‘পায়ের নখ থেকে মাথার চুল’ অবধি বুদ্ধিতে ঠাসা। এমন ব্যক্তির নাম কেউ না শুনলেও বুঝে নিতে পারেন তার নাম সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র ্ও বিএনপির কেন্দ্রিয় কমিটির নেতা আরিফুল হক চৌধুরী। প্রতিকূল পরিবেশ্ওে নামের সাথে অবিচার করেননি তিনি। সিলেট নগরীর উন্নয়নে তার জুড়ে মেলাভার। জনগনের উন্নয়নে যেকোন অবস্থায় যে কাজ করা যায় তিনি তারই প্রমান। সরকারের আন্তরিক সহযোগীতায় নগরীর উন্নয়নযজ্ঞ হচ্ছে তার আমলেই। পুরো কৃতিত্ব সরকার যন্ত্রের। একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে সেই সুযোগে একজন দক্ষ কান্ডারী হিসেবে ষোলআনা দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। তবে তার ক্যারিশম্যাটিক কাজ নিয়ে ব্যক্তি আরিফের চেয়ে রাজনীতিক আরিফের বিরুদ্ধে অনেক কথা চলছে মাঠে। এহেন বিরোধীতায় বিচলিত না হয়ে ইনজয় করেই চালিয়ে যাচ্ছেন অর্পিত দায়িত্ব। এর মধ্যে দিয়ে তার প্রাজ্ঞতা, বিচক্ষনতা এখন ঈষর্নীয় পর্যায়ে। এরমধ্যে আজ সিলেট-১ আসনের এমপি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনকে নাগরিক সংর্বধনার আয়েজন করেছেন মেয়র আরিফ। নগরীর ঐতিহাসিক রেজিস্ট্রারি মাঠে মন্ত্রীকে ‘নাগরিক সংবর্ধনা’ দিচ্ছেন তিনি। হঠাৎ কেন এই সংবর্ধনা- এ নিয়ে জল্পনার অন্ত নেই সিলেটে। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ সংবর্ধনা বয়কটের ঘোষনা দিয়ে আলোচনায় এসেছে সিলেট জেলা ্ও মহানগর আওয়ামীলীগ। কিন্তু ড. মোমের জন্য এ সংবর্ধনা প্রাপ্তি, কৃতৃজ্ঞার এক অনন্য বহি:প্রকাশ। উন্নয়ন প্রশ্নে কখনো দু’জনের মধ্যে কোনো বিরোধ বাধেনি। বরং একে অপরকে সব সময় সহযোগিতা করে আসছেন। এ কারণে সরকারের দেয়া টাকায় সিলেট নগর সাজাতে কাজ করছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এতে তিনিও হচ্ছেন প্রশংসিত। সিটি কাউন্সিলররা বলেন, সিলেটের উন্নয়নে অবদান রাখায় অনেক আগেই সংবর্ধনা প্রাপ্তি ছিল পররাষ্ট্রমন্ত্রীর। অতীতে এ ধরনের সংবর্ধনার রীতি প্রচলন আছে। সিলেটের উন্নয়ন টিমওয়ার্কে প্রধান হিসেবে কাজ করছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। তিনি সিলেট জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীও। তার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন বিএনপি দলীয় মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। অপরদিকে, মেয়র আরিফের উপর অনেক বিষয়ে ক্ষিপ্ত সিলেট আ্ওয়ামীলীগ। সিলেটে এক মতবিনিময় সভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে এ নিয়ে অভিযোগ করেছিলেন আওয়ামী লীগ নেতারা। তারা জানিয়েছিলেন, মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী কাজ করছেন সরকারের টাকায়। অথচ এই উন্নয়নগুলোকে নিজের উন্নয়ন বলে চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। এতে বাহবা পাচ্ছে না আওয়ামী লীগ কিংবা মন্ত্রীও। এ কারণে সিলেট উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠনের মাধ্যমে সিলেটের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়ার জন্য মন্ত্রীকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ নেতারা। এই বক্তব্যের সঙ্গে সহমত পোষণ করেছিলেন মন্ত্রী নিজেই। আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, বর্তমান সরকারের এই মেয়াদের শাসনে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে সরকার থেকে উন্নয়নের জন্য ১২শ’ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এই টাকায় উন্নয়ন করছেন মেয়র সিলেটে। কিন্তু এই উন্নয়ন কর্মকাণ্ডও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। অপরদিকে, সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত সিলেট-১ আসনের এমপি থাকাকালে সিটি করপোরেশনের আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় প্রার্থী ও সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানকে পরাজিত করেই মেয়র নির্বাচিত হন আরিফুল হক চৌধুরী। এরপর থেকে উন্নয়ন প্রশ্নে মেয়র সাবেক মন্ত্রীর সব ধরনের সহযোগিতা পেয়েছেন। ড. মুহিত সিলেটের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড আরিফুল হক চৌধুরীর হাত ধরে পরিচালনা করেন। এ কারণে সাবেক মন্ত্রীর সঙ্গে মেয়র আরিফের বোঝাপড়া ভালো ছিল। এ জন্য ওই সময় উন্নয়ন কর্মকান্ড নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠেনি। এখন সিলেট সদরের এমপি বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। তার সঙ্গেও উন্নয়ন প্রশ্নে আরিফুল হক চৌধুরীর টিমওয়ার্ক গড়ে উঠেছে। সিলেটের উন্নয়নে মন্ত্রী ব্যক্তি দেখে নয়; মেয়র দেখেই টাকা দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজনেরা। তারা জানিয়েছেন, এ কারণে এবার সিলেট নগরের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দৃশ্যমান হচ্ছে। আর টাকা দিলেও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে মন্ত্রী কিংবা আওয়ামী লীগের তরফ থেকে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে না। এতে করে নির্ভার হয়েই সিলেটের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। সাম্প্রতিক সময়ে নানাভাবে বিতর্কিত হয়েছেন মেয়র আরিফ। তাকে নিয়ে আওয়ামী লীগের ভেতরেও চলছে অস্বস্তি। কয়েক মাস আগে মৌলভীবাজারের একটি অনুষ্ঠানে মেয়র সিলেট আওয়ামী লীগের নেতাদের নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন। পরবর্তীতে জননেত্রী শেখ হাসিনা শিশু পার্কের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রীর সামনে এ বিচার দিয়েছিলেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা।এ ছাড়া, দুই মেয়াদে সিটি করপোরেশন পরিচালনা করতে গিয়ে এবার কিছুটা বিতর্কের মুখে পড়েছেন মেয়র নিজেই। বর্তমানে সিলেট নগরে তার বিরুদ্ধে ক্ষোভ বিরাজ করছে। সিলেট সিটি করপোরেশনের পানির বিল বাড়ানোকে কেন্দ্র করে প্রায় প্রতিদিনই সিলেটে মানববন্ধন ও সভা হচ্ছে। অসন্তোষ থেকে নগরবাসী এ আন্দোলন চালাচ্ছেন।এ ছাড়া, নগরের সাপ্লাই রোড, শিবগঞ্জ রোড সহ কয়েকটি সড়কের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের দীর্ঘসূত্রতা মেয়রকে বিতর্কিত করে তুলছে। শুষ্ক মৌসুমে এ দুটি সড়কে পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি যানবাহন চলাচলে মারাত্মক ভোগান্তি হচ্ছে। এ ছাড়া, মেয়র হওয়ার পর থেকে বিএনপি’র কর্মকাণ্ডে সাইডলাইনে ছিলেন কেন্দ্রীয় নেতা আরিফ। নিজ দলের অভ্যন্তরীণ বিরোধের কারণে এবার দলীয় কর্মকাণ্ডে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন তিনি। তার নেতৃত্বে গত সপ্তাহে বিএনপি সিলেট মুক্ত দিবসের অনুষ্ঠান পালন করেছে। এই অবস্থায় গত ৩-৪ দিন আগে হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত নিয়ে সিলেটের রেজিস্ট্রারি মাঠে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নাগরিক সংবর্ধনার আয়োজন করেছেন মেয়র। এদিকে, মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন, মন্ত্রীর সংবর্ধনার খবর তারা চিঠির মাধ্যমে পেয়েছেন। আগে এ নিয়ে কোনো আলোচনা করা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে ভাবছেন বলে জানিয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের এক সিনিয়র নেতা জানান, মশার উৎপাতে নগরবাসী অতিষ্ঠ। পানির মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে অসন্তোষ বিরাজ করছে। উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এই অবস্থায় মন্ত্রীকে সংবর্ধনা প্রদানের মাধ্যমে পুরনো সম্পর্ককে নতুন করে সামনে আনতে চাইছেন মেয়র। বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের প্রতি দৃষ্টি এড়াতে এই সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়েছে বলে মনে করেন তিনি। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনের এই সংবর্ধনাকে ঘিরে সিলেটের রেজিস্ট্রারি মাঠে চলছে সাজ সাজ রব। রেজিস্ট্রারি মাঠে জমকালো আয়োজন নজর কাড়তে শুরু করেছে নগরবাসীর। প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ছবি দিয়ে সমাবেশস্থলের ফটক নির্মাণ করা হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দেয়া হচ্ছে সিলেট উন্নয়নে অবদান রাখায়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন