বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সাহিত্য

কবি মুহাম্মাদ ওবায়দুল্লাহর কবিতায় মানবিক চেতনা

প্রকাশের সময় : ২৮ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আবদুল হাই ইদ্রিছী
একজন সৃজনশীল হৃদয়ের কবি মুহাম্মাদ ওবায়দুল্লাহ। মানবতার আদর্শে উদ্ভাসিত যার অন্তর। নির্ভেজাল মানবিক চেতনা যার হৃদয়ে লালিত। যার মননশীল চেতনায় সমকালীন সমাজ, পরিবেশ, প্রকৃতি, জীবনাআচরণ ও মূল্যবোদ জাগ্রত। সংশয়, দ্বন্দ্ব, বিশ্বাস, অবিশ্বাস অন্তরের মানবিকতাকে তাড়না দেয়। বিপন্ন মনুষ্যত্ব তাঁর মনোজগতে তীব্র আঘাত করে। কামনা-বাসনা, সদিচ্ছা হয়ে যায় বিব্রত। ঔচিত্যবোধ হয়ে যায় বেদনায় ভারাক্রান্ত। মর্মপীড়া, মনঃকষ্ট, হৃদয়যাতনা তাঁকে বেদনাক্লিষ্ট করে তুলে। অধিকারবঞ্চিত সমাজে নিপীড়িত, নিগৃহীতদের করুন অবস্থা দেখে তাঁর হৃদয়ে কাঁপন জাগে। এজন্য তিনি মানবিক চেতনার কবি। তাঁর কবিতায় ফোঁটে উঠেছে মানবিক চেতনা।
পৃথিবীর সর্বত্র জ্বলছে অশান্তির আগুন। বিশ্বমানবতা চরম সংকট ও আদর্শিক অস্থিতিশীলতার ঘৃণাবর্তে হাবুডুবু খাচ্ছে। এসব বেদনা কবি মুহাম্মাদ ওবায়দুল্লাহ’র হৃদয়ে আঘাত করে। ব্যথিত হৃদয়ে কবি লিখেন-
যে দিকেই কান রেখেছি খোলা আমার
সে দিকেই শুনেছি স্বকরুন চিৎকার,
যে দিকেই তাকাই আমি
সূর্য শূন্য-দেখি শুধুই অন্ধকার।
                          (যে দিকে তাকাই)
সমাজে এখন আর জোসনার ¯িœগ্ধতা নেই। মানুষের কাছ থেকে বিলিন হচ্ছে মানবতা, মানুষ্যত্ব। লাঞ্চনা, বঞ্চনা, নিপীড়ন, নির্যাতন, জুলুম, অত্যাচারে ভরে যাচ্ছে সমাজ। সর্বদা এখন প্রচ- দাহ! সে দাহে তিলেতিলে দগ্ধ হচ্ছে সমাজ। তাই কবি লিখেন-
আমি মানুষ দেখিনি মানুষ
এখানে সেখানে কোথাও দেখিনি মানুষ
দেখেছি মানুষের মানুষিকতা
দেখেছি পাগলামো তার
দেখে দেখে আমি হতবাগ! আমি নির্বাক!
                                  (মনুষত্ব হারানো বসুন্ধরা)
সমাজের সর্বত্র নারীরা আজ নির্যাতিতা, নিপীড়িতা, নিগৃহীতা, ধর্ষিতা হচ্ছে। নির্যাতিতা ও ধর্ষিতা নারীদের আত্মচিৎকারে আকাশ-বাতাস পকম্পিত হচ্ছে। নারী জাতিকে এহেন পরিস্থিতি দেখে নারী সমাজের মুক্তি সংগ্রামের জন্য কবি নারীদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের স্বাধীনতা এনে দিতে চান। কবি লিখেন-
শাহনাজ একটু দাঁড়াও। একটু ফিরে তাকাও শাহনাজ!
দ্যাখো এই ফিরে এসেছি- তোমার ওবায়েদ ভাই আজ।
. . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .
তোমার জন্য আমার এক হাতে তাসবিহ অন্য হাতে যুদ্ধাস্র
শাহনাজ! আমার রক্তভেজা যুদ্ধবস্ত্র খোলবোনা আজ।
(শাহনাজ একটু দাঁড়াও)
মুহাম্মাদ ওবায়দুল্লাহ একজন জীবনবাদী কবি। সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠাকামীদের মধ্যে তিনি একজন আদর্শবাদী প্রবক্তা। সমাজ ও রাষ্ট্রের অপরাধী চেহারা, মানুষ ও মানবতার বঞ্চনা কবিকে ভিষণ পীড়া দেয়। অন্যায়ের বিরুদ্ধে শোষণ ও বঞ্চনার অবসান তার কাম্য। তাই নতুন পৃথিবী জন্য কবি-হৃদয়ে সাহসী উচ্চারণ-
অভুক্ত উদরে সুপথে চলতে হবে সুদূরে
ভয়কে করতে হবে জয় জীবনের ঝড়-ঝাপটায়
উত্তাল স্রোতের উল্টো দিকে উজান ঠেলে ঠেলে
সুদূর গন্তব্যে তোর যেতেই হবে পাখী ওরে শামসুখী।
                                                         (ওরে বোকা পাখী)
কবি মুহাম্মাদ ওবায়দুল্লাহ বিশ্বসী কবিদের অন্যতম একজন। আধুনিকতার বৈরী স্রোতের আবর্তে হারিয়ে যাননি। তিনি বিশ্বাস করেন দুনিয়ার জীবনটাই শেষ জীবন নয়, মৃত্যুর পর অনন্ত অসীম এক জীবন আছে। তাই কবি লিখেন-
অবধারিত মৃত্যুর দুয়ারে দাঁড়িয়ে আমি সর্বক্ষণ
পরপারের খেয়া আসতে আর কতক্ষণ?
                                   (অরধারিত মৃত্যুর অপেক্ষা)
২৫ অক্টোবর মানবিক চেতনার কবি মুহাম্মাদ ওবায়দুল্লাহর ৬৪তম জন্মদিন। কবি ১৯৫২ সালের এই দিনে বরিশাল জেলার মেহেন্দিগঞ্জের দক্ষিণে সুদৃশ্য নদী চর শস্য সবুজ গ্রাম পাতা বুনিয়ার গোলের হাটে জন্মগ্রহণ করেন। কর্তব্যনিষ্ঠ ও জ্ঞান সাধক হিসেবে তিনি হতাশাকে পদদলিত করে এগিয়ে চলেছেন সামনের দিকে। সাহিত্য জগতে তার উপস্থিতি আস্বাদে ও উত্তেজনায়, রোমাঞ্চে ও শিহরণে সচকিত ও স্পন্দমান। কবির লেখনী ও কর্মপ্রবাহ দীর্ঘজীবী হোক। তাঁর জন্মদিনে এই প্রত্যাশা।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন