শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ইস্যুতে বিরোধে জড়াতে চায় না সরকার

বাংলাদেশকে দেয়া সামরিক অনুদান ব্যয়ের তথ্য চায় যুক্তরাষ্ট্র

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৫ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতি বছর সামরিক অনুদান হিসেবে বাংলাদেশকে কোটি কোটি টাকা দিয়ে থাকে। কিন্তু এই অর্থ কোন বাহিনী পায় এবং কীভাবে ব্যয় হয়, সে সম্পর্কে তাদেরকে কোনো তথ্য দেয়া হয় না। এখন যুক্তরাষ্ট্র জানতে চাচ্ছেÑ তাদের দেয়া অনুদানের অর্থ কোন বাহিনী পাচ্ছে এবং তারা কীভাবে ব্যয় করছেন। এ বিষয়ে একটি চুক্তি সইও করতে চায় মার্কিন সরকার। এজন্য বাংলাদেশ সরকারকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বলেন, বাংলাদেশের সার্বিক নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা রয়েছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটি জোরদার করা একটি স্বাভাবিক ঘটনা। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য, বিনিয়োগসহ দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক ব্যবস্থার অধীনে সামগ্রিক সহযোগিতা রয়েছে এবং এটি তার একটি অংশ। আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সামরিকসহ অন্যান্য সহযোগিতা ছিল, আছে এবং থাকবে।

নিষেধাজ্ঞার ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিরোধে জড়াবে না সরকার : এদিকে এলিট ফোর্স র‌্যাব এবং এর সাবেক ও বর্তমান ৭ জন কর্মকর্তার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি বিরোধিতায় জড়িয়ে পড়তে চায় না সরকার। ক্রমাগত সংলাপ ও আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের বিষয়ে আগ্রহী বাংলাদেশ। এ বিষয়ে আগামী বছরের প্রথমভাগেই অন্তত তিনটি সংলাপের প্রস্তাব নিয়ে কাজ করছে সরকার। এরমধ্যে একটি বৈঠক এপ্রিলে হবে এবং বাকি দুটির তারিখ নিয়ে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে পাঁচটি সংলাপ আছে। কোভিডের কারণে গত বছর একটি ছাড়া বাকি বৈঠকগুলো হয়নি। আমরা চাই বাকি বৈঠকগুলোও দ্রুত হোক।

সংলাপগুলোর মধ্যে রয়েছে পার্টনারশিপ ডায়ালগ, সিকিউরিটি ডায়ালগ, ডিফেন্স ডায়ালগ, টিকফা ও ইকোনমিক পার্টনারশিপ ডায়ালগ। ওই কর্মকর্তা বলেন, এপ্রিলে সিকিউরিটি ডায়ালগ হওয়ার কথা রয়েছে। এছাড়া পার্টনারশিপ ডায়ালগ ও ইকোনমিক পার্টনারশিপ ডায়ালগও এপ্রিলের আগেই হবে আশা করা হচ্ছে।
আসন্ন পার্টনারশিপ ডায়ালগ এবার বাংলাদেশে হবে এবং সেটিতে অংশগ্রহণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পলিটিক্যাল আন্ডার-সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ডের ঢাকা আসার কথা রয়েছে। এছাড়া সিকিউরিটি ডায়ালগ এবার ওয়াশিংটনে হবে।

সূত্র মতে, যুক্তরাষ্ট্রে ‘লিহে’ নামে একটি পুরনো আইন আছে। এর মাধ্যমে অন্য একটি দেশের কোনো নিরাপত্তা সংস্থা বা বাহিনী যদি নির্যাতন, আইনবহির্ভূত হত্যা, গুম ও ধর্ষণজনিত কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকে, তবে ওই সংস্থাকে কোনো অনুদান দিতে পারে না মার্কিন সরকার।
সম্প্রতি ওই আইনে একটি সংশোধনী আনা হয়েছে এবং অনুদানপ্রাপ্ত দেশগুলোর কোন সংস্থা অনুদানের অর্থ পাচ্ছে, সেটি জানার জন্য চুক্তি করার বিষয়ে একটি ধারা সংযোজিত হয়েছে। এর ফলে মার্কিন সামরিক অনুদানপ্রাপ্ত দেশগুলোর সঙ্গে এই চুক্তি করার উদ্যোগ নিয়েছে দেশটি। এক্ষেত্রে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছেÑ এমন কোনো সংস্থা বা বাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের ওই অনুদান পাবে না।

যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের তথ্যানুযায়ী, ২০১৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৬৪০ কোটি (প্রায় ৭ দশমিক ৫ কোটি ডলার) টাকা অনুদান পেয়েছে বাংলাদেশ। এরমধ্যে রয়েছে ফরেন মিলিটারি ফাইন্যান্সিং এবং আন্তর্জাতিক মিলিটারি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ। ওই ৬৪০ কোটি টাকার একটি বড় অংশ বঙ্গোপসাগরে মার্কিনিদের যে উদ্যোগ রয়েছে, সেটি শক্তিশালী করার জন্য বাংলাদেশকে দেয়া হয়েছে।
এছাড়া ২০১৩ ও ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দুটি ‘হ্যামিলটন কাটারস’ নৌজাহাজ দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন শান্তিরক্ষী বাহিনীতে অংশগ্রহণ করে থাকে এবং বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী বাহিনীকে সহায়তা করার জন্য ৫০টি ‘মাল্টি রোল আর্মাড পারসোনেল ক্যারিয়ার’ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০০৫ থেকে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধি ও প্রশিক্ষণের জন্য প্রায় ৩৮০ কোটি টাকা (সাড়ে চার কোটি ডলার) ব্যয় করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর পাশাপাশি ২০১২ সালে ১৮ কোটি ডলার ব্যয়ে চারটি সি-১৩০ পরিবহন বিমান সংগ্রহ করেছে বাংলাদেশ।

যুক্তরাষ্ট্রেরর চুক্তি বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশের অবস্থান জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তার মতে, যদি কোনো দেশ অনুদান দিয়ে থাকে, তবে ওই অর্থ কোথায় এবং কীভাবে ব্যয় হয়, সেটি তাদেরকে জানানো একটি যুক্তিসঙ্গত বিষয়। বিশেষ করে এ বিষয়ে যদি আইনগত বাধ্যবাধকতা থাকে। এ বিষয়ে সরকারের একজন কর্মকর্তা বলেন, আমরা বিষয়টি বিবেচনা করছি। সবদিক চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে ১১০ কোটি টাকা (১ দশমিক ৩ কোটি ডলার) মূল্যের ড্রোন দেবে বাংলাদেশকে এবং সেটি কারা ব্যবহার করবে, তা তারা জানতে চায় বলে তিনি জানান। মার্কিন অনুদান র‌্যাব ব্যবহার করতে পারবে কি-না, জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র কোনো সংস্থাকে নিষেধাজ্ঞা দিলে তাদের দেয়া অনুদানের অর্থ ওই সংস্থা ব্যবহার করতে পারবে না। নাম প্রকাশ না করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই কর্মকর্তা বলেন, এর সঙ্গে র‌্যাবের কোনো সম্পর্ক নেই। কারণ এই তথ্য জানানোর জন্য তাদের আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যদি র‌্যাবের ওপরে নিষেধাজ্ঞা নাও থাকতো, তাহলেও এই চুক্তি করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র উদ্যোগী হতো।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের জুলাই মাসে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান-র‌্যাব এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট যুক্তরাষ্ট্রের কোনো বৈদেশিক সহায়তা পাবে না।

এদিকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে গত ১০ ডিসেম্বর র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) সাবেক ও বর্তমান ৬ কর্মকর্তা ও বাহিনীটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ। বর্তমান পরিস্থিতিতে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্রভাব এবং এ-সংক্রান্ত করণীয় নিয়ে আলোচনার জন্য ব্যাংকগুলোর প্রধান মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ পরিপালন কর্মকর্তারা (ক্যামেলকো) গত বৃহস্পতিবার এক জরুরি বৈঠক করেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

সভায় মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্রভাব ও করণীয় এবং ব্যাংকগুলো এখন নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্তদের নামে কোনো কার্ড ইস্যু করা হয়েছে কিনা, সেটিও খতিয়ে দেখা শুরু হয়েছে। তবে দেশের জন্য স্পর্শকাতর বিষয় হওয়ায় এক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ জানায়, এ নিষেধাজ্ঞায় উল্লিখিত বাংলাদেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশ ইও.১৩৮১৮-এর আওতাভুক্ত করা হয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকাকালে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে জারিকৃত ওই আদেশের আওতাভুক্তদের বিশ্বব্যাপী মার্কিন আর্থিক নেটওয়ার্ক থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করার কথা বলা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় বিশ্বের কোথাও ভিসা, মাস্টারকার্ড, অ্যামেক্সসহ মার্কিন আর্থিক নেটওয়ার্কের অধীন কোনো কার্ড ব্যবহার করতে পারবেন না উল্লিখিত সাত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান।

সূত্র জানিয়েছে, মার্কিন ট্রেজারি বিভাগের সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত দেশের ৭ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোনো ধরনেরই আর্থিক পরিষেবা ব্যবহার করতে পারবেন না। এমনকি দেশে বা বিদেশে কোথাও ব্যাংক খাতের ভিসা, মাস্টারকার্ড বা আমেরিকান এক্সপ্রেসের (অ্যামেক্স) মতো মার্কিন কার্ড পরিষেবা ব্যবহারেরও আর কোনো সুযোগ থাকছে না তাদের। এরই মধ্যে নিষেধাজ্ঞার আওতাধীন ব্যক্তিদের নামে ইস্যুকৃত কার্ডগুলো বন্ধের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা বলেন, মার্কিন ট্রেজারি বিভাগের ওয়েবসাইটে নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়া ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ব্যাংকের ভূমিকা কী হবে, সে-সংক্রান্ত আইনকানুনও সংশ্লিষ্ট বিভাগ খতিয়ে দেখছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
Faiz Faiz ২৫ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:৪৯ এএম says : 0
ওরা আমার মুখের খাবার কাইরা নিতে চায়
Total Reply(0)
Mahabub Alam ২৫ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:৫১ এএম says : 0
We have no need their donation
Total Reply(0)
Ibrahim Khalil ২৫ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:৫১ এএম says : 0
বিরুধীদের দমনে ব‍্যায় হয়ে গেছে। হিসাব সোজা
Total Reply(0)
Solayman Sobuj ২৫ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:৫১ এএম says : 0
বাজেটের টাকা যে ভাগাভাগি হয় তার পরে আবার হিসাব ও মিলিয়ে দেয়।ঐভাবেই সব মিলানো হবে।
Total Reply(0)
সবুজ ২৫ ডিসেম্বর, ২০২১, ৩:৪২ পিএম says : 0
বিরোধে জড়ানো ঠিক হবে না
Total Reply(0)
মাহমুদ ২৫ ডিসেম্বর, ২০২১, ৩:৪৪ পিএম says : 0
সবদিক চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন