ঢাকার বায়ুদূষণ আবার বাড়ছে। প্রতিদিনই এ রাজধানী শহরের বায়ুমান অস্বাস্থ্যকর হচ্ছে। বছরের শুরুতে বিশ্বের ১০০টি প্রধান শহরের মধ্যে বায়ুদূষণের দিক থেকে ঢাকা ছিল শীর্ষে। বিশ্বের বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইকিউ এয়ারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গতকাল বায়ুমান ২০৭ পিপিএম নিয়ে দূষণের তালিকায় শীর্ষস্থানে ঢাকার সঙ্গে ছিল পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতা। বায়ুমান ২০০ পিপিএম নিয়ে আফগানিস্তানের কাবুল দ্বিতীয়, ১৯৬ পিপিএম নিয়ে পাকিস্তানের লাহোর তৃতীয়, ভারতে দিল্লি ১৭৮ পিপিএম নিয়ে চতুর্থ স্থানে ছিল। তাপমাত্রা কমার সাথে সাথে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার আবহাওয়া শুষ্ক হয়ে উঠেছে। এ ছাড়া চালু হচ্ছে ইটভাটা এবং শীত মৌসুমের শুরু থেকে পুরোদমে শুরু চলছে নির্মাণকাজ। এসব কারণে ঢাকার বায়ুর মান প্রায় প্রতিদিনই খারাপ হচ্ছে।
গত বুধ ও বৃহস্পতি এ দু’দিনই ঢাকার বাতাসের মান ছিল খুব অস্বাস্থ্যকর। এই দুই দিন রাজধানীতে যথাক্রমে বায়ুর মানের সূচক ছিল ১৯৬ ও ২০৬। গতকালও বায়ুমান ২০৭ পিপিএম নিয়ে ঢাকার বাতাস ছিল ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাতাসে প্রতি ঘনমিটারে ২.৫ মাইক্রোমিটার ব্যাসের বস্তুকণার পরিমাণ (পিপিএম) যদি শূন্য থেকে ৫০ এর মধ্যে থাকে, তাহলে ওই বাতাসকে বায়ু মানের সূচকে (একিউআই) ‘ভালো’ বলা যায়। এই মাত্রা ৫১-১০০ হলে বাতাসকে ‘মধ্যম’ মানের এবং ১০১-১৫০ হলে ‘বিপদসীমায়’ আছে বলে ধরে নেওয়া হয়। আর পিপিএম ১৫১-২০০ হলে বাতাসকে ‘অস্বাস্থ্যকর’, ২০১-৩০০ হলে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ এবং ৩০১-৫০০ হলে ‘অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর’ বলা হয়। বায়ু দূষণের দিক থেকে বিশ্বে সবচেয়ে উপরের দিকে থাকা ভারতের রাজধানী দিল্লিতে গত বছরের ১৭ নভেম্বর বায়ু মান ছিল ৩৮৯। প্রবল দূষণের কারণে তখন সেখানকার রাজ্যকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছিল।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) ঢাকা শহরের ৭০টি স্থানের বায়ু দূষণের এই সমীক্ষা চালিয়েছে। রাজধানীর পুরান ঢাকার আশেপাশের এলাকায় দূষণ সবচেয়ে বেশি বলে সমীক্ষায় উঠে এসেছে। আবাসিক এলাকা ধানমণ্ডি, গুলশান, বাড্ডা ও বনানীতে দূষণের মাত্রা বেড়েছে ‘আশঙ্কাজনকভাবে’।
পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ঢাকার বাতাসে অতি সূক্ষ্ণ বস্তুকণা ২.৫ এর পরিমাণ তুলনামূলকভাবে বেশি। এটি সাধারণ জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো অর্থাৎ যানবাহন, শিল্পকারখানা ও বর্জ্য পোড়ানো থেকে সৃষ্টি হয়। তবে নির্মাণকাজ হতে সৃষ্ট ধুলাবালি রাস্তার গাড়ির চাকার সাথে সংঘর্ষের ফলে অতিক্ষুদ্র ধূলিকণায় রূপান্তরিত হতে পারে। গবেষকেরা বলছেন, ঢাকার এমন বায়ু স্বাস্থ্যের ওপর নানাভাবে প্রভাব ফেলছে। ফুসফুসের নানা রোগ, নিউমোনিয়া, অ্যাজমা, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন জটিলতায় পড়ছে ঢাকাবাসী। জাতিসংঘের তথ্যমতে, বিশ্বব্যাপী প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৯ জন দূষিত বাতাসে শ্বাস নেন এবং বায়ু দূষণের কারণে প্রতি বছর প্রধানত নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যু ঘটে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন