বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বুস্টার ডোজে গতি নেই

বুস্টারসহ টিকাদান কার্যক্রম আরো গতিশীল করা হচ্ছে : স্বাস্থ্য মহাপরিচালক

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৪ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০১ এএম

মহামারি করোনা শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসের বেশ কয়েকটি নতুন ধরন বেরিয়েছে। বারবার রূপান্তর ঘটছে ভাইরাসটির। করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে কিছুদিন আগেও বিভিন্ন দেশে বয়স্ক মানুষের ওপর টিকার বুস্টার ডোজের প্রয়োগ নিয়ে বিতর্ক উঠেছিল। কিন্তু এখন সেই বিতর্ক ছাপিয়ে সংক্রমণ প্রতিরোধে সবাই বুস্টার ডোজের পেছনেই ছুটছে। দীর্ঘদিন থেকে করোনা টিকার প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের পর বুস্টার ডোজ কীভাবে সংক্রমণের বিরুদ্ধে সহায়তা করে সে নিয়েও গবেষণা করা হয়েছে। গবেষণায় বুস্টার ডোজকে সংক্রমণ প্রতিরোধে কার্যকর বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও গত ২৮ ডিসেম্বর বুস্টার ডোজ দেয়া শুরু হয়েছে। বর্তমানে ৬০ বছরের বেশি বয়সি এবং করোনাভাইরাস সংক্রমণ মোকাবিলায় সম্মুখসারির ব্যক্তিরা বুস্টার ডোজ পাচ্ছেন। বুস্টার ডোজ পাওয়ার জন্য করোনাভাইরাসের টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার ছয় মাস পার হতে হবে। দেশে বুস্টার ডোজ কার্যক্রম শুরু হলেও এ কার্যক্রমে গতি নেই। গত ৫ কার্যদিবসে এক লাখের কিছু বেশি মানুষ এই টিকা পেয়েছেন। এমনকি টিকার জন্য যারা এসএমএস পাচ্ছেন তাও দেয়া হচ্ছে আগের রাতে। তাই অনেকেই টিকা গ্রহণ করতে পারছেন না। আবার সবাই এসএমএসও পাচ্ছেন না। আবার খুব কম সময়ের মধ্যে কেন্দ্রে গিয়ে বুস্টার ডোজ গ্রহণ করতে গিয়ে আগের দুই ডোজ টিকার কার্ড অনেকেই নিচ্ছেন না। তাই বুস্টার ডোজ গ্রহণে আগ্রহীদের পড়তে হয় নানা বিড়ম্বনায়। এমনকি সুরক্ষা অ্যাপ থেকে নতুন করে টিকা কার্ড ডাউনেলোড করে না আনায় তৈরি হয় জটিলতা। এটা না নেযায় অনেককে টিকা না নিয়েই ফিরতে হয়েছে। রাজধানীর ২৫০ শয্যা টিবি হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার জানান, জটিলতা এড়াতে সবাইকে নতুন করে টিকা কার্ড ডাউনলোড করে কেন্দ্রে আসার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে অবশ্যই এজন্য দরকার হবে এসএমএসের।

বুস্টার ডোজ শুরু করতে গিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বয়স্কদের বুস্টার ডোজ দেয়া হচ্ছে। করোনা প্রতিরোধে বুস্টার ডোজ বিশ্বব্যাপী কার্যকর করা হয়েছে। আমাদের দেশেও বয়স্ক জনগোষ্ঠীকে বুস্টার ডোজের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ষাটোর্ধ্ব ও ফ্রন্টলাইনারদের বুস্টার ডোজ দেয়া হবে। তিনি দেশের সবাইকে টিকার আওতায় আনার কথা বলেছেন। একই সঙ্গে দেশে পর্যাপ্ত টিকা রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পর প্রথমে পরীক্ষামূলকভাবে গত ১৯ ডিসেম্বর স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ ৫ জন মন্ত্রী অন্যদের সাহস যোগাতে বুস্টার ডোজ গ্রহণ করেন। এরপর গত ২৮ ডিসেম্বর থেকে দেশে বুস্টার ডোজ কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু গত ২ জানুয়ারি পর্যন্ত ৫ কর্মদিবসে বুস্টার ডোজ গ্রহণকারীর সংখ্যা মাত্র ১ লাখ ১৪ হাজার ৭৪০ জন। এ সংখ্যা বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ অনেকেই বুস্টার ডোজ গ্রহণের অপেক্ষায় রয়েছেন। তাদের মতে, বর্তমানে দেশে পর্যাপ্ত টিকা আছে। তাই বুস্টার ডোজ এবং টিকা কার্যক্রমে গতি আরো বাড়ানো দরকার। যদিও সবাইকে টিকার আওতায় কমিউনিটি ক্লিনিকসহ ইউনিয়ন পর্যায়ে টিকা প্রদান কার্যক্রম চালু হয়েছে।

এদিকে বুস্টার ডোজের এসএমএস পাওয়া নিয়েও অনেকে পড়ছেন বিড়ম্বনায়। টিকার এসএমএস দেয়া হয় টিকা গ্রহণের আগের দিন রাতে। এসএমএস পাওয়ার আগে অনেকেই ঘুমিয়ে পড়েন বলেও অভিযোগ রয়েছে। আবার অনেক রাতে এসএমএস আসায় দেখতে না পেয়ে পরের দিন যখন দেখেন আর বুস্টার ডোজ গ্রহণ করা হয়ে উঠে না। তাই অনেকেই বুস্টার ডোজ গ্রহণ করতে পারছেন না।

অবশ্য বুস্টার ডোজ কার্যক্রম নিয়ে সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করেছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. এবিএম খুরশীদ আলম। তিনি বলেন, বাংলাদেশে করোনার বুস্টার ডোজ দেয়া শুরু করেছি। একটি কার্যক্রমের শুরুর দিকে কিছু ত্রুটি দেখা দেয়। এসব ত্রুটিগুলো দূর করে ধীরে ধীরে আগাচ্ছি। খুব শিগগিরই এ সমস্যার সমাধান হবে, বুস্টারসহ টিকাদান কার্যক্রম আরো গতিশীল হবে। একই সঙ্গে বুস্টার ডোজ টিকা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বয়স সীমা কমিয়ে আনারও চিন্তা আছে। যেকোনো সময় ঘোষণা আসবে। তবে টিকা কার্যক্রম নিয়ে সচেতনতা ও প্রচারণার অভাব আছে বলে স্বীকার করেন স্বাস্থ্য মহাপরিচালক। এছাড়া মৃত্যুঝুঁকিতে আছেন শারীরিকভাবে অসুস্থ্য এমন ব্যক্তিরা যাতে টিকা কার্ড নিয়ে গেলে বুস্টার ডোজ দিতে পারেন সে ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে বলে উল্লেখ করেছেন ডা.এবিএম খুরশীদ আলম।

উল্লেখ্য, গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে টিকাদান কার্যক্রম শুরুর পর গত রোববার পর্যন্ত ৭ কোটি ৪৪ লাখ ৮৩ হাজারের বেশি মানুষ অন্তত এক ডোজ টিকা পেয়েছেন। তাদের মধ্যে ৫ কোটি ২৮ লাখ ৪৩ হাজারের বেশি মানুষ পেয়েছে দ্বিতীয় ডোজ। গত ২৮ ডিসেম্বর বুস্টার ডোজ দেয়া শুরু হওয়ার পর ১ লাখ ১৪ হাজার ৭৪০ জন এই তৃতীয় ডোজ পেয়েছেন। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে করোনা টিকার সুরক্ষা দুর্বল হয়ে আসায় বাড়তি আরেক ডোজ টিকা দেয়া হচ্ছে, যাকে বলা হচ্ছে বুস্টার ডোজ।

দেশে এখন প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে ফাইজার, মডার্না, অ্যাস্ট্রাজেনেকা, সিনোফার্ম এবং সিনোভ্যাকের টিকা দেওয়া হচ্ছে। তবে বুস্টার ডোজ হিসেবে ফাইজার, মডার্না অথবা অ্যাস্ট্রাজেনেকা দেয়ার সুপারিশ করেছে ন্যাশনাল ইমিউনাইজেশন টেকনিক্যাল কমিটি-নাইট্যাগ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন