বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

টিকে থাকার লড়াই

সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমছে

মো. জাহিদুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ৮ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০১ এএম

দরবৃদ্ধির প্রতিযোগিতায় চাল-ডাল-আটা
চোখ রাঙাচ্ছে ভোজ্যতেল
কিছুটা কমেছে মুরগির দাম
আগে থেকেই বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছিল চাল ও মসুর ডাল। সেখান থেকে এখন দাম বাড়ল আরেক দফা। এই দুঃসংবাদের মধ্যে চোখ রাঙাচ্ছে ভোজ্যতেল। সদ্য বিদায়ী বছরে এই নিত্যপণ্যটির দাম কয়েকবার বাড়ার পর আরেক দফা বাড়ানোর আলোচনা চলছে। অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির পর গেল সপ্তাহে রাজধানীর বাজারগুলোতে মুরগির দাম কিছুটা কমেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে কমেছে ১৫ টাকা। আর পাকিস্তানি কক বা সোনালী মুরগি দাম কেজিতে কমেছে ৬০ টাকা পর্যন্ত। সপ্তাহের ব্যবধানে মুরগির দাম কমলেও অপরিবর্তিত রয়েছে বেশিরভাগ সবজির দাম। তবে বাজারে সব ধরনের শীতের সবজি ভরপুর রয়েছে। এর সঙ্গে অপরিবর্তিত রয়েছে পেঁয়াজ ও আলুর দাম। মাছের দামে তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। আটাসহ আরও কয়েকটি পণ্যের দামও বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। ফলে প্রতিনিয়ত টিকে থাকার লড়াই করতে হচ্ছে তাদের।
সরেজমিনে রাজধানীর কারওয়ান বাজার ও তেজগাঁওয়ের কলোনিবাজারসহ কয়েকটি খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে চালের কেজিতে তিন থেকে পাঁচ টাকা দাম বেড়েছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা প্রতি কেজি নাজিরশাইল চাল বিক্রি করছেন ৬৫ থেকে ৭৫ টাকায়। আট-দশ দিন আগেও এটা বিক্রি হয়েছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়। মিনিকেট চালের কেজিতে চার থেকে পাঁচ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬২ থেকে ৬৫ টাকা। এটা এত দিন পাওয়া যেত ৫৬ থেকে ৬০ টাকায়। এ ছাড়া স্বর্ণা ও বিআর-২৮ জাতীয় চালের (মোট চাল) দামও বেড়েছে তিন থেকে চার টাকা পর্যন্ত। এই মানের চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫২ টাকা কেজি দরে। যদিও চাহিদার শীর্ষে থাকা এই চাল এত দিন কেনা যেত ৪৫ থেকে ৪৮ টাকায়।
দুই-তিন মাস আগে ২০ টাকা বেড়েছিল মসুর ডালের দাম। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে আরও ১০ টাকা বেড়েছে এই পণ্যটির দাম। আমদানি করা মসুর ডালের কেজি এত দিন ৮৫ থেকে ৯০ টাকায় পাওয়া গেলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ৯৫ থেকে ১০০ টাকায়। আর দেশি মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১১৫ টাকা। এটা এত দিন বিক্রি হয়েছে ১০০ থেকে ১০৫ টাকায়। বড় ব্যবসায়ীরা আমদানি করা ডালের দাম বাড়ানোর কারণে দেশি ডালের দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন কয়েকজন খুচরা বিক্রেতা।
এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি করছেন ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৯৫ থেকে ২০০ টাকা। আর গত সপ্তাহে ৩০০ থেকে ৩৪০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া সোনালী মুরগির দাম কমে ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
মুরগির দাম বাড়লেও সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিবর্তিত রয়েছে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম। গত সপ্তাহের মতো ফার্মের মুরগির ডিমের ডজন ১০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। একইসঙ্গে অপরিবর্তিত রয়েছে পেঁয়াজের দাম। গত সপ্তাহের মতো নতুন দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা।
এদিকে সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা ফুলকপির পিস বিক্রি করছেন ৩০ থেকে ৫০ টাকা। বিচি ছাড়া শিমের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। বিচি শিম বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে এ সবজিগুলোর দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। একইসঙ্গে অপরিবর্তিত রয়েছে আলুর দাম। গত সপ্তাহের মতো নতুন আলুর কেজি ২০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
দাম অপরিবর্তিত থাকার তালিকায় রয়েছে পাকা টমেটো। গত সপ্তাহের মতো পাকা টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকা। তবে গাজরের দাম কেজিতে ১০ টাকা কমে কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা।
এছাড়া বরবটির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকা। মুলার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, শালগমের (ওল কপি) কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, লালশাকের আঁটি ১০ থেকে ১৫ টাকা, মুলাশাকের আঁটি ১০ থেকে ১৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আর পালংশাকের আঁটি বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। এগুলোর দামও সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিবর্তিত রয়েছে।
মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রুই মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা। একই দামে বিক্রি হচ্ছে কাতল মাছ। শিং ও টাকি মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা। শোল মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৬৫০ টাকা। তেলাপিয়া ও পাঙাস মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা।
এক কেজি ওজনের ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকা। ছোট ইলিশ মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। নলা মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ২০০ টাকা কেজি। চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা কেজি।
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের নিয়মিত দরবৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে সাধারণ ক্রেতারা সরকারের বাজারে নজরদারির অভাবকেই দায়ী করছেন। তারা বলেন, বাজারে সরকারের আসলে কোন নজরদারি নেই। যে কারণে যখন যার ইচ্ছা হচ্ছে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। এই দেখেন ব্যবসায়ীরা সয়াবিন তেলের দাম আবার লিটারে ৮ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন। অথচ গতকাল বিভিন্ন অনলাইনে দেখলাম ১০ বছরেও দাম নির্ধারণের পদ্ধতিটি রিভিউ করা হয়নি। এতেই বোঝা যায় সবকিছু কেমন খামখেয়ালিভাবে চলছে।

 

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন