বাগমারা (রাজশাহী) উপজেলা সংবাদদাতা
রাজশাহীর বাগমারায় ১৬টি ইউনিয়নের স্থগিতকৃত নির্বাচন আগামী ৩১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচনকে ঘিরে প্রচার-প্রচারণা জমে উঠেছে। শেষ সময়ে নির্বাচনে প্রার্থীদের নিয়ে চায়ের স্টল, হাট-বাজারসহ সর্বত্রই চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। দিন যতই ঘনিয়ে আসছে প্রচার-প্রচারণা ততই তুঙ্গে উঠছে। ইউনিয়ন পর্যায়ে সারা দেশের ন্যায় এই প্রথম দলীয় নির্বাচন হচ্ছে এমনটি নিয়ে দলীয় প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে। তবে আঞ্চলিক ও নিজস্ব কিছু ইমেজে জনপ্রতি ভোট অনুকূলে ভিড়ছে। কোন প্রার্থী কার চেয়ে যোগ্য কে হচ্ছেন ইউপি’র চেয়ারম্যান সর্বত্রই আলোচনার ঝড় উঠেছে গ্রাম-গঞ্জে। এমন এক বিশ্লেষণে উঠে এসেছে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থীর হালচাল। বড়বিহানালী ও গণিপুর ইউনিয়নের নির্বাচনে বড়বিহানালী ইউনিয়নের আ’লীগের রেজাউল করিম ও বিএনপির মাহামুদুর রহমান মিলন। নির্বাচনে আ’লীগ সমর্থিত রেজাউল করিম ও বিএনপির সমর্থিত উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি মরহুম রফিকুল ইসলাম রফিকের পুত্র মাহমুদুর রহমান মিলন দু’জন প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাডি লড়াই হবে এমনটি হাওয়া বইছে সর্বত্রই। গত নির্বাচনে বিপুল ভোটে নির্বাচিত বিএনপিসমর্থিত উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি রফিকুল ইসলাম রফিক আ’লীগের বলিষ্ঠ নেতা খামারি রফিককে হারিয়ে নির্বাচিত হন। গত ১০ আগস্ট হার্টস্ট্রোকে মারা যাওয়ার পর ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের পদ খালি হয়ে পড়ে। নিয়মতান্ত্রিকভাবে ইউপি উপনির্বাচনে ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন আলীকে হারিয়ে মাহমুদুর রহমান মিলন বিপুল ভোটে বিজয়ী হন। এরপর আবারো আগামী ৩১ অক্টোবর ইউপি নির্বাচন। নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী মাহমুদুর রহমান মিলন বাবার ত্যাগ, তিতিক্ষা ও দলীয় পরিচয় নিয়ে ধানের শীষ নিয়ে মাঠ দখলে নিয়েছেন। তিনি পিতার গুণগান গেয়ে অনেকটা এগিয়ে রয়েছেন। একইভাবে সরকারি দলীয় হওয়ার সুবাধে আ’লীগসমর্থিত রেজাউল করিম নিজের অবস্থান দৃঢ় করতে নৌকা প্রতীক নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। একইভাবে বাসুপাড়া ইউনিয়নের নির্বাচনকে ঘিরে এখন ইউনিয়ন সরগরম। শেষ সময়ে দলীয় পরিচয় ও ব্যক্তি ইমেজে আ’লীগসমর্থিত ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি মাস্টার লুৎফর রহমান নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোট চেয়ে ফিরছেন। বিগত দিনে চেয়ারম্যান থাকার ফলে তার নিজস্ব ভোট ব্যাংক রয়েছে। তবে ১নং ওয়ার্ডের সগুনা-বালানগর ভায়া গোপালপুর হয়ে বয়ে যাওয়া দাঁড়িতে তিনি ও তার আত্মীয়দের একাধিক পুকুর খননে পানিবদ্ধতায় ওই এলাকার বেগুন, মরিচ, পানবরজসহ ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্তদের কোনো সুরাহা না করায় ভোটারদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। এছাড়া ৩নং ওয়ার্ডে বিল-খালে অবৈধ দখল নিয়ে মাছচাষে মৎসজীবীদের সাথে বিগত দিনে একাধিকবার সংঘর্ষ মামলা- হামলার ঘটনায় ও স্থানীয় চেয়ারম্যান হিসেবে অন্যান্য ইউনিয়নের থেকে চকিদারি ট্যাক্সের নামে অতিরিক্ত চাঁদা তোলায় ভোটারদের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এতেও হাল না ছেড়ে নৌকা প্রতীকে ভোট নিতে তিনি মাঠে চষে ফিরছেন। অপরদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী দেউলিয়া গ্রামের আলহাজ আব্দুল জব্বার ম-ল বীর মুক্তিযোদ্ধা পরপর ৩ বার এক সময়ে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে তিনি ইউনিয়নে পুরাতন লোকজনের বেশ আস্থাভাজন হিসেবে মাঠে রয়েছেন। তার দু’জামাতা আ’লীগ ও বিএনপির উপজেলা পর্যায়ে শীর্ষ নেতা সেদিক থেকে দুই দলের সমর্থকরা নেতার শ্বশুরকে সম্মান না দিয়ে পারছেন না এতে করে নির্বাচনে তার পাল্লা অনেকটা ভারি বলে ইউনিয়নের অভিজ্ঞ মহল জানিয়েছেন। এছাড়া বিএনপির প্রার্থী দলের তরুণ উজ্জীবিত নেতা জিল্লুর রহমান দেউলিয়া গ্রামের কৃতী সন্তান। মীর পরিবারের সদায় হাস্যোজ্জ¦ল, নম্্র ও ভদ্র ছেলে হিসেবে তার বেশ সুনাম। বিগত ৭ মে উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নে অনিয়ম ও সহিংসতার কারণে ভোট বন্ধ হলেও সে মাঠে জনগণের কাছে ছিল সে হিসেবে তার মাঠে অবস্থান ভালো বলে জানিয়েছেন একাধিক ভোটাররা। অপরদিকে উপজেলার গনিপুর ইউনিয়নের আ’লীগের এসএম এনামুল হক, বিএনপির অ্যাড. মনিরুজ্জামান রঞ্জু, জাতীয় পার্টির আফছার আলী, স্বতন্ত্র হারুন অর রশীদসহ ৪ জন প্রাথী নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন। এখানে মূলত বিএনপি ও আ’লীগের সমর্থিত প্রার্থীর মধ্যে লড়াই হবে। বিএনপির প্রার্থী অ্যাড. মনিরুজ্জামান রঞ্জু একডালা গ্রামের প্রভাবশালী ম-ল বংশের অতি পরিচিত ব্যক্তি। এছাড়া বাগমারা উপজেলা বিএনপির সভাপতি মুখলেছুর রহমানের বড় ভাই হওয়াতে দলীয় ইমেজে ভোট ব্যাংক নিয়ন্ত্রণের ধানের শীষের ভোট ধরে রাখতে চেষ্টায় রয়েছেন। আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হারুনুর রশিদ দলের ভোট কেটে নিলে নিশ্চিত রঞ্জু বিজয়ী। অপরদিকে আ’লীগের এসএম এনামুল হক চকমহব্বতপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে সাবেক প্রধান শিক্ষক আমীর উদ্দিনের ছেলে। পিতার নাম জসের সাথে দলীয় হিসেবে পার্শ¦বর্তী উপজেলা মোহনপুরের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিনের একান্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধু তার আর্শীবাদে মাঠে চষে ফিরছেন নৌকা প্রতীক নিয়ে। সেই দিক দিয়ে দলের লোক দলে ভিড়ে রাখতে পারলে সেই হবে চেয়ারম্যান এমনটি ভোটারদের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। একইভাবে উপজেলার আরো ১৩টি ইউনিয়নের ইউপি নির্বাচনে অধিকাংশেরই মূলত আ’লীগের নৌকা ও বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীদের মধ্যে লড়াই হবে বলে পর্যায়ক্রমে জানা গেছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন