শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

মিথ্যা অধ্যাদেশ উদ্ধৃতি করে রাবি প্রক্টরের নোটিশ

রাবি সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২২ ডিসেম্বর, ২০২১, ৭:১৯ পিএম

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ১৯৭৩ সালে গৃহীত অধ্যাদেশ থেকে উদ্ধৃত করে ১৭ টি নির্দেশনা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর। ১৭টি পয়েন্টে বর্ণিত এসব নির্দেশনায় ২৫ টি ধারার উল্লেখ করেন তিনি। ধারা অনুযায়ী, প্রত্যেক শিক্ষক, প্রক্টরিয়াল বডি এমনকি কর্মকর্তাও যেকোন শিক্ষার্থীকে শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে নিজ বিবেচনায় জরিমানা ও শাস্তি দিতে পারবে এমন বেশকিছু অস্বাভাবিক সিদ্ধান্ত দেয়া হয়। তবে নোটিশে যে নিয়মশৃঙ্খলার কথা জানানো হয়েছে সে-ধরনের কিছুই অধ্যাদেশ খুঁজে পাওয়া যায়নি।

রবিবার (১৯ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর লিয়াকত আলী স্বাক্ষরিত 'রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশে বিধিবদ্ধ আইনের আলোকে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য নিয়ম-শৃঙ্খলা' শিরোনামে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে ১৭ টি পয়েন্ট-এ এসব নিয়ম প্রকাশ করা হয়। পরে তা আবাসিক হলগুলো সহ বিভিন্ন দপ্তরে নোটিশ আকারে প্রকাশ করে ব্যাপক প্রচার ও যথাযথ ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করা হয়।

কিন্তু যে অধ্যাদেশ থেকে সূত্র করে এসব নির্দেশনা অধ্যাদেশ খুঁজে সেরকম কিছু পাওয়া যায়নি। বিজ্ঞপ্তিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ, Voll-2, প্রক্টোরিয়াল পদ্ধতি ও বিভিন্ন শৃঙ্খলা, নবম অধ্যায়, ধারা, A. 2 (i), (ii), পৃ. ১৯৮) কে সূত্র করে ১ নম্বর নিয়ম-শৃঙ্খলায় বলা হয়েছে, "১. বিশ্ববিদ্যালয় চলাকালীন সময়ে বিভিন্ন অনুষদের ছাত্র-ছাত্রীদের শৃঙ্খলা রক্ষার্থে দায়িত্বপ্রাপ্ত থাকবেন প্রক্টর যা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে হল সমূহের বাইরে অবস্থিত ছাত্র-ছাত্রীদের কমন রুম ও ক্যান্টিন পর্যন্ত বিস্তৃত থাকবে প্রক্টরদের দায়িত্ব। এছাড়াও সকল ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য সব সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিল্ডিং ও হলের বাইরে ছাত্র-ছাত্রীদের শৃঙ্খলা ও আচরণ সুষ্ঠু ও সঠিকভাবে দেখাশুনার দায়িত্ব প্রক্টরদের থাকবে।"

একই ধরনের মোট ১৭ দফা নির্দেশনাতেই একই উৎস ব্যবহার করে উদ্ধৃতি দেয়া হয়েছে। তবে এসব নিয়ম কানুনের উল্লেখ আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যালেন্ডারে। কিন্তু অধ্যাদেশ আর ক্যালেন্ডারের মধ্যে পার্থক্য আছে উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ও আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাদিকুল ইসলাম সাগর বলেন, " রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ আর ক্যালেন্ডারের মধ্যে পার্থক্য আছে। অধ্যাদেশ অবশ্যই রাষ্ট্রপতি সাক্ষরিত একটা আইন। আর ক্যালেন্ডার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের করা আলাদা কিছু নিয়ম"


১৯৭৩ সালের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশে অনুপস্থিত এমন কিছু অধ্যাদেশ হিসেবে চালিয়ে বিধি-বিধান জারি করার বিষয়ে প্রশ্ন করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর লিয়াকত আলী বলেন, আচ্ছা ঠিক আছে সেটা আমি চেক করে দেখবো। এটা রেডি করা ছিল, আমার নিজস্ব লেখা কোনো কিছু না। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটেই এটা আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশে বিধিবিধান আছে শিক্ষার্থীদের জন্য, এসব তাদের জানা থাকা দরকার আমরা পালন করি না করি সেসব ভিন্ন বিষয়। অনেক শিক্ষার্থীই বলে আমার কোনো নিয়মকানুন নাই বিধিবিধানই নাই। কিন্তু এসব আমরা প্রয়োগ করছি না, যেগুলোর কালচার নেই সেগুলো নিয়ে আমি আর ইয়ে করছি না।"

তবে একপাক্ষিক ভীতি প্রদর্শন করে নবীন শিক্ষার্থীদের চাপে রাখার হাতিয়ার উল্লেখ করে ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক মিটুন চন্দ্র মোহন্ত বলেন, "যদি ৭৩ এর অধ্যাদেশ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করা হয় তবে রাকসু নির্বাচন দেয়া হোক। হলগুলো থেকে বহিরাগতদের বের করে বৈধ সিট নিশ্চিত করা হোক। সমস্ত কিছুই চলবে অধ্যাদেশ বিরোধী অথচ ছাত্রদের বেলায় অধ্যাদেশ এর তথাকথিত নোটিশ দিয়ে একপাক্ষিক ভীতি প্রদর্শন হিসেবে এটাকে দেখা যেতেই পারে। নবীন শিক্ষার্থীরা প্রথম থেকেই ভীতিকর অবস্থায় থাকবে এই অধ্যাদেশ কোট করা একপাক্ষিক নোটিশটি দেখে। ফলে তারা তাদের উপর ঘটে যাওয়া অন্যায় এর বিরুদ্ধেও কথা বলতে ভয় পাবে। বিষয়টা একরকম মানসিক চাপের ভিতরে রেখে জিম্মি করবার মতো অবস্থায় চলে গিয়েছে। সময়ের সাথে সাথে অনেক কিছু পরিবর্তন পরিমার্জন করা প্রয়োজন। পরিস্থিতি বিবেচনা করে তাই আমরা আহ্বান জানাবো ৭৩ এর অধ্যাদেশ ছাত্র-শিক্ষক বান্ধব হিসেবে উপস্থাপন করে সেই অনুযায়ী রাকসু নির্বাচন দিয়ে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে স্বায়ত্তশাসিত এই বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করা হোক।"


পুরনো ও অকার্যকর এসব নিয়মনীতি প্রকাশ করার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়। বিজ্ঞপ্তিতে ৫ নম্বর পয়েন্ট এ উল্লেখ করা হয়, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক শিক্ষক ও অফিসারের প্রক্টরিয়াল ক্ষমতা থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য যা যথোপযুক্ত সে ব্যবস্থা নিতে পারবেন যা প্রক্টর মহোদয়কে রিপোর্ট করবেন।' কিন্তু প্রশ্ন উঠছে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা পরিধি ও সংজ্ঞা নিয়ে।

প্রক্টরিয়াল বডির ক্ষমতা থাকবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসসহ প্রত্যেক হলের কমন রুম ও ক্যান্টিনেও, রাতের খাবারের পর হলে প্রাধ্যক্ষের ইচ্ছেমতো সময়ে রোল কল হবে, এসময় অবশ্যই নিজকক্ষে থাকতে হবে।

আবার ৪ নম্বর পয়েন্টে চলাচলের নিয়ম না মানলে প্রক্টর যা যথোপযুক্ত তার বিরুদ্ধে তা ব্যবস্থা নিবেন। কিন্তু চলাচলের নিয়ম গুলো কী কেমন সে নিয়ে প্রশ্ন তুলেও উত্তর পাওয়া যায়নি।

এছাড়াও শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় ও হল ছাত্র সংসদ, বিভাগীয় সমিতি ছাড়া কোনো সংগঠন গঠন করতে পারবে না। অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের মেস বদল করতে লাগবে তার হল প্রাধ্যক্ষের অনুমতি। আবাসিক শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে হলে অবস্থান করা আবশ্যকসহ সব শিক্ষার্থীদের অধ্যাদেশ অনুযায়ী আরো কিছু ধারা মেনে চলতে হবে।

পুরাতন ও অসংশোধিত এইসব আইনকে কঠোর ও শিক্ষার্থীবান্ধব নয় বলে অভিহিত করে শঙ্কা প্রকাশ করেছে সাধারণ শিক্ষার্থী, ছাত্রনেতা ও অনেক শিক্ষকরাও।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন