বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

যেনতেনভাবে ক্ষমতায় যাওয়ার লোভ কখনো করিনি

ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৬ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০০ এএম

সংগঠনকে শক্তিশালী করতে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছাত্রলীগের ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে আয়োজিত আলোচনা সভায় ভাচুয়ালি অংশ নিয়ে তিনি এ আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, আমি যদি আওয়ামী লীগের ইতিহাস দেখি, একটা জিনিস সব সময় লক্ষ্য করেছি দলের তৃণমূল নেতা-কর্মীরা কখনো ভুল করে না। উপরের কিছু নেতারা বিভ্রান্ত হন বা ক্ষমতার লোভে পড়ে যান। ৬৬ সালের ৬ দফা দেওয়ার পরেও আমি দেখেছি, দায়িত্ব নেওয়ার পরেও দেখেছি। বারবার অনেক আঘাত এসেছে, পার্টিও ভেঙেছে। আবার পার্টি গড়তে হয়েছে।

ছাত্রলীগকে বলবো, সংগঠনটা গড়তে হবে। সংগঠনেই থাকে শক্তি। আমি ৮১ সালে এসে সেটাই হাতে নিয়েছিলাম। প্রত্যেকটা সহযোগী সংগঠনকে গড়ে তোলা। আর নিজের দলটা আগে গড়ে তোলা। ক্ষমতায় যাওয়া তখনই, যখন আমি মনে করবো আমি আমার দেশের মানুষের জন্য কাজ করার শক্তি নিয়ে ক্ষমতায় যেতে পারছি। তার আগে যেনতেনভাবে ক্ষমতায় যাওয়ার সে লোভ আমি কখনো করিনি, করবোও না। আমার একটাই লক্ষ্য ছিল, আমার ক্ষমতা চাই দেশের মানুষের কাজ করার। সেভাবেই ক্ষমতায় আসতে সক্ষম হয়েছি এবং কাজও করেছি—বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, ৯৬ সালে আমাদের স্বাক্ষরতার হার ছিল ৪৫ ভাগ। আমি ছাত্রলীগের হাতে কাগজ-কলম তুলে দিয়েছিলাম, নির্দেশ দিয়েছিলাম যখন ছুটিতে বাড়ি যাবে ছাত্রলীগের ছেলেরা অন্তত ৫ জনকে স্বাক্ষরতার শিক্ষা দেবে। তখনকার ছাত্রলীগের নেতারা সে কথা মেনেছে। তখন চ্যালেঞ্জের সময় ছিল কারণ খালেদা জিয়া ধমক দিয়েছিল, ছাত্রদলের অস্ত্রই নাকি যথেষ্ট আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে। সে দিয়েছিল অস্ত্র-বোমা-গুলি। জিয়া থেকে শুরু এরশাদ-খালেদা তাই করেছে আর আমরা দিয়েছি কাগজ-কলম।

শেখ হাসিনা বলেন, ছাত্রলীগের যে মূলনীতি শিক্ষা, শান্তি, প্রগতি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া এই মূলনীতি। আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পরে প্রথমে আমার দায়িত্ব ছিল মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো, গবেষণা করা। আমরা সেটা সফলভাবে করতে পেরেছি। সাধারণ মানুষ, দরিদ্র মানুষের ঘরে পৌঁছে দেওয়া। একটি মানুষও না খেয়ে কষ্ট পাবে না সে ব্যবস্থাটা আমরা করে দিয়েছি। বঙ্গবন্ধু শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন। আমরাও শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়েছি। ছাত্রলীগের মূলনীতি মেনে সবাইকে পড়াশোনা করতে হবে।

যুব সমাজের প্রতি উদ্যোক্তা হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, একজন শিক্ষিত ছেলে বেকার থাকতে পারে না। যুব সমাজ-তরুণ প্রজন্ম তাদেরও আমরা বিভিন্নভাবে উৎসাহ দিচ্ছি, নিজে চাকরির পেছনে ঘুরে না বেড়িয়ে নিজেদের উদ্যোক্তা হতে হবে। চাকরি দেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। তার জন্য যা যা সুযোগ আমরা সৃষ্টি করে দিয়েছি। আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ। প্রযুক্তির এই যুগে প্রত্যেককে শিক্ষাগ্রহণ করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছাত্রলীগের মূল মন্ত্রেই আছে শিক্ষা। কাজে প্রত্যেকটা ছাত্রলীগ কর্মীকে আগে প্রকৃত শিক্ষাগ্রহণ করতে হবে। এই শিক্ষা সেই শিক্ষা না, কোনো মতে খালি পয়সা বানানোর শিক্ষা, না। শিক্ষাটা অন্তর থেকে অনুধাবন করেই শিখতে হবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। ছাত্রলীগের আরেকটি মূলমন্ত্র হচ্ছে শান্তি। জাতির পিতা আমাদের শিখিয়েছেন, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব কারো সঙ্গে বৈরীতা না। আমরা সেই নীতি মেনে চলছি। ছাত্রলীগকেও সেটা মনে রাখতে হবে। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি এসব কিছুর বিরুদ্ধে থাকতে হবে। করোনা একটা শিক্ষা দিয়ে গেছে মানুষকে, অর্থ-সম্পদ কোনো কিছুই কাজে লাগে না। কাজে অহেতুক অর্থের পিছে না ছুটে মানুষের জন্য কাজ করা একজন রাজনৈতিক নেতার কাজ। সেটাই মাথায় রাখতে হবে। জাতির পিতা আত্মত্যাগ করে গেছেন দেশের মানুষের জন্য, শান্তির জন্য। দেশের মানুষের উন্নয়নের জন্য। ছাত্রলীগের প্রত্যেকটা নেতা-কর্মীকে এই নীতিটা মেনে চলতে হবে। আমাদের কোনো ছাত্র কখনো যেন বিভ্রান্ত না হয়। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদে যুক্ত না হয়, দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত না হয়।

তিনি বলেন, ছাত্রলীগের আরেকটি মূলমন্ত্র হলো প্রগতি। প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার পথটা উন্মুক্ত করে দেওয়া সেটাই আমাদের লক্ষ্য আর সেই লক্ষ্যটাই আমরা স্থির করেছি। কাজে আমাদের ছাত্রলীগকে সেভাবে তৈরি করতে হবে। আমাদের উন্নয়নের লক্ষ্য যেনতেনভাবে না। আমাদের উন্নয়ন হবে স্থায়ী উন্নয়ন। সেটা একেবারে গ্রামের তৃণমূল থেকে। মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে আমরা লক্ষ্য স্থির করেছি, একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না। আমরা সারা বাংলাদেশে গৃহহীন মানুষের তালিকা করে ঘর করে দিচ্ছি যেটা জাতির পিতা শুরু করেছিলেন স্বাধীনতার পরপর। আমি ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীকে বলবো, ছুটিতে বাড়িতে গেলে খুঁজে বের করবে, কোনো মানুষ ভূমিহীন আছে কি না। একটি মানুষ ঠিকানাবিহীন থাকবে না, ভূমিহীন থাকবে না। প্রত্যেকটা ঘরে আমরা বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছে। প্রত্যেকটা ভূমিহীন মানুষকে যদি ঘর করে দিই, এই বাংলাদেশ দরিদ্র থাকবে না। হতদরিদ্র বলে তো কেউ থাকবেই না, দরিদ্রও থাকবে না।


সমালোচকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যারা একদিন বাংলাদেশে স্বাধীনতা নিয়ে ব্যঙ্গ করেছিল, তাদের থেকে বাংলাদেশে ১ শতাংশ হলেও আমি দারিদ্র্যতার হার কমাবো। এটাই আমার লক্ষ্য। আমি দেখাতে চাই, আমরা পারি। চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র আমি মাথায় রাখি না। সারা জীবনই দেখেছি এগুলো হবে। একটা আদর্শ নিয়ে চলতে গেলে, একটি লক্ষ্য নিয়ে চললে, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে গেলে যারা উপরে থেকে বেশি বেশি খায়, বেশি বেশি পায় তাদের তো একটু দুঃখ থাকেই। তারা ভাবে আমাদের বোধ হয় জায়গা হবে না। সেই জন্য ষড়যন্ত্র করতেই থাকে। কিছু লোকের তো লক্ষ্যই থাকে, পতাকা পেতে হবে, ক্ষমতায় যেতে হবে। এই ধরনের যাদের আকাঙ্ক্ষা বেশি, দেশের মানুষের ভাগ্যের কথা চিন্তা করে না। নীতি-আদর্শ নিয়ে চললে, সৎ পথে চললে যে কোনো বাধা অতিক্রম করা যায়। সেটা প্রমাণ করেছি আমরা।

নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ছাত্রলীগ দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করে যাচ্ছে। এই সংগঠন কোনো হঠাৎ করে উর্দি পরে এসে ‘আমি আজকে প্রেসিডেন্ট হলাম’, ওই চেয়ারে বসে তারপর দল গঠন করে রাজনীতিতে অবতরণ করা সেই দল কিন্তু না। ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে সৃষ্ট দল ছাত্রলীগও না, আওয়ামী লীগও না।

ছাত্রনেতাদের সতর্ক করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খেয়াল রাখবা কোনো লোভের বশবর্তী হয়ে পা পিছলে পড়ে যেও না যেন। নিজেকে শক্ত করে সততার পথে এগিয়ে যাবে, জাতির পিতার আদর্শ নিয়ে কাজ করবে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় কাজ করবে সেভাবেই নেতৃত্ব গড়ে উঠবে।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর র‌্যালি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কাল খুব ভালো র‌্যালি হয়েছে। চমৎকার র‌্যালি করেছো তোমরা। একটু খুঁত আছে, কারো মুখে মাস্ক ছিল না। আমি ভালো করে ছবিগুলো খুঁজে খুঁজে দেখেছি, মাস্ক কেউ পরোনি। এখনো অনেকে বসে আছো মাস্ক ছাড়া। নতুন ভ্যারিয়েন্ট যেটা আছে এটা কিন্তু আরও মারাত্মক। যখনই পাবলিক গ্যাদারিংয়ে যাবা সবাই মাস্ক পরে থাকতে হবে। অন্যরা যেন পরে সে ব্যবস্থা নিতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (4)
Md Jahed Hussain ৬ জানুয়ারি, ২০২২, ৪:৩০ এএম says : 1
গৌরব, ঐতিহ্য, সংগ্রাম ও সাফল্যের সারথি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
Total Reply(0)
MD Sobuj Hossain ৬ জানুয়ারি, ২০২২, ৪:৩০ এএম says : 1
শুভ শুভ শুভদিন ছাত্রলীগের জন্মদিন। শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী ও স্বাধীনতার স্থপতি মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু।
Total Reply(0)
Nityananda Mondal ৬ জানুয়ারি, ২০২২, ৪:৩০ এএম says : 1
শেখ হাসিনার হাতে দেশ পথ হারাবে না বাংলাদেশ।
Total Reply(0)
Anwar Hossain ৬ জানুয়ারি, ২০২২, ৪:৩১ এএম says : 1
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও প্রিয় নেত্রী আপনার মতন নেত্রী পেয়েছি বলে আজ আমরা বিশ্বের দরবারে মাতা উচ্চ করে দারাতে পেরেছি,, আপনি আমাদের আদর্শিক,, আপনার নেতৃত্বের কারণে আজ বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিশ্বের দরবারে স্থান করে নিয়েছে বাংলাদেশ,, জয় বাংলা জয় বঙ্গ বন্ধু
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন