পদ্মায় তীব্র নাব্য সংকট ও অসংখ্য ডুবোচরের কারণে প্রায় দুই মাস ধরে বন্ধ রয়েছে দক্ষিনাঞ্চলের সাথে উত্তরাঞ্চলের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম রাজবাড়ীর জৌকুড়া ও পাবনার নাজিরগঞ্জ নৌরুটের ফেরি ও লঞ্চ চলাচল। রাজবাড়ীর জৌকুড়া ঘাট থেকে এক কিলোমিটার দুরে একটি অস্থায়ী ট্রলার ঘাট তৈরি করে পারাপার করা হলেও সংযোগ সড়ক না থাকায় ঘাটে যেতে হচ্ছে ঘোরার গাড়ি অথবা পায়ে হেটে।
জানা গেছে, সড়ক ও জনপথ বিভাগ রাজবাড়ীর তত্ত্বাবধানে থাকা এই ঘাট দিয়ে স্বাভাবিক সময়ে ৩ টি ফেরি, ২ টি লঞ্চ ও ৪ টি ইঞ্জিন চালিত ট্রলার চলাচল করে। ফেরি ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় বর্তমানে ৪ টি ট্রলারে চলছে পারাপার। ফরিদপুর, মাদারীপুর, রাজবাড়ীর সাথে পাবনা,সিরাজগঞ্জ ও রাজশাহী জেলার লাখো মানুষের যোগাযোগের একমাত্র সহজ পথ রাজবাড়ীর জৌকুড়া ও পাবনার নাজিরগঞ্জ নৌরুট। পদ্মায় দ্রুত পানি কমে যাওয়ার ফলে আটকে গেছে ফেরি ও ফেরির পল্টুন। দেখা দিয়েছে তীব্র নাব্য সংকট। ঝুঁকি এড়াতে বন্ধ রাখা হয়েছে ফেরি ও লঞ্চ চলাচল।
সরেজমিনে রাজবাড়ীর জৌকুড়া ঘাটে দেখা যায়, ধাওয়াপাড়া বাজার থেকে জৗকুড়া ঘাটের কিছু অংশ ইটের রাস্তা তৈরি ও বাকি অংশের সংযোগ সড়কের কাজ করছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। একটি ভেকু (মাটি কাটার যন্ত্র) দিয়ে মাটি সরানো হচ্ছে। ফলে ঘোড়ার গাড়িতে ও পায়ে হেটে ঘাটে পৌছাচ্ছে মানুষ।
এ সময় পাবনা জেলার বাসিন্দা খায়রুল ইসলাম জানান, ‘প্রতি বছর শীত মৌসুম বা শুস্ক মৌসুম আসলেই এই ঘাটটি বন্ধ থাকে। পদ্মার বুকে চর জেগে উঠার কারণে অন্তত এক মাইল দূরে কেবল যাত্রি পারাপারে ট্রলার সার্ভিস চালু রেখেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। যেখানে যেতে নেই সংযোগ সড়ক, তাই ঘোরার গাড়িতে বাড়তি ২০ টাকা ভাড়া দিয়ে ঘাটে এসেছি। এখন ট্রলারে করে নদী পারি দিবো।’
পারভীন আক্তার নামে অপর যাত্রি জানান, ‘নাগরিক হিসেবে যেটুকু সুবিধা পাওয়ার কথা আমরা তা পাচ্ছি না। মহিলারা ব্যাগ ও সন্তান নিয়ে পায়ে হেঁটে ঘাটে পৌছাচ্ছে। এর ওপর সন্ধ্যার পর আর ট্রলার পাওয়া যায় না। নদীতে চর জেগে ওঠার কারণে ঝুঁকি তো আছেই। যে কোন সময় ট্রলারে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই এখনই খনন করে নদীকে স্বাভাবিকভাবে ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন।’
ঘাট কর্র্তৃপক্ষ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক সোহেল রানা জানান, ‘এই ঘাটটি উত্তরাঞ্চলের সাথে দক্ষিনাঞ্চলের যোগাযোগের সহজ মাধ্যম। ঘাটটি বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পরেছে লাখো মানুষ। ঘাটটি চালু হলে যাত্রিদের যেমন সুবিধা হবে তেমনি কমবে পরিবহন ব্যায়। এখন যারা ট্রাকে করে রাজবাড়ী থেকে পাবনায় পণ্য নেওয়া আনা করবে তাদের কুষ্টিয়ার সেতু হয়ে যেতে হবে। এতে দ্বিগুণ খরচ হচ্ছে ট্রাক চালকদের।’
ঘাট কর্র্তৃপক্ষ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহরিয়ার শরীফ খান জানান, একটি ফেরিকে পদ্মায় চলাচল করতে কমপক্ষে ১০ ফুট গভীরতা প্রয়োজন যা এই পদ্মায় নেই। গত বছর যেমন দেড় কিলোমিটার এলাকায় চর পরেছিলো। বর্তমানে পদ্মায় নাব্য সংকটের কারনে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। সেই সাথে চলমান আছে সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ। জৌকুড়া নাজিরগঞ্জ নৌরুটের ফেরি ও লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সব ধরনের চেষ্টা করা হচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন