শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

তথ্য গোপন করে চাকরি পদোন্নতি

এক চিকিৎসকের প্রতারণা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১২ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০২ এএম

গত ১০ বছর ধরে রাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছেন একজন চিকিৎসক। তথ্য গোপন করে তিনি করে যাচ্ছেন সরকারি চাকরি, নিয়মিত তুলছেন বেতন-ভাতা। এমনকি গ্রহণ করেছেন সব ধরনের সুযোগ সুবিধা, একর পর এক পদোন্নতি। সম্প্রতি বিষয়টি সরকারের নজরে আসলে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই চিকিৎসকের নাম ডা. ফতেমা দোজা। তিনি বর্তমানে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে সহযোগী অধ্যাপক হিসাবে কর্মরত। গত ২ জানুয়ারি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছে এ সংক্রান্ত তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন করে বিষয়টি তদন্তের আবেদন করেন আরেক চিকিৎসক। বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মিনা মাসুদ উজ্জামানের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গত সোমবার তার শুনানির দিন ধার্য ছিল। তবে শুনানীর বিষয়ে সুস্পষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।

আবেদনে বলা হয়, ডা. ফাতেমা দোজা গত ২০১২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে রেডিওলজি এন্ড ইমেজিং বিভাগে সহকারী অধ্যাপক পদে সম্পূর্ণ অস্থায়ী ভিত্তিক ৬ মাসের জন্য নিয়োগ প্রাপ্ত হন। ওই পদে যোগদানের জন্য ২০১২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি সরকারি চাকরি থেকে অব্যহতির জন্য আবেদন করেন। জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালকের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সচিব বরাবর করা ওই আবেদনের ডায়েরি নং ১৭৯৬। আবেদনটি ইনস্টিটিউটের তৎকালীন পরিচালক ২৩ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক বরাবর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রেরণ করেন। এ সময় ডা. দোজা বিএসএমএমইউতে যোগদান করেন এবং বেতন ভাতা উত্তোলন করেন। কিন্তু বিএসএমএমইউতে চাকরি স্থায়ী না হওয়ায় তিনি বেকার পয়ে পড়েন এবং বিভিন্ন ক্লিনিকে কাজ করতে থাকেন।

সরকারি চাকরি ছেড়ে দেয়ার প্রায় দেড় বছর পর জালিয়াতি এবং তদবিরের মাধ্যমে ইস্তফার বিষয়টি গোপন করেন। সম্পূর্ণ অবৈধভাবে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে কর্মরত দেখিয়ে ২০১৩ সালের ১১ জুন সহকারি অধ্যাপক পদে হৃদরোগ হাসপাতলে যোগদান করেন। এমনকি চাকরি থেকে অব্যহতি নেয়ার পর থেকে যোগদান পর্যন্ত সময়ের বেতন ভাতার সব টাকাও উত্তোলন করেন তিনি। এরপর ২০১৭ সালের ৩০ আগস্ট তিনি সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পান। এরপর ২০২১ সালের ২ আগস্ট প্রফেসর পদে পদ্ন্নেতির জন্য মন্ত্রনালয় থেকে ৩৪ জনের একটি তালিকা এসএসবিতে (সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড) পাঠানো হয়। যেখানে তার নাম রয়েছে ১৪ নম্বরে।
জানা গেছে, সরকারি চাকরি ছাড়ার এক বছর পরে পদোন্নতি পান ডা. ফাতেমা দোজা। ২০১৩ সালের ১ এপ্রিল তাকে মেডিকেল অফিসার থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। এর আগে ২০১২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি তিনি মেডিকেল অফিসার পদ থেকে ইস্তফা দেন। ওই সময় তিনি জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন। ওই সময় প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক প্রফেসর ডা. আব্দুল্লা আল সাফী মজুমদার ডা. ফতেমার পদত্যাগের বিয়টি নিশ্চিত করেছেন। এ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য প্রমাণ ইনকিলাবের হাতে রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ও মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন শাখা জানিয়েছে সরকারি কর্মচারী (আপিল ও শৃঙ্খলা) বিধিমলা অনুসারে, একবার সরকারি চাকরি থেকে অব্যহতি নিলে সেটি আর ফিরে পাওয়ার কোন সুযোগ নেই। এ বিষয়ে ডা. ফাতেমা দোজার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। একাধিকবার মোবাইল রিসিভ করে কথা শুনে কোন কথা না বলেই কল কেটে দেন।

প্রসঙ্গত, ডা. ফাতেমা দোজা ১৯৯৬ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। ১৮ তম বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা হিসাবে ১৯৯৯ সালে জগন্নাথপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিকেল অফিসার হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন। ২০০২ সালে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার হিসাবে বদলি হয়ে আসেন। এরপর ২০০৭ সাল থেকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে কর্মরত আছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন