শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ইউক্রেন নিয়ে মার্কিন-রাশিয়া সম্পর্কে ফাটল ধরতে পারে

ফোনালাপে প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে ভ্লাদিমির পুুতিনের সতর্কতা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০০ এএম

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গত বৃহস্পতিবার ফোনে কথা বলেছেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে সতর্ক করে বলেছেন, ইউক্রেনের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে তাদের দুই দেশের সম্পর্ক সম্পূর্ণভাবে ভেঙে যেতে পারে। ফোনালাপে রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট বলেছেন যে, এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা একটি ‘বড় ধরনের ভুল’ হবে।
এদিকে মি. বাইডেন মি. পুতিনকে বলেছেন, ইউক্রেনে কোন ধরনের হামলা হলে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা সে মোতাবেক জবাব দেবে। রাশিয়ার পক্ষ থেকে আসা এই ফোন কলে দুই নেতার কথোপকথন প্রায় এক ঘণ্টা ধরে চলে। চলতি মাসে তাদের মধ্যে এবার দ্বিতীয়বারের মতো টেলিফোন আলাপ হল।
রাশিয়ার সাথে ইউক্রেনের পূর্ব সীমান্তে যে উত্তেজনা চলছে, এ ফোনালাপ সেটি প্রশমিত করার সর্বশেষ প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে, যেখানে ইউক্রেনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রায় এক লাখের বেশি রাশিয়ান সেনা পাঠানো হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র মি. পুতিনকে সতর্ক করে বলেছে, ইউক্রেন আক্রমণের শিকার হলে এমন নিষেধাজ্ঞা দেয়া হবে ‘যেটা তিনি কখনও দেখেননি’।
রাশিয়া অবশ্য দেশটিতে হামলার পরিকল্পনার কথা অস্বীকার করেছে এবং বলেছে যে, সেনারা সেখানে অনুশীলনের জন্য রয়েছে। দেশটি জানিয়েছে, নিজের মাটিতে অবাধে সৈন্যদের চলাফেরার অধিকার আছে। যদিও টেলিফোনে আলাপ চলাকালীন উভয় পক্ষ একে অপরকে সতর্কবার্তা দিয়েছে। তবে রাশিয়ার পররাষ্ট্র নীতি উপদেষ্টা ইউরি উশাকভ এর কিছুক্ষণ পরেই সাংবাদিকদের বলেছেন যে, মি. পুতিন কথোপকথনে ‘সন্তুষ্ট’ ছিলেন। তিনি যোগ করেছেন যে, এটি ভবিষ্যতে আলোচনার জন্য একটি ‘ভাল প্রেক্ষাপট’ তৈরি করেছে। একজন ঊর্ধ্বতন মার্কিন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন যে, তার বক্তব্যের সুর ছিল ‘রাশভারী এবং বাস্তবিক’।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট বাইডেন আবারও বলেছেন, এই সংলাপে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি তখনই হবে, যখন উত্তেজনা প্রশমনের পরিবেশ তৈরি হবে’।
‘তিনি [বাইডেন] স্পষ্ট করেছেন যে, রাশিয়া যদি ইউক্রেনে পুনরায় আক্রমণ চালায়, তবে যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্র এবং অংশীদাররা অবশ্যই এর জবাব দেবে’, জেন সাকি বলেন। মার্কিন ও রাশিয়ান কর্মকর্তারা আগামী মাসে জেনেভায় ব্যক্তিগত বৈঠক করবে এবং হোয়াইট হাউস বলেছে যে, মি. বাইডেন রুশ প্রেসিডেন্টকে ক‚টনৈতিক সমাধানের অনুরোধ জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার ওই ফোন কলের আগে হলিডে বা ছুটির বার্তায় মি. পুতিন মি. বাইডেনকে বলেছিলেন যে, তিনি প্রত্যাশা করেন, এ দুই দেশ পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং একে অপরের জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে একসাথে কাজ করতে পারে।
তার মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, মস্কো আলোচনার মেজাজে ছিল। ‘আমরা বিশ্বাস করি, কেবল আলোচনার মাধ্যমেই আমাদের মধ্যে থাকা সমস্ত সঙ্কটগুলোর সমাধান করা সম্ভব’, মি. পেসকভ যোগ করেছেন।
হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা ইউক্রেন সম্পর্কে কথা বলার সময় বেশ শান্ত মেজাজেই থাকেন, বিশেষ করে তারা যখন ওভাল অফিস বা প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের বাইরে কোন কথা বলেন।
বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট বাইডেন এবং প্রেসিডেন্ট পুতিনের মধ্যে ফোনালাপ বেশ গুরুগম্ভীর এবং বাস্তবিক ছিল বলে প্রশাসনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। সেই কর্মকর্তা এই দুই নেতার মধ্যে আলোচনার বিষয়ে স্বাভাবিক স্বরেই কথা বলেছিলেন, তবে রাশিয়ার হুমকির কথা বলার সময় তিনি কিছুটা চটে যান। যদিও পর্দার আড়ালে, তিনি এবং হোয়াইট হাউসের অন্যরা ইউক্রেনে সম্ভাব্য হামলার বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তিত। ভেতরের এক কর্মকর্তা বলেছেন যে, রাশিয়ার ইঙ্গিতগুলো ‘অশুভ’, তাই ক‚টনৈতিক আলোচনার গতি বাড়ানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার এই দুই নেতা অন্তত কথা বলছেন এবং হোয়াইট হাউস একে ইতিবাচকভাবেই দেখছে। নতুন বছরে এই আলাপ-আলোচনা যেন চলমান থাকে সেটা নিশ্চিত করার জন্য তারা যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ডিসেম্বরের শুরুতে পার্লামেন্টে বলেছিলেন যে, রাশিয়া সীমান্তের কাছে কয়েক হাজার সৈন্য মোতায়েন করেছে এবং জানুয়ারির শেষে বড় ধরনের সামরিক আক্রমণের জন্য প্রস্তুত হতে পারে। রাশিয়া যুক্তি দিয়েছে যে, সীমান্তে তাদের এই সেনা মোতায়েন পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর বিরুদ্ধে একটি প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা। এটি আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক গ্যারান্টি চায় যে, ন্যাটো আরো পূর্বে অগ্রসর হবে না এবং কোন বিশেষ ধরনের অস্ত্র ইউক্রেন বা প্রতিবেশী কোনো দেশে পাঠানো হবে না। যদিও ক্রেমলিনের এ দাবি যুক্তরাষ্ট্র প্রত্যাখ্যান করেছে। ইউক্রেনকে ন্যাটো সদস্যপদ দেওয়া হয়নি, তবে জোটের সাথে দেশটির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।
রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে উত্তেজনা নতুন কিছু নয়। ২০১৪ সালে রাশিয়া ইউক্রেনের ক্রাইমিয়া ক্রিমিয়া উপদ্বীপ দখল করে এবং এর পরেই ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীকে সমর্থন করতে শুরু করে। এসব ইস্যুতে একের পর এক লড়াইয়ে এ পর্যন্ত প্রায় ১৪ হাজার মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। ওয়াশিংটন এবং তার ইউরোপীয় মিত্ররা রাশিয়াকে সতর্ক করেছে যে, তারা আবার ইউক্রেনে সৈন্য পাঠালে দেশটির ওপর কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। সূত্র : নিউইয়র্ক টাইমস, বিবিসি বাংলা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন