ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে মানুষ চেষ্টা করেছে সাগর, নদী আর হ্রদে শুকনো স্থলভূমি তৈরি করার, যেখানে গিয়ে তারা বসবাস করতে পারবে। কিন্তু একবিংশ শতাব্দীতে মানুষের এই চেষ্টা যেন অতীতের সবকিছু ছাড়িয়ে গেছে। নতুন কৃত্রিম স্থলভূমি তৈরির জন্য মানুষের যে আকাঙ্ক্ষা, তার মধ্যে যেন এখন একটা ঔদ্ধত্যের ছোঁয়া লেগেছে।
যুক্তরাজ্যের নিউক্যাসেল ইউনিভার্সিটির সোশ্যাল জিওগ্রাফার অ্যালেস্টেয়ার বনেটের মতে, আমরা এখন 'দ্বীপ যুগে' বাস করছি। "এখন যে সংখ্যায় এবং যেরকম বিশাল আকারে কৃত্রিম দ্বীপ তৈরি করা হচ্ছে, সেটি আমরা আগে কখনো দেখিনি", বলছেন তিনি। অ্যালেস্টেয়ার বনেট তার বই 'এলসহোয়ার: এ জার্নি ইনটু আওয়ার এইজ অব আইল্যান্ডস' বইতে এ প্রসঙ্গে লিখেছেন, "আমাদের পূর্বপুরুষরা যেসব দ্বীপ তৈরি করেছেন, তার তুলনায় নতুন প্রজন্মের এসব দ্বীপ অনেক বেশি দুঃসাহসিক, অনেক বিশাল- আর সেই সঙ্গে অনেক ক্ষতিকরও বটে।"
বিশ্বের নানা দেশে মানুষ যেসব কৃত্রিম দ্বীপ তৈরি করেছে, সেগুলো ঘুরে দেখেছেন এই ভূগোলবিদ। এগুলো নির্মাণ করতে যে বিচিত্র ধরনের কৌশল ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলো নিয়ে গবেষণা করেছেন তিনি। সাগরের মধ্যে লাখ লাখ টন কংক্রিট ঢেলে তৈরি করা হয়েছে বিশাল দ্বীপপুঞ্জ। সামরিক এবং রাজনৈতিক ক্ষমতা সংহত করতে কংক্রিটের ঢালাই দিয়ে সাগরের মাঝে দ্বীপ-গুচ্ছ দিয়ে ঘিরে তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম হ্রদ। আর সাগরের বুকে স্থাপন করা তেল কূপ স্থাপনাগুলো শত শত মিটার নীচে সাগরতল পর্যন্ত পৌঁছে গেছে জ্বালানির জন্য।
কিছু কৃত্রিম দ্বীপ তৈরির ক্ষেত্রে যদিও প্রকৃতি সাহায্য করেছে, তাতে সময় লেগেছে অনেক দীর্ঘ। মানুষের তৈরি দ্বীপগুলোর চারপাশের পানিতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রাণী-বৈচিত্র্য খুবই কম। অ্যালেস্টেয়ার বনেট লিখেছেন, "কৃত্রিম দ্বীপগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একেবারে প্রাণহীন মৃত এলাকা। এসব এলাকায় প্রাণ ফিরিয়ে আনা খুব কঠিন কাজ।" "দক্ষিণ চীন সমুদ্রের মতো জায়গায় যেসব আদিম এবং মানব-বর্জিত দ্বীপপুঞ্জ ছিল, সেগুলো কংক্রিটের ঢালাই দিয়ে চতুর্ভুজাকৃতির দ্বীপ তৈরি করে রীতিমত বিকৃত করে ফেলা হয়েছে।"
কীভাবে এসব কৃত্রিম দ্বীপ তৈরি করা হয়েছে, এগুলো তৈরির পেছনের উদ্দেশ্য আসলে কী- সেটা জানতেই আলেস্টেয়ার বনেট কৃত্রিম দ্বীপ নিয়ে গবেষণায় আগ্রহী হন। এগুলো আপনি পছন্দ করুন কিম্বা না করুন- ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে এসব দ্বীপ আমাদের কালের গল্প তুলে ধরবে, তাদের জানাবে আসলে আমাদের অ্যানথ্রোপোসিন যুগের শুরুতে মানবজাতি নিজেদের কী বলে ভাবতো। সূত্র: বিবিসি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন