শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

জঙ্গিবাদের সাথে ইসলাম মসজিদ মাদরাসা শিক্ষার কোনো সম্পর্ক নেই : এ এম এম বাহাউদ্দীন

রাষ্ট্র ও ইসলামের বিরুদ্ধে চক্রান্তকারীদের বিষয়ে আলেমদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে : গাজীপুর জেলা প্রশাসক

প্রকাশের সময় : ২৮ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১০:৫২ পিএম, ২৭ অক্টোবর, ২০১৬

স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি ও দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক আলহাজ এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেছেন, জঙ্গিবাদ কেবল বাংলাদেশের সমস্যা নয়, এটি বৈশ্বিক সমস্যা। এটা একটা রাজনৈতিক মতবাদ। এর সাথে ইসলাম, মসজিদ, মাদরাসা, মাদরাসা শিক্ষার কোনো ধরনের কোনো সম্পর্ক নেই। জঙ্গিবাদের মূল সমস্যা এখন ইউরোপ, আমেরিকা, ভারতে, আবার সেটা সবকিছুই রাজনৈতিক। বাংলাদেশেও উগ্রবাদের একটা প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, আলেম সমাজ, মসজিদের ইমাম সর্বোপরি সবার সম্মিলিত প্রতিরোধের মুখে এখানে স্থান পায়নি। বহির্বিশ্বের রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার না হলে বাংলাদেশে কখনো উগ্রবাদ স্থান পাবে না। গতকাল (বৃহস্পতিবার) গাজীপুরে আয়োজিত মাদরাসা শিক্ষকদের এক সমাবেশে তিনি একথা বলেন। একই সমাবেশে গাজীপুর জেলার জেলা প্রশাসক এস এম আলম বলেন, বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করতে এবং দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করতেই জঙ্গিবাদের নামে হামলা করা হয়েছে।
এসব চক্রান্তকারীদের অন্য উদ্দেশ্য থাকলেও মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ইসলামকে কালিমালিপ্ত করা এবং ইসলামকে ধ্বংস করা। আর এ ধরনের চক্রান্তকে রুখে দিতে দেশের সব আলেম-ওলামাকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
গাজীপুরে মাদরাসা শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন গাজীপুর জেলা শাখা ‘মাদরাসা শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং জঙ্গিবাদ ও মাদকাসক্তি প্রতিরোধে মাদরাসা শিক্ষকদের করণীয়’ শীর্ষক মাদরাসা শিক্ষকদের সমাবেশের আয়োজন করে।
সমাবেশে জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি এ এম এম বাহাউদ্দীন জঙ্গিবাদকে রাজনৈতিক সমস্যা উল্লেখ করার পাশাপাশি মাদকের ভয়াবহতার বিষয়ে বলেন, আমাদের অজান্তে মাদকের ভয়াবহ বিস্তার হচ্ছে। শুধু শখে করছে তা নয়, কেউ হতাশ, বিষণœতাসহ নানাবিধ কারণে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী দিনের বাংলাদেশকে নিয়ে যে স্বপ্ন দেখছেন সেটা কিন্তু একটা ড্রাগ এডিক্টেড জাতিকে বা ড্রাগ এডিক্টেড সমাজকে নিয়ে বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। মাদরাসা শিক্ষক, আলেম সমাজ ড্রাগসের বিরুদ্বে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করছে। সেটা মাদরাসা কিংবা মসজিদের ভেতরে হোক বা বাইরে হোক। কোনো মাদরাসা, মসজিদ, আলেমদের পরিবারে ড্রাগসের কোনো ছোঁয়া  নেই। আলেম-ওলামারা সব সময় ড্রাগসের বিরুদ্ধে কথা বলছেন। এর ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে সতর্ক করছেন।
তিনি বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশে চীনের প্রেসিডেন্ট এবং বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ঘুরে গেছেন। তাদের ওই সফরের মাধ্যমে আগামী দিনের বাংলাদেশ নিয়ে আমরা যে সম্ভাবনা দেখছি, বিশাল অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বপ্ন দেখছি সেটা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন একটি সুশিক্ষিত জাতি।
ইনকিলাব সম্পাদক বলেন, শিক্ষাব্যবস্থায় যেভাবে দিন দিন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে, ছেলেমেয়েদের পড়ানো কঠিন হয়ে যাবে। তাই বলে অশিক্ষিত-অযোগ্যদের হাতে দেশের অর্থনীতির দায়দায়িত্ব তুলে দেয়া যাবে না। সস্তায় যোগ্য, দেশপ্রেমিক নাগরিক গড়ে তুলছেন মাদরাসা শিক্ষকরা। এর মধ্যে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন একটা বড় হিস্যাদার। আলেয়া মাদরাসাগুলোতে ৭০ লাখ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে, এর মধ্যে ৩৫ হাজার ছাত্রী। তারাই আগামী দিনের মা। বাংলাদেশে নিরাপদ মাতৃত্ব একটা বড় সমস্যা, আজকে মায়েরা নির্যাতিত হচ্ছেন। এর সব সমাধান মাদরাসা শিক্ষা। তিনি বলেন, আগামী দিনে সুশৃঙ্খল ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে যোগ্য নেতৃত্ব দেবে আধুনিক ও ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত, যোগ্য দেশপ্রেমিক মাদরাসা শিক্ষার্থীরা। এ এম এম বাহাউদ্দীন সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর দেয়া একটি বক্তব্য তুলে ধরে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসতে হবে। ২০১৪ সালের মতো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এবার নির্বাচনের সুযোগ থাকবে না, প্রধানমন্ত্রী এটা সুস্পষ্ট করে বলেছেন। যে কারণে তিনি দলকে পুনর্গঠন করছেন এবং এ ব্যাপারে বেশি জোর দিচ্ছেন। জমিয়তের সাথে জড়িত সকল শিক্ষক মানুষের একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের মনে গ্রথিত রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্বাচনে বিজয়ী হতে হলে মানুষের মনের একেবারে নিবিড়ে যেতে হবে। এ জন্য তৃণমূলের সাথে সম্পর্ক জোরদার করতে হবে। যা জমিয়ত নেতৃবৃন্দ, মাদরাসা শিক্ষক, মসজিদের ইমাম, আলেম-ওলামা ও পীর-মাশায়েখদের মাধ্যমেই সম্ভব।
মাদরাসা শিক্ষার প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের আন্তরিকতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী মাদরাসা শিক্ষাবান্ধব এবং শিক্ষামন্ত্রী অত্যন্ত আন্তরিক। মাদরাসা শিক্ষকসহ সব বেসরকারি শিক্ষকদের চাকরি জাতীয়করণের দাবি আমরা জানাবো, সকলে ঐক্যবদ্ধ থাকলে প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকেই আমরা এই দাবির বাস্তবায়নের ঘোষণা শুনতে পারব।
গাজীপুর জেলার জেলা প্রশাসক এস এম আলম বলেন, রাজধানীর হলি আর্টিজানে যে হামলা করা হয়েছে তা কার স্বার্থে করা হয়েছে? ইতালি ও জাপানিসহ বিদেশী নাগরিকদের যে হত্যা করা হয়েছে তা কার স্বার্থে করা হয়েছে, কেন করা হয়েছে? বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করা এবং দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করার জন্যই এই চক্রান্ত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে পুলিশ তাদের পরিচয় উন্মোচন করেছে। কেউ কেউ ক্রসফায়ারেও নিহত হয়েছে। তিনি বলেন, এসব চক্রান্তকারীর অন্য উদ্দেশ্য থাকলেও মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ইসলামকে কালিমালিপ্ত করা এবং ইসলামকে ধ্বংস করা। আর এ ধরনের চক্রান্তকে রুখে দিতে দেশের সব আলেম-ওলামাকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
গাজীপুর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল শেখ বলেন, গাজীপুর জেলা এত জনবহুল যে, কে মাদক বিক্রেতা তা চিহ্নিত করা কঠিন। এক টঙ্গীতেই ১৭টি বস্তি রয়েছে। এত অপরিচিত মানুষের কারণে এটি কঠিন কাজ। তারপরও পুলিশ তার সাধ্যমতো সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। জঙ্গিবাদ দমনে তিনি স্থানীয়দের সহযোগিতা কামনা করে বলেন, এখানে যেহেতু বিভিন্ন জেলার লোক বসবাস করে তাই নতুন কোনো লোক এলাকায় দেখলে বা সন্দেহজনক চলাফেরা দেখলে খোঁজখবর নিতে হবে। পরিচয় না জেনে বাড়িভাড়া না দেয়ারও পরামর্শ দেন তিনি। একই সাথে নিজ সন্তানদের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে যাতে তারা কোনোভাবেই জঙ্গিবাদের সাথে জড়িয়ে না পড়ে।
গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মো: আজমত উল্লাহ খান দেশের মাদরাসা শিক্ষা ও ইসলামী শিক্ষায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার কন্যা শেখ হাসিনার অবদানের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে দেশে ইসলামী শিক্ষার গবেষণার জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। মাদরাসার জন্য পৃথক মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড গঠন করেন। এর মধ্যে দীর্ঘদিন মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়ন কি হয়েছে এর সাথে সংশ্লিষ্টরাই জানেন। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসার পর তিনি মাদরাসা শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন। আর এবার তিনি আলেম-ওলামাদের দীর্ঘদিনের দাবি ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন। আজমত উল্লাহ খান বলেন, অনেকে বঙ্গবন্ধুর পূর্বপূরুষকে হিন্দু বলে থাকেন। কিন্তু ওই সমাবেশে বঙ্গবন্ধুর বংশ লতিকা তুলে ধরেন।
বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা শাব্বির আহমদ মোমতাজী মাদরাসা শিক্ষায় বর্তমান সরকারের অবদান তুলে ধরে বলেন, এই সরকার ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে, মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর দিয়েছে, শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি করেছে, শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে পাঠ্যবই প্রদান করছে। তবে এখনো কিছু বৈষম্য আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এবতেদায়ী শিক্ষার ভিত্তি আরো মজবুত করার জন্য শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি, শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি ও দুপুরের খাবার প্রদানের দাবি জানান। একইসাথে দেশের সকল ধারার বেসরকারি শিক্ষকরা যে যেভাবে আছে সেভাবেই জাতীয়করণের দাবি জানান। এতে সরকারকে বাড়তি একটি টাকাও খরচ করতে হবে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।
জমিয়াতুল মোদার্রেছীন গাজীপুর জেলার সেক্রেটারির পরিচালনায় সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. আহসান উল্লাহ, জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের যুগ্ম মহাসচিব অধ্যক্ষ ড. এ কে এম মাহবুবুর রহমান, গাজীপুর পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান, মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো: বিলাল হোসেন, মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর এ কে এম ছায়েফ উল্লাহ। এছাড়া  সমাবেশে আরো উপস্থিত ছিলেন জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের ময়মনসিংহ জেলার সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা ইদ্রিস খান, নরসিংদী জেলার সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল জলিল, বরিশাল মহানগরীর সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুর রব, বরিশাল জেলার সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মাওলানা মো: ইব্রাহীম, রাজবাড়ী জেলার সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজুম মনির, ঢাকা মহানগরীর সাধারণ সম্পাদক মাওলানা জাফর সাদেক, কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যক্ষ মাওলানা নজরুল ইসলাম আল মারুফসহ কেন্দ্রীয়, গাজীপুরসহ বিভিন্ন জেলা ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (4)
কবির ২৮ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:৪৩ পিএম says : 0
সময়োপযোগী বক্তব্য
Total Reply(0)
আমিনােআখতার ২৮ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:৪৬ পিএম says : 0
আল্লাহ বাহাউদ্দীন সাহেব ও দৈনিক ইনকিলাবকে বরকত দিন
Total Reply(0)
নবীউল আলম ২৮ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:৫৩ পিএম says : 0
আল্লাহ তায়লা জমিয়উতুল মুদারেসিনকে দীর্ঘজীবী করুন
Total Reply(0)
রহিম ২৮ অক্টোবর, ২০১৬, ১:১৮ পিএম says : 1
জঙ্গীবাদের সাথে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই এ কথাটা সবাইকে বলা দরকার।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন