পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেছেন, চাল ছাঁটাই করে আকর্ষণীয় করে মিল মালিকরা প্রতারণা করছে। চাল পলিশিং করে মিলগুলো চালকে চিকন করে। এতে চাল ছাঁটাই করতে হয়। ফলে অনেক পুষ্টিগুন চাল থেকে চলে যায়। একটি অগ্রসরমান অর্থনীতিতে এমন প্রতারণা মানা যায় না। এটা আইন করে বন্ধ করা উচিত। কোন জাতের চাল এ বিষয়টি গুরুত্ব না দিয়ে মিল গুলো নিজেদের মতো ব্রান্ড দাঁড় করিয়ে ভোক্তাদের সঙ্গে প্রতারণা করছে।
গতকাল বণিক বার্তা আয়োজিত ‘বায়োফর্টিফায়েড জিঙ্কসমৃদ্ধ ব্রি ধানের বাজার সম্প্রসারণ ও জনপ্রিয়করণ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সাবেক কৃষি সচিব ও কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. নাসিরুজ্জামান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন গেইন বাংলাদেশ এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. রুদাবা খন্দকার, সঞ্চালনায় ছিলেন বণিক বার্তা সম্পাদক ও প্রকাশক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন বিজনেস ইন্টেলিজেন্স এর প্রধান নির্বাহি শাকিব কোরেশী। বণিক বার্তার এ আয়োজনে সহযোগিতায় ছিলো গেইন বাংলাদেশ, হারভেস্ট প্লাস ও বিজনেস ইন্টেলিজেন্স।
ড. শামসুল আলম বলেন, পুষ্টির ঘাটতি রোধে সরকারের বড় বড় পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হচ্ছে। শুধু চালের মাধ্যমে জিঙ্ক সরবারহ করা যাবে এমন নয়। তবে যেহেতু দেশের মানুষের প্রধান খাদ্য চাল সেহেতু চালের মাধ্যমেই জিঙ্ক সরবারহ করা সহজ। চালের মাধ্যমে এ উপাদানের সরবারহ যথাযথ। আইন করে যেমন লবনে আয়োডিন এবং তেলে ভিটামিন থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে তেমনি চালের ক্ষেত্রেও আইন করা দরকার। কেউ প্রতারণা করে চালের যেমন ইচ্ছা তেমন রুপ দেবে এমনটি হতে পারে না।
সাবেক কৃষি সচিব ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. নাসিরুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশ থেকে ভূটানসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ জিঙ্গ সমৃদ্ধ চাল নিতে চায়। কিন্তু আমরা সেটি দিতে পারছি না। তাই ধানের জাত উদ্ভাবনের পর জনপ্রিয়করণ করতে ১৫-১৬ বছর সময় লাগে সেটি কমিয়ে আনতে হবে। আবার ধানের নাম সংখ্যাগতভাবে না দিয়ে অন্য কোন ভাবে দিয়ে জনপ্রিয় করা য়ায় কিনা সেটি ভাবতে হবে। বিশেষ করে ব্রি ধান ৭৪ ও ৮৪ জাত অধিক পুষ্টি সমৃদ্ধ। এই জাত জিঙ্গ চাল নামে জনপ্রিয় করা যায় কিনা দেখা যেতে পারে। কোন কৃষক যদি পুষ্টি সমৃদ্ধ ধানের আবাদ করতে চায় তাহলে বিনা জামানতে কৃষক ঋণ পাবে। ৬০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত এই ঋণ কৃষকরা পাবেন বলে কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষনা দেন তিনি।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর বলেন, দেশের সব ধানের জাতেই কম বেশি জিঙ্ক রয়েছে। তবে ব্রি ধান ৭৪ এবং ব্রি ধান ৮৪ জাত দুটি জনপ্রিয় করা সম্ভব হলে দেশের মানুষের জিঙ্ক এর ঘাটতি অনেকাংশেই পূরণ করা সম্ভব। এজন্য একটি একশ্যন প্লান ও সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে অগ্রসর হতে হবে।
গতকালের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সাবেক কৃষি সচিব আনোয়ার ফারুক বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের প্রফেসর ড. নাজমা শাহীন, হারভেস্ট প্লাস এর কান্ট্রি ম্যানেজার ড. খায়রুল বাশার। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আব্দুল্লাহ সাজ্জাদ, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ, বাংলাদেশ ফলিত পুষ্টি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট এর নির্বাহী পরিচালক মো. আব্দুল ওয়াদুদ, খাদ্য অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক এ কে এম নুরুল আফসার, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) সাবেক মহাপরিচালক ড. আবুল কালাম আযাদ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, নাবিল গ্রুপের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা অনুপ কুমার সাহা, প্রাণ গ্রুপের বঙ্গ মিলারস লিমিটেড নির্বাহি পরিচালক নাসের আহমেদ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন