শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কোটি টাকা আয়

উত্তরায় ফুটপাত বাণিজ্য

ইয়াছিন রানা | প্রকাশের সময় : ৫ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০০ এএম

ঢাকা-১৮ আসনের উত্তরা, তুরাগ, খিলক্ষেত, বিমানবন্দর, রেলওয়ে স্টেশন, দক্ষিণ খান এলাকায় সড়ক ও ফুটপাত দখল করে নিয়মিত প্রায় দশ হাজার অবৈধ দোকান বসে। বিকাল থেকে ভ্যানগাড়িতে করে বসে দোকান, সন্ধ্যায় জমে উঠে পুরোপুরি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা ও পুলিশকে চাঁদা দিয়ে চলছে এসব অবৈধ ফুটপাতের দোকান। এছাড়া এই সব এলাকায় প্রায় ৮ হাজার ব্যাটারি চালিত অটো রিকশা ও একশত টেম্পু চলে। মাসিক চাঁদা দিয়ে রাস্তায় চলতে হয় এসব যানবাহনকে। সব মিলিয়ে দিনে প্রায় ২৫ লাখ টাকা চাঁদা উঠে ঢাকা-১৮ আসনের ফুটপাত ও ব্যাটারি রিকশা থেকে। যার পুরোটাই যায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা ও পুলিশের পকেটে। এদিকে ফুটপাত দখল করে দোকান বসানোর কারণে সৃষ্টি হয় যানজটের। চলাচলে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে পথচারী ও সাধারণ মানুষকে।

এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুলিশ নিয়মিত তদারক না করার কারণেই ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীরা ফুটপাত-রাস্তা দখল করার সাহস পাচ্ছেন। পুলিশের অনেক সদস্যই ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা পান। তাই তাঁরা এসব অবৈধ দোকান উচ্ছেদের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেন না।

যেসব এলাকায় চাঁদাবাজি : বর্তমানে যে এলাকাগুলোতে ফুটপাতে দোকান বসিয়ে চাঁদা তোলা হচ্ছে, সেসব এলাকা হচ্ছে জসীমউদ্দীন এভিনিউ থেকে টঙ্গী ব্রিজ পর্যন্ত প্রধান সড়কের দুই পাশ, জসীমউদ্দীন অ্যাভিনিউয়ের পূর্ব থেকে পশ্চিমে পাকা সড়ক পর্যন্ত, রাজলক্ষ্মী বিপণিবিতান থেকে পশ্চিমে ফ্রেন্ডস ক্লাব হয়ে ৫ নম্বর সেক্টরের কল্যাণ সমিতির কার্যালয় পর্যন্ত, রবীন্দ্র সরণি থেকে পশ্চিমে লাবাম্বা কাবাবের দোকান পর্যন্ত, মাস্কট প্লাজা থেকে সোনারগাঁ জনপথ সড়ক হয়ে পশ্চিমে লেক পর্যন্ত, পূর্ব দিকে আলাওল অ্যাভিনিউ হয়ে রেললাইন পর্যন্ত, ঈশা খাঁ অ্যাভিনিউ হয়ে রাজউক কলেজ, শাহাজালাল অ্যাভিনিউ থেকে আজমপুর মোড়, আজমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পূর্বে রেললাইন, ৭ নম্বর সেক্টরের ৩৫ নম্বর সড়ক, আমিন কমপ্লেক্স থেকে এইচএম প্লাজার সামনে ও পিছনে, গরীবে নেওয়াজ অ্যাভিনিউ, ময়লার মোড়, শাহ মখদুম অ্যাভিনিউ, সাউথ ব্রিজ স্কুলের সামনের সড়ক, বিমানবন্দরের বিপরীত দিকের সড়ক ও আব্দুল্লাহপুর বেড়িবাঁধ এলাকা। মোল্লারটেক, হজ্জক্যাম্পের সামনে, আশকোনা বাজার, খিলক্ষেতে ঢাকা রিজেন্সি হোটেলের পিছনের অংশ। ফুটপাতে এসব দোকানে কাপড়, প্রসাধনসামগ্রী, জুতা, শাড়ি, পোশাক, বিছানার চাদর, ফাস্ট ফুডের আইটেম বিক্রি কর হয়। ভ্যান গাড়িতে করে মালামাল বিক্রি করা হয় দোকানগুলোতে। ফুটপাতে বসা ব্যবসায়ীরা জানান, ব্যবসা করতে দৈনিক তাদের ২০০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। প্রতিদিন এই চাঁদা তোলার দায়িত্বে আছেন বেশ কয়েকজন লাইনম্যান।

এছাড়া প্রতিটি ব্যাটারি চালিত অটো রিকশা ৫০০ টাকার নির্দিষ্ট স্টিকার কিনে গাড়ি চালাতে হয়। না হয় সেই রিকশা পুলিশ ধরে নিয়ে যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিকেল থেকে চাঁদা তোলা শুরু হয়। মাঝেমধ্যে রাতেও তোলা হয়। আর চাঁদা আদায় শেষে লাইনম্যানরা রাজউক কমার্শিয়াল কমপ্লেক্সের পেছনে জড়ো হয়ে আদায় করা টাকার হিসাব করেন। প্রতিদিন দেড় থেকে পৌনে দুই লাখ টাকা ওঠে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, চাঁদা দিতে না চাইলে ব্যবসা বন্ধ করে দোকানের মালামাল রাস্তায় ফেলে দেওয়া হয়। টহল পুলিশ এসে থানায় কিংবা ফাঁড়িতে ধরে নিয়ে যায়। এই ভয়েই তারা সবাই চাঁদা দেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুলিশের সদস্যরা নিজেরাই টাকা নেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
হাউসবিল্ডিং এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সুমনের ভ্রাম্যমাণ দোকানের মতো আরো পাঁচ শতাধিক দোকান বসে ফুটপাতে এবং রাস্তার পাশে। সব দোকানিকেই প্রতিদিন চাঁদা দিতে হয়। রাজনৈতিক পরিচয় দিয়ে চিহ্নিত চাঁদাবাজরা রাস্তা দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে। তাদের টাকা না দিলে ফুটপাতে দোকান বসানোর সাধ্য কারো নেই। টাকার মেশিন অর্থাৎ অর্থ কামানোর হাতিয়ার হিসেবে এই চাঁদাবাজ লাইনম্যানরা রাজনৈতিক নেতা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে বিশেষ কদর পায়। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক পরিচয়ধারী অনেক চাঁদাবাজ ফুটপাতের অবৈধ দোকান থেকে শুরু করে নামিদামি শপিং মলে দোকানের পজিশন নিয়ে মালিক বনে গেছে।
এছাড়া চাঁদাবাজির অন্যতম উৎস ব্যটারী চালীত অটো। ৮ হাজার অটো থেকে মাসে ৫০০ টাকা করে নেয়া হয়। এ রুটে অধিক পরিমাণে চলাচলের কারনে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন পথযাত্রীরা। অটোর কারনে এই রুটে সবসময় গিজগিজ হয়ে থাকে জ্যাম।

আরো জানা যায়, উত্তরায় রাজউকের জমি দখরের মহোৎসব চলছে। এসব জমিতে অস্থায়ী দোকানপাঠ, কাঁচাবাজার এবং বিভিন্ন মার্কেট তৈরী করে বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছে ভাড়া দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিছে। উত্তরা সোনারগাঁও জনপদ রোডর উভয়পাশে ১৩ , ১২ ,১১ ও ১০ নং সেক্টরে রাজউকের জমি দখল করেছে প্রভাবশালী মহল। এছাড়া ওই রোডের ফুটপাতগুলোও অস্থায়ী ব্যবসায়ীদের দখলে। ফলে এলাকাবাসীর চলাচল করতে নানা সমস্যা ও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আর এ দখল চলছে রাজউকের কর্মকর্তাদের সহযোগিতায়। নিয়মিত মাসোয়ারা পান রাজউকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকায় বিভিন্ন অলিগলিত চলছে প্রায় ২ হাজার ব্যাটারিচালিত রিকশা। প্রতি রিকশায় চাঁদা দিতে হয় মাসে ৫০০ টাকা। শুধু তাই নয়, রাতে বালুবাহি ট্রাক ঢুকলেই চালকদের গুণতে হয় ৩০০ টাকা করে। প্রশাসনের মদদে এভাবেই প্রতি মাসে প্রায় ১০ লাখ টাকা চাঁদাবাজি করে চলেছে স্থানীয় কতিপয় আওয়ামীলীগ নেতা। অভিযোগ রয়েছে, ক্ষমতাসীন দলের নাম ভাঙ্গিয়ে দিনের পর দিন জমি দখল, বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে দোকান বসিয়ে চাঁদা উত্তোলণ করছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিমানবন্দর-দক্ষিণখান সড়কের আশকোনা রেলক্রসিং থেকে শুরু করে হজ্জ্বক্যাম্পের সামনে পর্যন্ত এলাকার ফুটপাত নিয়ন্ত্রণ করছেন ঢাকা মহানগর উত্তর জাতীয় শ্রমিকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কাশেম শেখ, তার ছেলে কাইয়ুম শেখ। বিমান বন্দর থানা পুলিশ, বিট পুলিশ কে চাঁদা দিয়ে ইজিবাইক থেকে চাঁদাবাজি করা হচ্ছে। চাঁদা না দিলে কোন ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা বিমানবন্দর রেল ক্রসিং পর্যন্ত আসতে দেয়া হয় না। আর আসলে পুলিশ সে ইজিবাইক, অটো রিকশা ধরে নিয়ে যায়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন