বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ধর্ম দর্শন

প্রশ্ন : ইসলামে দা’য়ীদের দায় ও দায়িত্ব কি?

| প্রকাশের সময় : ৬ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০২ এএম

উত্তর : তার অজ্ঞতা দু’টি অজ্ঞতাকে শামিল করে। আর যে অজ্ঞতা দুটি অজ্ঞতাকে শামিল করে তা সাধারণ অজ্ঞতার চেয়ে মারাত্মক ও ক্ষতিকর। কেননা সাধারণ অজ্ঞতা ব্যক্তিকে কথা বলা থেকে বিরত রাখে, তবে শিক্ষার মাধ্যমে এ অজ্ঞতা দূরীভূত হয়। কিন্তু জাহলে মুরাক্কাব তথা না জেনে জানার ভান করাই হচ্ছে মারাত্মক ক্ষতিকর। কেননা এ ধরনের অজ্ঞরা কখনো চুপ থাকে না, বরং না জেনেও কথা বলতে থাকে। তখন তারা আলোকিত করার চেয়ে ধ্বংসই বেশি করে।

দা’য়ীদের বিশেষ গুণ থাকা আবশ্যক।যেমন, প্রথমত: যে দিকে দাওয়াত দিবে সে ব্যাপারে শরয়ী জ্ঞান থাকতে হবে। কেননা সে হয়ত কোন কাজ ফরয ভেবে সেদিকে আহ্বান করবে কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল তা ফরয নয়। ফলে সে আল্লাহর বান্দাহর উপর অনাবশ্যকীয় জিনিসকে অত্যাবশ্যকীয় করে দিবে। আবার কখনও সে হারাম ভেবে তা থেকে বিরত থাকতে আহ্বান করবে, অথচ তা আল্লাহর দ্বীনে হারাম নয়, ফলে সে আল্লাহর হালালকৃত জিনিসকে হারাম করল।

দ্বিতীয়ত: দাওয়াতের অবস্থা সম্পর্কে দূরদর্শী হওয়া। দা’য়ী যাদেরকে দাওয়াত দিবে তাদের অবস্থা সম্পর্কে জানবে। তাদের ইলমী অবস্থা কি সে সম্পর্কে ভালভাবে জ্ঞাত হবে। তাদের তর্ক বিতর্ক করার দক্ষতা কি তাও জানবে যাতে প্রস্তুতি নিয়ে তাদের সাথে আলোচনা ও বিতর্ক করতে হবে। কেননা যখন এ ধরনের বিতর্কে লিপ্ত হবে তখন সত্যের বিজয়ের জন্য শক্তিশালী হতে হবে।সহীহ বুখারিতে বর্ণিত আছে“উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা মামলা মুকাদ্দমা নিয়ে আমার কাছে আস এবং তোমাদের একজন অপরজন অপেক্ষা অধিক বাকপটূ হয়ে যুক্তি তর্কের মাধ্যমে স্বীয় দাবী প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে। আমি কথা শুনে তার অনুকুলে রায় প্রদান করি”। এ হাদীস দ্বারা বুঝা যায় যে, বাদী মিথ্যাবাদী হলেও কখনও কখনও অন্যের চেয়ে অধিক বাকপটূ হয়ে যুক্তি তর্কের মাধ্যমে স্বীয় দাবী প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে, ফলে বিচারক তার কথা শুনে তার অনুকূলে ফয়সালা দিয়ে থাকে। তাই যাদেরকে দাওয়াত দিবে তাদের অবস্থা সম্পর্কে জানা আবশ্যক।

তৃতীয়ত: দাওয়াতের পদ্ধতি সম্পর্কে দূরদর্শী হওয়া। আল্লাহ তাআলা বলেছেন,“তুমি তোমার রবের পথে হিকমত ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে আহবান কর এবং সুন্দরতম পন্থায় তাদের সাথে বিতর্ক কর”। [সূরা: আন-নাহাল: ১২৫]

কিছু মানুষ খারাপ কাজ দেখেই তা বন্ধ করতে ঝাঁপিয়ে পড়ে, কিন্তু ভবিষ্যতে তার ও তার মত অন্যান্য হকের প্রতি দা’য়ীদের উপর কি ফলাফল বর্তাবে তা নিয়ে চিন্তা করে না।অনেকাংশে মন্দ কাজ দেখা মাত্রই তা বন্ধ করতে উঠে পড়ে লাগে এবং শেষ পর্যন্ত কিছুই করতে পারেনা। এজন্যই দা’য়ীদের উচিত কোন আন্দোলনে নামার আগে তার ফলাফল কি হবে তা খেয়াল করা ও সে বিষয়ে অনুমান করা। সে সময় হয়ত তার প্রভাব প্রতিপত্তির কারণে যা ইচ্ছা তা করল, কিন্তু পরবর্তীতে দা’য়ী ও অন্যান্যদের প্রভাবের কারণে চিরতরে কাজটি নির্বাপিত হয়ে যেতে পারে। এটা হয়ত শীঘ্রই বাস্তবায়িত হবে। এজন্যই দায়ীদেরকে হিকমত ও ধীরস্থীরতার সাথে কাজ করতে হবে। যদিও এতে কিছুটা বিলম্ব হয়, তথাপি শেষ পরিণাম হবে আল্লাহর ইচ্ছায় সুদূরপ্রসারী।
কুরআন ও সুন্নাহের সহীহ ইলমের সাহায্যে দায়ীর পাথেয় সংগ্রহ করা জরূরী। কেননা আপনার পথ জানা না থাকলে কিভাবে আল্লাহর পথে ডাকবেন? আপনি শরীয়ত সম্পর্কে কিছু জানেন না, তাহলে কিভাবে আপনি দা’য়ী ইলাল্লাহ হবেন?তাই মানুষের যদি ইলম না থাকে তবে সর্বপ্রথম তাকে শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত, তারপরে আল্লাহর পথে মানুষকে ডাকা উচিত।নচেৎ দ্বীনের দা’য়ী মূর্খতার কারণে দায়িতে রূপান্তরিত হবেন।

মহান প্রভূ দ্বীনের দায়ীদেরকে সঠিক জ্ঞান আহরণ ও তা নিজ জীবনে ধারণ পূর্বক দাওয়াত দানের তাওফিক দান করুন। আমীন।

উত্তর দিচ্ছেন : মুহাম্মদ ইয়াসিন আরাফাত ত্বোহা

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন