পিচ খুটাখুটি করা, শরীরের নড়াচড়া, পরস্পরের সাথে কথাবার্তা, কিছু কুসংস্কারাচ্ছন্ন আচরণ, বিশেষ কিছু কল্পনাÑ নানা উপায়ে ব্যাটসম্যানরা তাদের কঠিন চাপের মুহূর্তগুলো সামলানোর চেষ্টা করে। তবে অন্য যে কোন খেলায় খেলোয়াড়দের চেয়ে একজন ক্রিকেট ব্যাটসম্যানকে যেতে হয় কল্পনাতীত কঠিন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে। ইএসপিএন ক্রিকইনফো অবলম্বনে তেমনি কিছু বিষয় নিয়ে আজকের গল্পÑ ইমামুল হাবীব বাপ্পি।
খেলার সাথে সম্পৃক্ত সব ধরনের খেলোয়াড়ই মনে করেন যে, নিয়মানুবর্তিতাই তাদের প্রধান মানসিক চ্যালেঞ্চ যার ভিত্তিতেই আসে সফলতা অথবা ব্যর্থতা। কিন্তু একজন ব্যাটসম্যানের চ্যালেঞ্চটা এর চেয়েও কঠিন। অন্য কোন খেলায় কি এমন তীব্র একাগ্রতা আছে? যেখানে একজন খেলোয়াড়ের ভুল দলের সতীর্থরা খুব সামান্যই পুষিয়ে দিতে পারেন। ছোট্ট একটা ভুলের মাশুল অনেক সময় দিতে হয় অভাবনীয় মূল্যে।
ব্যাটিং হল জীবন আর মৃত্যুর মত একটা খেলা। এখানে সফল হল- একটা সেঞ্চুরি, ম্যাচ বাঁচানো অসাধারণ একটা ইনিংস। যা আপনাকে বাঁচিয়ে রাখবে আজীবন। কিন্তু যদি ব্যর্থ হন? সেক্ষেত্রে আপনি কিন্তু শুধু মাঠের লড়াইয়েই হেরে যাবেন না। এর অর্থ আপনি হার মানছেন আপনার আশাপ্রদ স্বপ্নের কাছে এবং দায়মুক্তির কাছে। আউট হওয়া একজন ব্যাটসম্যানের অভিজ্ঞতা হল তাদের নিজের আন্ত্যোস্টিক্রিয়ায় শোক পালনের মত। ড্রেসিংরুম তখন থাকে নীরব। দ্য আর্ট অব ক্যাপ্টেন্সি’র (১৯৮৫) লেখক সাবেক ইংল্যান্ড অধিনায়ক মাইক ব্রেয়ারলির মতে ‘মৃতের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই’ সেসময় ড্রেসিংরুম নিস্তব্ধ থাকে।
‘এখানে ভুল করার কোন সুযোগই আপনি পাবেন না। তাহলেই সব শেষ। দিনের বাকি সময়টা আপনাকে সেক্ষেত্রে আপনাকে বেঞ্চে বসেই কাটিয়ে দিতে হবে,’ বলেন ইংল্যান্ড কিকেটে দীর্ঘ ১৭ বছর খেলাধুলা বিষয়ক সাইকোলজিস্ট হিসেবে কাজ করা স্টিভ বুল। তিনি বলেন, ‘এটা বিশেষ ধরনের এক চাপ তৈরী করে যা অন্য কোন অ্যাথলেটদের আমি এটা হতে দেখিনি।’ তীব্র মানসিক নাটকের মধ্য দিয়েই একজন ব্যাটসম্যানকে যেতে হয়। নিজের সাথে যুদ্ধ করতে হয় বোলারকে মোকাবেলা করার আগে। নিজের ভেতরে আত্মবিশ্বাসের একটু কমতি দেখা দিলে, নেতিবাচক কিছু ভাবলে অথবা ব্যর্থ হলে কি পরিণতি হবে এমন ভাবনা মনে এলই সব শেষ। পারফেক্ট টেকনিকের কাছাকাছি দক্ষতা অর্জনকারী শীর্ষ সারির ব্যাটসম্যানরাও এমন দশা থেকে নিজেদের রক্ষা করার যুদ্ধ চালিয়ে যান। এই নিয়মগুলো তাদের উদ্বেগকে দমিয়ে রাখে, সবসময় ইতিবাচক থাকতে সহায়তা করে এবং খেয়ালী হতে শেখায়। ভাবনার এই বৈশম্য ক্রিকেটের উপর ব্যপক প্রভাব ফেলে।
গত গ্রীষ্মে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ইংল্যান্ডের তিন ম্যাচ টেস্ট সিরিজের দিকে তাকালেই আপনি উদাহরণটা দেখতে পাবেন। প্রত্যেকটা বলের আগে লঙ্কান ওপেনার কুসল সিলভা নতুনভাবে নিজেকে প্রস্তুত করেছে। সাইকোলজিস্টরা যাকে বলেন ‘প্রি-পারফর্মেন্স রুটিন’। গ্লাভসের ভেলক্রোটা তিনি ঠিক করে নেন, ব্যাটটা বাঁ হাত থেকে ডান হাতে নিয়ে কিছুসময় ধরে রাখেন নিজের সামনে। ডান কনুইটা সামনে এবং পিছনে নাড়ান আট বার (স্পিন বল মোকাবেলার আগে কিছু বেশি সময়) ঠিক যেন কল্পনায় দড়ি টানছেন। এরপর তিনি দুই হাতে ব্যাটটা তালুবন্দি করেন নিজেকে ক্রিজে সেট করেন।
এটা দেখতে অনেকসময় বাতিকগ্রস্ত মনে হতে পারে। কিন্তু এভাবেই তিনি নিজের ভাবনাকে স্থির রাখেন। তিনি বলেন, ‘আমি আসলে জানি না ঠিক কতবার আমি এটা করি, এটা আমার শরীর থেকে আপনাই চলে আসে। যতক্ষণ না আমি নিজেকে শান্ত করতে পারি ততক্ষণ এটা চালিয়ে যায়। এই ক্ষুদ্র বিষয়গুলো পরবর্তি বল মোকাবেলায় আমাকে সাহায্য করে। আমি যখন নার্ভাস থাকি তখন কথা বলতে থাকি। এটা আমার মনোযোগ বাড়াতে সহায়তা করে। বিষয়টা আমার সাথে যারা খেলেছে সবাইকে উত্তক্ত করে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন