত ১৪ ডিসেম্বর এ হত্যাকাণ্ডের দায়ে তার স্বামী ইফতেখার আবেদীন (৩৬), শ্বশুড় মো. আমিন ও শাশুড়ি শিরিন আমিনকে আসামি করে বনানী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন এলমার বাবা মো.সাইফুল ইসলাম চৌধুরি। মামলার এজাহারে এলমার বাবা উল্লেখ করেন, এলমাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে।

পরদিন ১৫ ডিসেম্বর এ ঘটনার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করে এলমার শিক্ষক সহপাঠীরা। তারা হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে অপরাধিদের দ্রুত বিচারের দাবি জানায়। একই ধারাবাহিকতায় গতকাল রোববার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে এলামর সহপাঠী, জুনিয়র, সিনিয়র ও পরিবারের সদস্যরা।

এসময় এলমার মা শিল্পী চৌধুরী বলেন, আমার মেয়ের স্বপ্ন ছিল বিসিএস ক্যাডার হবে। বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে অনেক বড় কিছু হবে। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন পূরণ হতে দিল না তার শ্বশুড়বাড়ির লোকেরা। আমার মেয়েকে সে (এলমার স্বামী) নানা রকম মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে বিয়ে করে। কিন্তু তার মনে যে এত চক্রান্ত সেটা আমরা বুঝতে পারিনি। তারা তাকে আমাদের সাথে কথা বলতে দিত না। কথা বললে আমার মেয়ে বলতো মা আমার ভালো লাগছে না। বলতাম ভালো লাগে না তো আছিস কেন ওখানে? চলে আয় আমাদের কাছে। বলতো না মা আমি এখানে ভালো আছি ,আমার এমনি ভালো লাগে না। আমার অনেক স্বপ্ন ছিল ওকে নিয়ে। কিন্তু সেটা ভেঙ্গে গেল।

এলমার খুনের পিছনে তার শ্বশুড় পরিবারের সবাই জড়িত উল্লেখ করে শিল্পী চৌধুরী প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ করেন যাতে তাদের সবাইকে গ্রেফতার করা হয়।

এলমার বাবা মো.সাইফুল ইসলাম চৌধুরী বলেন বলেন, আমার প্রাণের মেয়ে যাকে আমি কত আশা নিয়ে উচ্চশিক্ষিত করেছি, আজকে আমার সেই মেয়েকে তার শ্বশুর বাড়ির লোকেরা মিলে তিনদিন ধরে অত্যাচার করে হত্যা করেছে। আমি আমার মেয়ের হত্যাকারীর ফাঁসি চাই। এসময় তিনি কেঁদে কেঁদে বলেন, প্রধানমন্ত্রী আপনি এই অসহায় বাবার কথাটা শুনেন। আপনি এর বিচার করেন। আর যেন এলমার মত কাউকে জীবন দিতে না হয়। এ হত্যাকাণ্ডের বিচার না হলে দেশের কোনো মানুষ নিরাপদ থাকবে না।

হাবিব নামে এলমার এক সহপাঠী বলেন, আমরা ভেবেছিলাম ১০০ বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমাদেরকে অনেক কিছু দেবে। আমাদের আবাসন সমস্যা দূর হবে। কিন্তু না, ১০০ বছরে এই বিশ্ববিদ্যালয় আমাদেরকে আমাদের বান্ধবী এলমার লাশ উপহার দিয়েছে।

২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী অর্থী বলেন, আপু আগে থেকে যে কার্যক্রমের সাথে সংযুক্ত ছিল বিয়ের পর তিনি সেগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় যা আমাদেরকে বিচলিত করে। আমরা ধারণা করছিলাম আপু একটা সমস্যার মধ্যে ছিল। আপুকে ফোর্স করা হয়েছে এসব থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করার। সুতরাং এটাকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিলেও এটা কোনোভাবেই মানতে পারছি না যে তিনি আত্মহত্যা করেছেন।

এলমার আরেক বান্ধবী তিথি বলেন, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তাকে ক্লাসে আসতে দিত না। সার্বক্ষণিক পাহারা দিয়ে রাখতো। তাকে মানসিকভাবে অনেক নির্যাতন করা হয়েছে। সে একটা সময় বাসা থেকে বের হতে চেয়েছিল কিন্তু তাকে বের হতে দেওয়া হয় নাই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন