শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

লেক ও পার্ক নির্মাণে নতুন উদ্যোগ

ড্যাপের মেয়াদ ২০ বছর হচ্ছে চূড়ান্ত প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হচ্ছে

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ২ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০২ এএম

শুধু ইট-পাথরের শহর নয়, বরং আগামী প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য ঢাকা মহানগরী গড়ে লক্ষ্যে বিদ্যমান নানা সমস্যা কমিয়ে পরিকল্পনা অনুযায়ী, ড্যাপ বাস্তবায়নের পর ঢাকাকে ছয়টি অঞ্চলে ভাগে করে লেক, খাল এবং নদীকে সংযুক্ত করে যোগাযোগের মাধ্যম প্রতিষ্ঠা করা এবং বৃষ্টিজনিত জলাবদ্ধতা নিরসন, বিনোদনমূলক পার্ক করাসহ বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সংশোধিত ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান-ড্যাপ চূড়ান্তকরণের লক্ষ্যে রিভিউ সংক্রান্ত গঠিত মন্ত্রিসভা কমিটি এসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য এ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিলে চলতি মাসে গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে বলে জানা গেছে।
গত বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী ও ড্যাপ রিভিউ সংক্রান্ত গঠিত মন্ত্রিসভা কমিটির আহ্বায়ক মো. তাজুল ইসলাম সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়েছে।

মন্ত্রিসভা কমিটির আহ্বায়ক মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ড্যাপ চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে রিভিউ সংক্রান্ত গঠিত মন্ত্রিসভা কমিটির সভা করা হয়েছে। সকলের সিদ্ধান্ত ক্রমে চূড়ান্ত করা হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে এবং প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পরই গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে। ডিসেম্বরের মধ্যেই ড্যাপ চূড়ান্ত করা হবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়ে ছিলো। আমরা আমাদের কথা রাখতে পেরেছি। এটি চ‚ড়ান্ত হওয়ার পরে প্রতি তিন মাস পর পর রিভিউ কমিটির মিটিং হবে। সেই মিটিংয়ে সকল আপত্তি এবং মতামত পর্যালোচনা করা হবে। কোথাও যদি সংশোধনের প্রয়োজন পড়ে সকলের সিদ্ধান্তক্রমে তা করা হবে। মন্ত্রী বলেন, এলাকাভিত্তিক জনঘনত্ব এবং বেজ ফার নির্ধারণ করা হয়েছে। কোনো এলাকাভিত্তিক ভবনের নির্দিষ্ট উচ্চতা নির্ধারণ করা হয়নি। রাস্তা প্রশস্তকরণ এবং সকল নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির সাথে সাথে এলাকাভিত্তিক জনঘনত্ব এবং বেজ ফারের মান পুনঃনির্ধারণ করা হবে। ছয় তলার বেশি করা যাবে এই কথা সঠিক নয়। ভবনের উচ্চতা নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির কোনো সুযোগ নেই।

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) এর চেয়ারম্যান ও সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী ইনকিলাবকে বলেন,
বাসযোগ্য ঢাকা মহানগরী গড়ে লক্ষ্যে লেক, খাল এবং নদীকে সংযুক্ত করে যোগাযোগের মাধ্যম প্রতিষ্ঠা করা হবে। বৃষ্টিজনিত জলাবদ্ধতা নিরসন, বিনোদনমূলক পার্ক গড়ে তোলার জন্য ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যানের সফল বাস্তবায়নের সবার সহযোগিতা প্রয়োজন রয়েছে। তিনি আরো বলেন, রাজউকের যেসব লেক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ বাকী রয়েছে সে গুলো দ্রুত করা হবে।

ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যানের (ড্যাপ) প্রকল্প পরিচালক ও নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, নতুন ড্যাপে (২০১৬-৩৫) এলাকাভিত্তিক রাস্তা প্রস্তকরণসহ স্কুল, কলেজ ও নাগরিক সুবিধাদি প্রাপ্যতার ওপর ভিত্তি করে জনঘনত্ব জোনিংয়ের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়েছে। এ মহাপরিকল্পনায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জমির মালিকদের একত্রে বøক ভিত্তিক উন্নয়ন, মেট্রোরেল স্টেশনের আশেপাশে ট্রানজিটভিত্তিক উন্নয়ন, নিম্নবিত্তের জন্য আবাসন নির্মাণ, উন্নয়নস্বত্ব বিনিময় প্রভৃতি ক্ষেত্রে জনঘনত্ব ও এফএআরের প্রণোদনা প্রদানের বিধান রাখা প্রস্তবনা রয়েছে। সময়ের বিবর্তনে একটি এলাকার নাগরিক সুবিধাদি যেমন স্কুল ও খেলার মাঠ এবং সড়ক নেটওয়ার্কের উন্নতি ঘটলে অধিক জনঘনত্ব ও এফএআর প্রদানের প্রবিধান যুক্ত করা হয়েছে।

ড্যাপে পুরো ঢাকাকে ছয়টি অঞ্চলে ভাগে করেছে, এ অঞ্চলগুলোতে পার্ক নির্মাণ করা হবে। ড্যাপ সংশ্লিষ্ট নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজউকের এক কর্মকর্তা ইনকিলাবকে বলেন, রাজধানীতে কিছু পার্ক-উদ্যান আছে কিন্তু সেগুলো প্রধান শহরের মধ্যে কিন্তু শহরের পরিধি গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত চলে গেছে। সেই হিসাব করলে চাহিদা বা প্রয়োজন অনুযায়ী পার্ক বা সবুজায়ন নেই। যে কারণে ড্যাপে পুরো ঢাকাকে ছয়টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। সেখানে ছয়টি আঞ্চলিক পার্ক, ১০টি ছোট পার্ক-ইকোপার্ক ও ৪৯টি পানিকেন্দ্রিক পার্ক, লের্ক এবং বিনোদন কেন্দ্র করার নতুন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

রাজউক সূত্রে জানা গেছে, রাজউকের উদ্যোগে প্রণীত নতুন ড্যাপে থাকবে ভূমি পুনর্বিন্যাস, উন্নয়নস্বত্ব, প্রতিস্থাপন পন্থা, ভূমি পুনঃউন্নয়ন, ট্রানজিটভিত্তিক উন্নয়ন, উন্নতিসাধন ফ্রি, স্কুল জোনিং ও ডেনসিটি জোনিং। ওয়ার্ডভিত্তিক জনঘনত্বের বিষয়ে দিক নির্দেশনাও থাকছে ড্যাপে। এছাড়া সড়ক, উন্মুক্ত স্থান এবং পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, স্যুয়ারেজসহ বিভিন্ন ধরনের সেবা সরবরাহের সামর্থ্য বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এর আগে পাঁচ বছর মেয়াদি ড্যাপের মাস্টার প্ল্যান প্রথম প্রণয়ন করা হয় ২০১০ সালে। ২০১৫ সালে প্রথম ড্যাপের মেয়াদ শেষ হয়। বর্তমানে সময় বাড়িয়ে নগর উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে রাজউক। নতুন ড্যাপের মেয়াদ হবে ২০ বছর। নতুন ড্যাপে ঢাকাকে ছয়টি অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে।এ অঞ্চলগুলোতে বেশকিছু পার্ক করার প্রস্তাব করা হয়েছে। নতুন ড্যাপে ছয়টি আঞ্চলিক পার্ক, ১০টি ছোট পার্ক-ইকোপার্ক ও ৪৯টি পানি কেন্দ্রিক পার্ক করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ড্যাপে উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে ঢাকার চারপাশের ৫৬৬ কিলোমিটার নদীপথ সচল করা এবং ১ হাজার ২৩৩ কিলোমিটার সড়ককে হাঁটার উপযোগী করা। এ পরিকল্পনায় শহরের বিদ্যমান কাঠামো ভেঙে স্কুলভিত্তিক উন্নয়নের সুপারিশ করা হয়েছে। রাজধানীকে যানজট মেক্তু করতে রিং রোড, বাস রুট রেশনালাইজেশন, মেট্রোরেল চালু ও খাল ব্যবহার উপযোগী করে নৌ-যান চলাচলের ব্যবস্থাসহ নানা উদ্যোগকে ড্যাপে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। সড়ক, পানিপথ ও রেলপথকে গুরুত্ব দিয়ে একটি সমন্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতেও সুপারিশ করা হয়েছে এ পরিকল্পনায়। রাজউকের অন্তর্ভুক্ত ১ হাজার ৫২৮ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে মোট ৪৬৮টি বøকে ভাগ করা হয়েছে। পরে জরিপ করে প্রতিটি বøকের জনসংখ্যার ধারণক্ষমতা, সড়ক অবকাঠামো, নাগরিক সুবিধা এবং সেখানে উন্নয়নের ধরনের ওপর ভিত্তি করে আবাসিক ভবনের সার্বিক বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে। রাজউকের অন্তর্ভুক্ত এলাকায় ২ হাজার ১৯৮ কিলোমিটার পানিধার সিএস রেকর্ড অনুযায়ী উদ্ধার করে সচলের সুপারিশ করা হয়েছে। একইসঙ্গে এসব এলাকাকে বিনোদন স্পটে পরিণত করারও সুযোগ সৃষ্টি করার সুপারিশ করা হয়েছে।

ড্যাপে ভ‚মি ব্যবহার প্রস্তাবনায় ১৫২৮ বর্গকিলোমিটার এলাকার মধ্যে ৬০ শতাংশ এলাকাকে নগর ধরা হয়েছে। এতে আবাসিক এলাকা ৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ, মিশ্র ব্যবহার এলাকা (আবাসিক প্রধান) ৩২ দশমিক ৫০ শতাংশ, মিশ্র ব্যবহার এলাকা (আবাসিক-বাণিজ্যিক) ০ দশমিক ৪৫ শতাংশ, বাণিজ্যিক এলাকা ০ দশমিক ১৬ শতাংশ, মিশ্র ব্যবহার এলাকা (বাণিজ্যিক প্রধান) ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ, মিশ্র ব্যবহার এলাকা (শিল্প প্রধান) ৭ দশমিক ৯০ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক এলাকা ৪ দশমিক ১ শতাংশ, ভারী শিল্প এলাকা ১ দশমিক ৬৩ শতাংশ, পরিবহন যোগাযোগ (বিদ্যমান) ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ, পরিবহন যোগাযোগ (প্রস্তাবিত) ২ দশমিক ৩৫ শতাংশ, কৃষি এলাকা ২৯ দশমিক ২২ শতাংশ, জলাশয় ৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ, বনাঞ্চল ১ দশমিক ৪১ শতাংশ, উন্মুক্ত স্থান ১ দশমিক ৩৮ শতাংশ রাখা হয়েছে। পাশাপাশি ঢাকার কেন্দ্রে জনসংখ্যার চাপ কমাতে বিভিন্ন এলাকায় সুষম উন্নয়ন এবং মেট্রোপলিটন এলাকাকে বাসযোগ্য গড়ে তুলতে বিদ্যমান ধারণক্ষমতা, সড়ক অবকাঠামোর ধারণক্ষমতা, বিদ্যমান নাগরিক সুবিধার ওপর ভিত্তি করে পরিকল্পনায় এলাকাভিত্তিক জনঘনত্ব জোনিং প্রণয়ন করা হয়েছে। এর আগে ড্যাপে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে নগরীর অবকাঠামোর পাশাপাশি সবুজ ও জলাশয় করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। পরিবেশের ভারসাম্যের পাশাপাশি শিশু-কিশোরদের জন্য উন্মুক্ত স্থান হিসেবে এবং সবুজায়নের জন্য পার্ক ও উদ্যান নির্মাণের পরামর্শ দেন নগর পরিকল্পনাবিদরা। তারা বলেন, বড় স্কেলে পার্ক বা উদ্যান নির্মাণ এবং ছোট ছোট বকের পার্ক নির্মাণ করতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন