সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

ক্যান্সারে বছরে লক্ষাধিক মৃত্যু, বেশির ভাগই নারী

বিএসএমএমইউ’র গবেষণা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৬ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০১ এএম

বাংলাদেশের মানুষের মৃত্যুর প্রধান কারণগুলোর অন্যতম একটি হল ক্যান্সার। এক বছরে দেশে নতুন করে ক্যান্সার রোগী শনাক্ত হয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার ৭৮১ জন। তাদের মধ্যে মারা গেছেন ১ লাখ ৮ হাজার ১৩৭ জন। ক্যান্সার শনাক্ত ও মৃত্যুর হারে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যাই বেশি। গবেষণায় দেখা গেছে, আক্রান্ত প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে ৫৯ দশমিক ৫ শতাংশই নারী এবং ৪০ দশমিক ৫ শতাংশ পুরুষ। ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ৭৪ দশমিক ৮ শতাংশ প্রাপ্ত বয়স্ক এবং ২৫ দশমিক ২ শতাংশ শিশু। আবার পুরুষের তুলনায় নারীরা কম বয়সে ক্যান্সার আক্রান্তের হারও বেশি। বেশিসংখ্যক প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ফুসফুসের ক্যান্সার, লিউকোমিয়া, লিম্ফোমায় আক্রান্ত হন। অন্যদিকে প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সার, থাইরয়েড ক্যান্সার এবং জরায়ুমুখে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। অপ্রাপ্তবয়স্ক নারীদের মধ্যে অর্ধেকই ৪৯ দশমিক ৬ শতাংশ প্রজননতন্ত্রের ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। তবে ছেলে ও মেয়ে শিশুদের ক্ষেত্রে লিউকেমিয়ায় (ব্লাড ক্যান্সার) আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি।

গবেষণায় বলা হয়, নারীরা ১৫ বছর বয়স থেকে ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন এবং ৪৬ বছরের মধ্যে বেশি রোগী পাওয়া যাচ্ছে। এদিক থেকে আবার পুরুষের বেশির ভাগই ২০ বছরের পর থেকে আক্রান্ত হচ্ছেন, আর ৫০ বছর বয়সের মধ্যেই বেশি রোগী শনাক্ত হচ্ছে।
গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিকস বিভাগ আয়োজিত ‘এপিডেমিওলজি অব ক্যান্সার এ্যাট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় : এনালাইসিস অব হসপিটাল ড্যাটা’ শীর্ষক গবেষণা ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের বছরব্যাপী প্যাথলজিভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রি ও মাসব্যাপী হাসপাতাল ভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রি নিয়ে গবেষণা করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ডা. মিল্টন হলে অনুষ্ঠিত এই সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ভিসি প্রফেসর ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে সমন্বিতভাবে ক্যান্সার রেজিস্ট্রি কার্যক্রম বাস্তবায়নের আহ্বান জানান। যাতে করে দেশে সঠিকভাবে ক্যান্সার রোগীদের সংখ্যা নির্ণয় করা যায়, ক্যান্সার রোগ প্রতিরোধ ও উন্নত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে কাজে লাগানো যায়। সেমিনারে গবেষণার ফলাফল নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. খালেকুজ্জামান, সিনিয়র রিসার্চ অফিসার ডা. শেহরিন ইমদাদ রায়না।
গবেষণায় প্যাথলজিভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রিতে দেখা যায়, ডায়াগনোসিসের জন্য সংগৃহীত ২১ হাজার ১৭৫টি নমুনা গ্রহণ করা হয়। যার মধ্যে ৩ হাজার ৫৮৯টি নমুনার (১৭ শতাংশের) ক্যান্সার চিহ্নিত হয়েছে। এরমধ্যে পুরুষদের তুলনায় নারীদের মধ্যে ক্যান্সার আক্রান্তের হার বেশি। গবেষণায় দেখা গেছে, ক্যান্সার আক্রান্ত পুরুষ ৪০ দশমিক ৫ শতাংশ এবং নারী ৫৯ দশমিক ৫ শতাংশ। পূর্ণ বয়স্ক পুরুষদের মথ্যে মূত্রথলির ক্যান্সারে আক্রান্ত ১০ দশমিক ২ শতাংশ, প্রটেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত ৯ দশমিক ৯ শতাংশ এবং মুখগহ্বরের ক্যান্সারে আক্রান্ত ৮ দশমিক ৫ শতাংশ। অন্যদিকে নরীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত ২৩ দশমিক ৩ শতাংশ, জরায়ুমুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত ২১ দশমিক ৫ শতাংশ এবং মুখগহ্বর ক্যান্সারে আক্রান্ত ৮ দশমিক ৯ শতাংশ। প্রজনননতন্ত্রের ক্যান্সারে আক্রান্তের হার পুরুষের ১১ দশমিক ২ শতাংশ এবং নারীদের মধ্যে ৩১ দশমিক ৯ শতাংশ। নির্ণয়বকৃত ক্যান্সারের মধ্যে স্কোয়ামাস সেল কারসিনোমা ৩১ দশমিক ৮ শতাংশ এবং এডেনোকারসিনোমা ৩১ দশমিক ২ শতাংশ।
হাসপাতাল ভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রি নিয়ে ১৬৫৬ জনের ওপর গবেষণা পরিচালিত হয়। এদের মধ্যে পূর্ণবয়স্ক ১২৩৮ জন এবং শিশু ৪১৮ জন। এখানে পুরুষদের ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্তের হার ৯ দশমিক ৬ শতাংশ, লিউকেমিয়ায় আক্রান্তের হার ৯ দশমিক ৪ শতাংশ, লিম্ফোমায় আক্রান্তের হার ৯ শতাংশ। নারীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তর হার ২৮ দশমিক ১ শতাংশ, থাইরয়েড ক্যান্সারে আক্রান্তের হার ১৬ দশমিক ১ শতাংশ, জরায়ুমুখে ক্যান্সারে আক্রান্তর হার ১২ দশমিক ২ শতাংশ। ছেলে শিশুদের মধ্যে লিউকেমিয়ায় আক্রান্তের হার ৭১ দশমিক ৫ শতাংশ এবং লিম্ফোমায় আক্রান্তের হার ১০ দশমিক ৩ শতাংশ। কন্যাশিশুদের মধ্যে লিউকেমিয়া ৬৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং হাড়ের ক্যান্সারে আক্রান্তের হার ১১ দশমিক ৬ শতাংশ। পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর সৈয়দ শরীফুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং প্যাথলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ কামালের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (গবেষণা ও উন্নয়ন) প্রফেসর ডা. মো. জাহিদ হোসেন, কোষাধ্যক্ষ প্রফেসরডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উপদেষ্টা প্রফেসর ডা. এম মোস্তফা জামান, স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. মীরজাদি সাবরিনা ফ্লোরা প্রমুখ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন